জেগে থাকে শুকতারা
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1449বার পড়া হয়েছে।
শুকতারা জেগে থাকে। রাত ভর ওকে দেখা যায়। মৌমনা দেখেছে সে তারা। মা তাকে দেখিয়েছিল–আকাশে একটা তারা খুব জ্বল জ্বল করছিল। মা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলে ছিল, ‘দেখ মৌমনা,ওই যে তারাটা–ওকে শুকতারা বলে। রাত ভর ও জেগে থাকে।’
ছোট মৌমনা তা জানে না। তবে তারাটাকে সে অনেকবার দেখেছে। উজ্জ্বল একটা তারা,আকাশে জ্বল জ্বল করতে থাকে!
আজ দুদিন হল মা কোথায় চলে গেছে! দু দিন ধরে মৌমনা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না! ‘কোথায় গেলো মা ?’ প্রশ্ন করেছে বাবাকে।
–‘তোর মা,মামার বাড়ি ঘুরতে গিয়েছে’,কয়েক বার প্রশ্ন করার পরে বাবা জবাব দিয়েছিল।
–‘আমায় না নিয়ে চলে গেলো ?’ পাঁচ বছরের মৌমনা অভিমান ভরে বলে উঠলো।
–‘চলে গেছে তো আমি কি করবো ?’ বাবা রাগত বলে উঠে ছিল।
মৌমনা চুপ করে থাকল। ওর খুব কান্না পাচ্ছিল। মা তাকে না নিয়ে মামা বাড়ি চলে গেছে! যাবার আগে একবারও বলে নি। কেমন চুপ চুপ করে চলে গেলো !
এক দিন রাতে মৌমনার ঘুম ভেঙে গিয়ে ছিল,দেখল,মা বিছানায় নেই। বাবাও পাশে শোয় নি ! বাবা শোয় নি ভালই হয়েছে,বাবা খুব রাগী,একটার বেশী দুটো কথা বললেই রেগে যায়। রাতে নাকি আরও বেশী রেগে থাকে,মা রাতে ওকে বাবার সঙ্গে কথা বলতে না করে। রাতে মা বাবার সঙ্গে বেশী কথা বলে না। খুব ভয় লাগে বাবাকে। বাবার চোখ দুটো বেশ লাল থাকে,ভালো ভাবে যেন চলতে পারে না,চুপ করে পাশের ঘরে বসে থাকে। মা এত ভালো,বাবা এত রাগী কেন? এ প্রশ্নের জবাব মৌমনা জানে না।
রাতে ঘুম ভেঙে গিয়ে ছিল মৌমনার,ঘরে চীৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিল খুব। ও মা,বলে কেঁদে উঠে ছিল। ও দেখল,মা কাঁদতে কাঁদতে পাশের ঘর থেকে এলো!
–‘কি হল মা,তুমি কাঁদছ কেন?’
চোখ মুছতে মুছতে মা হেসে ছিল,‘কিছু হয় নি মা,তুমি ঘুমাও।’
–‘বাবা তোমায় মেরেছে?’ মৌমনা হঠাৎ প্রশ্ন করে উঠেছিল।
–‘কোই? না তো !’ মা এই ছোট্ট মেয়েটাকে জানতে দিতে চায় না যে তার বাবা তার মাকে প্রায়ই এমনি মারে ! শরীর থেকে যদি পোশাক সরিয়ে ফেলা যায় তবেই দেখা যাবে কত দুঃখ,কত যন্ত্রণার ক্ষত তার বাবা মাকে এঁকে দিয়েছে। কিন্তু তা তো মেয়েকে বলা যাবে না ! রুমনি,মৌমনার মা তাই চুপ করে থাকে–নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েকে ঘুম পাড়াবার চেষ্টা করে।
এর পর দু দিন আগের কথা,মৌমনা সকালে উঠে মাকে দেখতে পেল না। বাবা তখন ঘুমচ্ছিল। রাগী বাবাকে সে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করল না। কেবল কালি কাকাকে সে জিজ্ঞেস করল,মা কোথায় কালি কাকা?
কালি কাকা ঘরের কাজের লোক,বহু দিন ধরে কাজ করছে। ঘরের সবার বিশ্বাস ভাজন। মৌমনাকে খুব ভালোবাসে,বলল,‘আমি তো বলতে পারছি না,মৌমা ! কোথাও গেছে হবে ?’
পর দিন কালি কাকা আশ্চর্য হোয়ে গেলো যখন সকালে এসে দেখল গিন্নী মা এখনো ফেরে নি ! তার মনে প্রশ্ন এলো তাহলে কোথায় চলে গেলো গিন্নী মা? বাবুকে সে কোনও প্রশ্ন করতে সাহস পেল না। এদিকে মৌমনা বার বার মার কথা জিজ্ঞেস করে কান্না কাটি শুরু করল।
দুটো রাত এমনি ভাবে কেটে গেলো। সকালে কালি কাকা এসে দেখল, মৌমনা মার জন্যে কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে ! অগত্যা কালিকাকা মৌমনার বাবার ঘরে ধীরে ধীরে গিয়ে ঢুকল—‘দাদাবাবু ! দাদা বাবু !’ বলে ডাকল।
মৌমনার বাবা,উমেশ ঘরের এক কোনায় চেয়ারে মুখ নিচু করে বসে ছিল। কালির ডাকে মুখ তুলল সে। কালি দেখলো,একি,বাবুর চেহারা একি হয়েছে! এমন লাগছে কেন তাকে ! কি এমন চিন্তায় তিনি এত মুষড়ে গেছেন !
–‘দাদাবাবু ! বলছিলাম কি,গিন্নি মা কোথায় গিয়েছেন? মৌমাকে তো আর রাখতে পারছি না,ও কেঁদে ভাসাচ্ছে’,অনেক সাহসে ভর করে যেন কালি কাকা কথাগুলি বলল।
–‘গিন্নি মা তার দাদার বাড়ি চলে গেছে।’ মৌমনার বাবা, উমেশ জবাব দিল।
–‘সে কি ! মৌমাকে না নিয়ে ?’ আশ্চর্য হোয়ে কালি কথাগুলি বলল। তারপর একটু থেমে বলে উঠলো,‘কবে আসবে বাবু?’
–‘আমি জানি না’,উমেশের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল।
আর কিছু না বলে কালি,বাবুর ঘর থেকে চলে এলো,ও ঠিক করলো রাতে মৌমনার ঘরেই থাকবে,যত দিন না তার মা ঘরে ফিরে আসে।
মৌমনার আর একটুও ভালো লাগছিল না। দু রাত কেটে গিয়ে আজ তৃতীয় রাত পড়ল। ওর ঘুম আসছিল না—খুব,খুব কান্না পাচ্ছিল। ওর ঘরের দক্ষিণ দিকে যে জানলাটা আছে সেটা খুলে বাইরের দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকলো। আকাশের দিকে নজর পড়ল। তারায় তারায় ভরে আছে সমস্ত আকাশ—হঠাৎ তার চোখে পড়ল এক কোনায় বেশ জ্বল জ্বল করছে একটা তারা,এটাই কি তা হলে শুকতারা !
মৌমনা তাকিয়ে থাকলো শুকতারার দিকে। তারারা খুব সুন্দর হয়। ওরা যেন ফুল! ওদের পাপড়ি আছে–ফুলের মতই উজ্জ্বল! এই আকাশেও কি তা হলে একটা বাগান আছে? বাগানের তারাগুলিই কি আকাশের ফুল ! মার কাছে মৌমনা গল্প শুনেছে–রাতপরীদের গল্প। পরীদের দেশ নাকি চাঁদের কাছাকাছি। হঠাৎ মৌমনার ঘরের সামনের দীঘির দিকে নজর গেলো। এত সময় চাঁদকে ভাল ভাবে দেখা যাচ্ছিল না,এখন প্রায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে–বড় গাছটার মাথার ফাঁক দিয়ে। দীঘির জলে যেন সেই চাঁদটা স্নান করতে নেমেছে ! চারদিকটা এখন অনেক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। হঠাৎ ওর মনে হল,কে যেন দাঁড়িয়ে আছে না দীঘির পারে ! আর সে তারই দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ! অবাক হল ও। ধীরে ধীরে চেহারা তার চোখের সামনে স্পষ্ট হতে থাকলো–আর একি ! ঠিক মায়ের মত দেখতে যেন ! আরও পরিষ্কার হল চেহারা,ধীরে ধীরে মৌমনার দিকে সে ছায়ামূর্তি তাকাল। ও দেখল আরে—এ যে তার মা ! মা দাঁড়িয়ে আছে। মা ওখানে কেন দাঁড়িয়ে ! মা কেন ওর কাছে আসছে না ? ও চীৎকার করতে গিয়েও থেমে গেলো। ঘরে বাবা আছে–রাতে চীৎকার করলে বাবা রাগ করবে,ওকে বকে উঠবে,বাবাটা তার খুব খারাপ।
মৌমনা দেখল,সত্যি ওর মা,ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। হ্যাঁ,মা এবার ওকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। আমার কাছে আসছে না কেন মা ! আবার দেখল মৌমনা,মা হাসি মুখে তাকেই ডেকে চলেছে।
এবার আর থাকতে পারলো না মৌমনা। বাবা যাতে বুঝতে না পারে,কালি কাকার যাতে ঘুম ভেঙে না যায়,এমনি ভবে ও খুব সাবধানে পা টিপে টিপে গেলো দরজার ধারে,তারপর দরজা খুলে অতি সন্তর্পণে এগিয়ে চলল দীঘির পারে,তার মার কাছে।
মৌমনা মার কাছে এগিয়ে গেলো–দীঘির পারে ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওর খুব ভালো লাগছে–আবার রাগও হচ্ছিল। অভিমান হচ্ছিল,মা কেন ওকে না বলে চলে গিয়েছিল !
–‘আয় মা !’ মা ডেকে উঠলো।
–‘তুমি কোথায় গিয়েছিলে মা !’ মৌমনা দুঃখে কেঁদে উঠলো,‘আমাকে ফেলে তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে মা !’
–‘আমি আছি বাবা ! তোমার কাছেই আছি। তোমার কান্না দেখে আমি কি চুপ করে বসে থাকতে পারি বাবা !’ মৌমনাকে জড়িয়ে ধরল মা,খুব আদর করল,চুমু খেলো,মৌমনার মনে হল মার শরীর কেমন ভিজে ভিজে লাগছে—একটা বিশ্রী চাপা গন্ধ যেন মার শরীরে জড়িয়ে আছে,কেমন ভিজা,ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা মার গা ! ও বলল, ‘মা,তুমি কি এখন স্নান করেছ ? তোমার গা ভেজা কেন ?’
–‘জানতে পারবি,বাবা–ক দিন পড়ে জানতে পারবি।’ মা জবাব দিল।
–‘চলো,মা,ঘরে চলো ! অনেক রাত হল,ঘুমবে চলো’,মৌমনা মায়ের হাত ধরে ধীরে টানল।
–‘না,বাবা ! আমি এখন যেতে পারব না,তুমি যাও,আমি আসবো’,মা বলে উঠলো।
মৌমনার ঘুম পাচ্ছিল। মা ঘরে কেন যাবে না ও বুঝতে পারলো না, বলল, ‘তুমি একা এই দীঘির ঘাটে কি করবে ?’
–‘এখান থেকে তোমায় চেয়ে দেখব,আমার আকাশের চাঁদকে দেখব,তারা দেখব,তারপর চলে যাবো’,মা মৃদু হেসে বলে উঠলো।
তারার কথায় মৌমনার শুকতারার কথা মনে পড়ে গেলো। ও বলে উঠলো,‘মা শুকতারা কোথায়?’
আকাশের দিকে তাকাল মা,হাত বাড়িয়ে আঙ্গুল মেলে দিয়ে বলে উঠলো,‘ওই যে–ঐটা শুকতারা’।
মৌমনার ভারী আশ্চর্য লাগলো,মার হাতগুলি ক দিনে যেন অনেক বড় বড় লাগছে! আঙ্গুলটা যেন অনেক বড়,ওই যে শুকতারা,বলে তার মা আঙ্গুল দিয়ে যখন দেখাচ্ছিল তখন ওর মনে হচ্ছিল,ওরে বাবা এত বড় আঙ্গুল কি করে হোয়ে গেলো মার !
মৌমনাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়ে গেলো মা। মৌমনা ঘরের দরজার কাছে এসে মুখ ঘুরিয়ে দেখল,ওর মা চলে যাচ্ছে–ওই দীঘির দিকে–ওই দীঘির কাছে কেন মা চলে গেলো !
কালি কাকা দু রাত ধরে মৌমনার ঘরের মেঝেতে শুচ্ছে। মৌমনা রাতে ভয় পেতে পারে ভেবেই এমন ব্যবস্থা। কালি দেখেছে–মেয়ের প্রতি বাবার তেমন টান নেই !
সকালে উঠেই মৌমনা কালি কাকাকে বলে উঠলো, ‘জানো,মার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’
–‘কোথায় !’ কালি আশ্চর্য হল।
–‘ওই দীঘির পারে–আমায় আদর করল,আমায় শুকতারা দেখাল!’মৌমনা আনন্দের সঙ্গে বলে উঠলো।
–‘সে কি !’আশ্চর্য হল কালি কাকা–সে আর কথা বাড়াল না,ধরেই নিলো মৌমনা রাতে স্বপ্ন দেখেছে।
আবার দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলো। মৌমনা জানালায় দাঁড়িয়ে ছিল,দেখতে পেল ওর মা গতকালের মত তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। ও আজ কোন কথা না বলে চুপ চাপ কলের পুতুলের মত দরজা খুলে মার কাছে চলে গেলো। মা ওকে আদর করল,শুকতারা দেখাল, এমনি সময় মৌমনার ঘরের দরজায় শব্দ হল।
মা তাড়াতাড়ি মৌমনাকে বললেন,‘তোমার বাবা আসছে ! আমি যাই’,কথা কটি বলে মা চলে যেতে থাকলো,মৌমনা মায়ের যাবার পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো,কিন্তু এ কি ? মা দীঘির জল ধরে নেমে যাচ্ছে কেন ! এত রাতে মা কি স্নান করবে ? কিন্তু না,মা ডুবে যাচ্ছে–ক্রমশ: গভীর জলে !
মৌমনা চীৎকার করে ডেকে উঠলো,‘মা ! মা ! মা !’
মৌমনার চীৎকার শুনে ওর বাবা দীঘির ধারে ছুটে এলো। মৌমনাকে দেখে খুব আশ্চর্য হোয়ে বলে উঠলো,তুমি এখানে–এত রাতে ? কি হয়েছে–চীৎকার করছ কেন ?
মৌমনা আবার চীৎকার করে বলে উঠলো,‘ওই যে,ঐ যে বাবা,মা ডুবে গেলো ওই খানটায়,জলে ডুবে গেলো মা !’
–‘কি বলছ তুমি,তোমার মা এখানে কি করে আসবে !’বাবা বলে উঠলো।
–‘আমি মার সঙ্গে কথা বলেছি,মা আমায় আদর করেছে,তুমি আসছ বলে মা তাড়াতাড়ি ওই দীঘির জলে ডুবে গেলো। মাকে উঠাও বাবা,মাকে উঠাও’,বলে মৌমনা চীৎকার করতে থাকলো।
–‘চুপ ! ঘরে যাও তুমি’,চাপা চীৎকার করে বলে উঠলো ওর বাবা,‘ঘরে যাও তুমি !’
মৌমনা কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেলো। ঘরের জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দীঘির দিকে তাকিয়ে ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
এবার মৌমনার মার হারিয়ে যাওয়া রাতের কথায় ফিরে আসছি–সে দিন রাতে অতিরিক্ত নেশা করে ফিরল মৌমনার বাবা,উমেশ । গুমএসেই গুম হয়ে বসেছিল ঘরের এক কোণে। মৌমনার মা,রুমনি ভয়ে ভয়ে তাকে দুবার ডাকল,‘কি গো খাবে এসো।‘ডাকের সারা না পেয়ে গায়ে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,‘কোই গো খাবে ওঠো !’
অন্যমনস্ক নেশাতুর উমেশ সামান্য ধাক্কায় মাটিতে গড়িয়ে যাচ্ছিল। অনেক কষ্টে কোন মত নিজেকে সামলে নিলো। তার মনে হল নেশার চেতনায় সে ধাক্কা খেলো,রেগে গিয়ে তিড়িং করে দাঁড়িয়ে গেলো,স্ত্রীর ওপর ভীষণ রেগে গেল উমেশ—নেশার ঘোরেই সে স্ত্রীর ওপর কিল,চড় বসিয়ে দিলো।
অন্য দিন কোন কথাই বলে না,আজ অনেক রাত হোয়ে গিয়ে ছিল,দুজনই তখন অভুক্ত, রুমনি তাই রেগে গিয়ে.বলে উঠলো,‘মাতাল কোথাকার,লজ্জা করে না রোজ রোজ বৌয়ের গায়ে হাত তুলতে !’
ব্যাস,রাগে যেন সমস্ত নেশা তার ছুটে গেলো,আচমকা সে আগুনের মত রেগে উঠলো,গায়ের সমস্ত জোর নিয়ে রুমনিকে ধাক্কা মেরে দিলো। সে মোক্ষম ধাক্কা রুমনি সামলাতে পারলো না,দরজার চৌকাঠে তার মাথা গিয়ে পড়ল। মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো সে।
একটা ঘণ্টা সমস্ত কিছু চুপ চাপ,সামান্য নেশার ঘোর কাটতেই উমেশের মনে পড়ল,আরে রুমনি তার ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে ছিল না ! ঝট করে উঠে এলো সে,দেখল,জ্ঞানহীন রুমনির দেহ মাটিতে পড়ে আছে। চাপ চাপ রক্তে মেঝের অনেকটা জাগা ভরে আছে! সে মাথায় জল ঢালল, অস্ফুট ডাকল, ‘রুমনি,রুমনি’,বলে। শেষে গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলো উমেশ। ঠাণ্ডা হোয়ে গেছে গা,নাকে হাত দিলো,শ্বাস নেই,বুকে কান পাতলো–নেই,নেই,নেই রুমনি নেই!
উমেশ অনেক সময় বসে থাকলো মৃত দেহের পাশে। রুমনির গায়ে হাত রেখে অনেক সময় কাঁদল। তারপর মাঝ রাত যখন পেড়িয়ে গেলো,ঘরে রাখা নেশাটুকু ঢক ঢক করে গিলে ফেলল। রুমনির দেহটাকে ঘরে রাখা বড় টিনের ট্রাংকে ঢুকিয়ে দিলো। ট্রাংকের এক পাশের হুকে দড়ি বাঁধল আর ধীরে ধীরে টেনে নিলো দীঘির পারে। দীঘির পারে মাছ ধরার ডিঙি বাঁধাই ছিল। সে ট্রাংক তাতে উঠিয়ে নিয়ে মাঝ দীঘির জলে ডুবিয়ে দিলো। সবকাজ আধ নেশার ঘোরেই করে নিলো উমেশ ।
এবার দুটো দিন গুম হয়ে ঘরের কোণে বসে থাকলো উমেশ। অতীতের সমস্ত স্মৃতি চারণ করল। নির্দোষ রুমনির কথা ভেবে দু রাত কেঁদে ভাসাল। অনুশোচনায় আর সে স্বাভাবিক থাকতে পারছিলো না। গত কাল রাতে সে যখন দীঘির ধারে গেলো,সে দেখল,হ্যাঁ,স্পষ্ট দেখতে পেল,রুমনি মৌমনার সঙ্গে কথা বলছে ! বুঝতে পেরেছিল সে যে এ নিশ্চয় রুমনির অতৃপ্ত আত্মাই হবে। ওর টানে নয়,ওর মেয়ের টানেই ও ঘুরে বেড়াচ্ছে। দু দিন নেশা না করেও খুব কান্না পাচ্ছিল তার। রুমনিকে দেখেও মৌমনার কাছে সে কথা স্বীকার করল না। দীঘির কালো জলের দিকে অনেক সময় ধরে তাকিয়ে থাকল। দু চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসছিল। অনুশোচনায় ভেঙে পড়েছিল উমেশ। কে জানত সেদিনের ধাক্কায় রুমনি চির দিনের মত তাকে ছেড়ে চলে যাবে ! এমনি ধাক্কা এর আগেও তো কতবার তাকে দিয়েছে ! দীঘির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো উমেশ,আমি শাস্তি চাই,রুমনি আমি এমনি চুপ করে মাথা নিচু করে থেকে আর বাঁচতে পারছি না ! ও যেন নিজের অজান্তেই পথ ধরে ছুটে চলল…হাজির হল পুলিশ থানায়। নিজেকে সে আত্মসমর্পণ করল। নিজের সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে নিলো।
সকালে খবর এলো পুলিশ থানা থেকে লোক এসেছে। দীঘির গভীর জল থেকে তোলা হল সেই বিরাট ট্রাংক। তার ভেতর থেকে মৌমনার মা,রুমনির মৃত দেহ বেরিয়ে এলো। অসহ্য পচা গন্ধ চারি ধার ছড়িয়ে পড়লো।
মৌমনা সব জানতে পারলো। চীৎকার করে ছুটে এলো মাকে দেখতে। আধ গলা পচা মার শরীরের ওপর সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল। সবাই ওকে ধরে রাখল। মাকে সে একবারটি ছুঁয়ে দেখতে পারলো না ! পুলিশরা ওর মাকে নিয়ে চলে গেলো !
সে রাতে মৌমনা চুপ করে জানলার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। তার দু চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসছিল। আজ মা আর তার আসবে না,ওকে আর ডাকবে না,ওর মাকে পুলিশ নিয়ে চলে গেছে। মা তার মরে গেছে–মরে গেলে কোথায় যায় ? হঠাৎ মৌমনার আকাশের শুক তারার কথা মনে পড়লো—ওই তো আকাশের এক কোণে জ্বলজ্বল করছে সেই তারাটা ! যেন ওর দিকেই ও তাকিয়ে আছে ! মৌমনা দেখল,স্পষ্ট দেখল,মা তার শুকতারা হোয়ে তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে !
সমাপ্ত
১,৫৯৭ বার পড়া হয়েছে
কাকা , অনেক মজার ভৌতিক গল্প ।
ভাল লাগা জানিয়ে দিলাম ।
ভাল থাকবেন প্রত্যাশা রইল ।
এত বড় গল্পের পাঠক পাবো আশা ছিল নয়া, আপনি ধৈর্য ধরে পড়েছেন জেনে খুব ভাল লেগেছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
অসাধারন গল্প! একে বড় গল্প বলছেন আপনি ? আমি তো এক নিমেষে গিলে ফেলেছি। এই গল্পে প্রায় ২০০০ শব্দ আছে আর সাহিত্য সমালোচকদের মতে এটি একটি উপযুক্ত গল্পের সাইজ বিশেষ করে পত্রিকার জন্য। আরেকটি গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
আমি এ ধরনের ব্লগের কথা বলছি–এখানকার হিসাবে অনেক বড় বলে মনে হল।আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমি আনন্দ পেলাম।এ লেখাটি আমার অনেক আগের লেখা–কিন্তু অপ্রকাশিত ছিল।এমনি অনেক লেখাই আমার এখনও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে।
ভুতের গল্প। বরাবরের মতোই ভাল লাগল।
ভাল লেগেছে জেনে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
ভাল লেগেছে ভূতের গল্পটি।ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
আপনাকেও শুভেচ্ছার সঙ্গে ধন্যবাদও রইল।
গল্পটি পড়ে বেশ মুগ্ধই =হলাম
ভাল ভাবনার প্রয়াস দেখা গেল
সো নাইস