কৈশোরের জাদুকর, মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজীদার জন্মদিন আজ
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1205বার পড়া হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ এবং কাজী আনোয়ার হোসেন- দুজনের মাঝে মিল হলো- দুজনেই খুব সহজ সরল ভাষায় লিখেন। দুজনেই সিরিজ উপন্যাস লিখে সফলতা পেয়েছেন, নিজস্ব পাঠক গড়ে তুলেছেন। তবে কাজী আনোয়ার হোসেনের পরিচয় অন্যখানে, তিনি শুধু উপন্যাসিকই নন, একজন সফল অনুবাদক ও পাঠকের প্রিয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সেবা প্রকাশনী’র কর্ণধারও বটে। তিনি বাংলা রহস্য-সাহিত্যের প্রবক্তা, মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজের সফল জনক। এর বাইরে আরো অনেক পরিচয়ই দেয়া যায় তার, তবে ভক্তকুলের কাছে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি পাঠকের প্রিয় ‘কাজীদা’। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন।ডাক নাম ‘নবাব’। আজ ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার তার ৭৭-তম জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি ঢাকার সেগুনবাঁগিচায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশক কাজী আনোয়ার হোসেনের সাফল্য, আধুনিক এক পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করা, যারা বিশ্বসাহিত্যের জন্য ক্ষুধার্ত হতে শিখেছে, সবসময়ই সীমানা পেরিয়ে যেতে চেয়েছে, পাঠক হিসেবে নিজেকে ক্রমশ আরও উচ্চতায় তুলে নিতে আগ্রহী হয়েছে। চলন্তিকার পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
তার বাবা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও কথাসাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সনজীদা খাতুন তার বোন, উপন্যাসিক কাজী মাহবুব হোসেন তার ভাই। মোট ৪ ভাই, ৭ বোন। সকলেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেন তথা সকলের প্রিয় কাজীদা’র পরিচয়টি স্বনামে। তিনি স্বমহিমায় নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন বাঙালি পাঠকমহলে।
কাজী আনোয়ার হোসেনের গায়ক পরিচয়টি অনেকেই জানেন না। ঢাকা বেতারের তালিকাভুক্ত কণ্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি। তিনি চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন। ‘আজ হলো শনিবার কাল কোনো কাজ নেই রাত জেগে তোমাকেই ভাবছি, নাগরিক আভাসে যান্ত্রিক পরিবেশে কল্পনা মায়াজাল বুনছি’ তার গাওয়া গানটি একসময় শ্রোতামহলে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এছাড়া উর্দু ছবি তালাশে রবীন ঘোষের সুরে কাজী আনোয়ার হোসেন গেয়েছিলেন বিখ্যাত একটি গান, ‘ম্যায় রিকশাওয়ালা বেচারা’। ইউটিউবে তার কণ্ঠে গানটি শুনে চরম বিস্মিত হয়েছিলাম, নতুন করে শ্রদ্ধা জন্মেছিল এই সব্যসাচী মানুষটির প্রতি।
হাজার হাজার কিশোরের শৈশব রাঙিয়ে দিয়েছেন কাজীদা। তিনিই শিখিয়েছেন- কিভাবে সাহিত্যের যাদু দিয়ে পাঠককে বশে রাখা যায়। তার রহস্যের হাতছানিতে পাঠক কখনো থাকে অ্যালান কোয়াটারমেইনের সাথে আফ্রিকার গহীনে, কখনো যুদ্ধের ময়দানে, কখনওবা মত্ত থাকে প্রিয়তমার সাথে রোমান্সে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে- কাজীদা কী লেখার সময়ও তার ওয়ালথার পিপিকে আর কমান্ডো নাইফ সাথে রাখেন!
জানিনা এ লেখাটি কখনো কাজীদা পড়বেন কিনা, তার প্রতি ভালোবাসা থাকলো হৃদয়ের গভীর থেকে। আমি সহ হাজার হাজার ছেলেমেয়ের শৈশব রাঙিয়ে দিয়েছেন আপনি, আপনি শিখিয়েছেন কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বইয়ের মাঝে ডুবে থাকতে হয়, কিভাবে কল্পনার ডানা মেলতে হয়। কখনো অ্যালান কোয়াটারমেইনের সাথে আফ্রিকার গহীনে, কখনো অ্যাথোস-পর্থোস-আরামিসের সাথে রাজা লুইয়ের ক্যাসলে, কখনো বাউন্টিতে চেপে তাহিতি দ্বীপে, কখনো নিশ্চুপ পশ্চীম রণাঙ্গনে, কখনো হাইপেশিয়া, ক্লিওপেট্রা, আংকেল টমের সাথে কেটেছে সকাল-সন্ধ্যা-রাত। আপনার দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করছি।
তার অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প বিদেশি কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে রচিত। বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে অনেক বই লিখলেও সেগুলো কাজীদার হাতে পড়েছে বলেই এতটা অসাধারণ থ্রিলার হয়ে উঠেছে। তিনি সবসময়ই মনে করেছেন- পাঠকই হলো তার সম্পদ। তাই পাঠকের কাছেই তিনি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেন সবসময়ই। তিনি বড় মাপের মানুষ। তার সাহিত্যরচনা ও পাঠকের প্রতি তার দায়বদ্ধতাকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরা আমার মত নাদান লেখকের পক্ষে কঠিন কাজ। মাসুদ রানা তার সৃষ্টি করা কাল্পনিক চরিত্র। তার প্রকাশিত তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্লাসিক, রহস্য পত্রিকা ইত্যাদি কিশোরদের মনে জাদুর মত কাজ করে। তার ভাষাশৈলী অসাধারণ রকমের সুস্বাদু। মৌলিক রচনাগুলোও চমকপ্রদ। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি প্রধানত সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন, যদিও প্রকাশের ক্ষেত্রে তার নামে প্রকাশিত হয়। এই বিশিষ্ট লেখক ১৯৭৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন । এছাড়া পেয়েছেন সিনেমা পত্রিকা ও জহির রায়হান চলচিত্র পুরস্কার।
এই লেখা তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
শুভ জন্মদিন, প্রিয় কাজীদা। আপন আলোয় উদ্ভাসিত করুন পৃথিবীকে, ভালোবাসায় বেঁচে থাকুন হাজারো বসন্ত। আর লিখুন দুর্দান্ত সব রহস্যোপন্যাস। আপনার হাত ধরেই গড়ে উঠুক নতুন সেবা প্রজন্ম।
প্রিয় কাজীদা, অন্তত শতায়ু হন আপনি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন রোমাঞ্চকর এবং সুখময় হয় আপনার, আপনার ভাল থাকা যে আমাদেরই ভালো থাকা।
১,৩৩৫ বার পড়া হয়েছে
খুব ভাল লাগত যখন মাসুদ রানার গল্পগুলো পড়তাম নিজেকে গুয়েন্দা গুয়েন্দা মনে হত।
কাজীদার জন্মদিনে হাজারো লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
অনেক অনেক শ্রদ্ধা
জন্মদিনে অনেক অনেক শ্রদ্ধা। হাজারো লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
জন্মদিনে শুভেচ্ছা রইল।
কাজীদা শুধু একজন লেখক নন। তিনি কিশোর, তরুণ, ও যুবক পাঠকদের কাছে ছিলেন স্বপ্নের কারিগর। যিনি তার জাদুকরী সম্নোহনী লেখায় আমাদের নিয়ে যেতেন স্বপ্নের জগতে।
তার জন্মদিনে দোয়া করি তিনি আমাদের মাঝে আরো বহুদিন থাকুন।
কাজীদার জন্মদিনে রোমঞ্চকর শুভেচ্ছা.
অনেক শ্রদ্ধা জানাই কাজীদাকে
কাজী আনোয়ার হোসেনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পূর্বক লেখার জন্য ধন্যবাদ।