ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1250বার পড়া হয়েছে।
পূর্ব প্রকাশের পর
ঐদিনের পর থেকে আর অনুশকা বা তার মা এর সাথে রাশেদ আর দেখা হয়নি ।যদিও এই রাস্তা দিয়ে অফিস যাওয়ার পথে প্রতিদিন তার উৎসুক মন চোখ খুঁজে বেড়ায় এই শিশু আর তার মাকে ।অফিস এ অনেক কাজের চাপ ছিল । এই অফিস এ সবকিছু তে খুব নিয়ম শৃঙ্খলা. নয়টা বাজার পনর মিনিট আগে এসে সবাই যে যার ডেস্ক এ বসে পড়ে । কার্ড পাঞ্চ এর নিয়ম থাকায় দেরী করার কোনো স্কোপ নাই. তাহলে মাস শেষে এমপ্লয়ী রাটিং ডাউন হয়ে যায় । প্রতিমাসে একজন এমপ্লয়ী অফ দা মানথ হয় ।
তার যিনি বস অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যানেজার সে কখনো ই বলা যায় বাংলায় কথা বলেনা, সব সময় ইংলিশ এ কথা বলছে, সারাক্ষণ ই তার বাহিরের কল আসে ।পরে রাশেদ কে এসব কল হ্যান্ডেল করতে হবে l আপাতত সে নুতুন বলে এখনো সে অত কল রিসিভ করেনা, এখনো ও সে ওদের ফাস্ট ইংলিশ বলা রপ্ত করতে পারেনি । লোকাল যত ফোন, কমিউনিকেশন, ই -মেইল চেক, চিঠি পত্র ড্রাফট করা, ব্যাঙ্ক এর সব তাকে ই দেখতে হয় । যদিও কাজের সময় বিকাল পাচটা পর্যন্ত কিন্তু কখনো সে পাচটায় বের হতে পারেনি ।প্রতিদিন কাজ শেষ করে বের হতে হতে সাত তা আট টা বেজে যায় ।
বাস, রিকশা রাস্তার জ্যাম সব কিছু টপকিয়ে বাসায় আসতে আসতে শরীর ছেড়ে দেওয়ার মত অবস্থা হয় । তারপর ও আবার এলার্ম ক্লক এ টাইম সেট করা, পরের দিন সেই অফিস এ যাওয়া, একই রুটিন মাফিক কাজ, মাঝে মাঝে বিরক্তি আসে মনে l কোনো অপসন তো নাই কাজ করা ছাড়া । তার তো কোনো জমিদারী বা ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নাই ।বাচতে হলে কাজ করতে হবে ।যদি সে কোনো স্বাধীন কোনো কাজ বা বিসনেস করতে পারত । এত সব ভাবতে ভাবতে বাসার কাছে এসে পৌছল , তার মনে হলো ঘরের চিনি শেষ, চিনি কিনতে গলির মুদির দোকানে এসে থামল । চিনি কিনে পয়সা দিয়ে আসতে দেখতে পেল অনুশকা আর তার মা । ভদ্র মহিলা আজ ও সাদা শাড়ি পড়েছে ।ঠিক মহিলা বলা উচিত না এখনো মেয়ে ই , বয়স খুব বেশি মনে হয়না তেইশ চব্বিশ হবে , একসময় সে দেখতে সুন্দর ছিল সে সেটা বুঝা যায়, কিন্তু এখন সেই উজ্জলতা নেই চেহারা তে তার কারণ সাদামাটা বেশ বাস এর কারণে. খুব সাধারণ সাদা তাত এর একটা শাড়ী পরা, চুল টা কোনরকম পিছনে টাইট করে বাধা, মুখে নাই কোনো প্রসাধনীর চিহ্ন । তারপরে আলাদা একটা বিশেষত্ব আছে চেহারাতে যেটা রাশেদ কে আকর্ষণ করলো গভীরভাবে ।আজকে ও অনুশকা মায়ের সাথে আছে কিন্তু আজকে সে রাশেদ কে চিনতে পারেনি বা সে খেয়াল করছেনা । সব মনোযোগ তার আইসক্রিম এর দিকে ।
মাম্মী ম্যন্গো আইস্ ক্রিম খাবো, বলে উঠে অনুশকা । আইস ক্রিম কিনে টাকা দিয়ে মুখ ঘুরাতে রাশেদ কে দেখে সালাম দিল , ভালো আছেন আপনি বলল অনুশকার মা মেয়েটি ।
যদিও সে সালাম দিল কিন্তু তার চেহারা বা চোখে তে কোনো হাসি নেই । পুরা চেহারা তে গাম্ভীজ্য আর বিষন্নতার ছাপ । হাতে অনেক বাজার ব্যাগ, সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে । তারমধ্যে অনুশকা বায়না ধরল কোল কোল ।
বিব্রত হয়ে পড়ল সে, অনুশকা তোমাকে কোলে নিলে মাম্মি বাজার ক্যারি করব কিভাবে বেবি ।
অতএব রাশেদ কে বলতে ই হলো আপনি কিছু মনে না করলে আমাকে কিছু জিনিস দিন না ? আমি আপনার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেই ।
এবার অনুশকা তার দিকে ছোট হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল “কোল ”
রাশেদ ও মায়া ভরে কোলে নিয়ে ফেলল বাচ্ছা টিকে ।
অনুশকা ছি ছি মা নিচে নাম , আমরা রিকশা নিচ্ছি ।
আমি টায়ার্ড মাম্মি বলল অনুশকা .
মেয়েটি স্পষ্ট ই বুঝা যাচ্ছে খুব বিব্রত বোধ করছে এভাবে রাশেদ এর সঙ্গে যেতে ।
আপনি এত ভাববেননা তো বলে একরকম জোর করে তার হাত থেকে দুটো ব্যাগ নিয়ে নিল এবং অনুশকা তার কোলে বসে রইলো ।
দুজনে হাটতে লাগলো অনুশকার বাসার দিকে ।যেতে যেতে কিছু কথা হলো. একতরফা রাশেদ তাকে জিজ্ঞাসা করলো, কতদিন হলো এখানে আছেন, কি করেন? আর কে কে আছে বাসায়?
তারা এখানে আছে আট বছর হলো, এটা তার বাবার বাড়ি, এখন সে থাকে এখানে.
কি আশ্চর্য্য রাশেদ এখানে আছে সাত বছর হলো, কোনদিন কেন এদের কে দেখেনি ? রাশেদ ও আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল তার বাসা, তার সাথে মা থাকেন, আর এক বুয়া, এই হলো আমার ফ্যামিলি বলে সে একটু হাসলো ।
এর পরে ও তার মুখে কোনো হাসি আভাস দেখা গেলনা , সে প্রথম থেকে এপর্যন্ত খুব চুপচাপ, কি যেন ভাবছে সারাক্ষণ ।
বাসার সামনে চলে আসল তারা , গেট খুলে সব হাতের বাজার রেখে অনুশকা কে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতে দেখল সে গভীর ঘুমে, তার আইস ক্রিম এর রসে রাশেদ শার্ট এর পিছন দিক মাখামাখি .
ইশ আপনার শার্ট টা ময়লা করে দিল. অনুশকা কে কোল থেকে নিতে গিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ল তার মা. অনুশকা শক্ত করে রাশেদ এর শার্ট মুট করে ধরে আছে, ছাড়াতে গেলে সে আবার মুট করে ধরে আর ঘুমের মধ্যে ই কেদে উঠছে ।
তাকে বিব্রত অবস্থা থেকে বাচানোর জন্য রাশেদ বলে উঠলো একটা কাজ করুন ওর রুম টা আমাকে দেখিয়ে দিন, আমি শুইয়ে দেই, তাহলে আর ঘুম থেকে জেগে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকলোনা ।
কিন্তু মেয়েটি এটা করতে চাচ্ছেনা অনাত্তীয় কাওকে সে হুট করে বেড রুম এ ঢুকাতে পারেনা .
রাশেদ তার অপ্রস্তুত অবস্থা উপলব্দি করে বলল ” ঠিক আছে আমি ওকে সোফায় শুইয়ে দেই ..বলে সোফায় শুইয়ে দিল .
ওকে তাহলে আমি চলি এবার , যদি আপনার কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে জানাতে পারেন, একটা কাগজে সে তার নম্বর লিখে দিল. ।
মেয়েটি যেন অনিচ্চাস্বত্তেও তার নাম্বার টা নিল এমন ভাবে .তারপর বলল আপনাকে চা দেই, যদি ও এখন ডিনার টাইম, আপনি নিচ্চয় কাজ থেকে ফিরেছেন?
আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবেনা, আপনি বাচ্চার টেক কেয়ার করেন, যদি বলেন আমি আপনাকে বাজার সামলে ঘুচিয়ে দিব ।
আর দাড়িয়ে থাকার কোনো স্কোপ নাই, কিন্তু রাশেদ এর এই অসহায় মা শিশু কে ছেড়ে একা বাসায় আসতে ইচ্ছে হচ্ছিলনা, এটা কি তার সহানুভূতি না কি তার চেয়ে বড় কিছু সেটা এই মুহুর্তে সে ভাবছেনা । রাশেদ এর মনে এই ভাব টা খেলা করছিল কিভাবে এদের সঙ্গে আরো কিছু সময় কাটানো যায় .তার ইচ্ছে হচ্ছে সব গুলি বাজার ঘুচিয়ে রান্না শেষ করে মেয়েটিকে খাইয়ে দিয়ে তারপর নিচ্চিন্ত ভাবে বাসায় যায় । মেয়েটির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সারাদিন সে রান্না ও করেনি, তেমন কিছু ও খায়নি ।
রাশেদ উপায় খুজতে লাগলো কিভাবে মেয়েটির সন্মানে আঘাত না করে তাকে একটু সাহায্য করা যায় এবং তার সাথে আরো কিছুক্ষণ সঙ্গে থাকা যায় ।
==================================================================================
রুবিনা দের বাসা র পিছনের জঙ্গলে যে ফাকা জায়গা আছে সেখানে সুন্দর করে রহিম বাধাকপি র ফলন ফলিয়েছে, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এখানে জায়গা টা ছিল পুরো আগাছায় ভর্তি, সেটাকে যে কেউ এত সুন্দর বাগানের শেপ দিতে পারে না দেখলে কিছু তে বিশ্বাস হোতনা । রুবিনা মিস্ত্রী আনিয়ে এ জায়গায় একটা দোলনা বসালো এবং দুইটা বসার জন্য সিমেন্ট এর বাধানো চেয়ার এর মত বানালো ।
ছোট জামাল খুশিতে লাফ দিল “কি মজা কি মজা আমি দোলনায় খেলামু । সে দোলনায় বসলো আর রহিম তাকে দোল দিতে লাগলো ।
রহিম তুমি তো জায়গা টাকে ছবির মত বানিয়ে ফেলেছ , বলল রুবিনা উচ্চসিত স্বরে ।
আপা আপনি দোলনায় বসেন জামাল এর লগে, আমি ধাক্কা দেই ।
রুবিনা হাসতে হাসতে বসলো জামাল এর পাশে ।
রহিম তোমার শরীর পুরো ঠিক আছে তো ? পায়ে ব্যথা কি এখনো আছে একটু ?
না আপা আল্লাহ র রহমতে আপনার সেবায় ডাক্তার এর অসুধ এ পুরা ভালো হয়া গেছি ।আমার সারা শরীর এর চামড়া দিয়া জুতা বানাই দিলে ও আপনার ঋণ শোধ হইবনা আপা ।
আজকে তোমাকে আবার যেতে হবে হাসপাতাল এ আরেক বার এক্স রে করাতে হবে সব ঠিক হয়েছে কিনা চেক করার জন্য ।তুমি নাস্তা খেয়ে আস, জামাল কে স্কুল নামিয়ে যাওয়ার পথে হাসপাতাল যাব ।
বাপ ছেলে দুজনে রেডি হয়ে যখন গাড়ি তে বসলো রুবিনা র ও বেশ ভালো লাগলো ।এই কদিন এ তাদের চেহারার উন্নতি হয়েছে অনেক খানি ।যখন জেল খানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন দেখে মনে হচ্ছিল বাচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই ।
সব চেক আপ শেষে ঘরে ফিরতে রুবিনা শিউলি হেসে ফোন দিল এগিয়ে , আপা আপনার ফোন, ভাইয়া তিনবার ফোন করছে, আমার জিগায় কই গেছে, আমি বলছি রহিম ভাই রে নিয়া বাহিরে গেছে ।
ব্যাপার কি জানেমান তোমাকে তো পাওয়া মুশকিল । কোন রহিম করিম এর সঙ্গে নাকি হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছ? বলে ফোন এর ওই প্রান্ত থেকে রাজীব হাসলো ।
রুবিনা ও হাসলো বলল তোমার কি খবর ?
কে এই রহিম?
ঐযে আমাদের বুয়া মারা গেল না তার হাসবেন্ড ।
ও কি তোমাদের সঙ্গে থাকে ?
হ্যা আমাদের তো বাড়তি রুম আছে একটা রুম নিয়ে তার মা ছেলে সহ থাকে, আমাদের বাগান পরিস্কার রাখে ।
তোমাদের মালির মত, সে তোমার গাড়িতে কোথায় যায়?
উফ রাজীব তাঁকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গিয়েছি এক্স রে করার জন্য
লিসেন রুবিনা তুমি খুব ভালো মেয়ে এটা জানি, এদেরকে বেশি প্রশ্রয় দিবেনা, ঠিক আছে ডাক্তার দেখিয়েছ এখন তাঁকে কিছু টাকা আর কোনো একটা জব দিয়ে তার নিজের জায়গায় চলে যেতে বল । তোমাদের বাসায় তাঁকে রাখার দরকার কি আর তোমার ই বা কেন তাঁকে কেন ডাক্তার এর কাছে নিতে হবে , তোমাদের কেয়ার টেকার আছে না ? বলল একটু বিরক্তি আর ঝাঝালো স্বরে রাজীব ।
রুবিনার মন টা খারাপ হয়ে গেল , সে ও বিরক্ত হয়ে গেল রাজীব এর কথা বলার ধরনে
দুখিত রাজীব আমি তোমার মত চিন্তা করিনা , আমি তার সাথে ডাক্তার এর কাছে যাওয়ার অর্থ তখন তাঁকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে . এ প্রায় মরতে মরতে বেছে উঠেছে । তার একটা ছোট ছেলে আছে, ছেলেটার অবলম্বন সুধু তার বাবা ।
রুবিনা সারা দেশে লাখে লাখে এরকম ঘটনা আছে, এদের দেখা শোনা করার দায়িত্ব কি তোমার না সরকারের ?
সারাদেশ এর সব অসহায় মানুষ কে জানিনা বা দেখি ও নাই, কিন্তু যে আমার সামনে এসে পড়েছে তার দায়িত্ব অবশ্যই আমার
ওহহ তোমাকে আমি কিভাবে বুজাব ঠিক বুজতে পারছিনা, হয়তবা একটা ক্রিমিনাল কে থাকতে দিয়েছ, কে জানে হয়তবা এ তার বউ রে খুন করছে, কোনো ঠিক আছে কিছু, তোমাদের টেনসন এ এখন আমার ঘুম আসবেনা ।
রাজীব আমি এত অজ্ঞান না, আমার বোধ ভালো কাজ করে, অন্ততপক্ষে এটা বোঝার বা উপলব্ধি হয়েছে কে ক্রিমিনাল কে না?
নাহ তোমার সাথে কথা বলে লাভ নাই, আঙ্কেল কোথায় ? উনি কিভাবে এসব প্রশ্রয় দেয়, ওনাকে দাও, ওনার সাথে কথা বলি
প্লিস বাবাকে তুমি কখনো এই বিষয়ে কথা বলবেনা রুবিনা বলল চড়া গলায় ।
ওকে বাই দেন বলে খট করে রাজীব ফোন কেটে দিয়েছে ।
রুবিনা ছাদে এসে বসে আছে চেয়ার এ ।শিউলি কযেকবার ডেকে গেছে ভাত খাওয়ার জন্য, তার খেতে ইচ্ছে করছেনা ।
আপা আপনার শরীর ঠিক আছে তো ? ভাত খাবেন না ? হটাত করে ছাদে রহিম দেখা দেয়
না রহিম আজকে ভালো লাগছেনা খেতে , তোমরা খেয়ে শুয়ে পড়
আপা আসেন দোহাই একটু কিছু মুখে দেন বলে বার বার অনুনয় করতে থাকে
কিভাবে একে খুনি ভাববে, মুখে কত মায়া, আপনি কানতেছেন কেন আপা, কি হইছে আপনার বলল অত্যন্ত দরদের স্বরে ।
আর বাবা ও একই কথা বলে ..বাবা আর রাজীব এর সাথেযুদ্দ করে কতদিন ওদের রাখতে পারবে আল্লাহ জানে ।
(পরবর্তীতে)
১,৩০৩ বার পড়া হয়েছে
ছবিতে ও কথা বলে…………………
যে ছবি এঁকেছেন উপন্যাসে
সুন্দর করে ফুটে উঠেছে,
অনেক ভাল লাগা।
বেশ জমে উঠছে আপনার উপন্যাস।
কিন্তু
মেয়েটি এটা করতে চাচ্ছেনা অনাত্তীয়
কাওকে সে হুট করে বেড রুম এ
ঢুকাতে পারেনা .
এখানে মেয়েটির উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে ।
কাওকে না হয়ে বুঝি কাউকে হবে ।