বালক বায়োজিদ বোস্তামীর এবং আমির এর মাতৃভক্তি
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1819বার পড়া হয়েছে।

বায়োজিদ বোস্তামী ———-
শৈশব হতে জননীর সেবা করিতেন দিবাযামী।
দুপুর রাতে জননী জাগিয়া ডাকিলেন , বাছাধন ,
বড়ই পিয়াস পানি দাও, বলি মুদিলেন দুনয়ন’ .
দেখিল বালক ঘরের কোণের কলসিতে নেই পানি।
বহুদূর পথ ঝরণা হইতে কলসি ভরিয়া আনি
মায়ের তৃষ্ণা মিটাইবে বলি গভীর অন্ধকারে
ছুটিয়া বাহির হইল একাকী কলসি লইয়া ঘাড়ে।
মা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছেন আমির কে মাতৃভক্তি কবিতা টি। আমির সবে সাত বছরে পড়েছে। সে এখন উঠেছে ক্লাস থ্রীতে। তার মধ্যে কিছু সবজান্তা ভাব ফুটে উঠেছে। ছোট বোন টি এখন ও স্কুল এ যায়না। তার বয়স তিন। সে একটু দুষ্টু প্রকৃতির ও হয়ে উঠেছে। স্কুল থেকে মাঝে মাঝে অভিযোগ আসে। মা বাবা যথারীতি চিন্তিত আমির কে নিয়ে।
সন্ধ্যা হয়েছে। আমির হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস। সে মার কথা না শুনে তখন ও বল খেলে যাচ্ছে।
বাবা কি বলছি হাত মুখ ধুয়ে নাও। মা তাগাদা দিতে থাকে।
মা আজ পড়বনা। শুধু খেলব। পড়াশুনা ভাল লাগেনা। জেদের সাথে বলে উঠে। চল মা লুকোচুরি খেলি। মাকে প্রস্তাব দেয়।
বাবা বিকালে তুমি খেলেছ। কাল বিকাল এ আবার খেলবে। এখন তোমার পড়ার সময়।
না আমি আর ও খেলতে চাই জেদ ধরে বলতে থাকে।
মা এসে জড়িয়ে ছেলে কে টেবিল এ নিয়ে আসলেন বললেন আচ্ছা আজ আমরা পড়বনা একটা কবিতা আবৃতি করছি বাবা তুমি মনযোগ দিয়ে শোন।
তিনি পড়ছেন এখন ও।
পড়ার মাঝে ছেলের বিস্ময় প্রশ্ন “এত রাতে অন্ধকারে গেল ভয় হলনা ওর।
মা আদর করে ছেলের মাথায় মুছে দিয়ে বলেন ওই সময়ে ভয় ছিলনা তার মনে। তৃষ্ণার্ত মাকে পানি খাওয়ানো ছিল তার উদ্দেশ্য।
আমির চিন্তিত হয়ে পড়ল।
মা আবার বলতে শুরু করলেন আমরা যখন ভালোবেসে কিছু করি , কিছু পেতে এই ভালবাসা মনে শক্তি হিসাবে কাজ করে যাতে ভয় তুচ্ছ হয়ে যায় মনে।
শোননি বাবা আমাদের মুক্তি যুদ্ধের ঘটনা কত তরুণ কত মানুষ দেশকে রক্ষা করতে জীবনের ভয় ত্যাগ করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
বল মা বল না এরপরে কি হল। ছোট আমিনা মায়ের শাড়ি ধরে টানতে থাকে। আর ও পড়না মা , কচি মুখে আবদার করে।
এ আমার কবিতা। তুমি সর আমিনা কে বকা দিয়ে দেয় আমির।
মা দুইজনকে দুইপাশে বসিয়ে আবার আবৃত্তি শুরু করে।
জল ঢালি পিয়ালায়
সুপ্তা মাতার নয়ন শিয়রে দাড়ায়ে রহিল ঠায়।
ভাঙালে নিদ্রা হবে অপরাধ ,কখন ভাঙিবে নিদ
সেই ভরসায় পানি হাতে খাড়া রহিল সে বায়োজিদ।
পূর্ব গগন ফর্সা হইল ডাকিয়া উঠিল পাখি ,
জননী মেলিল অখি।
দেখিল শিয়রে দাড়ায়ে রয়েছে দশ বছরের ছেলে
পানি হাতে কেন ?বুঝিল না মাতা প্রথম নয়ন মেলে
কেন মা পানি হাতে দাড়িয়ে কেন ? গ্লাস রেখে চলে যায়নি কেন ? আমির এর জিজ্ঞাসা।
যদি ঘুম ভেঙ্গে মা পানি খুঁজে না পায় , তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে থাকে এই ভেবে মায়ের শিয়রে দাড়িয়ে ছিল সারা রাত বালক বায়োজিদ , মা স্নেহে জড়িয়ে বলে।
গভীর রাতে পিপাসার পানি চেয়েছিল বাছাধনে।
কহিল মা , মরি মরি।
বাছারে আমার পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরি ‘
দাড়াইয়া আছ ? ঘুমাওনি আজ ? চোখে এল জল ভরি।
পুত্র রে কোলে নিয়ে মা চুমিল বার বার মুখ খানি।
কহিল জননী , নয়নের মনি, সাধারণ শিশু নও,
খোদার দয়ার বরকতে তুমি জগত পূজ্য হও।
পুত্র গরবে গর্বিত বুকে, খোদা স্মরি তব নাম ,
তোমারে আমার জীবনের এই সম্বল সপিলাম।
বিফল হয়নি মায়ের আশীষ , হৃদয়ের প্রার্থনা ,
জগত বন্দ জ্ঞান গুরুদেব বায়োজিদ একজনা।
২ মা ঘুমিয়ে আছে অনেকক্ষণ। ছোট আমির ,আমিনা মাকে এসে উকি দিয়ে বারবার দেখে যাচ্ছে। আমিনা মাকে ডাকতে গেলে আমির সরিয়ে নিয়ে আসছে।
মা রোজা রেখে ক্লান্ত। দেখছনা বোনকে বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে। এদিকে ইফতার এর সময় প্রায় হয়ে এল। বাবা এখন ও এসে পৌছায়নি।
ইফতার টেবিল এ মা বানিয়ে রেখেছে। শুধু গোছানো হয়নি। আমির ভাবল আজ মাকে অবাক করে দিবে ইফতার সবার প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে। যে ভাবা সে কাজ। নিঃশব্দে শো কেস থেকে গ্লাস বের করল , চার গ্লাস এ লেবু রস চিপে শরবত বানাল। ট্রে নিয়ে একটা শরবত এর গ্লাস রাখল তাতে ,একবাটিতে কাটা ফল , আরেক প্লেট এ ইফতার বেড়ে মায়ের রুম এ এনে বিছানার পাশে টুল এ সাজিয়ে রাখল।
ঠিক এই সময় বাবা ডোর বেল বাজানোতে মা উঠে এলেন ঘুম থেকে।
সব দেখে শুনে মা বাবা দুইজনে অনেক আনন্দিত। বারবার জড়িয়ে ধরে ছেলেকে চুমু খেলেন।
খুশি হয়ে বাবা বললেন
তুমি ও একদিন বড় হবে বাবা
মায়ের সন্মান মর্যাদা যে দেয়
আল্লাহ তাকে মর্যাদায়
অনেক উপরে নিয়ে যায়।
এরপর থেকে আমির এর দুষ্টামি আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকল। সে সবার সাথে সাথে মা বাবার প্রিয় লক্ষী ছেলে হয়ে উঠল অল্প কিছুদিনে।
সমাপ্ত
১,৭৮৩ বার পড়া হয়েছে
প্রথমতঃ এটি আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা !তাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ —- ।।
প্রথমতঃ এটি আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা !তাই জসিম ভাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ —- ।।
২য়ঃ এই কবিতাটিকে ঘিরে যে শিক্ষণীয় বাস্তব কাহিনীড় অবতারণা করা হয়েছে; তা এক কথায় অতুলনীয় !!
আমির এবং আমিনা দুজনকেই আমার অশেষ আদর —— !
২য়ঃ আপনার কমেন্টস এ অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমির এবং আমিনা দুজনকে আদরের জন্য ধন্যবাদ।
৩য়ঃ
এত বড় মনের একজন মানুষ এবং লেখিকাকে ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করছি নে । শুধু কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি — ।
এত বড় মনের একজন মানুষ এবং লেখিকা আমি কৃতার্থ জসিম ভাই এর মন্তব্যে।
অনেক শিক্ষামূলক । খুবই ভালো লাগলো । সুন্দর লেখার জন্য ধণ্যবাদ ।
ধন্যবাদ সাইদ ভাই কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
চমৎকার পোস্ট।
ধন্যবাদ ভাই কমেন্টসের জন্য।
খুবই ভাল লাগলো আপা।
শিশুদের সামনে উদাহরন নিয়ে হাজির হওয়ার গল্পটি খুবই ভাল লেগেছে।
এভাবেই শিশুরা মানুষ হয়, এভাবেই এদের মানুষ করতে হয় আসলে।
অনেক ভাল এবং শিক্ষনীয় এই পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ।
এভাবেই শিশুরা মানুষ হয়, এভাবেই এদের মানুষ করতে হয় আসলে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকবেন।
আজিম ভাই মন ভরে যায় আপনার মন্তব্যে। সবসময় এইভাবে প্রেরণা দিবেন ,পাশে থাকবেন।
পোষ্টটা অনেক উঁচু মানের আপা, মন্তব্য আপনি অবশ্যই ডিজার্ব করেন। এখনও আমার মনের মধ্যে খুঁতখুঁতি রয়ে গেছে মন্তব্যটা পোষ্টের তূলনায় যথার্থ হয়নি।
_KHUB… KHUBB …KHUB VALO LAGLO APU SHISHUTOSH EI GOLPOTI. ARO BESHI BESHI LEKHA CHAI BAPONER KACHE . VALO THAKBEN SOTOTO. THANKS. ………ahmed ruhul amin.
ধন্যবাদ রুহুল আমিন ভাই কমেন্টসের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আপনিও লিখবেন ভাই।
ভাল লাগল আপি।
ধন্যবাদ আপি। শুভেচ্ছা নিও।
সব সন্তান যেন এমনই হয়
হ্যা আমাদের কামনা হবে তাই। ভাল থেক আপি।
Mon vore gelo
sundar oti sundar
onek suvechha roilo
আমার ও মন ভরে গেল রেবা দা আপনার মন্তব্যে।
শুভেচ্ছা রইল অনেক অনেক।
মা আদর করে ছেলের মাথায় মুছে দিয়ে বলেন ওই সময়ে ভয় ছিলনা তার মনে। তৃষ্ণার্ত মাকে পানি খাওয়ানো ছিল তার উদ্দেশ্য।
ছোটদের অনেক শিক্ষনীয় বষয় আছে আপনার লেখায়। সাথে অসাধারন আর্কষনীয় ছবি ও লেখায় অসাধারন মাতৃভত্তি ফুটে উঠৈছে।অনেক ধন্যবাদ।
শিক্ষামুলক লিখণী
বেশ চমৎকার লিখা
শুভ কামনা
শুভ সকাল