Today 28 May 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

গল্প:বাসব বাবুর বাবুর্চি

লিখেছেন: তুষার আহসান | তারিখ: ১৪/০৮/২০১৩

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1651বার পড়া হয়েছে।

বাসব বাবুর বাবুর্চি

@ তুষার আহাসান

পুজোর ছুটিতে দেশের বাড়িতে এসে রাজনাথ একটা নতুন খবর শুনলেন।

দুপুরে ভাত খেতে খেতে ছোটভাই ব্রজনাথ বলল,জানো দাদা,তোমার বন্ধু

এখন নদীর জলের সঙ্গে কথা বলে?

বিষম খেলন রাজনাথ।সামলে নিয়ে বললেন,কেন বাসবের কি মাথার দোষ

দেখা দিয়েছে ?

মাছের মুড়োতে কামড় মেরে ব্রজনাথ বলল,ব্যপার-স্যাপার তেমনই মনে

হচ্ছে,আমি বেশ কিছুদিন ধরে শুনছি,বাসববাবু গাছের সঙ্গে,আকাশে ওড়া

পাখির সঙ্গে,ডোবার ব্যাঙের সঙ্গে কথা বলেন।সেদিন সন্ধ্যেবেলা দেখি,নদীর

সঙ্গে কথা বলছেন। আমাকে দেখে বললেন,এ সময়ে এদিকে এসো না ভায়া,

বড্ড সাপের উপদ্রব।

—তুই কি বললি?চোখের চশমা খুলে কৌতুহল প্রকাশ করলেন রাজনাথ।

—আমি বললাম,আপনার বুঝি সাপের ভয় নাই? তিনি কষ্টের হাসি হেসে

বললেন,আমি  দাঁড়িয়ে আছি পেটের দায়ে।

ভাতে মাছের ঝোল মাখতে রাজনাথ বললেন,আরে বাসব  ছোট থেকেই

কবিতা লিখতো,এখন হয়ত রিটায়ার করে নদীর কাছে কবিতা চাইছে।

—তবে যে বললেন,পেটের দায়ে দাঁড়িয়ে আছি!

— তা হলে তো লক্ষণ ভাল নয়,নদীর কাছে মাছ চাওয়া তো মাথা খারাপের

লক্ষণ।

বাসব বাবু রাজনাথের ছেলেবেলার বন্ধু।এক স্কুলে পড়তেন।খেলাধূলা করতেন।

পরীক্ষার ভাল রেজাল্ট রাজনাথকে পৌঁছে দিয়েছে,কলকাতার ভাল চাকরী,

সরকারী আনুকূল্যের জীবনযাপনে।ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়শোনা করেছে।

সেখানেই চাকরী ও বিবাহ করে সুখে আছে।দেশে আসে কালেভদ্রে।শেষ

এসেছিল রাজনাথের স্ত্রী সুচেতা মারা যাওয়ার পর। বড়মেয়ে কুহু কানাডায়

চাকরী করে।ওর বর কল্লোলও বড় ইঞ্জিনিয়ার।সুখের সংসার।সে বলল,বাবা,

অনেক হয়েছে,তুমি এবার পাততাড়ি গুটিয়ে আমার সাথে চল। মা নেই,

তোমার দেখাশোনা করবে কে,বলো তো?

ছোট মেয়ে কেকাও একই কথা বলল।ছেলে অনুময়ও বলল তবে একটু

মনমরা ভাবে।বউকে সে একটু বেশী সমীহ করে।রাজনাথ হেসে জবাব

দিয়েছেন সকলকে।দেশের মাটিতে জীবনের শেষ অধ্যায় কাটাতে চান তিনি।

চাকরী থেকে রিটায়ার করার পর রাজনাথ ভেবেছিলেন,দেশের বাড়িতে

থাকবেন।পরক্ষণেই ভেবেছেন,ব্রজনাথ অসন্তুষ্ট হবে। সে সেখানকার জমিজায়গা

পুকুর,বাগান দেখাশোনা করে।রাজনাথের সেখানে বছরে একবার যাওয়া মানে

বিশাল খাতির।কিন্তু বরাবরের মত থাকতে চাওয়া হয়ত উপদ্রব মনে হবে।

তারচেয়ে কলকাতার ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকা,বাবুর্চি কাম চাকর উমাপদর হাতে

রান্না খাওয়া বেশ স্বস্থির!

বিকেলে নদীর পাড়ে বাসবের সঙ্গে দেখা।চুপচাপ একটা শ্যাওড়া গাছের মগডালের

দিকে চেয়ে আছেন।সাদা আলখাল্লা,চুল-দাড়িতে তাঁকে যেন শান্তির দূত মনে হচ্ছে।

 

রাজনাথকে দেখে খুশি হলেন তিনি।কোলাকুলির সাথে কুশল বিনিময় সেরে বললেন,

চল বাড়ি যাই।

হাঁটতে-হাঁটতে পেছন ফিরে বললেন,অনেক সহ্য করেছি,আমার বন্ধু এসেছে,

এখন যদি না ফিরিস, তোকে আমি তেজ্যপুত্র করব।

রাজনাথ অবাক চোখে দেখলেন,কাঠবেড়ালীর মত গাছ থেকে নেমে এল

টাঁক মাথা একটা লোক।তার পরনে ধূতি,ফতুয়া।কোথাও কোন ধুলো-ময়লা,

ঝরা পাতা লেগে নেই।বিস্মিত রাজনাথ বললেন,এটা আবার কে?

— আমার ছেলে।

— তোর ছেলে,তোর দুটো মেয়ের কথাই তো জানি।তারা আমেরিকায় সুখে

আছে। তা এই ছেলেটা এল কোথা থেকে?

—গাছ থেকে পড়ে পাওয়া বলতে পারিস। বলে রহস্যময় হাসি হাসলেন বাসব।

—গাছে থেকে ফল পড়ে জানতাম।কিন্তু ছেলে,বউ মারা যাওয়ার পর মাথা

খারাপ হ’ল নাকি তোর?

বাড়ির গেটের তালা খুলতে-খুলতে বাসব বললেন,সে এক গল্প,চল ভেতরে,চা

খেতে-খেতে সব বলব। কই বাবা পেরানজল,ভাল করে চা বানা তো দেখি।

চা খেতে খেতে রাজনাথ বললেন,তোমার নাম বুঝি পেরানজল?

গামছায় হাত মুছতে-মুছতে সে বলল,নদীতে নামলে আমি নদীর জল,গাছে উঠলে

ডাবের জল,আকাশে উঠলে বৃষ্টির জল,আর বাবার কাছে আমি পেরানজল।

 

—রাজু তুই একটা বিচার করে দে,হতচ্ছাড়া আমাকে বাবা বলে আবার যখন-তখন

পালায়।আমি খোঁজাখুজি করলে আবার রাগ করে।

—তুমি বাপু পালিয়ে পালিয়ে বেড়াও কেন?

 

—আমার যে গাছে চড়তে ভাল লাগে,নদীতে সাঁতার কাটা,পাখির পেছনে

ওড়া,কত মজা!

পরানজলের বয়স চল্লিশের নিচে নয়।তবে সে যে ভাবে কথা বলছে যেন,

অবুঝ কিশোর ।রাজনাথ বললেন,তোমার নাম নিয়ে কি যেন সব হেঁয়ালী

বললে,ব্যপারটা একটু খোলতাই করে বল তো?

—আরে বাদ দে পাগলার কথা। ওকে দেখে কি তোর ডাবের জল,নদীর জল

মনে হয়? ও হচ্ছে আমার সরলমতি,পেরানজল।

পরানজলকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না বাসব।শেষে মুচকি হেসে বললেন,

এখন বল চা কেমন হয়েছে?

—ভাল।

—ভাল মানে শুধু ভাল বললে চলবে না।বল,ফাস্ট কেলাস।তাতে পেরানজল

খুশি হবে।আচ্ছা আজ রাতে এখানে থেকে যা,দেখবি  কত সুন্দর মাছ

রান্না করে।

—অবেলায় মাছ ?

—পেরানজল ধরে আনবে,তুই যদি চাস বুনো হাঁসও আনতে পারে।বল

কি-কি খাবি?

— রাতে আমি নিরামিষ খাই।

—নিরামিষ,তাতেও কোন অসুবিধা নাই,এচোঁড়ের পায়েসটা খুব ভাল

বানায়।আরো এমন সব জিনিষ বানায়,যা আমার বউ বেঁচে থাকতে

কোনদিন খাইনি।

 

—তার মানে পেরানজল তোর বাবুর্চি?

—অমন বলিস না,বেচারা শুনলে দু:খ পাবে। আবার হয়ত রাগ করে

বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াবে।রান্নাটা ঠিক সময় মত করে দেবে কিন্তু টিভি দেখবে

না।একা-একা খেলা দেখতে কার ভাল লাগে বল?

রাজনাথকে বাড়ির দরজা অব্দি এগিয়ে দিয়ে গেল পেরানজল।রাজনাথ বললেন,

কলকাতা গেলে যেও আমার বাসায়।

—না বাবু, কলকাতা আমি কক্ষনো যাব না,ওখানে শুধু গাড়িঘোড়া,মিটিং-মিছিল,

ওখানকার ভূতগুলো খুব বদমাশ।কারণে-অকারণে মারে।

—কলকাতায় আবার ভূত আছে নাকি,যত্তোসব আজগুবি কথা!

—কেন থাকবে না,অনেক আছে,আমি নিজেই তো কলকাতা থেকে পালিয়ে

এসেছি।

বাতাসে মিলিয়ে গেল পেরানজল।অবাক রাজনাথ ডাকলেন,পেরানজল,ও বাবা

পেরানজল।

 

কেউ সাড়া দিল না। সদর দরজায় টর্চ মেরে রাজনাথকে দেখতে পেল ব্রজনাথ।বলল,

দাদা,তুমিও শেষে বাতাসের সাথে কথা বলা শুরু করলে?

রাজনাথ বললেন,না-রে,বাতাস নয়,বাসবের বাবুর্চি।

—কই, কোথায় সে?

—সকলকে ও দেখা দেয় না। ভাবছি আর কলকাতা নয়,এবার এখানেই

থাকবো,চল,ভেতরে চল।

*

 

১,৮৩০ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
আমি পশ্চিমবঙ্গ,ভারবর্ষের মানুষ। ছোট বেলা থেকেই লেখালেখি করি। দৈনিক আনন্দবাহজার সহ বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশ পায়। ইন্টারনেটের নেশা এখন এমন ভাবে ধরেছে, ব্লগ ছাড়া আর কোথাও লিখতে ইচ্ছে করে না।
সর্বমোট পোস্ট: ৫১ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ৮৪২ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৭-১০ ১২:৪৪:৪৯ মিনিটে
Visit তুষার আহসান Website.
banner

১২ টি মন্তব্য

  1. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    আপনি গল্পটি পোস্ট করার সময় কিছুটা ঝামেলা পাকিয়েছেন। তাই গল্পটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে।
    আপনি পোস্ট করার সময় শিরোনামের ঘরে শুধু মাত্র গল্প/কবিতা যাই লিখুন শিরোনামটা লিখবেন। ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে আপনার লেখাটি যে ক্যাটাগরিতে পড়ে সেখান থেকে একটিতে টিক চিহ্ন দিন। পোস্ট বক্সে আপনার লেখাটা পেস্ট করুন। লেখার শুরুতে পুনরায় শিরোনাম বা আপনার নাম লেখার প্রয়োজন নেই।
    ইচ্ছে করলে এই নিয়মে আপনার লেখাটি সংশোধনও করতে পারবেন।

  2. তুষার আহসান মন্তব্যে বলেছেন:

    অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া,
    অনেক কিছু জানলাম।

  3. এ হুসাইন মিন্টু মন্তব্যে বলেছেন:

    গল্প পড়ে আমার কাছে ভালো লেগেছে

  4. গৌমূমোকৃঈ মন্তব্যে বলেছেন:

    ভাল লাগল। শুভকামনা রইল।

  5. বাহাউদ্দিন আহমেদ মন্তব্যে বলেছেন:

    দারুল গল্প লিখেছেন।

  6. এম, এ, কাশেম মন্তব্যে বলেছেন:

    গল্প পড়ে ভালো লাগলো ।

  7. তৌফিক মাসুদ মন্তব্যে বলেছেন:

    প্রথমে ভেবেছিলাম এক রকম, পড়া শেষে দেখলাম অন্যরকম। এটাই বুঝি লেখনীর পরিপক্কতা। পাঠককে বুঝতে না দেয়া কোথায় শুরু হয়ে শেষ হবে কোথায়।

  8. এই মেঘ এই রোদ্দুর মন্তব্যে বলেছেন:

    ভাল লাগল গল্পটি

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top