প্রবাসী বাংলাদেশীদের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হলো সিঙ্গাপুরে
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1658বার পড়া হয়েছে।

ছয় জন মেহনতি এবং শ্রমজীবি প্রবাসী কবির কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হলো সিঙ্গাপুরে। গত ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ইং সন্ধ্যা ৬ টায় সিঙ্গাপুর জাতীয় গ্রন্থাগারের পঞ্চম তলায় পসিবিলিটি রুমে গ্রন্থ উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটির ( Poetry Recital Event and Book Launch Titled: An Evening of Migrant Poetry and Music- Poems of Migration: Joys and Sorrows) যৌথ আয়োজক বাংলার কন্ঠ পত্রিকা, ইন্সটিটিউট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-আই.এস.এ.এস_ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর।
মূল সংবাদ তুলে ধরার আগে সংক্ষিপ্ত করে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। আমি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করি, অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, লেখালেখি করে আপনি কি পেয়েছেন? অনেকেই তো লেখালেখি করে অনেক বড় হয়েছে, অনেকে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। আপনি যদি এতই ভাল লেখেন তাহলে কেন প্রবাসে পড়ে আছেন? অনেকের জবাব আমি মেইল করে এবং কমেন্টসে দিয়েছি, আজকেও বলি, আমি লিখি বিবেকের তাড়নায়, আমি চেষ্টা করি সত্য সুন্দরকে তুলে ধরার, আমি লিখি অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য।
আমাদের দেশটি স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর চলেছে। পৃথিবীতে স্বাধীনতা লাভ করে অনেক দেশ ও জাতি উন্নতির উঁচু শিখরে অবস্থান করছে। আমি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছি, আমার যা অভিজ্ঞতা, তাহলো এই দেশ স্বাধীনতা লাভের সময় এমন ছিল না, আজ এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ। আর আমরা আছি সর্বদাহানাহানি-মারামারিতে ব্যস্ত। একে অন্যকে কি করে ঘায়েল করা যায়, কি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে-পুটে খাওয়া যায় সেই চিন্তাতেই আমরা বিভোর থাকি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার এতো বছর পার হয়ে গেলো, যে দেশের মমতাকে বুকের মধ্যে ধারণ করে পরিশ্রম করে দেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছি, যে রেমিটেন্সের সৌজন্যে আমার মাতৃভূমির ভিত আজ শক্ত অবস্থানে, আমরা কে রেখেছি তাদের খবর? সেদিন খবরের কাগজে দেখলাম প্রবাসীদের জন্য নাকি পেনসন স্কিম করা হবে, এ কথা কি কাগজে থাকবে, নাকি বাস্তব হবে আল্লাহ্ই ভাল জানেন। প্রবিসীরা প্রতিটি সরকারের আমলেই অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। বিমান বন্দরে হয়রানী ( দুই বছর আগে আমাদের কোম্পানির এক ইঞ্জিনিয়ারের লাগেজ হারিয়ে গেছে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে, আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি), প্রবাসীদের সহায়-সম্পত্তির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অহেতুক হয়রানী বন্ধে সব সরকারই আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
আমি মনে করি, যে প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিক চাকাকে সচল রাখছে তাদেরকে প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা দেয়া হোক। এমন এক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক যেখানে রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণ, জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল, পার্লামেন্ট সহ আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়ন,সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রবাসীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও কার্যকারিতা থাকতে হবে। পার্লামেন্ট ও অর্থনৈতিক কাউন্সিলে প্রবাসীদের প্রতিনিধি থাকতে হবে, যাতে সকল আইন প্রণয়ন, বাস্তবায়নে প্রবাসীদের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
এবার আসি মূল বক্তব্যে, গত ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ইং সন্ধ্যা ৬ টায় সিঙ্গাপুর জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলা কবিতা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়, অনুষ্ঠানে আরও আয়োজন করা হয় বাংলা কবিতা আবৃতি সঙ্গীত পরিবেশনা। মোড়ক উন্মোচন করেন রাষ্ট্রদূত গোপিনাথ পিল্লাই।

যে ০৬টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়ঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (প্রবাস থেকে বলছি ), সহিদুল ইসলামের (চির সাথী শুচিতা ), শ্রমিক মনির (বিপ্লবের বসন্তে), হাসনাত মিলনের (ইটিশ পিটিশ প্রেমের ছড়া), রাজীব শীল জীবনের ( আধো আলো আধো আধার ), মেরাজুল ইসলাম মিরাজের (পরিযায়ী ভালবাসা ), মোড়ক উন্মোচন করেন রাষ্ট্রদূত গোপিনাথ পিল্লাই, চেয়ারম্যান আই.এস.এ.এস_ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়_ সিঙ্গাপুর।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক রাহুল এর অনুরোধে, নেপালে ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর সুব্রত মিত্র, ডিরেক্টর আই.এস.এ.এস_ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়_ সিঙ্গাপুর। সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলার কন্ঠ সম্পাদক এ কে এম মহসিন ও জার্নিস উইথ দা কেটার পিলার শিবাজি দাস। সূচনা বক্তব্যে জনাব একে এম মহসিন প্রবাসীদের কবি সাহিত্যিক হয়ে উঠার এবং বাংলার কন্ঠের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিআইপিদের মধ্যে মিঃ এবং মিসেস পিয়ুস গুপ্তা ,গ্রুপ সি.ই.ও, ডি.বি.এস ব্যাঙ্ক, চৈরাত সিরিভাট, ডিপুটি চিফ মিশন, থাই এমব্যাসী, মিঃসাত পাল খাতার, চেয়ারম্যান খাতার হোল্ডিং প্রাইভেট লিঃ, মিসেস রিতা খাত্তার পরিচালক, চ্যায়ারম্যান খাতার হোল্ডিং প্রাইভেট লি:, ডক্টর ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ,সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যিনি বর্তমানে প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ক্লাস্টার হেড মাল্টি ল্যাটারাল এন্ড ইন্টার ন্যাশনাল লিংকেজ,ডক্টর মিজানুর রহমান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিঙ্গাপুর সাউথ ইস্ট এশিয়া এন্ড ডায়াস পোরা প্রোগ্রাম, জনাব আজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক বিডি চ্যাম, মুন্সী শহীদুজ্জামান, কার্যকরি সদস্য বিডি চ্যাম। ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান ,সহ সভাপতি যৌতুক প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ ,সিঙ্গাপুর শাখা সহ বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালইয়ে কর্মরত নানা শ্রেনীর পেশাজীবী ও স্থানীয় সিঙ্গাপুরি কবি ,সাহিত্যপ্রেমী ও শিক্ষানুরাগী এবং সিঙ্গাপুরিয় খ্যাতিমান ব্যক্তি বর্গ।
আয়োজকদের মধ্যে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তিপক্ষ বাংলাদেশ হাই কমিশনকে নিমন্ত্রণ পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশ হাই কমিশন দাওয়াতের জবাব ও দেননি বলে জানা গেছে, যদিও একই দিন দুপুরে সিঙ্গাপুরের অভিজাত শ্রেনীর বিশেষ দাওয়াতে তিনি অংশ গ্রহন করেছেন বলে জানা গেছে।
যে সকল প্রবাসী কবিরা স্বরচিত কবিতা আবৃতি করেছেন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু,কাজী শিহাব উদ্দিন ( লিটন ), রাজীব শীল জীবন), মনির আহমদ (শ্রমিক মনির)মুকুল হোসেন, নজরুল ইসলাম মুন্না, এম,এ সবুর, আবুল হাসনাত মিলন,সহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, সৈয়দুর রহমান লিটন, জাকির হোসেন খোকন, মোঃ শরীফ উদ্দিন, হাসানুর রেজা ( জিমি ) ও)অসিত কুমার বাড়ৈ ( বাঙ্গালি।)

এরপর শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশনা পর্ব। সঙ্গীত পরিবেশনায় ছিলেন সোহেল রানা, মোঃ শাহীন) ও আলমাস উদ্দিন। কি বোর্ডে ছিলেন মলয় ঘোষ , গিটারে জনি,হারমোনিয়ামে শাহীন, তবলায় প্রদীপ ও জিপসী মাহবুব।
সমাপনী বক্তব্য রাখেন কৃপাল সিং ডিরেক্টর উই.কিম.উই সেন্টার। শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রফেসর সুব্রত মিত্র বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হন এবং মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবুর “প্রবাস থেকে বলছি”বইয়ের দুটি একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি অনুবাদ থেকে পর্যালোচনা করেন। তিনি বলেন পোয়েট্রি এবং পলিটিক্স এর শুরু পি দিয়ে কিন্তু পলিটিক্স দেশের নেতৃত্ব, দেয় দেশ চালায় আর কবিতা মানব জীবনকে চালায়। আগামী দিন গুলিতে অভিবাসী বাংলা সাহিত্য, বিভিন্ন ভাষার সাহিত্যের আরো এগিয়ে যাবে এই আশা ব্যাক্ত করেন, জনাব কির্পাল সিং আরো বৃহদাকারে বহুজাতি গোষ্টির সমন্বয়ে ভাবের আদান প্রদান, সংস্কৃতির আদান প্রদানে এক সাথে কাজ করার জন্য একে এম মহসিন, শিবাজী দাসের প্রশংসা করেন, বাংলার কন্ঠের প্রশংসা করেন এবং আগামীতে এক সাথে আরো ভালো কজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
এই অনুষ্ঠান বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশীদের জন্য অতন্ত্য গৌরবের। এশিয়ান জায়ান্ট আধুনিক উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কাজ করছে বাংলাদেশী শ্রমিকদের লেখা কবিতা কাব্য গাঁথা নিয়ে, যা এক দিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
২৬/০৪/২০১৫
১,৬৩৫ বার পড়া হয়েছে
বেশ জমকালো অনুষ্ঠানে কবি-লেখকদের মিলন মেলা । দূর থেকেও যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে গেলাম ! খুব ভালো লাগলো অনুষ্ঠানের বর্ণনা আর ছবি ।
একজন প্রবাসী হিসেবে আমিও গর্বিত।লেখকদের শুভেচ্ছা । শেয়ার করার জন্যে আপনাকেও । ভালো থাকুন ।
দারুন
শুভেচ্ছা
লেখককে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ, শহিদুল ভাই খবরটা চলন্তিকায় দেয়ার জন্য। এ মহাযজ্ঞে
সৌভাগ্য বসত অামারও অাবৃতির সৌভাগ্য হয়েছিলে।
প্রবাসে বাংলাদেশ<
মুগ্ধকর
দারুন
দারুন সুখকর খবর ভাল লাগল