কাজলা দিদি
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1478বার পড়া হয়েছে।
কাজলা দিদি
যতীন্দ্র মোহন বাগচী
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
যতীন্দ্র মোহন বাগচীর জন্ম ১৮৭৮ সালের ২৭ নভেম্বর নদীয়া জেলার জামশেদপুরে। অবশ্য তার পৈতৃক নিবাস হুগলী জেলার বলাগড় গ্রামে। কলকাতার ডাফ কলেজ থেকে ১৯০২ সালে তিনি বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। নাটোরের মহারাজের প্রাইভেট সেক্রেটারি ও জমিদারির সুপারিটেনডেন্ট পদে এবং কর কোম্পানি ও এফ.এন. গুপ্ত কোম্পানিতে উচ্চ পদে কর্ম সম্পাদন করেন। ১৯০৯-১৯১৩ সাল পর্যন্ত ‘মানসী’ পত্রিকার সম্পাদক ও ১৯২১-১৯২২ সাল পর্যন্ত ‘যমুনা’ পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক পদ লাভ করেন। তিনি ছিলেন ‘পূর্বাচল’ পত্রিকার সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রানুসারী কবিদের মধ্যে অন্যতম এবং বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান কবি। পলস্নীপ্রীতি তার কবি-মানসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্রাম-বাংলার শ্যামল-স্নিগ্ধ রূপ, পলস্নী-জীবনের সুখ-দুঃখ, ভাগ্যাহত ও নিপীড়িত নারীর প্রতি সমবেদনা তার কবিতায় আন্তরিকতার সঙ্গে সহজ সরল ভাষায় তাৎপর্যমন্ডিতভাবে প্রকাশিত। তাঁর জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে “কাজলা দিদি” ও “অপরাজিতা” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-‘লেখা’ (১৯০৬), ‘রেখা’ (১৯১০), ‘অপরাজিতা’ (১৯১৫), ‘নাগকেশর’ (১৯১৭), ‘বন্ধুর দান’ (১৯১৮), ‘জাগরণী’ (১৯২২), ‘নীহারিকা’ (১৯২৭), ‘মহাভারতী’ (১৯৩৬) । এ ছাড়া রচনা করেছেন “পথের সাথী” নামক উপন্যাস এবং “রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য” (১৯৪৭) নামক স্মৃতিচিত্র | ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৪৮ সালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
১,৫৬৭ বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
এই কবিতাটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।
আমার অন্যতম প্রিয় কবিতা।
ভাল লাগা কবিতা গুলির একটি।
আমার শৈশবের প্রিয় কবিতা
আমার সম্ভবত দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়াকালীন প্রিয় একটি কবিতা।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা,
কষ্ট হয় এসব কবিতা পড়লে।
আহ কি মিষ্টি কবিতাগুলো………. পড়লেই মন ভরে যায়
অমর হয়ে থাকবে এসব সৃষ্টি
ছেলেবেলায় পড়া কবিতাটি আপনার কল্যাণে আবার পড়ার সুযোগ হলো, ধন্যবাদ।