বাংলাবানান ও শব্দগঠনঃ ভুল শুধু ভুল-১
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1803বার পড়া হয়েছে।
ইদানিং আমাদের বানানের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা লক্ষ্যনীয়। আমরা যে যেমন পাচ্ছি লিখে যাচ্ছি সঠিক বানান বলে। আমাদের পত্রিকাগুলোও এক্ষেত্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করে চলেছে বাংলাএকাডেমীর প্রমিত বানানের অজুহাতে। একেক পত্রিকার একেক রকম বানানরীতিও গড়ে উঠেছে, যা হাস্যকর।
ফলে আমাদের বানানেও ভুল খুব বেশীই (বেশি) হয়ে যাচ্ছে আজকাল। ১৯৯০ সালের আগের বই-পুস্তক খুঁজে দেখলেই আমার কথার প্রমাণ পাওয়া যাবে। যাহোক, আমিও এখানে পুরনো রীতির বানানই বেশী ব্যবহার করেছি, যা প্রমিত বানানের সাথে সবক্ষত্রে নাও মিলতে পারে। কারণ আমি বাংলাএকাডেমীর প্রমিত বানানের সাথে সবক্ষেত্রে একমত নই।
বিশেষ করে বাংলাএকাডেমীর (বাংলাএকাডেমীতে স্পেস নেই) বিতর্কিত বানানরীতিপ্রবর্তনেরবা সংস্কারের দরুণই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমি মনে করি। অনেক বিতর্কই আছে এসব ব্যাপারে। এই বিতর্ক নতুন না হলেও ১৯৯২ সালে বাংলাএকাডেমী প্রথম ”সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান’‘ প্রণয়ন করার পর একটি বানানরীতিও তৈরী করায় এই জটিলতা বেড়ে গেছে।
তারা ‘ই-কার’ আর ‘ঈ-কারের বারোটা বাজালেও (বিশেষতঃ বিদেশী শব্দে) ”শহীদ” বা ”শহীদদিবস” এবং বাংলাএকাডেমীর ”একাডেমী” বানানগুলো কিন্তু ঠিকই বহাল রেখেছে। কেনো তা আমার বোধগম্য নয়।
অধিকাংশ দেশী (দেশি) শব্দের বানানে ঢালাও ই-কার ব্যবহারের রীতি চালু করায় যেমন সমস্যা তৈরী তৈরি হচ্ছে তেমনই একই জিনিসের একাধিক বানানও তৈরী (তৈরি) হয়েছে, যা এখানে একাধিক বানানের নমুনাস্বরূপ কিছু দেখিয়েও দিয়েছি ব্রাকেটে।
ফলে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ঈ-কারকেও অনেকেই ‘ই-কার’ দিয়ে লিখে সঠিক বানান বলেই আনন্দ পাচ্ছে। যেমন অহরহ দেখছি-অঙ্গীকারকে (অঙ্গিকার), পক্ষীকে (পক্ষি), হস্তীকে (হস্তি) ইত্যাদি লিখে চলেছে। আবার এফএম রেডিওগুলো বাংলিশ নামের এক বিকৃত বাংলা চালু করেছে, যা ভবিষ্যতে ভাষার বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে বলে আমার আশঙ্কা। যদিও সম্প্রতি উচ্চ আদালত কর্তৃক সর্বত্র বাংলালিখনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলিশবন্ধকরণসহ, দেখা যাক কী হয়?
মানুষমাত্রে ভুল হতেই পারে–আমিও তার ওপরে নই। যে কারুর ভুল ধরিয়ে দেয়া যেমন ভালো তেমনই তা সংশোধন করে নেয়াও উদারতার লক্ষণ। আমি এখানে কঠিন ব্যাকরণ নয়, কিছু সাধারণ বানান বা শব্দগঠন নিয়ে লিখবো, যা আমরা ভুলভাবে লিখে থাকি।
মনে রাখতে হবে–বাংলাশব্দগঠন বা বানানের ক্ষেত্রে সন্ধি, উপসর্গ, কারক, সমাস ইত্যাদির ভূমিকা অপরিসীম। আমরা বড়ভাইকে অবলীলায় স্পেস দিয়ে বড় ভাই, বিমানবন্দরকে বিমান বন্দর, পাঁচটাকাকে পাঁচ টাকা, বিজয়দিবসকে বিজয় দিবস, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় লিখে থাকি, যা ভুল। এসব নামবাচক (নাম বাচক নয়)শব্দ বা বিশেষ্যপদ (বিশেষ্য পদ নয়) একাধিক শব্দসহযোগে গঠিত হয়েছে, যা পৃথক করলে অর্থ ঠিক থাকেনা আর ব্যাকরণের নিয়মও খাটেনা (খাটে না স্পেস দিয়েও লেখা চলে)।
উপর্যুক্ত বানানে ব্যাকরণের কারক এর প্রভাব খুব বেশী; যেমন- কলেজের ছাত্র এর এর বিভক্তি লোপ পেয়ে হবে কলেজছাত্র (ষষ্ঠি তৎপুরুষ সমাস), তেমনি বড় যে ভাই-হবে বড়ভাই, বিমান নামে যে বন্দরে-হবে বিমানবন্দর। কিন্তু একে যদি আলাদা আলাদাভাবে লেখেন বিমান আর বন্দর, তবে তা আর বিমানবন্দর হিসেবে একটি নামবাচক শব্দ থাকেনা বরং হয়ে যায় আলাদা দুটো নাম বিমান একখানে আর বন্দর আরেকখানে ঠিক যেনো পৃথক দুটো জিনিস।
সমাস এর বিধানানুযায়ী প্রধান যে শিক্ষক হবে প্রধানশিক্ষক একশব্দেই, যা ইংরেজী উচ্চারণে আলাদাভাবে হয় হেড মাস্টার। তেমনই বঙ্গোপসাগর গঠিত হয়েছে-বঙ্গ, উপ, সাগর মোট এই তিনশব্দের সন্ধির নিয়মে যা শুনতে ভাল্লাগে। অনেকেই শুনলে অবাক হবেন-এমন কিছু বাংলাশব্দ এতোই লম্বা যে, বিশ্বাসই হবেনা; যেমন- ভারতমহাসাগর, হ-য-ব-র-ল, শাখাপ্রশাখাযুক্ত, জাতিধর্মবর্ণগোত্রনির্বিশেষে, মৃত্যুসংবাদপ্রাপ্তিসাপেক্ষে ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা লিখতে গিয়ে একাধিক শব্দে গঠিত একটি শব্দকে স্পেস দিয়ে কতো টুকরো যে করে ফেলি। আর বাংলাএকাডেমী বানানের এই জটিলতা সৃষ্টি করায় আমরাও তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। আমি যে বিষয়ে লিখছি এসব ব্যাপারে বাংলাএকাডেমীও নির্লিপ্ত।
আমরা জন্মের পর ব্যাকরণ পড়ে যেমন বাংলা শিখিনি তেমনই ব্যাকরণ না জেনেও তা কিন্তু রপ্ত করা যায়। ব্যাকরণ না থাকলে ভাষার কাঠামো ভেঙ্গে গিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলেই ব্যাকরণ থাকাও জরুরি। ব্যাকরণ না থাকলে বাংলিশ ভাষা আজ স্বীকৃতি পেয়ে যেতো এবং বাংলাভাষার অবস্থাও হতো সংস্কৃত, হিব্রু, পালি ইত্যাদি অধুনালুপ্ত ভাষার ন্যায়।
তবে ভাষা প্রবহমান জলস্রোতের মতোন যাকে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়, মুখে মুখে এর পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন হবেই। যুগের সাথে তালমিলিয়ে যেমন নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয় তেমনই এর ক্রমবিকাশ অবশ্যম্ভাবী। যেমন-কিছুদিন আগেও ধর্ষণকারী ব্যতীত ধর্ষক শবদটি অভিধানে ছিলোনা, যা এখন আমাদের ভাষার নতুন শব্দ হিসেবে পরিগণিত।
( চলবে)
১,৯১০ বার পড়া হয়েছে
অনেক অনেক ধন্যবাদ বাদশা ভাই। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি । আমাদের থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাবেননা আবার । আপনার ফেইসবুক আইডি কি পেতে পারি শ্রদ্ধেয়
আমার সকল সামাজিক সাইটের আইডি–shahalambadsha
এড দিলাম গ্রহণ করবেন কিন্তু
করেছি কিন্তু আপনাকে চেনার চেষ্টা করে পেলাম না
ভাল লাগল পোস্ট টি । আমার এই প্রবলেম টা খুব হয়। ই ঈ কি কী এই কনফিউশন খুব হচ্ছে। অভ্র বানান শুদ্ধকরন একটা সফটওয়্যার আছে আশা করি এই সফটওয়্যার টি পথ দেখাবে। আপনি লিখার পরে চেক করতে পারেন এই সফটওয়্যার এ বানান গুলি । শুদ্ধ বানান ওখান থেকে শিখে নিতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ পোস্ট টির জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
আপনার কিছু বানান এ প্রবলেম পেলাম। দেখে নিবেন আশা করি।
যে প্রবলেমের কথা বলছেন–তা আমি ইচ্ছে করেই করেছি-আগের বানান আর একাডেমীর বানানে ফারাক করতে এবং একাডেমীর সব বানান আমি ফলো করিনে।
যেমন-ইংরেজী=ইংরেজি উচ্চারণে ইকারের বদলে ঈকার;অথচ একাডেমী নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে রেখেছে” বাংলা একাডেমী” ঈকার বানানে, আবার ”শহীদ দিবস” বানানে ঈকার ঠিকই রেখেছে। এসব ভণ্ডামী নয়কি?
মানুষের প্রব্লেম বাড়াচ্ছে তারা কিছু বানানে।
আপনার সব পোস্ট ই আমি গুরুত্বের সাথে পড়ি। আপনি একটি যুগোপযোগী বিষয় এখানে তুলে এনেছেন। আমরা যারা বাংলা কীবোর্ড দিয়ে টাইপ করি তাদের জন্য এই বানান সমস্যা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেননা কুইক বাংলয় আমরা অঅভ্যস্ত। একই রকম দেখতে বানানের অর্থ কি সেটাও অনেক সময় বুঝতে পারি না। তাই প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। আপনার কাছে আকুল আবেদন যদি কোন ভালো পিডিএফ অভিধান থাকে তবে দয়া করে এখানে এর লিংক দিলে অথবা আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ইমেইলে দিলে খুবই উপকৃত হতাম।
ইমেল :shakawatalam83@gmail.com
আপন আমার সাইটে পাবেন লিচের ঠিকানায় যান- http://mediamaster1.blogspot.com/
ধন্যবাদ ভাইয়া।
দরকারী পোস্ট প্রিয়।বানানের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার সময় বোধহয় এসেছে।
তা ঠিক কিন্তু একাডেমীর উদ্যোগ জোরালো নয়
Khub bhalo post
share korar jonyo onek dhonyobad
অনেক ধন্যবাদ ভাল্লাগায়
দরকারি একটি পোষ্ট আগেও পড়েছি, আজকে আরেকবার পড়ে নিলাম। ২য় পর্বের অপেক্ষায়
চলুক সাথে আছি …
সাথেই থাকুন