পানি পড়া
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1448বার পড়া হয়েছে।
পানি পড়া
পানি পড়া বা পড়া পানি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে খুবি জনপ্রিয় একটি ধর্মীয় বিশ্বাসের নাম। আর এর পিছে আছে আমাদের মহান ইসলাম ধর্মের নামে , বিশ্বাসের নামে মহা মহা ধোঁকাবাজি।
যদিও গ্রামের অল্পশিক্ষিত মানুষজন ধর্মের নামে বছরের পর বছর তাদের আকিদার একটি অংশ বানিয়ে ফেলেছে। আর তার ফায়দা তুলে নিচ্ছে অল্প শিক্ষিত কিছু মৌলভি। তাদের প্রচার প্রচারনায় এটি ভাল একটা ধর্মীয় ব্যবস্যায় পরিণত করেছে কিছু জালিয়াত মৌলভি।
ছোটতে প্রায় দেখতাম গ্রামের মহিলারা কাচের গ্লাসে কুয়োর পানি নিয়ে গ্রামের মসজিদে হাজির। আর মসজিদের ইমাম( মৌলভি —) সেই গ্লাস হাতে নিয়ে বিড় বিড় করে দোয়া পড়ে সেই গ্লাসের পানিতে ফু-দিয়ে মহিলার হাতে ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। আর মহিলা পরম বিশ্বাসের সঙ্গে তা হাতে নিয়ে শাড়ির আঁচলে বাঁধা ৫-১০ টাকার ময়লা এক খানা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে মৌলভির দিকে। পান খাওয়া দাতে দেতল হাসি দিয়ে সেই টাকা জুব্বার( পাঞ্জাবি) পকেটে চালান করে দিচ্ছেন তিনি।
আমিও যে দুই একবার সেই পানি খাইনি তা বলা যাবে না( সঠিক মনে নেই, খেলে খেতেও পারি) ।
এই পড়া পানি এখনকার হুমিয়/ইউনানি… (যারা প্রচার করে তাদের ঔষধ সব রোগের জন্য অব্যর্থ ) ঔষধের মত সব রোগ নিরাময় করতে পারে। আর সত্যি সত্যি কেও কেও ভালও হয়ে যেতেন।
এই ১৫ সালে এসেও গ্রামে গিয়ে এই পড়া পানির কেরামতি এখনো মহা সমারোহে চলছে এবং চলবে।
এবার একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি—
এই ঘটনাটা বলছি ১৯৮০ দিকের। তখন আমার জন্মও হয়নি। একবার আমার দাদীর কি যেন অসুখ। তো তিনি আমার বড় ভাই কে পাশের গ্রামের বিখ্যাত মৌলভি সাহেবের নিকট হতে তার জন্য পানি পড়া আনতে বললেন। ও তখন আবার ডাক্তার আর ঔষধের খুব একটা চল ছিলনা আমাদের অঞ্চলে। তো আমার বড় ভাই বদ, পাশের গ্রামের মৌলভির কাছে না গিয়ে, বাড়িতে থাকা বোতলে খাটি কুপের পানি এনে দাদীকে দিয়ে বললেন এই নাও ( — ) মৌলভির পানি পড়া। আর আমার দাদী মহা সমারহে খাটি বিশ্বাস নিয়ে পানি পড়া খেয়ে যেতে লাগলেন, এবং বিস্ময়ের ব্যপার পরের দিন দুপুরে তিনি মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলেন। পরের দিন একেবারে সুস্থ।
বিঃদ্রঃ আমার দাদী ২ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন।
১,৪২৭ বার পড়া হয়েছে
এই ঠুনকো ভরসার উপর ভিত্তি করেই এখনো বহু শিক্ষিত মানুষও পরম বিশ্বাসে এমন বহু সংস্কারকে আকড়ে দিব্বি সুখ পাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষ যুগে এসেও পানিপড়া, তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুঁক ইত্যাদি মামুলি টুটকাগুলো এখনো দিব্বি টিকে আছে। যেমন শিক্ষার হার বাড়া সত্ত্বেও পীর ব্যবসায় দিন দিন আরো শনৈ শনৈ উন্নতি হচ্ছে। পীরের দরবারে রাষ্ট্র ও সমাজের উচ্চশিক্ষিত, নামি-দামি গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে আমরা এখনো কতটা কুপমুণ্ডুকতার শিকার হয়ে আছি।
এই ব্যাপারটির সাথে ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাস জড়িত, কিছু যে খাদ নেই তা নয়, তবে পুরোটা ভেজাল নয়, বিজ্ঞান ব্যাখা দেয় কিন্তু তারও একটি সীমা আছে, বিশ্ব জগতের বেশীরভাগ গুঢ় রহস্য এখনো আঁধারে আবৃত । দাদীর পানি পড়া খেয়ে ভালো হওয়াকে না হয় অন্ধ বিশ্বাসের জয় বলে মেনে নিলাম, আমি নিজে চোখে দেখেছি মন্ত্রবলে সাপের বিষ নামাতে,এর কি ব্যাখা ? যদি বলা হয় ব্যাপারটি হাতের বিশেষ টেকনিক বা কারসাজি তাহলে বলব আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান কেন পারছে না এই কায়দায় সাপের বিষ ঝাড়তে ?
সাপের বিষ রক্তে ঢোকে না বা অল্প ঢোকে , ফলে এর সুজোগ নেই ভন্ড রা। এটি প্রমানিত সত্যি।
আল্লাহর কালাম পড়ে পানি পড়া খেলে উপকার হয় তো
বিশ্বাসই তো আসল
বিশ্বাসই তো আসল