দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সী – আর্নেস্ট হেমিংওয়ে – ৯
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1657বার পড়া হয়েছে।
বাংলা রূপান্তর ©
অন্ধকারে দাঁড় বাইতে বাইতে বুড়ো অনুভব করছিল যে, ভোরের আলো ফুটতে আর বেশি বাকি নেই। সমুদ্রের বাতাসের হিস হিসানি আর দুয়েকটা উড়ন্ত মাছের পানিতে ঝাঁপিয়ে পরার শব্দ বুড়োর কানে সঙ্গীতের মুর্ছনা তৈরী করছিল। নৌকার আশপাশে লাফিয়ে উঠা উড়ন্ত মাছগুলো হলো সমুদ্রে বুড়োর প্রধান বন্ধু।
মাছের সন্ধানে সমুদ্রে যেসব পাখি উড়াউড়ি করে সেগুলোর জন্যেও তার অনেক মায়া। বিশেষ করে ছোট ধরনের পাখিগুলো, যেগুলো সারাদিন মাছের সন্ধান করেও তেমন মাছ পায় বলে মনে হয় না বুড়োর। এই পাখিগুলোর জীবন তার নিজের চেয়েও কঠিন মনে হয় তার কাছে। তবে বড় বড় শক্তিশালি পাখিগুলোর কথা আলাদা। তারা অনেক সহজেই মাছ শিকার করে খায়। সৃষ্টিগতভাবে তাদের সেই ক্ষমতা আছে।
ভয়ঙ্কর এই সমুদ্রের উপর ওড়ে বেড়ায় সুন্দর সুন্দর আর মোহনীয় নানা রকম পাখি। বিশেষ করে সামুদ্রিক ভরত পাখি তো খুবই কোমল আর কমণীয় রূপের অধিকারী। একদিকে ভয়াল সমুদ্র আর অপর দিকে ছোট ছোট এসব পাখির মনমুগ্ধকর কমনীয় রূপ। এতে সন্দেহ নেই যে, এমনিতে সমুদ্র অনেক সুন্দর। কিন্তু কখন যে এটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে বলা যায় না। মনোহর পাখিগুলো শিকারের খুঁজে পানিতে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু সমুদ্রের ভয়ঙ্কর গর্জনের মুখে অনেক সময় হারিয়ে যায় এসব পাখির কিচির মিচির শব্দ। শিকারের খুঁজে ডুব দিয়ে তারা নিজেরাই হয়ে যায় ভয়াল সমুদ্রের শিকার। দাঁড় বাইতে বাইতে এসব ভাবছিল সান্তিয়াগো।
স্পেনিশরা ভালবেসে সমুদ্রকে প্রিয়তমা বলে ডাকে। কখনও কখনও ভালবাসা থেকেই সমুদ্রকে দু’চারটা গালমন্দও করে। সমুদ্র তাদের কাছে নারীর মতই প্রেয়সী। সান্তিয়াগোও সমুদ্রকে প্রিয়তমাই মনে করে।
একদল কম বয়সী জেলে হাঙরের কলিজা বিক্রি করে বেশ পয়সা কামিয়েছে। তারা ইঞ্জিনের নৌকা কিনেছে। জালের দড়ির সাথে বয়া লাগিয়ে পানিতে ভাসিয়ে রাখে তারা। তারা সমুদ্রকে পুরুষই মনে করে। তাই তারা কেউ কেউ সমুদ্রকে প্রতিযোগীও মনে করে । হয়তো ভাবে এটা অন্য যেকোনো স্থানের মতো নিছক একটা জায়গা। আবার কেউ কেউ সমুদ্রকে শক্রও মনে করে । কিন্তু সান্তিয়াগো আজীবন সমুদ্রকে নারী হিসেবেই দেখে এসেছে। যে ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই দেয় আবার ইচ্ছে না করলে দেয় না। অমঙ্গলজনক যা কিছু সে করে তা সে রুখতে পারে না বলেই করে। তার মতে নারীর মতো সমুদ্রও চাঁদের দ্বারা মোহাবিষ্ট হয়। চাঁদের জোছনায় সমুদ্র কেবল নিজেই মোহাবিষ্ট হয় না; বরং তার বুকে বিচরনরত সবাইকেই আত্মভোলা করে দেয়।
ধীরস্থির ভাবে দাঁড় বাইছিল বুড়ো। তার তেমন কষ্ট হচ্ছিল না। কারণ স্রোতের অনুকুলে ভেসে যাচ্ছিল তার নৌকা আর দুয়েকটি ঘুর্ণিস্রোত ছাড়া সাগরও ছিল নিস্তরঙ্গ। কিছুটা আলো ফুটতে সে বুঝতে পারলো যে, স্রোতের টানে তার নৌকা বেশ ভালই এগিয়েছে। সে যা ভেবেছিল তার চেয়ে বেশীই এগিয়েছে।
‘এই গভীর মৃত্যু কূপে এক সপ্তাহ ঘুরেও কিছু পাই নি। আজ ঐদিকটায় চলে যাব যেখানে বনিটো আর টোনা মাছের ঝাঁক থাকে। হয়তো সেখানে আজ আমি একটা বড় মাছ পেয়ে যাবো’ – ভাবল বুড়ো।
ভোরের আলো তখনও ভালো করে ফোটে নি। বুড়ো তার বঁড়শির টোপগুলো সাগরের স্রোতে ভাসিয়ে দিল। একটি টোপ চল্লিশ বাঁও নিচে চলে গেলো। দ্বিতীয়টা গেলো পঁচাত্তর বাঁও। তৃতীয় এবং চতুর্তটা সমুদ্রের নীলাভ পানির এক শ’ এবং এক শ’ পঁচিশ বাঁও নিচে চলে গেলো। টোপের মাছগুলোকে বড়শির মাথায় ভালো করে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। বড়শির যে বাঁকা অংশ বের হয়ে থাকে তা সারডিন পোনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সারডিনগুলোর চোখ ফুটো করে গেঁথে দেয়া হয়েছে ইস্পাতের বড়শিতে। বড় কোনো মাছ যাতে বুঝতে না পারে যে এটা একটা বড়শি। বরং টোপের সুস্বাদু মাছের ঘ্রান পেয়ে যেন বড়শিটা গিলে ফেলে।
চলবে…………………………
১,৬৩৬ বার পড়া হয়েছে
একেবারে কাল্পনিকভাবে তুলে ধরছেন । ধণ্যবাদ সুন্দর লেখনীর জন্য ।
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা নিরন্তর…………………….
Great job
Thanks Mr. Hamid
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা নিরন্তর…………………….
অনবদ্য হামিদ ভাই ——আপনার মন্তব্যের আশায় প্রতিদিন পথ চেয়ে থাকি !!
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা নিরন্তর…………………….
অন্যরকম। চালিয়েযান।
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা নিরন্তর…………………….