চলন্তিকা’র ই-বুক ও একটি ঈদ সংখ্যা
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 2180বার পড়া হয়েছে।
সাহিত্যেরই একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল এর সমালোচনা। যে সাহিত্য নিয়ে যত বেশি সমালোচনা হয়েছে সে সাহিত্য তত বেশি উন্নত হয়েছে। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে সমালোচনা সাহিত্যের উপস্থিতি তেমন একটা নেই বললে অত্যুক্তি হবে না। এর প্রধান কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, হতে পারে উপযুক্ত সমালোচক নেই। কিংবা যিনি সমালোচনা করবেন তিনি নিজেও একজন লেখক।
দ্বিতীয়ত, হতে পারে সমালোচনা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা নেই কিংবা সমালোচনাকে হজম করার মত ধ্বজাধারী কেউ বর্তমান সাহিত্যাকাশে অবশিষ্ট নেই।
এভাবে ‘সমালোচনা সাহিত্য’ নামক এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশটির অনুপস্থিতির কারণে ক্রমে বাংলা সাহিত্যের যে বিরাট রকমের ক্ষতি হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উন্নত বিশ্বের সাহিত্যের উন্নতির পেছনে সমালোচনা সাহিত্য যে বিরাট ভূমিকা রাখছে বাংলা সাহিত্য তার থেকে যোজন যোজন দূরে সরে যাচ্ছে। আর ভবিষ্যতে সাহিত্যের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি শুরু হওয়ার পরিবেশ এ ভাষার সাহিত্যের ইতিহাসে রয়েছে কি না তা বেশ শঙ্কার বিষয়। এতে করে সাহিত্য না কাজে লাগছে পাঠকের না কাজে লাগছে সমাজের। ভুড়ি ভোজন হচ্ছে কেবল প্রকাশকের।
সমালোচনাকে হজম করার মতো মানসিকতার অভাবও প্রবলভাবে কাজ করে। আজকাল নানা উপায়ে বইয়ের বিজ্ঞাপন আমাদের চোখে পড়ে। ঢাকঢোল পিটিয়ে বাহারি রকম অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পুস্তকের বিজ্ঞাপন এখন নিয়মিত বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। লেখকেরা এখন আলোচনা বা প্রশংসা শুনতেই বেশি পছন্দ করে। যাদের বই পাঠকের সুলভ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে তারাও ব্যতিক্রম নয়। এতে করে পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং বাজারের অন্যসব উপাদানের মতো সাহিত্যকে নিচে নামিয়ে দিয়ে কে বা কারা যে বাহবা পাচ্ছে তা অনুমান করাও কঠিন নয়।
চলন্তিকার ঈদ সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমাকে নির্বাচিত করার জন্য চলন্তিকা সম্পাদক মহোদয় ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। সুযোগের যে সদ ব্যবহার করতে পারব না তা আপাদমস্তক জেনেই শুরু করলাম। আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
অবশ্য ইতোমধ্যে একটি আলোচনা ছাপানো হয়েছে। তার পরেও আমার দৃষ্টিতে চলন্তিকার ঈদ সংখ্যাটি কেমন লেগেছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করার চেষ্টা করছি মাত্র। এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারেন সেক্ষেত্রে আমার চিন্তাটি আমার কাছেই থেকে যাবে।
চলন্তিকার ই-প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয়েছে একটি ঈদ সংখ্যা দিয়ে। বিষয়টি বেশ চমৎকার। এখন ওপার ও এপার বাংলার সাহিত্যিকদের সাহিত্যের সিজন (ঋতু) বলতে একটা বিষয় প্রায় প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। ওপার বাংলার মানুষ লিখেন পূজা ও বইমেলাকে কেন্দ্র করে এবং এপার বাংলার মানুষও লেখেন ঈদ ও মহান একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে। সে হিসেবে বাংলাদেশের লেখকদের নতুন লেখা পয়দা করার অন্যতম উপলক্ষ এই রমজানের ঈদ, ঈদ-উল-ফিতর। এসময় দেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকাই রমরমা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে। এ নিয়ে আজকাল প্রতিযোগিতাও হয়। কোন পত্রিকা কত সমৃদ্ধ এবং কত আগে তা পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারেন; কত এক্সক্লুসিভ করতে পারে তাদের সংকলন, ইত্যাদি। এর একটা সুবিধাও আছে, অন্তত পাঠককুল বেশ কিছু উপন্যাস, গল্প ও কবিতা পেয়ে যেতে পারেন একই মোড়কে এবং খুব অল্প খরচে। যেখানে একুশের বই মেলায় একটা উপন্যাসের বই ক্রয় করতে তাদের গুণতে হয় একশত থেকে আড়াইশত টাকা পর্যন্ত সেখানে একটি ঈদ সংখ্যায় প্রায় ১০টি উপন্যাস, সমসংখ্যক গল্প ও আরো নানাবিধ লেখায় সমৃদ্ধ একটি সংকলন তারা ক্রয় করে নেন দুইশত থেকে তিনশত টাকার মধ্যে। এ যেন লেখাও ও নতুন লেখা পড়ার এক অন্যরকম উৎসব ছড়িয়ে যায় বাংলা ভাষাভাষীদের প্রাণে।
সেই উৎসবকে আরো একটু রাঙিয়ে দিতে এবার সাহিত্যের নতুন পরিসর ‘চলন্তিকা’ তাদের সাইটে প্রকাশ করেছে ঈদ সংখ্যা। এটি চলন্তিকার প্রথম ই-বুক প্রকাশনা বললেও এবং সম্পাদক সাহেব অনভিজ্ঞতার কৈফিয়ত টানতে চাইলেও বলতে হয়, নানা ধরনের বেশ কিছু লেখা নিয়ে সংকলনটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়ও হয়েছে।
শুরুতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ঈদের গানটি জুড়ে দেওয়াতে ঈদ সংখ্যাটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। তারপরে সম্পাদকের কথামত (ঈদ মানে ক্ষুদ্রতার উর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা। বৃহত্তের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। ঈদ মানে সবাই মিলে সুন্দর থাকা) যদি সত্যিই আমরা ঈদকে এভাবে উদযাপন করি তাহলে মানুষের প্রতি মানুষের যে অহিংস মনোভাব সৃষ্টি হবে তা বলাই বাহুল্য।
প্রথম বার প্রকাশিত ঈদ সংখ্যাটিকে সাজানো হয়েছে চলন্তিকাতে প্রকাশিত লেখকদের বাছাই করা লেখা দিয়ে। সেজন্য লেখার মানের ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় নজরদারীকে বেশি প্রধান্য দেওয়া হয়নি বোধ করি। তবে লেখকবৃন্দ তাদের পছন্দের লেখাটিই যে দিয়েছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
উদ্যোগ
প্রথমেই একটি উদ্যোগ তুলে ধরেছেন সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্। তার এ উদ্যোগটিকে কতজন গ্রহণ করেছেন জানি না তবে ঈদের তাৎপর্য যে কেমন হওয়া উচিত লেখকের ‘ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন; একটু শুনুন প্লিজ’ লেখাটিতে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুমাইয়া এমতিতেও খুবই চমৎকার লিখেন এবং ঈদ সংখ্যাতেও তার এই লেখাটি সংখ্যার মানটিকে বাড়িয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই।
প্রবন্ধ
দুটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। একটি লিখেছেন এস ইসলাম এবং অপরটি আযাহা সুলতান। এস ইসলামের প্রবন্ধটি নিয়ে মূল সাইটে ইতোমধ্যে বেশ আলোচনা হয়ে গেছে। তবে তিনি যে কবির একটি জনপ্রিয় কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি জীবনানন্দ দাশ। কবি জীবনানন্দ দাশ বরাবরই একজন প্রচার বিমুখ লোক ছিলেন। তিনি তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে গর্ব করতেন না। জীবদ্দশায় তার লেখা নিয়ে সমসাময়িক অনেক কবিই সমালোচনা করতেন ফলে তিনি প্রায় প্রচার বিমুখ জীবনযাপনই ভালোবেসেছিলেন। কোন লেখা লিখে তিনি খাটের নীচে গুঁজে রাখতেন এমন গল্পও আমরা শুনেছি। একজন প্রচার বিমুখ নিভৃত কবি যিনি জীবদ্দশায় কোন স্বীকৃতিই পাননি। মৃত্যুর পর তার সকল সৃষ্টি স্বীকৃতি ও মর্যাদা লাভ করে। যেসব লেখার জন্য জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আজ এত হৈ চৈ ও গবেষণা হচ্ছে তার মধ্যে বনলতা সেন অন্যতম। এমন একটি প্রেমের কবিতা যা নিয়ে সমগ্র বাংলা সাহিত্য চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এই কবিতা নিয়ে এত গবেষণা হয়েছে যা কল্পনার বাইরে। এস ইসলাম যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা করতে চেষ্টা করেছেন সেসব বিষয় কবির কবিতার মূল বিষয়কে এড়িয়ে গেছে। কবির কাব্য চিন্তাকে ব্যহত করেছে বলেই আমার ধারণা। একজন কবি যখন কবিতা লিখেন তিনি কখনোই এ চিন্তা করেন না যে, তার এই কবিতাটা নিয়ে গবেষণা হবে এর চারকোণ ঠিক রেখে লিখতে হবে ইত্যাদি।
বনলতা সেন একটি প্রেমের কবিতা, বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে একে এই রূপেই লালন করবে। লেখাটি সম্পর্কে ব্লগে অনেক মন্তব্যের মধ্যে শেষ মন্তব্যকারী গৌমূমোকৃঈ যথার্থই বলেছেন- “বনলতা সেন যে একজন বাস্তব চরিত্র- এটা নাও হতে পারে। এটা কবির একটা কাল্পনিক চরিত্র হতে পারে আর কাল্পনিক চরিত্রে অনেক কিছুই মিল নাও থাকতে পারে। আমার কাছে মনে হয়, কবিতা বোঝা- এই কথাটি অযৌক্তিক। কবিতা আমরা বুঝি না, উপলব্ধি করি। কবিতা তাই যা আমাদের ভাবায়। কবিতার গ্রামার নিয়ে সমালোচনা হতে পারে কিন্তু কবিতার অর্থ নিয়ে সমালোচনা অর্থহীন মনে হতে পারে। একটি কবিতা পড়ে বিভিন্ন পাঠক বিভিন্ন অর্থ বুঝবে এবং অনেক ক্ষেত্রে অর্থ বুঝবেই না শুধু আবছা কিছু উপলব্ধি করবে- এটাই কবিতার স্বার্থকতা।” পরের প্রবন্ধটিতে আযাহা সুলতান তার জীবনের কিছু কথা প্রবন্ধাকারে প্রকাশ করেছেন। চলন্তিকাতেও আমরা অনেকেই সহজে একটা লেখার মন্তব্য করে ফেলি। কিছুদিন আগে তো সম্পাদক সাহেব কিছু মন্তব্যে ছুরি চালানোর সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমরা এমন ভাবে মন্তব্য করি যেন নিজে কত বড় জ্ঞানের জাহাজ। আযাহা সুলতান এর এই লেখাটাতেই একটি মন্তব্য এসেছে- ‘আপনার লেখার হাত ভালো, চালিয়ে যান।’ এ ধরনের মন্তব্য কারা করেন সাধারণত। প্রবন্ধকার সমগ্র প্রবন্ধ জুড়েই প্রায় একটা কথা বলতে চেষ্টা করেছেন যে, অনেক কথা বলা-ই সফলতা নয়। বাকরূদ্ধতাও সফলতা। তার প্রবন্ধের শেষ কয়েকটি লাইন না জুড়ে দিলেই নয়- “বিবেক বলল, একজন সাধক অনেক সাধনা পরে গন্তব্য পায়। শিশুর মুতে আছাড় খেয়ে যদি মনে করে তার সাধনা এখানে শেষ! তা হলে গন্তব্য কোথায়? বড় যে বলে মনে করো সে খুব ছোট। এজন জীবনে ত কোনদিন মানুষ হতে পারবেই না, বরংচে অধঃপতন তার পদেপদে লেগে আছে। আমি বললাম, আজ থেকে আমি বাকরুদ্ধ…।”
ছড়া
সূচিপত্র অনুসারে তার পরে রয়েছে এক গুচ্ছ ছড়া। ছড়া হলো সাহিত্যের অত্যন্ত তীক্ষ্ণ মাধ্যম। মানুষের মনের গভীরে ছড়া যত সহজে প্রবেশ করতে পারে সাহিত্যের অন্য কোন মাধ্যম ততটুকু পারে কি-না সন্দেহ আছে। তবে চলন্তিকার ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত ছড়াগুলো সেই তীক্ষ্ণতাকে আরো ধারালো করতে পারেনি। ভেদ করতে পারেনি। লেখার জন্য লেখা হয়েছে। উপভোগ করার জন্য হয়েছে কেবল। তা কাউকে নাড়া দেবে না। নড়েচড়ে বসবে না কেউ। ছড়া’র উদ্দেশ্য কিন্তু তা নয়। আমির হোসেন এর ছড়া খুশীর ঈদ এর শেষ লাইনে এসে ছন্দ পতন; স্বপ্নিল রায় এর হাওয়াই বাঁশি ছড়াটিতে সাধু-চলিত মিশ্রণ ও পড়তে গিয়ে কয়েক স্থানে ধাক্কা লাগা; কে এইচ মাহবুব এর খোকন সোনার ঈদ (শিশুতোষ ছড়া) ছড়াটিতেও একই সমস্যা- গুরুচণ্ডালি দোষ। কিন্তু তার ছড়ায় ছন্দের কাজ ভালো হওয়াতে এসব বিষয় পাঠক এড়িয়েই গিয়েছেন। মোঃ শাহীনুর রহমান’র আমার সবুজ পাখি ছড়াটিতে ছড়াকার অহেতুক কিছু শব্দ প্রয়োগ করেছেন কেবল ছন্দ মেলানোর খাতিরে। তাতে করে সম্পূর্ণ ছড়াটি কোন একটি একক বিষয় হয়ে উঠেনি, মিস করেছে। তবে আবু আশফাক লিখেছেন যুবক তুমি। তিনি লিখেছেন- “শান্ত হবে শিষ্ট হবে/কোথাও আবার জ্বলবে তুমি/কখনও তোমার হুংকারেতে/থেমে থেকে কাঁপবে ভূমি।” যুবকদের সামর্থতাকে উৎসাহিত করার জন্য এটি একটি চমৎকার টনিক হিসেবে কাজ করবে। পরের ছড়াটি লিখেছেন এ টি এম মোস্তফা কামাল। তার ছড়ার নাম- বোনাস। এটি একটি প্রগতিশীল ছড়া। বোনাস নিয়ে আমাদের কর্তৃপক্ষ ও স্টাফদের মধ্যে যে টালবাহানা চলে তার চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। বøগে আমি যে ভাবে লেখাটিকে পড়েছি ঈদ সংখ্যায় তা আরো চমৎকারভাবে আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে। সোনা বউকে ঈদের চাঁদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার যে আর্জি আজকের সমাজ ব্যবস্থায় তা-ই নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কবি জসীম উদ্দীন এর নিমন্ত্রণ কবিতাটি যারা পড়েছেন তারা সবাই লেখকের গ্রামে যাবার নিমন্ত্রণ পেয়েছেন। চলন্তিকার ঈদ সংখ্যায় তেমনি একটি নিমন্ত্রণ সদৃশ ছড়া লিখেছেন রফিক আল জায়েদ। তার ছড়ার নাম আজ বাড়ি যাচ্ছি। তিনি নিজেই কেবল যাচ্ছেন না। আর সবাইকে তিনি তার যমুনার পারের সেই জনপদে যাওয়ার জন্য আহবানও করেছেন। সবশেষ ছড়াটি শহীদুল ইসলাম প্রামানিক এর। নেশাখোর চোর। নেশার জন্য শত শত চোর ঢাকা শহরে বাস করে। রাস্তার এদিক সেদিন আমরা অনেককেই শুয়ে থাকতে দেখি। সারাদিন তারা শুয়ে থাকে। তাদের খাবার হলো নেশাজাতীয় দ্রব্য। আর যখন তাদের নেশা করার ইচ্ছা হয় তখন তারা মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। তা দিয়ে নেশা করে। এমনই একটি চিত্র অত্যন্ত সফল ভাবে তুলে ধরেছেন ছড়াকার। তবে তার ছড়ার চতুর্থ লাইনটি আমার কাছে অর্থহীনই মনে হয়েছে। ছড়াকার নিশ্চয়ই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
জীবনের গল্প
জীবনের গল্প শিরোনামে দুটি গল্প স্থান পেয়েছে ঈদ ইস্যুতে। প্রথমটি নিজাম মজুমদার নিজু’র জীবন যুদ্ধ। চলন্তিকাতে লেখকের এটি দ্বিতীয় পোস্ট। লেখাটিতে লেখকের আবেগ প্রকাশিত হয়েছে বটে, তবে একটি লেখা হয়ে উঠার জন্য যেসব উপকরণ থাকা প্রয়োজন তা প্রায় অনুপুস্থিতই বলা চলে। বাক্যগঠন ও বানানের ভুল এবং বিষয়বস্তু অনুসারে লেখাটি সু-সাহিত্য নয় বললে অত্যুক্তি হবে না।
পরবর্তী লেখাটি শ্রদ্ধেয় লেখক জিল্লুর রহমান’র বিয়ে বিয়ে খেলা। লেখাটিতে আমার মন্তব্য ছিল এরকম- ““বাতাসী তার বিয়ের কথা জানতে পারলো বিয়ের আগের দিন। দুপুরে হাতে কাপড় ঝুলিয়ে বাতাসী যখন পুকুরে গোসল করার জন্য যাচ্ছিল তখন তার এক দুরসম্পর্কীয় ভাবী বাতাসীকে অদূরে একটা গাছের নিচে বসিয়ে বলল, বাতাসী শুনিনু তোর নাকি বিহা?”“..আলহামদুলিল্লাহ্ বলে সুংসবাদের আনন্দধ্বনি ছড়াতে লাগল। শুধু যার বিয়ে তার সম্মতির কথা জানা গেল না। জীবনের এমন আনন্দের দিনকে উপভোগ করা তো দূরের কথা, জীবনের একান্ত আপন পুরুষটিকেও একবার চোখে দেখার সুযোগ হলো না।” সত্যিই ভাই মন ছুঁয়ে গেল। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিন্তু থামাতে পারছেনা সরকার, সমাজ, সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বাতাসীর মতো প্রতিদিনই জীবন ও জীবনের শৈশব বিলিয়ে দিচ্ছে হাজারো শিশু। চলন্তিকা সাইটে এমন একটি লেখা চলন্তিকার মানকে বৃদ্ধি করেছে। আপনাকে অভিনন্দন ও স্বাগতম।” নতুন করে আর কিছু বলার নেই। লেখাটি এই সংখ্যার মানকে নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছে।
শিশুতোষ ও শিক্ষণীয়
আলমগীর কবির’র রাজার ভেলা। শিশুতোষ ও শিক্ষণীয় শিরোনামের লেখাটির প্রথম দিকে রাজার সমস্যার সাথে সমাধানের মিলে পাঠক সন্তুষ্ট না-ও হতে পারেন। একটি এলাকার পরিবহন সংকট কিভাবে দুটি কলার ভেলার মধ্যে রাজা খুঁজে পেয়েছেন তা-ও বলা মুশকিল। শিশুতোষ বিষয়গুলো আরো সহজ ও পরিষ্কার করলে ভালো। তবে লেখাটির শিরোনামটি মূল সাইটের কোন বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে প্রকাশ করলে পাঠকের জন্য সুবিধা হতো। এরকম কোন বিষয় চলন্তিকার শিরোনামে উল্লেখ না থাকাতে লেখাটি পড়ার জন্য লেখককে খুঁজতে সমস্যা হয়েছে এবং ঈদ সংখ্যাটিকেই একমাত্র ভরসা ধরতে হচ্ছে।
এবার যাচ্ছি কবিতার দিকে
‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি’; সাহিত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ কবিতা। উল্লেখ্য, এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি রচনার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির যতটুকু দুর্বলতা রয়েছে তা পাঠে বিন্দুমাত্রও রয়েছে জানলে সকল কবিই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতেন। আমার মনে হয় প্রায় সব বাঙালিই যারা লিখতে পড়তে জানেন তাদের প্রায় সবাই জীবনে অন্তত একবার কবিতা লেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কবিতা পাঠ করছেন হাতে গুণা কয়জন?
এই কবিতার সাথে হৃদ্যতা আমার শিশুকাল থেকেই, তার পরেও আজ পর্যন্ত কবিতা কি জিনিস তা আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি তা বলতে পারি না।
কবিতা নিয়ে পড়াশুনার কমতি নেই। পড়েছি জীবনানন্দের-‘কবিতার কথা’। তিনি বলেছেন- ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি; কবি- কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকিরণ তাদের সাহায্য করছে।’
কীসব কঠিন শব্দ তাই না। এর দ্বারা কি কবিতা বুঝা সহজ? না অন্তত আমার কাছে এখানেও কবি এবং কবিতাকে সুবিধের মনে হয়নি বরং, জটিল থেকে আরো জটিলতর হলো।
তারপর পুর্নেন্দু পত্রীর ‘কবিতার ঘর ও বাহির’ পড়তে গিয়ে দেখলাম- এজরা পাউন্ডকে ‘প্যারিস রিভিউ’ পত্রিকার পক্ষ থেকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল –
কেমন করে কবি হলেন আপনি?
পাউন্ডের উত্তর: আমার ঠাকুর্দা স্থানীয় ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চিঠি লেখালেখি করতেন পদ্যে। আমার ঠাকুমা আর তাঁর ভাই, তাঁরাও চিঠি চালাচালি করতেন পদ্যে লিখে। এতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে, যে-কেউই লিখতে পারেন ওটা।
আহ! হাফ ছেড়ে বাঁচা গেল। যে কেউই কবিতা লিখতে পারেন তাহলে। আজকাল লিখছেন ও।
পড়েছি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’র ‘কবিতার ক্লাস’। তিনি কবিতাকে অতি সহজ করে দিয়েছেন আমার জন্য; বোধ করি আরো অনেকের জন্য। তাঁর ইচ্ছা বাংলাদেশের সকলকে কবি বানিয়ে ছাড়া। তাঁর একটা গল্প না বলে পারছি না। তিনি বলেছেন- অল্প একটু চেষ্টা করলে যে-কেউ কবিতা লিখতে পারে। আমার মাসতুতো ভাইয়ের ছোট ছেলেটির কথাই ধরুন। গুণধর ছেলে। টুকলিফাই করেছে, পরীক্ষার হল-এ বোমা ফাটিয়েছে, গার্ডকে ‘জান খেয়ে নেব’ বলে শাসিয়েছে, উপরন্তু চাঁদা তুলে মাইক বাজিয়ে, সরস্বতী পুজো করে বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে তুষ্ট করেছে, তবু- এতরকম কাÐ করেও-স্কুল ফাইনালের পাঁচিলটা সে টপকাতে পারেনি। তিনবার পরীক্ষা দিয়েছিল। তিনবারই ফেল। এখন সে আমাদের হাট-বাজার করে দেয়, হরিণঘাটার ডিপো থেকে দুধ আনে, পঞ্চাশ রকমের ফাই-ফরমাশ খাটে, এখানে-ওখানে ভুল ইংরেজিতে চাকরির দরখাস্ত পাঠায়, এবং- এবং কবিতা লেখে। তা সে-ও যদি কবি হতে পারে, তবে আপনি পারবেন না কেন?’
আশা করি আপনারাও কেউ কেউ এই গল্প থেকে কবিতা লেখার উদ্দীপনা পেতে পারেন।
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয়, আমি পাই নি। আরো ভয় পেয়েছি। কারণ এই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীই অন্য এক স্থানে বলেছেন- ‘কবিতার মধ্যে তিনটি জিনিস থাকা চাই। কাব্যগুণ, ছন্দ, মিল। বিনা ডিমে যেমন ওমলেট হয় না, তেমনি কাব্যগুণ না থাকলে কবিতা হয় না।’
তো সেই কাব্যগুণই হলো সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু, সেটি আবার কি? কাব্যগুণের সন্ধানে আমি আছি আজো। এমন একটি অবস্থায় অন্তত আমার কবিতার উপর আলোচনা করার সাধ্য থাকার কথা নয়। তারপরেও এ সুযোগ দানের জন্য চলন্তিকা সম্পাদক মহোদয়কে আবারও কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করি।
চলন্তিকার ঈদ সংখ্যায় ২২জন কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।
এমদান হোসেন নয়ন তার ‘বুক পকেট’এ যে মিষ্টি হাসি জমা করে রেখেছেন তাতে করে কবিতাটি একটি অন্যতম প্রেমের কবিতা হিসেবে পরিণত হয়েছে। কবিতায় উপমার ব্যবহার (আকাশের নীল জল, সুখের চাদর, ভালবাসা জমা থাক তোমার পাঁজরে এবং ডালিম পাকা ঠোঁটের মিষ্টি হাসি) কবিতাটিকে আরো উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
সালমান মাহফুজ লিখেছেন তেমনি আরো একটি প্রেমের কবিতা। তার কবিতায় রয়েছে প্রেমের বিরহ। কবিতাটিতে কিছু কাব্য নাট্য লক্ষ্য করা গেছে যেমন- মুমুর্ষ মানুষের মতন কাতরাতে থাকি/.. তোমার কাজলমাখা আঁখি, চ্যাপ্টা নাক, গোলাপী জিব ইত্যাদি। কাব্য নাটকগুলো মিলে হয়ে উঠেছে একটি সম্পূর্ণ প্রেমের কবিতা।
নোমান রহমান আধুনিকতার বিড়ম্বনা নিয়ে একটি শক্তিশালী কবিতা লিখেছেন। আধুনিকতা কিভাবে সভ্যতাকে ধ্বংস করছে তার এই কবিতার মূল শ্লোগান। তার কবিতার নাম ‘উদ্যানে নাস্তির ফুল’।
কাউছার আলম এর কবিতাটিতে বেশ কিছু বানানের ভ্রান্তি থেকে গেছে। কয়েকটি শব্দ এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে যে অর্থ বুঝতেই সমস্যা হচ্ছে। তবে কবি তার কবিতা ‘দুঃখ দেখেছি’তে বেশ কিছু সুন্দর শব্দ প্রয়োগ করেছেন।
চারু মান্নান এর কবিতার সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক। তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনা বরাবরই চমৎকার। নগর যাপনে যে কি সুখ কি কষ্ট তার কবিতা ‘শুধু বেঁচে থাকার জন্য নির্মোহ নগর যাপন’য়ে অতি সুনিপুন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি পঙ্ক্তি উল্লেখ না করলেই নয়- ‘…কৃষকের তামাটে গা বেয়ে/ঝরে পরা ঘামের সাথে বৃষ্টির ছিটে ফোটা অম্ল সুখ।’ কিংবা, ‘জমে থাকা কাদা মাটির রাস্তায়, জোসনা রাতে চিকচিক।’ এসব পঙ্ক্তির মধ্য দিয়ে কবি গ্রামীণ জীবন যাপনের যে সুখ তা প্রকাশ করেছেন।
ভালোবাসার সরল কিছু স্বীকারোক্তি দিয়ে অত্যন্ত সহজ ভাষায় কবিতা লিখেছেন মোঃ আমিনুল ইসলাম। তার কবিতার নাম ‘ভালোবাসা’। সহজ কথাগুলোকে সহজ ভাবে বলতে পারার কৃতিত্ব তাকে দিতে হবে।
মোসাদ্দেক’র ‘বর্ষার জলে’ কবিতার বিষয়বস্তু খুবই চমৎকার। তবে অসচেতন ভাবে কিছু শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। যার ফলে কবিতাটি তার মূল সূর থেকে ঝুলে গেছে বলা যায়।
শ্যাম পুলক বরাবরই ভালো কবিতা উপহার দিয়ে থাকেন। ‘একি শূন্য দিয়ে শূন্যকে ভাগ’ কবিতায় কবির যে হিসাব নিকাশ তা বর্তমান বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য। আমরা তো শূন্য থেকেই লম্পজম্প করি। কবি লিখেছেন- ‘আমার হৃতপিণ্ডে এখন আর রক্ত নেই; শুধুই আগুন।’
‘অভিনয়’ শিরোনামে দীর্ঘ কবিতা প্রকাশিত হয়েছে গৌমূমোকৃঈ’র। কবিতাটি বর্তমান দুনিয়ার চরিত্রগুলো নিয়ে। সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় সিকিউরিটি একটু বেশি করে সালাম দেয়; উদ্দেশ্য রমজান মাস, বকশিস। অফিসে পিয়ন একটু বেশি যতœ করে; পানি না চাইতেই পানি দেয়; উদ্দেশ্য বিকালে তার কিছু অগ্রিম লাগবে। সর্বত্র কেমন জানি পঁচে যাচ্ছে মানব সভ্যতা। এরই চিত্র প্রকাশ করেছেন কবি। তার শেষ কয়েকটি চরণ দেখলে এমনই মনে হবে- পৃথিবী আসলে একটা মঞ্চ অভিনয়ের/দক্ষ অভিনেতা সন্ধান পায় বিজয়ের।
ঠিক এমনই আরো একটি শক্তিশালী কবিতা লিখেছেন শাহ্ আলম বাদশা। তার কবিতায় ছন্দে ছন্দে তিনি সভ্যতার অবক্ষয়কে অত্যন্ত সফলভাবে ফুটিয় তুলেছেন। কবিতার নাম ‘মরনের ঘাটি!’ কবি বলেছেন- নির্বাসনে চলে গেছে মানবতাবোধ/চারদিকে ভাঙচূর নেই প্রতিরোধ/চৌদিকে যমদূত করে হাটাহাটি/জগতটা যেনো তাই মরনের ঘাটি।” ‘চৌদিকে’ শব্দটি বাদ দিয়ে চারদিক দিলে তা আরো বেশি উপযুক্ত হতো।
বাবা ও মাকে নিয়ে দুটি সুন্দর কবিতা লিখেছে আরিফুর রহমান। তার কবিতায় অত্যন্ত সরলভাবে বাবা মা’র প্রতি সন্তানের টান, ভালোবাসা ও জীবনের লেনদেন প্রকাশ পেয়েছে।
আলমগীর সরকার লিটন এর কবিতা ‘শীতলবালির মাঝে ধু ধু নিঃঅন্তর’। কবিতায় বানান ভুল একটি প্রধান সমস্যা। কবি কবিতাটিকে যথেষ্ট জটিল করতে চেষ্টা করেছেন, দুর্বোধ্য করতে চেষ্টা করেছেন। অনেকে মনে করেন কবিতার দুর্বোধ্যতাই কাব্যগুণ।
রূপা’র ‘কানে গুঁজেছি একটা হেডফোন’ কবিতাটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেশ মানানসই। মোবাইল এবং এমপি থ্রি প্লেয়ারের কল্যাণে আমাদের কান সারাদিনই ব্যস্ত থাকে। আমরা কিছুই শুনতে চাই না-পাই না। আমাদের দায়িত্ব যেন ওই একটাই কানটাকে বন্ধ করে রাখা। কৌশলও বলা যেতে পারে। কবির কবিতায় সেই সুরটি বেশ সাবলীল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তবে বেশ কয়েকবার ‘তো’ এর ব্যবহার কবিতাটিকে শ্রুতিমধুরতা থেকে বঞ্ছিত করেছে।
কবি মোঃ মোহাইমিন আহমেদ এর প্রকাশিত কবিতাটিতে একটি মন্তব্য এসেছে এরকম- “নিয়মিত লিখবেন, ভালো কিছু আশা করছি।” অর্থাৎ উক্ত কবিতায় পাঠক ভালো কিছু পাননি। নাকি আরো প্রত্যাশা; তা বুঝা যায়নি অবশ্য। তবে কবিতাটিকে কবি চেষ্টা করে বেশ দুর্বোধ্য করে ফেলেছেন। এখানে কবিতার বিষয়বস্তুটিই লোপ পেয়েছে বলতে হবে। বাক্য গঠনেও কিছু সমস্যা রয়েছে বৈকি।
বৈশাখী ঝড় তার শিরোনামহীন কষ্ট কবিতায় প্রেম বিরহকে ফুটিয়ে তুলেছেন। একটি উপমা বেশ নাটকীয় হয়েছে- ‘বেদনার নীল টিকা আমি এঁকে দেব/আজ তোমার ললাটে।’ কারো ললাটে বেদনা এঁকে দেওয়ার মত নিষ্ঠুরতা কবি তখনই প্রকাশ করেন যখন তার জীবনে বিরহ এসে বাসা বাঁধে।
মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন আরিফ এর ‘অনুভব’ কবিতাটি না পড়লে অনুভব করা যেত না। তিনি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন একজন নারীর সংগে পুরুষের ভাবানুভূতিগুলোকে। এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর কবিতা।
অনেকেই নিক নেম ব্যবহার করে। এমনই একটি নাম হতে পারে পৃথিবী জুড়ে স্বপ্ন। তার একটি দেশাত্ববোধক কবিতা। কবিতার নাম ‘প্রিয় বাংলাদেশ’। কবিতার নাম পড়লেই কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্য কবি অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
আরো বেশ কিছু কবিতা আছে যেমন: কবি শাহরিয়ার সজিব’র মোরা দু’জন; কবি বাংলাদেশী’র তোমাকে ভালবাসব বলে; আব্দুল্লাহ আল নোমান দোলন’র চির যৌবনা। কবিতাগুলোকে গঠনের দিকে কিছুটা দুর্বলই মনে হয়েছে। লেখা পাঠের অভ্যাস না থাকলে কবিতা লেখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। চলন্তিকা ব্লগে আমার কাছ থেকে অনেকেই কেবল কবিতা প্রত্যাশা করেন। একবার একটু অন্য রকম লেখা আপলোড করাতেই বিষয়টি বোঝা গেল। কয়েকজন পাঠক বলল, আমি কেন কবিতা প্রকাশ করি নি। কিন্তু আমি এই বিষয়টি অকপটে স্বীকার করি যে আমি এখনো জানি না আমার কবিতা আসলে কবিতা হয় কি-না।
রসরচনা
দুটি রস রচনা ঈদ সংখ্যাটিকে নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে। একটি আম নিয়ে ‘আম’র যে দাম’ লিখেছেন বদরুল হোসেন এবং অন্যটি ফেলু নিয়ে ‘আমাদের ফেলু বাবু’ লিখেছেন- স্বপ্নিল রায়। এর মধ্যে স্ব-রস রচনা হিসেবে আমাদের ফেলু বাবু’ই এগিয়ে থাকবে বলে আমার ধারণা।
গল্প
গল্পগুলোর মধ্যে মোস্তাক আহমেদ এর ‘শেষ বিকেলের আলো’ একটি আদর্শ ছোট গল্প। ছোট গল্পের যেসব বৈশিষ্ট্য ও উপাদান থাকা দরকার তার সবগুলোই উক্ত গল্পে রয়েছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে দারুনভাবে অন্যান্য চরিত্র সাপোর্ট করেছে এবং এতে করে গল্পের সমাপ্তি পর্যন্ত বেশ নাটকীয়তা বজায় ছিল।
শাওন রশিদ’র ‘হরিদাশের প্রেম’ একটি রস রচনা হলে আরো বেশি যুক্তিযুক্ত হতো। তবে গল্প হিসেবে কাহিনীটিকে তিনি যেভাবে টেনে নিয়ে গেছেন তাতে পাঠক প্রিয়তা পাবে নিঃসন্দেহে।
জুবায়ের হুসাইন এর ‘মৃদু দীর্ঘশ্বাস’ আসলে মৃদু নয়। গভীর দীর্ঘশ্বাস এর চিত্র। এটি সারা বাংলাদেশ এর চিত্র। আজকাল সাহিত্য কোন কাল্পনিক বিষয় নিয়ে তেমন রচিত হয় না। গল্প উপন্যাস সব কিছুই ইতিহাস ও বাস্তবতা নির্ভর হয়ে গেছে। বাস্তব কোন ঘটনা নিয়ে গল্পটি সাহিত্য গুণে সমৃদ্ধ হয়েছে বলতে হবে। তবে তথ্যগত দিকে লেখককে সব সময় আপডেট ও সঠিক থাকতে হয়। লেখক বলেছেন একটি দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১০ টাকা কেজি চাউল দেবে। এই তথ্যটি নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। লেখককে এসব বিষয় স্পষ্ট হয়েই প্রকাশ করতে হয়।
ফিদাতো মিশকা’র ‘তুমি রবে নিরবে’ গল্পের চিত্রপটটি খুবই চমৎকার। এটি নিঃসন্দেহে একটি সুন্দর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। তবে গল্পের পেছনে শানে-নজুলটি না থাকলে গল্পের কাব্যিকতাটি আরো নাটকীয় হতো।
সাফাত মোসাফি’র ‘ঘর’ গল্পে আমার মন্তব্য ছিল এরকম- “গল্পটা লেখতে গিয়ে কি স্থানের কথা চিন্তা করেছেন ভাই? আমার মনে হচ্ছে আপনার গল্পটা আরো বড় হতে পারতো। এখানে আরো কিছু চরিত্র আসতে পারতো সচল ভাবে। মাহি ও তমাল ভালোবাসতে বাসতে আরো অনেক উড়াউড়ি করতে পারতো। ছোট গল্প বা অণুগল্পের যে চাহিদাগুলো এই গল্প তা পূরণ করতে পারে নি। তবে প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ। এই গল্পটিই আপনি আবার লিখুন দেখবেন সম্পূর্ণ হবে।”
ওবায়দুল ইসলাম এর ‘শশুড় বাড়ির পিঠা’য় হায়রে পিঠা খাওয়ার আহাজারি। রম্যরচনা বা রসরচনা হিসেবে বেশ উপযুক্ত হতো। পিঠা খাওয়ার কলা কৌশল ‘রসগোল্লা’র স্বাদকে মনে করিয়ে দিয়েছে!
তৌহিদ উল্লাহ শাকিল এর চোখের কোনে জল একটি সম্পূর্ণ গল্প। একটি পরিবারের প্রজন্ম কীভাবে পরিবর্তিত হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কিভাবে দায়িত্ব বর্তায় তার চিত্র তুলে ধরেছেন ছোটগল্পকার। গল্পে আনন্দ যেমন আছে তেমনি ট্রাজেডিও গল্পটিকে পরিপূর্ণ করেছে।
এ হুসাইন মিন্টু’র দিবসহীনদের গল্প, ওরফে চেঙ্গু একটি সুন্দর ট্র্যাজিক ঘটনা। বাবা দিবস নয় কেবল এমন অনেক দিবস নিয়েই আমরা মত্ত থাকি। কিন্তু কেউ-ই বাতির নিচের অন্ধকারটুকু কাটাতে এগিয়ে আসি না। গল্পটির ভাষাগত দিকে আরো যতœশীল হওয়া দরকার ছিল। তাছাড়াও আরো কয়েকটি গল্প রয়েছে যেমন আহমেদ ইশতিয়াক এর প্রথম কদমফুল; মো: মাসুদ ফেরদৌস এর তিনি এবং একটি দুঃস্বপ্ন। গল্পগুলোকে অণুগল্প বললে অত্যুক্তি হবে না। গল্পের গঠনে যেসব বিষয় থাকে সেসব অনুপস্থিতই ছিল বলতে হবে।
স্মৃতিচারণ
স্মৃতিচারণটিতে স্মৃতির চেয়ে গানের উক্তিই বেশি। সংখ্যাতে বেশ কিছু ছোট গল্প প্রকাশিত হয়েছে। গল্পগুলোর কয়েকটি আবার সম্ভবত বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আবার কারো স্মৃতির গল্পও হতে পারে। চলন্তিকার এই সংখ্যাটির স্মৃতিচারণ এর লেখক সিকদার সেসব গল্প পড়তে পারেন তাহলে স্মৃতিচারণ বিষয়ক অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে।
রহস্য গল্প
লেখক বিএম বরকতউল্লাহ্, যিনি গতানুগতিক চিন্তা-চেতনার পরিবর্তে স্বকীয়তার ছাপ রাখার চেষ্টা করেন তার লেখায়। একজন অভিজ্ঞ ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত লেখক। তার রহস্য গল্প কঙ্কাল প্রকাশিত হয়েছে চলন্তিকার ঈদ ই-বুকে। গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র বদিউজ্জামান যে অসাধ্য সাধন করেছে তার রহস্য কিন্তু থেকেই গেছে সবার অন্তরে। গ্রামের সকলের ভয়কে তাড়িয়ে দিয়ে বইদ্দা সেই কঙ্কালকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ভয়ে গ্রামের মানুষ সন্ধ্যা হলেও ঘরে ঢুকতো এবং সকল প্রকারের প্রাকৃতিক সারাও ওখানেই দিতো। তবে গ্রামের মহিলারা সেই কঙ্কালকে ভয় পেতো কি-না লেখক কিন্তু তা স্পষ্ট করেনি। সকল পুরুষ ও শিশুরা পড়া পানি খেয়ে যে হারে কাথা বালিশ ভিজিয়েছে তা পরিষ্কার করণের ভার কিন্তু ওই মহিলাদের উপরে বর্তেছে। রহস্যই থেকে গেল। চমৎকার একটি রহস্য গল্প।
সাক্ষাৎকার
প্রায়াত কথা সাহিত্যিক ও চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ এর একটি সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন আনোয়ারা জাহান ঐরি। চলন্তিকার পাঠকদের জন্য আরো বড় বিষয় যে এটি হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম সাক্ষাতকার। সে বিচারে এর গুরুত্ব অত্যাধিক। এই সাক্ষাতকারের মাধ্যমে চলন্তিকার লেখক ও পাঠক একজন হুমায়ূন হয়ে উঠার পেছনের গল্প সম্পর্কে জানতে পারবে।
বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
তার পরে যা লেখা তিনি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক খান। বিজ্ঞান কল্পকাহিনী যার কাছে রঙ্গিন ঘুড়ির মত। বিজ্ঞান কে তিনি কেন ভালোবাসেন তার একটা চমৎকার ভূমিকাও প্রোফাইলে যুক্ত করে দিয়েছেন। আমি আগ্রহ নিয়ে তা পড়েছি। কারণ প্রাইমারি স্কুল থেকেই আমার অন্যতম অসহ্য বিষয় ছিল বিজ্ঞান আর যে কারণে নবম শ্রেণিতে এসে বিজ্ঞান বিভাগের সকল বইপত্র ক্রয় করার পরেও পরবর্তীতে ব্যবসায় শিক্ষা শাখাতে পড়াশোনা করেছি। লেখক সম্পর্কে আমার আগ্রহ এই কারণে যে তিনি বলেছেন, ‘বিজ্ঞান-কল্পকাহিনি আমার কাছে রঙ্গিন ঘুড়ির মত।’ চলন্তিকার ঈদ সংখ্যায় তার ঈশ্বরীয় আবেশ তেমনি ভালোলাগার একটি সাইন্স ফিকশন বলতে হবে। ঈশ্বরীয় আবেশ এর এলাকা ও দ্বিতীয় মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটা আকাক্সক্ষা জাগলেও পাঠকদের জাগতে পারে গল্পটি পড়ে।
পর্যটন
পর্যটন শিরোনামে তিনটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। দু’টি লেখা সম্পদক’র। হিরারি তেনজিং-এর এভারেস্ট জয়ের ৬০ বছর ও তারুয়া সমুদ্র সৈকত যেন কক্সবাজার-কুয়াকাটাকেও হার মানিয়েছে এবং মোঃ অলিউর রহমান এর রূপে ঝলমল নিঝুম দ্বীপ। আগেই বলে নিই, লেখাগুলোর কোন নির্দিষ্ট শিরোনাম কিন্তু চলন্তিকা মূল সাইটে নেই। পরবর্তীতে এ ধরনের লেখার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সংযুক্ত করা যেতে পারে।
হিরারি তেনজিং-এর এভারেস্ট জয়ের ৬০ বছর লেখাটি দিয়ে পাঠক কেবল হিলারি ও তেনজিং এর সর্বপ্রথম এভারেস্ট জয়ের কথাই জানবেন না; কিন্তু এই এভারেস্ট কিভাবে সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো এবং এর জরিপ কাজের অগ্রগতি/ইতিহাস সহ এভারেস্ট সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য জানতে পারবে। শুরুতে একটু মর্মাহতই হবেন পাঠক। কারণ “এতে আরোহণ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২১০ জন পর্বতারোহী প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ৮ জন ১৯৯৬ সালে পর্বতের অত্যন্ত উঁচুতে ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারান। বিশেষত ডেথ জোন এ আবহাওয়া এতোটাই প্রতিকূল যে বেশিরভাগ সময় হতভাগ্য পর্বতারোহীর মৃতদেহ সেখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হয় না। এরকম কিছু দৃশ্য আদর্শ পর্বতারোহণ রুট থেকে লক্ষ্য করা যায়।” তারপরেও পৃথিবীর এই অপার সৌন্দর্যকে জয় করতে প্রতিবছরই শত শত পর্বতারোহী ভিড় জমান নেপালে।
তারুয়া’র সমুদ্র সৈকত নিয়েও লেখকের আগ্রহ ও বর্ণনা একে একটি অন্যতম সৌন্দর্যময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নিশ্চিত ভাবে প্রকাশ করেছে।
আমি আলোকপাত করতে চাই পর্যটন এর পরবর্তী লেখাটির দিকে। চলন্তিকা বøগে রহস্য গল্প যেমন আছে তেমনি আছে অলৌকিক গল্পও। অনিকেত আহমেদ লিখেছেন তেমনি একটি অলৌকিক গল্প যার নাম ‘দেওগাঁ’য়ের গণকবর’। এ ধরনের গল্পের কদর আজকাল বেশ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। তবে মুক্তিযুদ্ধ ও গণকবর নিয়ে লেখকের একটা অনুভূতিও কিন্তু জুড়ে আছে গল্পটির শেষ দিকে।
ইচ্ছে কথা
বাবা দিবসকে নিয়ে ইচ্ছে কথা শিরোনামে শওকল আলী বেনু’র যা পারিনি আমি লেখাটিও পাঠকের মর্ম স্পর্শ করবে। বাবাকে ভালোবাসি কিংবা মা তোমাকে ভালোবাসি বলতে আমাদের যে দ্বিধা তা-ও কেটে যেতে পারে।
অণুকাব্য
সূচিপত্রে সর্বশেষ লেখাটি একটি অনুকাব্য, বৃষ্টিকে নিয়ে চমৎকার দুটি অনুকাব্য লিখেছেন অংকুর। কাব্য গুলোতে শব্দ ও ছন্দের ব্যবহার চমৎকার আবহ তৈরি করেছে।
পরিশেষ: চলন্তিকা ঈদ সংখ্যাটির অলঙ্করণ ও সাজসজ্জা খুবই সুন্দর হয়েছে। আমি এর সূচিপত্র অনুসারে আলোচনা করেছি। তবে সম্পাদক এটিকে যেভাবে সাজিয়েছেন (কিছু ছড়া, তারপর কবিতা, তার পর গল্প) তা নিঃসন্দেহে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং পাঠের এক ঘেয়েমিও লাগবে না। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ নিয়ে পাঠক পড়ে শেষ করে দেবে ৮১ পৃষ্ঠার অনবদ্য এই সংকলনটি।
পরিশেষে বলব, আমি নিজেও খুব বড়সড় পণ্ডিতও নই। সব লেখারই যথাযত বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা ও এখতিয়ার আমার নেই। করতে পেরেছি যে তা-ও নয়। তারপরেও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি একজন পাঠক হিসেবে সংখ্যাটির প্রায় সকল লেখা প্রথমত পাঠ করতে এবং একজন পাঠক হিসেবেই আমার মন্তব্য জানাতে। এই সমালোচনা যদি কেউ গ্রহণ করেন তা হবে আমার সফলতা যদি গ্রহণ না-ও করেন তাহলেও আলোচনার মূল জ্ঞাতব্য বিষয়টি আমার দায়িত্বেই রেখে দেব। কষ্ট করে পড়ার জন্য সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
২,৩৪১ বার পড়া হয়েছে
ফয়েজ ভাই, আপনি খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন। মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। আশা করি প্রতি সংখ্যারই এভাবে সমালোচনা করবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাই আমি চেষ্টা করেছি আপনার দেওয়া দায়িত্বটি পালন করতে। আরো সময় দরকার ছিল। ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
এক লেখাতে আপনি পুরো ৮১ পৃষ্ঠাকে তুলে এনেছেন। ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যাবে। শুভকামনা জানবেন।
ধন্যবাদ আপনাকেও ভাই। আপনার বিজ্হান বিষয়ক লেখা আমার ভালো লাগে। মন্তব্য করার জন্য ও লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
সমালোচনা অনেক ভালো লাগল এবং অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ ফয়েজ ভাইকে।
মিন্টু ভাই কেমন আছেন? আমরা একে অন্যের কাছ থেকে শিখছি। ধন্যবাদ।
জ্বী ভালো আছি। আপনাকেও ধন্যবাদ।
দোয়া করি ভবিষ্যতে একজন বড় মাপের সমালোচক হউন।
এই দোয়াটা কইরেন না ভাই। সমালোচকদের কিন্তু কেউ ভালোবাসে না। আজকাল বাহবা পেতে সবাই ভালোবাসে। নকল বাহবা। বর্তমান সময় সমালোচনা পছন্দ করে না।
ভীষণ ভালো লেগেছে আপনার মূল্যায়ন। আমাদের সমালোচনা সাহিত্যের যে করুন অবস্থা তা বলাই বাহুল্য। অনেকে বলেন, রবীন্দ্রনাথ এ জায়গাটায় বেশী সময় দেননি বলে সমালোচনা সাহিত্যের এ হাল। এ মতকে এড়িয়ে গেলেও বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের দুরবস্থা এড়ানো যায় না। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এর শিকার। ( এ ব্লগে রবীন্দ্রনাথের এ দুর্ভাগ্য নিয়ে আমার একটা কবিতা আছে)ফলে বঙ্কিমচন্দ্রই এখনো টিকে আছেন বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের কুতুব মিনার হিসাবে।
আপনার সমালোচনার সক্ষমতা উঁচু মানের। দয়া করে এর চর্চাটি বলবৎ রাখবেন।
শুভেচ্ছা।
কামাল ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সমালোচনা ও সমালোচনা হজম করর ক্ষমতা থাকলে আমাদের সাহিত্যও একদিন বিশ্বমানের সাহিত্য হবে। কৃতজ্ঞতা।
আপনার সমালোচক খুব ভাল লাগল।
ধন্যবাদ আরিফ ভাই। লিখে যান অবিরত। ভালো থাকুন।
ফয়েজ ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই জন্য যে, ভার্চুয়াল জগতে সাহিত্যের ক্ষেত্রে এরকম একটি প্রাণবন্ত এবং গঠনমূলক সাহিত্য সমালোচনা বর্তমানে সময়ের দাবী, ফয়েজ ভাই সাহিত্য জগতের অনেক বড় একটা দায়ভার স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন…এই সমালোচনা নিয়মিত পাবার প্রত্যাশা রাখছি….
ভাই স্বেচ্ছায় এই দায়ভার তুলে নেবার মত ক্ষমতা ও সময় কোনটাই আমার ছিল না। সম্পাদক কিন্তু অনেককেই বানাতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জনপ্রিয় লেখকই কিন্তু সম্পাদকদের সৃষ্টি। তাই এই লেখার কৃতিত্ব আমি চলন্তিকার সম্পাদক সাহেবকেই দিতে চাই। তিনি যদি আমাকে এই দায়িত্ব না দিতেন তাহলে আমি কখনোই এই কাজ করার অনুপ্রেরণা পেতাম না।
আপনারা সবাই কষ্ট করে পড়ছেন বলে আপনাদেরকেও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমি চলন্তিকাকে ভালোবাসি, চাই চলন্তিকায় মান সম্পন্ন লেখা প্রকাশিত হোক আর অনলাইন লেখালেখির যে জোয়াড় সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে সেই জোয়াড়ে চলন্তিকা সবার সামনে থাকুক।
জনাব আহমদ ফয়েজ অনেক সুন্দর একটি কাজ করেছেন। সমালোচনা এখন আর চোখে পড়ে না খুব। আমরা কী লিখছি, কেমন হচ্ছে, কেমন হওয়া উচিৎ ইত্যাকার বহু বিষয় আছে যা সমালোচনার মধ্যেই বেরিয়ে আসে। লেখকদের পরিশুদ্ধির জন্য, লেখার উৎকর্ষতার জন্য নিজেকে জানার জন্য সমালোচনার বিকল্প নেই। খুব সীমিত আকারে হলেও আপনি সমালোচনা করেছেন। এতে আমি উপকৃত হয়েছি।
সম্পাদক মহোদয় ও আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদ বরকতউল্লাহ ভাই। আপনার সরল উক্তি ও ভাবনা আপনাকে অনেক উপরে নিয়ে যাবে। লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে কৃতজ্ঞতা।
আমি দুঃখিত, আপনার নামে একটা ভুল হয়ে গেছে। হবে আহমেদ ফয়েজ।
সুন্দর সমালোচনা পড়ে মন ভরে গেল।
আপনাকে ধন্যবাদ তুষার আহসান।
করলে তুমি সমালোচচনা
মন্দ লাগলো বলবোনা
কঠিন কাজটি অনায়াসে
করেই গেলে ভালোবেসে ।
পড়লেন বলে খুশি হলাম
ধন্যবাদে মন ভরে দিলাম;
ভালো থাকুন এই কামনায়
আজকের মতো ইতি টানলাম।