ফাগুনের অনুভূতি (ছোট গল্প)
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1505বার পড়া হয়েছে।
ও আমার বাংলা মা তোর্
আকুল করা রূপের সুধায়
হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে
যায় জুড়িয়ে।
ও আমার বাংলা মাগো।
গান গাইতে গাইতে সেজুতির চোখ চলে যায় সামনের সারিতে বসা একজন বিদেশী র দিকে। এই সাদা ভদ্রলোক কে প্রথম সারিতে তার গানের সময় বসে থাকতে দেখছে দিন ধরে। স্ট্রেঞ্জ!!!!.গান শেষ করার পর স্টেজ এ ব্যাক সাইড এ এসে আর ভদ্রলোক কে আর পেলনা।
গান শেষ করে গাড়িতে উঠতে যাবে তার পাশে একটা গাড়ি থেকে কেও কিছু একটা বলে উঠলো তার উদ্দেশ্যে। তাকাতে দেখে সেই সাদা ভদ্রলোক।
হাই ক্যান আই টক্ এ মিনিট ?
কাছে আসতে লোকটি হেসে বলল সালাম।
সেজুতি চমকে উঠলো।
বাঙালি হেসে জিজ্ঞাসা করলো।
ভদ্রলোক হেসে বলল শত ভাগ।
আমি তো অবাক একজন বিদেশী লোক বাংলা গান শুনতে আসছে ব্যাপার কি ?কলকল করে বলে উঠলো সেজুতি। আচমকা একজন বাঙালি এখানে প্রোগ্রাম এ পেয়ে সে উত্ফুল্ল হয়ে উঠলো।
সে আজকে এসেছে বস্টন এ একুশ এর এক দেশাত্ববোধক গানের প্রোগ্রাম এ। প্রতিবার একুশ এর সময় টা এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আল্পনা ,শহীদ পত্রিকা আর ও নানান প্রোগ্রাম এর আয়োজন করে। সেই প্রোগ্রাম এ জযেন করতে আসা তার সুদুর নিউইযর্ক থেকে।
আপনার দেশাত্মবোধক গানে একটা অন্যরকম আবেদন খুঁজে পেলাম সেজুতি। ভদ্রলোক তার নাম ও জানেন দেখা যাচ্ছে। সে এখন ও এমন কোনো শিল্পী হয়ে উঠেনি। প্রীত হয়ে গেল।
ভদ্রলোকের পরিচয় পাওয়া গেল।তার চেহারা হোয়াইট দের মত কেননা মা ব্রিটিশ।ছোটবেলায় ই মাবাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে।সে বাবার সাথেই থাকে।নাম এনরিখ ব্ল্যাংক।
নাম আর চেহারা দেখে সবাই সাদা মনে করলে ও আমি মনে প্রানে ও ব্যক্তিত্বে বাঙালী।বলে সে হেসে।
আমাদের একটা একুশের প্রোগ্রাম করছি কালকে। যদি আপনার কাজ না থাকে আসবেন নাকি। ভদ্রলোক তাকে ইনভাইট করল।
কালকে তো আমার কাজ আছে।
দোনমনা অবশেষে বলল তার পর আমি দেখছি কি করা যায়। যদিও সেজুতির কাছে কাজ এর চেয়ে এসব একুশ এর প্রোগ্রাম বা যে কোনো সঙ্গীত প্রোগ্রাম এ যাওয়া সবসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দুজনের আরো কতক্ষণ কথা হলো। পরস্পরের টেলিফোন নাম্বার নিল।
সেজুতি এখানে এসেছে পি এইচ ডি করতে তার ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ। পড়াশুনা প্রায় শেষ পথে। তার জন্য বাবা মা বাংলাদেশ এ পাত্র দেখে রেখেছে। পড়াশুনা শেষে দেশে যাওয়ার পর তার বিয়ে হওয়ার কথা।
ঘরে আসা মাত্র দেখে অনেক ফোন এসেছে। লং ডিসটেন্স কল। মেসেজ চেক করতে দেখে মায়ের মেসেজ। তাড়াতাড়ি ফোন ঘুরালো। বাসায় কেও নাই। বাবার সেল এ পাওয়া গেল।
জানা গেল ছোট চাচাকে কে হসপিটাল এ মুভ করা হয়েছে। তার এই চাচটি খুব ভালবাসা র মায়া র শ্রদ্বা র । ৫২ এর ভাষা আন্দোলন এ যিনি কারফিউ তে পঙ্গু হয়েছিলেন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি।
চিরকুমার অতি হৃদয়বান চাচাটি মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন একেবারে।সরে গিেছিলেন লোক চক্ষুর অন্তরালে ।সিথি আন্টির সাথে প্রেম ছিল প্রায় বিশবছর।সেই সিঁথি আন্টিকে কঠিনভাবে প্রত্যাখান করার পর সবসময় মনমরা হয়ে থাকতেন।তাদের সাথে ও খুব একটা কথা বলতেননা।কোন আবেগ অনুযোগ করতেন না কখনও ।তার অনেক বন্ধু পরিচিত অনেকে এখন অনেক উচ্চ সরকারী কর্মকর্তা।অনেকে তাকে অফার করেছে তাদের তাদের সাথে থাকতে এবং পরামর্শ দিতে।শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারনে সবার প্রস্তাব ই প্রত্যাখান করেছিলেন তিনি।
আমাকে দয়া করে দেওয়া সাহায্য আমি নিতে পারবনা ভাই।বিষন্ন হয়ে এই জবাব দিয়েছিলেন।
তোমাকে দয়া করবে এত স্পর্ধা আমাদের কার ও নাই কাওসার।চাচার নাম কাওসার।বরং দেশের ঋণ আছে তোমার কাছে।তুমি ডিসার্ব কর অনেক কিছু এ দেশ থেকে।
বন্ধু উত্তেজিত হয়ে বলে।
মাকে শত্রুর হাতে থেকে বাচতে পারলে তুমি খুশী হবে।এর জন্য কেও কি কখনও বিনিময় আশা করে।আমার মা বিপদে পড়লে আমি রক্ষা করতে যাবই নিজের প্রান বিসর্জন দিয়ে হলে ও তুমিও রক্ষা করতে যাবে।আমিও তাই করেছি মাসুদ এর কি বিনিময় দিবে আমাকে মাকে বাচানোর জন্য।
সেই চাচা বন্ধুর সাথে ও বিজনেসে ও জয়েন করেনি।
আমি অন্ধ পঙ্গু আমি কি কাজ করব বন্ধু।আমি যোগ্য হলে তুমি বলার আগে তোমার সাথে জয়েন করতাম।বিষন্নমাখা গলায় তিনি বললেন।
তার সেই চাচা আজ মৃত্যূ শয্যায়।ডাক্তার সময় বেধে দিয়েছে।
সেঁযুতি চঞ্চলতা বোধ করে মনে।তার পি এইচ ডি শেষ টার্ম এর পরীক্ষা পরের মাসে।
তার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল।
পরের দিন চেষ্টা করে এয়ার লাইন্সে বুকিং দিল। একসপ্তাহের ছুটি নিল ভার্সিটি থেকে।
এয়ারপোর্টে সব ঝামেলা এনরিখ পোহাল।এনরিখ থাকাতে সে বেশ মানসিক সাপোর্ট পেল।এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি হসপিটালে চলে এল।
অনেকদিন পরে চাচাকে দেখল।কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
পরেরদিন বেলা দশটা।ডাক্তার এসে তাদের সবাইকে ডেকে নিল এমারজেন্সী রুমে।অক্সিজেন মাক্স সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চাচার মুখ থেকে ।
ওনার সময় শেষ হয়ে এসেছে।আপনারা চাইলে কিছুক্ষন কথা বলতে পারেন।মন শক্ত করুন সবাই বললেন ডাক্তার সান্তনার স্বরে।
দরজা বন্ধ করে ডাক্তার বেরিয়ে গেল।
সেঁযুতির হাত পা কাপতে লাগল।অনেক কষ্টে কন্ঠস্বর পরিষ্কার করে ডাকল চাচা।
মারে তুই আমেরিকা থেকে পড়ালেখা ফেলে চলে আসলি নাকিরে ?কি কান্ড।উঠে বসার চেষ্টা করল।
বাবা এসে আকড়ে ধরলেন।
কিরে কাওসার সেঁযুতিকে কিছু বলবি?বাবা জিজ্ঞাসা করলেন।
না বলার কিছুই নাই।আমার সেঁযুতি বড় বুঝদার।সে নিজেই বুঝবে তার কি করণীয় ।
চাচা মারা গেলেন ঠিক এগারটায়।
সেঁযুতির হৃদপিন্ডের এক অংশ যেন খালি হয়ে গেল।চাচাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি মনের কোণে ভীড় করতে লাগল।
পরের সপ্তাহে আমেরিকা র উদ্দেশ্যে প্লেনে উঠে বসল।
কিন্তু এবারের আমেরিকা আসার উদ্দেশ্য বদলে গিয়েছে।আগের মত সে জীবন কে দেখছেনা।এখন উদ্দেশ্য পাশ করে বাংলাদেশে চলে যাবে।নিজের দেশের জন্য কিছু করবে।
তার মেধা ব্যায় হওয়া উচিত নিজের দেশের জন্য।দেশ তাকে কি দিয়েছে কতটুকু দিয়েছে তার চেয়ে বড় প্রশ্ন দেশকে তার দেওয়ার আছে দিতে হবে।চাচার অব্যা্ক্ত বক্তব্য যেন সে টের পেয়েছে ।মনে হল চাচা নিশ্চয় মনে মনে তাই চেয়েছেন ।
যথাসময়ে পড়া শেষ হল।খুব ভালভাবে থিসিস সাবমিট করল।খুব ভাল একটা অফার পেয়ে গেল তার ভার্সিটি থেকে।
জীবনটা আবার তাকে দোটানায় ফেলে দিল।
পরিশিষ্ট:অবশেষে সেঁযুতি সবধরনের প্রলোভন উপেক্ষা করল উচ্চতর জীবনের হাতছানি ভাল জীবন স্ট্যাটাস মান সন্মান।চাচার স্মৃতিকে সন্মন করতে ফিরে এল দেশে।প্রথম বৎসর তার অনেকটা ষ্ট্রাগলের মধ্যে দিয়ে গেল।পছন্দমত চাকরি পায়নি।তারপর মনোবল নষ্ট হয়নি তার।তার স্বপ্নকে সরে যেতে দিলনা মন থেকে ।তার স্বপ্ন এক ত্যাধুনিক পাওয়ার সেক্টর তৈয়ারীর। যা আমাদের সরকারী সেক্টরে বিদ্যূৎ এর অপ্রতুলতা দূর করে বিদ্যূৎ সেক্টরকে শক্তিশালী করবে যে ব্যাপারে সে কথা বলে এসেছে বোষ্টনের বড় দুই পাাওয়ার হাউসের ইন্জিনিয়ারের সাথে।এই কাজ শুরু হয়ে গেলে অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যূৎ এ বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকবে সে আশা করছে।
১,৫৪৫ বার পড়া হয়েছে
আপু সারাদিন ব্যস্ত থাকায় নেটে বসতে পারিনি, এখনও খুব ক্লান্ত । আপনার গল্প সব টুকু পড়তে পারিনি । তবে
শুরু করেছি । আগামিকাল শেষ করে ইনশাল্লাহ আবার মন্তব্য করব । ভাল থাকবেন ।
ক্লান্ত হলে বিশ্রাম প্রথমে। আমার লেখা তো পালিয়ে যাচ্ছেনা। অনেক ধন্যবাদ জসিম ভাই।
প্রথম থেকে শেষ অবধি পড়লাম আপু । স্বদেশ প্রেম নিয়ে অসাধারন লিখেছেন । মুগ্ধ হয়েছি । বিশেষ করে দুটি শব্দে ” বাঙালি হেসে” !!
অসাধারন…..অনেক অনেক ধন্যবাদ জসিম ভাই কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।
আপনার লেখা যত পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। দারুণ হয়েছে।
আমিও আপনার কমেন্টস যত পাচ্ছি তত আনন্দিত হচ্ছি ,অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। ধন্যবাদ সাখাওয়াত ভাই কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন।
আরজু আপা! অনেক সমৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আপনাকে আমি আমার ছোটবোন হিসেবে মেনে নিয়েছি আপনি জানেন। কারন আমার ছোটবোনেরও নাম আরজু, যে থাকে আমেরিকায়, ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করছে ও, আমার জাস্ট ছোটবোন, তাই আমি তার উপর আমার অন্যান্য ভাই-বোনদের চেয়েে একটু বেশীই দুর্বল।
আপনার লেখায় আমি মন থেকে বলছি আপনি অনেক উন্নতি করেছেন এবং আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তবে আমি জানি উন্নতি করার চেষ্টা আপনার ভেতর কাজ করে। আপনার উন্নতি হবেই।
সমালোচনার উর্ধ্বে কেউ নয় আপা। আপনার কোন কোন বাক্য মিলেনা। জানি এটা আপনার হয়তো তাড়াতাড়ি করার জন্য। তবে দেশ সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি এবং সেই সাথে এটার উপস্থাপনা, এককথায় অদ্ভুত।
ওহ এই লেখাতে কমেন্টস এর উত্তর দেইনি খেয়াল না করে। এত সুন্দর মন্তব্য করে আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছেন একেবারে। আমি আপনাকে বড় ভাই এর মত মনে করি অনেক শ্রদ্ধা করি।
আপনার বোন কেমন আছেন এই মুহুর্তে। আমার অনেক দোয়া শুভাশিস রইল। অনেক কিছু আমাদের হাতে নেই। আমার ছোট আদরের ভাই আমার কোলে মারা গিয়েছে।
মন শক্ত করুন। আল্লাহ র উপর ভরসা রাখুন। তিনি নিশ্চয় কিছু করবেন ইনশাল্লাহ। আমি যেহেতু বেচে আছি তিনি বেচে থাকবেন আর ও কিছুদিন অবশ্যই। নামাজ পড়ে আমি দোয়া করব। আপনি ও করবেন সবসময়।
কিছু মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয় আপা, এজন্য যে কেন আমি বেঁচে আছি। আপনার ছোট্ট ভাইটির মৃত্যুও সেরকম। আপনার লেখাটা আমি পড়েছি। আমার চোখে পানি আসে খুবই কম। আপনার লেখাটা পড়ে আমার ওটাই বাকী ছিল শুধু আপা। আমিও নামাজ পড়ে আপনার, আমাদের ভাইটির জন্য দোয়া করব আপা।
নীচে এক মন্তব্যে আপনি বলেছেন, আপনি মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগাতে চান। এভাবেই চলুক আপা। আমিও তা-ই করতে চাই, হয়ত আপনি জেনে থাকতে পারেন।
আপনার লিখায় আপনার উদ্দেশ্য সফল হোক, এই কামনা করি দৃঢ়ভাবে।
আপনার কথামত ই আমি চেষ্টা করব লেখায় আর ও মনোযোগী হতে। ঠিক বলেছেন একসঙ্গে অনেক লেখা লিখি অনেক কাজ করি। তাই মাঝে মাঝে এডিট করার ও সময় পাইনা লিখা।এইজন্য বাক্য গুলি গোছান সুন্দর হয়না। তাড়াহুড়ায় অনেক পোস্ট দেই। একটু সময় দেওয়া উচিত লিখায়।
দেশের জন্য খুব ফীল করি এই কারণে কিছু করিনি কখন ও। এইজন্য লিখি। আমার লিখায় স্বার্থ এই দেশের কথা ভালোবেসে বলতে চাই। মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগাতে চাই। ঠিক লেখক বা বিখ্যাত হওয়ার জন্য যে লিখি তা ও না। আমি মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনতে চাই দেশের জন্য বেশি বেশি করে। জানিনা কতটুকু স্বার্থক হব। এই লিখা পড়ে একটি মানুষ ও যদি দেশের কথা ভাবে গভীরভাবে তবে আমি মনে করব এই লেখা স্বার্থক।
আমার জন্য দোয়া করবেন সবসময়। আর আপনি ভাল থাকবেন সবসময়।
কবি জসিম ভাই র সা্থে সহমত পোষন করলাম