Today 25 Mar 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা/কুটির

লিখেছেন: গোলাম মাওলা আকাশ | তারিখ: ১৪/০১/২০১৫

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1427বার পড়া হয়েছে।

গ্রামবাংলার সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা/কুটির
dd
আগের ধানি-মানি গেরস্থ বলতে — মাঠ ভরা সোনালি ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ ও কৃষকের গোলা ভরা ধান এখন প্রবাদ বাক্যে পরিণত হতে চলেছে। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা শিল্প। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত থাকলেও অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার বাঁশ বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি গোলাঘর। অথচ এক সময় সমাজের নেতৃত্ব নির্ভর করত কার ক’টি ধানের গোলা আছে এই হিসেব কষে। কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ী ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন। যা এখন শুধু কল্পকাহিনী।
>>তৈরির প্রক্রিয়াঃ

xsss

গ্রাম অঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ, বাঁশের বাতা ও কঞ্চি দিয়ে প্রথমে গোল (তবে ধনী কৃষকরা বর্গ/আয়ত ক্ষেত্র আকারে) আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হত । এর পর তার গায়ে( ভিতরে ও বাহিরে)বেশ পুরু মাটির আস্তরণ লাগানো হত। এর মুখ বা প্রবেশ পথ রাখা হত বেশ উপরে (ধান বাহির করার জন্য অনেকে নিচে বিশেষ দরজা রাখতেন) জেন চর/ডাকাতরা চুরি করতে না পারে। ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। গোলার মাথায় থাকত বাঁশ ও খড়ের তৈরি বা টিনের তৈরী ছাউনি । যা দেখা যেত অনেক দুর থেকে। উচুতে থাকত বলে বর্ষার পানি আর ইঁদুর তা স্পর্শ করতে পারত না। মই বেয়ে গেলায় উঠে তাতে ফসল রাখতে হতো এবং তা বের করা হত ।
gg
>তবে ঘরে চাল রাখার জন্য একধরনের বিশেষ গোলা নির্মাণ করা হত। অনেকের হয়তো মনেও থাকবে এর কথা। এই গোলা আবার নির্মাণ করা হত একটু ভিন্ন ভাবে। এই ছোট আকারের গোলা/কুটির নির্মাণের জন্য প্রথমে আধুনিক কালের রিং (কুপের রিং) এর মত মাটির (এঁটেল মাটি হলে ভাল, কারন এগুলি খুব আঠালো ও শুকিয়ে গেলে খুব শক্ত) কাদা(মাটি ,খড়ের চূর্ণ ও পানি মিশিয়ে মণ্ড) দিয়ে প্রয়োজন মত ১০-২০ টা রিং বানানো হত। আর রিং গুলি কিন্তু আস্তে আস্তে ছোট হতে কুটিরের মাঝ বরাবর একটু বড় করা হত। তার পর আবার ছোট। কিছুটা গম্ভুজের মত।
fff
একটু শুকিয়ে গেলে এই রিং গুলির ভিতরে গোবর গোলা( পানি ও গোবরের মিশ্রণ) বা বিশেষ এক ধরনের লাল মাটি বা কিছুটা কালচে মাটি( এ দুই মাটি ও গোবর গোলা দিয়ে আজও গ্রামের মাটির বাড়ির আঙ্গিনা ,বারান্দা ও ঘরের মেঝে ও ওয়াল লেপা—মুছে দেওয়া হয়) দিয়ে লেপে দেওয়া হয়। যেন ভিতরে মসৃন হয়।
শুকিয়ে গেলে সেই রিং কে নির্দিষ্ট যায়গায় মাটি দিয়ে উচু করা স্থানে( অনেকে এই স্থানকে আধুনিক ফ্রিজ রাখার মত মাটির বা কাঠের উচু পিড়ি আলাদা করে রিং বানানোর সময় বানিয়ে নেন) একের পর এক রিং বসিয়ে দেওয়া হয়। আর তা আধুনিক দালানের ইট গাথার সময় সিমেন্ট বালির মিশ্রণের মত আঠালো এঁটেল মাটি দিয়ে জোড়া লাগিয়ে বসিয়ে দেওয়া হত। আর চাউল ঢুকানোর জন্য উপরের মুখ খোলা রাখা হয় এবং তা মাটির তৈরি প্লেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আর চাউল বের করার জন্য নিচের রিংএ একটা গোলাকার ফুটো রাখা হয়। আর তা ছিপি দিয়ে রাখা হত চটের বা কাপড়ের গোলাকার ছিপি দিয়ে। আর তা খুলে মুখের নিচে পাত্র রেখে প্রয়োজনীয় চাউল সংগ্রহ করা হত।

অনেকে এই সব গোলার/কুটির এর গায়ে নানা রং দিয়ে নকশা একে চিত্র শিল্পের প্রকাশে ভুমিকা রাখত।
>>ব্যবহারঃ
গোলা/কুটির শস্য সংরক্ষণ করার কাজে এটি ব্যবহার হত। তবে চাল সংরক্ষণ করার কাজে এক বিশেষ গোলা/কুটির বানানো হত।

>> গোলা/কুটির নির্মাণ শ্রমিক ও নির্মাণ খরচঃ
xxxsx
এই গোলা/কুটির নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে আসা গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না।পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।
গোলা/কুটির নির্মাণের জন্য তাদের সংবাদ দিয়ে আনতে হত। তারা এসে নানা পরামর্শ করে( মাটি পর্যবেক্ষণ, জায়গা নির্ধারণ) নির্মাণ কাজে হাত দিত। একেকেটা গোলা/কুটির নির্মাণ খরচ পড়ত তার আকার ও শ্রমিক কত লাগবে তার উপর নির্ভর করে। তবে একেকটা গোলা/কুটির নির্মাণ খরচ পড়ত সেই সময়কার ১০-৩০ হাজার টাকা।
cc

>> শেষ কথাঃ
এই সুদৃশ্য গোলা ছিল সম্ভ্রান্ত কৃষক পরিবারের ঐতিহ্য। সে সময় ভাদ্র মাসে কাদা পানিতে ধান শুকাতে না পেরে কৃষকরা ভেজা আউশ ধান রেখে দিতো গোলা ভর্তি করে। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হত শক্ত। কিন্তু সম্প্রতি রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কলের লাঙ্গল যেন উল্টে পাল্টে দিয়েছে গ্রাম অঞ্চলের চালচিত্র। গোলায় তোলার মত ধান আর তাদের থাকে না। গোলার পরিবর্তে কৃষকরা ধান রাখা শুরম্ন করে বাঁশের তৈরী ক্ষুদ্রাকৃতি ডোলায়। ধান আবাদের উপকরন কিনতেই কৃষকের বিস্তর টাকা ফুরায়। কৃষকের ধানের গোলা ও ডোলা এখন শহরের বিত্তশালীদের গুদাম ঘরে পরিণত হয়েছে।ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারত গুদাম ঘরে মজুদ করে রাখা হচ্ছে টন টন ধান চাল। অনেক ক্ষুদ্র কৃষক বস্তা ও বেরেল ভর্তি করে রাখছে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান চাল।

ssss
তবে গ্রাম এলাকায় এখনো বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী গোলা রক্ষায় ধনী শ্রেণীর কৃষকরা বাঁশের তৈরি গোলা ধরে রেখেছেন। রঙ-বে রঙের কারুকার্য খচিত গোল গোলা, চারকোণা গোলা ও ঝুপি গোলার ছিল প্রত্যেক কৃষকের ধান-চাল রাখার এক নিরাপদ মূল্যবান সম্পদ। ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়া হতো কৃষি পরিবারে গোলাঘর দেখে। মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত ও ধনাঢ্য চাষিদের বাসাবাড়ির সামনে থাকতো একাধিক গোলাঘর। কৃষকরা জানান, তাদের পূর্ব পুরুষদের গোলাভরা ধান চালে চলতো এলাকার ১০-১৫টি গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা।
গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছই ছিল জমিদারি প্রথা ও উচ্চ চাষি পরিবারের ঐতিহ্য। পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া গোলাঘরে ধান চাল ওঠানো- নামানো হতো গরুগাড়িতে করে। এটা এখন কল্পকাহিনীতে পরিণত হয়েছে। একটা গোলা ঘরে গরুগাড়ি প্রবেশ করতে পারে বিশ্বাস করতে নারাজ এই প্রজন্মের মানুষ। বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর। আগামী প্রজন্মের কাছে গোলা ঘর একটি স্মৃতিতে পরিণত হবে। আধুনিক গুদাম ঘর ধানচাল রাখার জাগা দখল করছে। ফলে গোলা ঘরের ঐতিহ্য হারাচ্ছে।
fff

১,৪০১ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
আমি খুব সাধারণ।
সর্বমোট পোস্ট: ১৩৩ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ৯৭৪ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৪-০৮-২২ ১৬:৩০:৪৭ মিনিটে
banner

৪ টি মন্তব্য

  1. এই মেঘ এই রোদ্দুর মন্তব্যে বলেছেন:

    সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ

  2. গোলাম মাওলা আকাশ মন্তব্যে বলেছেন:

    ধন্যবাদ আপি

  3. সহিদুল ইসলাম মন্তব্যে বলেছেন:

    কত আগে এমন ধানের গোলা দেখেছি মনে পড়ে না,
    এখন আর চোখে পড়ে না ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top