Today 25 Mar 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সী – আর্নেস্ট হেমিংওয়ে – ৪

লিখেছেন: হামি্দ | তারিখ: ০৬/০৭/২০১৪

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1591বার পড়া হয়েছে।

‘ধন্যবাদ’ – বলল বুড়ো। তারপর নিজের সৌজন্য বোধে নিজেই অবাক হয় ।

‘ভদ্রতা বোধ আমারও আছে। তবে এটা যেমন আমার কোনো দর্বলতা নয় তেমনি আমার অহংবোধের সাথে আপোষ করেও নয়’ মনে মনে ভাবে সে। তার পর বলে, ‘স্রোত দেখে মনে হচ্ছে আগামি কালটা ভালই কাটবে’ ।

‘কাল কোথায় যাচ্ছ?’ জানতে চায় বালকটি।

‘অনেক গভীরে চলে যাবো । যেখান থেকে ফিরতি বাতাসে চলে আসা যাবে। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমি বের হয়ে যেতে চাচ্ছি।’

‘আমার নৌকার মালিককেও গভীর সমুদ্রে তোমার কাছাকাছি নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো। তারপর তুমি যদি সত্যিই বড় একটা মাছ বড়শিতে গেঁথে ফেলতে পারো তবে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারবো।’ একটানা বলে যায় বালকটি।

‘তোর মহাজন অতো গভীরে যাবার লোক না।’

‘তা ঠিক। তবে আমি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঠিকই গভীরে নিয়ে যাবো। দূরে কোনো পাখি দেখিয়ে বলবো ঐখানে মাছ আছে অথবা মিছেমিছি কোনো ডলফিনের লোভ দেখাবো তাকে’, বলল বালকটি।

‘তার চোখের অবস্থা কি এতই খারাপ?’

‘আরে ওই লোক তো প্রায় অন্ধ।’

‘অদ্ভূত! অথচ সে কখনো কচ্ছপ শিকার করেত যায় নি। কচ্ছপ শিকারীদের চোখ নষ্ট হয়ে যায়’- বলল বুড়ো সান্তিয়াগো।

‘কিন্তু তুমিতো চার বছর কচ্ছপ শিকার করেছ। কই তোমার চোখ তো ঠিকই আছে’ -বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করে বালকটি।

‘আমি এক বিস্ময়কর বুড়ো।’

‘কিন্তু বড়সড় একটা মাছ শিকারের মত যথেষ্ট শক্তি এখনও তোমার শরীরে আছে।’

‘আমিও তাই মনে করি। তাছাড়া মাছ ধরার অনেক কায়দা কানুন আছে।’

‘চল, মালপত্র সব বাড়ি রেখে আসি। তারপর আমি আবার ঝাঁকি জাল নিয়ে সারডিন পোনা ধরতে যাবো’, বলল বালকটি।

তারা নৌকা থেকে মালপত্র নামিয়ে আনলো। মাস্তুলটি কাঁধে নিলো বুড়ো। বালকটি উঠিয়ে নিল কাঠের বাকসোটি। বাকসোর ভিতরে আছে বঁড়শির জন্য শক্তভাবে পাকানো বাদামি রশি, কোঁচ আর হাতলসহ টেটা। টোঁপের বাকসো আর মুগুরটা রইল নৌকার পাটাতনের নিচে। বড় আর বেয়াড়া মাছ ধরা পরলে মুগুরটি দিয়ে পিটিয়ে তাকে বাগে আনা হয়।

বুড়ো জানে তার নৌকা থেকে কেউ চুরি করবে না। তারপরও পালটি আর মোটা রশিগুলো বাড়ি নিয়ে যাওয়াই ভালো মনে করে সে। কারণ কুয়াশায় এগুলোর ক্ষতি হতে পারে। আর কোঁচ কিংবা টেটা নৌকাতে রেখে চোরকে প্রলুব্ধ করার কোনো মানে হয় না। যদিও সে জানে যে, স্থানীয় কেউ তার নৌকা থেকে চুরি করবে না।

হাঁটতে হাঁটতে তারা বুড়োর কুটিরে পৌঁছে গেল। তারপর খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। বুড়ো পাল সমেত মাস্তুলটি ঘরের বেড়ার সাথে হেলান দিয়ে রাখল আর বালকটি বাকসো আর অন্যান্য মলপত্র তার পাশেই রেখে দিল। মাস্তুলটি প্রায় তার কুটিরের সমানই লম্বা। কুটিরটি স্থানীয়ভাবে গোয়ানো নামে পরিচিত রয়েল পাম গাছের কচি বাকল দিয়ে তৈরী। বুড়োর কুটিরে একটি বিছানা, একটি মেজ, একটি চেয়ার আর ঘরের নোংরা মেঝের একদিকে কাঠ-কয়লা দিয়ে রান্নার জায়গা। গোয়ানোয় বোনা দেয়ালে টানানো রয়েছে পূণ্যাত্মা যীশু আর কুমারী মাতার একটি করে ছবি। এগুলো তার স্ত্রীর স্মৃতি। এক সময় তার স্ত্রীর একটি ছবিও দেয়ালে টানানো ছিল। ছবিটি দেখলে তার একাকীত্ব আরও তীব্র হয়ে উঠে। নিঃসঙ্গতা প্রকট হয়ে উঠে। বুড়ো তাই ছবিটি নামিয়ে রেখেছে। তাকের উপর নিজের ভাল একটা শার্ট দিয়ে বুড়ো সেটি ঢেকে রেখেছ।

‘ঘরে খাবার মত কী আছে?’ জিজ্ঞেস করে বালকটি।

‘এক থালা খিচুরি আর মাছ আছে। খাবে নাকি?’

‘না, আমি বাড়ি গিয়েই খাবো। আচ্ছা আমি কি আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে যাবো?’

‘তার দরকার নেই। একটু পরে আমিই জ্বালিয়ে নিবো। না হয় ঠান্ডা খিচুরিই খেয়ে নিবো। ‘

‘আমি কি ঝাঁকি জালটা নিতে পারি?’

‘নিশ্চয়!’

ঘরে কোনো ঝাঁকি জাল নেই। জালটা বিক্রি করে দেয়ার কথা বালকের ভাল করেই মনে আছে। তারপরও তারা এধরনের কাল্পনিক কথোপকথন নিয়মিতই করে থাকে। বালকটি এটাও জানে যে ঘরে কোনো থালা ভর্তি খিচুরীও নেই। সবই কাল্পনিক।

‘পঁচাশি একটি শুভ সংখ্যা। কাল যদি হাজার পাউন্ডের একটি মাছ ধরতে পারি তো তোর কেমন লাগবে রে?’

‘আমি এখন ঝাঁকি জালটি নিয়ে সারডিন পোনা ধরতে যাবো। তুমি কি দরজার সামনে রোদে গিয়ে বসবে নাকি?’

‘হ্যাঁ, আমার কাছে গতকালের পত্রিকা আছে। দেখি বেসবলের কী খবরাখবর আছে।’

গতকালের পত্রিকার ব্যাপারটিও কাল্পনিক কি না ভাবছিল বালকটি। এরই মধ্যে বুড়ো বিছানার নিচে থেকে পত্রিকা বের করতে করতে ব্যাখ্যা করে, ‘পেরিকো এটা আমাকে দিয়েছে। বারে বসে।’

চলবে……………………

১,৬১৮ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা/ জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে................. খেলা ভাঙার অপেক্ষায় এই আমি এক অদক্ষ খেলোয়ার ............
সর্বমোট পোস্ট: ৫০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ২২৭ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-১০-২৯ ০৯:২৩:৫৯ মিনিটে
banner

৬ টি মন্তব্য

  1. আরজু মূন মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক চমত্কার সাহিত্যের আবহে অনুবাদ টি করছেন হামিদ ভাই। বেশ ভাল লাগছে পড়তে। নিখুত বাক্য বিন্যাসে প্রকৃত শব্দের ব্যবহার গল্পটিকে আর ও মহৎ বলিষ্ঠ রূপ দিয়েছেন।

  2. আরজু মূন মন্তব্যে বলেছেন:

    অনেক ধন্যবাদ হামিদ ভাই। শুভেচ্ছা রইল।

  3. সাখাওয়াৎ আলম চৌধুরী মন্তব্যে বলেছেন:

    চমৎকার হচ্ছে। আপনার সাথে আছি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top