চক্ষুরোগ থেকে পরিত্রাণ পাক শিশুরা
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1295বার পড়া হয়েছে।
শিশুদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোকে সঠিক চিন্তাধারার পাশাপাশি সুষ্ঠু বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে জাতির ’ভবিষ্যৎ কথাটির সত্যিকার বাস্তবায়ন আদৌ হয়নি। তবে দেশের বিশাল শিশু সমাজকে জিইয়ে রাখার ফলপ্রসূ প্রচেষ্ট মৌখিক ভাবে হয়েছে সত্য তবে, বাস্তবসম্মত পদ্ধতিতে এর আশু কার্যক্রম প্রতিফলিত হয়নি। এবং হচ্ছেও না । অথচ শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা একান্ত বাঞ্চনীয় । কারণ শিশুদের ওপর নির্ভর করে আছে জাতির মংগল তথা সোনালী ভবিষ্যৎ।
আমাদের দেশের সিংহভাগ শিশুরাই যে সঠিক ভাবে পরিচালিত নয় তা হলফ করেই বলা যায় । যেহেতু,আমাদের দেশের অধিকাংশ শিশুরই অন্ন বস্ত্র ,বাসস্থান , সমস্যা কার্যকরভাবে স্থিরীকৃত তো হয়নি বরং অকালেই এরা রোগের শিকার হচ্ছে। আর এই শিশুরোগীদের মধ্যে চক্ষুরোগটাই প্রাধান্য পেয়েছে বেশী । ভিটামিন ‘এ’ র অভাবজনিত কারণে আমাদের দেশে ৩ মাস থেকে ৮ বছর বয়স অবধি শিশুদের ১০ ভাগই অকালে দৃষ্টি শক্তি হারায় । শিশুদের দৃষ্টি শক্তি লোপ পাবার বিষয়টি সত্যিকারার্থে দেশ ও জাতীয় জীবনে মারাত্মক উৎকন্ঠার সামিল । সেই সাথে এটাও ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ হয়েছে যে, বিশ্বে শিশু মৃত্যু হারে আমাদের দেশটিও খুব ভালো অবস্থানে নেই। এখানকার দেড়শ শিশুই মৃত্যু বরণ করে প্রতি হাজারে।
সচরাচর খাদ্য ও পুষ্টিহীনতার অভাবে শিশুদের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু শিশুদের সুষম খাদ্য পরিবেশনার ক্ষেত্রে জোর ভূমিকা থাকা উচিৎ সত্বেও তা হচ্ছে না । ভিটামিন এ র অভাবে আমাদের দেশে চক্ষুরোগ দেখা দেয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয় । এর পরেও কথা হচ্ছে – খাদ্যে চাল প্রধান দেশে শিশুরা রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশী । ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের বেলায় ও ভিটামিন ‘এ’র অভাববোধ পরিলক্ষিত হয় । ফলে দেখা দেয় শিশুদের চক্ষুরোগের প্রবল সম্ভাবনা । এর মধ্যে কর্ণিয়ার ঘা রোগে আক্রান্ত হওয়াটাও স্বাভাবিক । সুষম খাদ্য তথা নিয়মতান্ত্রিক ভিত্তিতে শিশুদের পরিচর্যা করা না গেলে নানাবিধ রোগের মতো চক্ষুরোগের আক্রমণ থেকে জাতি রক্ষা পেতো । এই নির্ঘাত সত্যটি উপলব্ধি করলেও আমাদের দেশে ফি বছরই শিশু মৃত্যুর সকরুণ চিত্র দেখা থেকে আমরা ক্ষান্ত হতে পারিনি।
অথচ, আমাদের জাতীয় জীবনের উত্তরণে এই পরম সত্যটিকে উপলব্ধি করতে হলে আমাদের শিশু সমাজকে বাঁচাবার তাগিদে সুন্দর পরিকল্পনাই গ্রহণ করা উচিৎ (হাতে নেয়া উচিৎ)।
রূঢ় বাস্তবতার আলোকে আমাদের দেশের দারিদ্র্যসীমা লংঘিত ৮৫ ভাগ গরীব যেখানে দু’ বেলা দু’ মুঠো খাবার নিশ্চয়তা খুঁজে পায় না । সেখানে শিশুদের জন্য ভিটামিন যুক্ত খাদ্যের সংস্থান করাটাই দূরূহ ব্যাপার বৈ কী ? আজ অবধি আমাদের দেশে প্রতিদিন যেখানে বারো চৌদ্দশর বেশী ক্যালোরী সংগ্রহ সাধ্যাতীত সেখানে অন্যসব খাদ্যে ভিটামিন অনুসন্ধান করার সুযোগই বা কই? মূলত সীমাহীন দারিদ্র্যতা এর সত্যতা প্রতিভাত করছে।
আমাদের দেশ দারিদ্র্য প্রধান হতে পারে বটে। কিন্তু শিশুদের দৃষ্টিশক্তি রক্ষাকল্পে প্রতিষেধকতূল্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহে বেগ পাবার কোন কারণ নেই। যেহেতু, ভিটামিন ‘ এ ’ প্রধান খাদ্য হিসেবে শাক সব্জি যেমন মূলা শাক, পাট শাক ,কলমী শাক, পুঁই শাক, লাউ শাক এবং আম ও তরমুজ, মৌরালা মাছ প্রধান উপজীব্য । এসব খাদ্যের অভাব বা দূষ্প্রাপ্যতা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে । উল্লেখ্য , গ্রামাঞ্চলে আজ’বধি শাকসব্জি ছোট ছোট মাছ খুব বেশী না হলে সর্বত্র্ই দৃশ্যমান হয় । এ ছাড়া উল্লেখ অনাবশ্যক যে, যে সব খাদ্যের নিতান্ত কম অভাবের পরেও রয়েছে জনজীবনের তৎসম্পর্কিত সচেতনতার পরিপূর্ণ অভাব। সাধারণত আমাদের জনগণই সামগ্রিক ক্ষেত্রে খাদ্যের গুণাগুন সম্পর্কে বরাবরই অসচেতন।
মূলকথা হলো এই যে, দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির সঠিক প্রক্রিয়া উদ্ভাবনে জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নের পর দারিদ্র্যের গ্লানি কিছুটা হয়তো লাঘব হতে পারে। আর তাতেই রোগ ,ব্যাধি ,অপুষ্টি তথা অন্ধত্ব ও অকাল মৃত্যুর হার শূণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। তবেই না শিশুরোগ নিরোধের কথা ভাবা যেতে পারে । তবুও শিশুদের চক্ষুরোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা যেতে পারে সাধারণের মধ্যে সুষম খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সুষম খাদ্যের সরবরাহ করাতে দেশের বৃহত্তম শিশু সমাজ প্রবল দৃষ্টি শক্তিলোপ তথা অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে নি: সন্দেহে।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষক
১,২৮১ বার পড়া হয়েছে
চমৎকার পোস্টটি শেয়ার করার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ প্রিয়।
আহমেদ রব্বানী মন্তব্য এ ধরনের লেখায় আমাকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেয়।ধন্যবাদ
খুব সুন্দর প্রয়োজনীয় পোষ্টটির ধন্যবাদ । অনেকের পড়ে ভাবা উচিত ।
দীপংকর বেরা আপনার প্রয়োজনীয়তা ও অনেককে উদ্বুদ্ধ করার উৎসাহ সত্যিই প্রেরণা দায়ক। ধন্যবাদ অাপনাকে।
ha vaভাবা উচিত এদের জন্য। আমি অনেকে দেখেছি একটি চোখ নষ্ট। একটু অভেলা ও অসচেতনটার জন্য এমন ঘটে।
সময় উপজুগি সুন্দর পোস্ট।
গোলাম মওলা আকাশ আপনার ভাবনার গভীরতা এ লেখাটির বিষয়বস্তুতে একটু হলেও নাড়া দেবে অন্যদের । ধন্যবাদ জানাই অাপনাকে।
প্রয়োজনীয় একটা বিষয় আলোকপাত করেছেন।এই বিষয়ে সমাজে যারা শিক্ষিত কিংবা এই বিষয়ে জানেন উনারা যে যায এলাকায় জনগণকে সচেতন করলে কিছুটা উপকার হতে পারে।ধন্যবাদ।
আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষগুলোও অনেক ক্ষেত্রেই অসচেতন । পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে তারা শুধু বোঝে আর্টিফিসিয়াল বাজারের কেনা খাবারগুলোকে ।পরিবেশ তেকে প্রাপ্ত অতি সাধারন খাবারেও অনেক বেশী পুষ্টি তা যেন বোঝানোই দায় । আর নিম্নবিত্তের ক্ষেত্রে ব্যপারটি হয়ে যায় উল্টো । তারা জানেও না কোন কোন খাবার খাওয়া উচিৎ এবং জানলেও অনেক সময় অর্থের অভাবে খাওয়াতে পারেনা তাদের সন্তানদের । সমাধানের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবারের চার্ট বিতরন করা যেতে পারে সারা দেশের মানুষের কাছে । এক ধরনের খাদ্য খেলে এক ধরনের বৃদ্ধি হয় আর অন্য অঙ্গগুলো পরিপূর্ন পুষ্টি পায় না । এভাবেই পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে দেহ । ধণ্যবাদ আপনার সচেতনতা মূলক পোষ্টের জন্য ।
সাঈদ চৌধুরী আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।