ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1026বার পড়া হয়েছে।
পূর্ব প্রকাশের পর
অনেকক্ষণ ধরে রাজীব কে কানেক্ট করার চেষ্টা করছে রুবিনার বাবা। পাচ্ছেনা রাজীব এর নাম্বার চেঞ্জ হয়ে যায়নি তো? বেশ কয়েক বার চেষ্টা করার পর রাজীব এর ভয়েস পাওয়া গেল।
বাবা রাজীব উত্তেজনায় আর শারীরিক দুর্বলতায় তিনি হাপাতে লাগলেন। কিছুক্ষণ তিনি কথা বলতে পারলেন না।
কি হয়েছে বাবা রাজীব জিজ্ঞাস করে । ফোন এর ওপার থেকে ও অস্থির হয়ে পড়ে ।
রাজীব বাবা আমার পাগল মেয়ে এখন থেকে বস্তিতে থাকবে। বৃদ্ভ বাবা ডুকরে উঠলেন। তার হাত থেকে ফোন ছিটকে পড়ে গেল। ফোন এর লাইন কেটে গেল। পরক্ষণে ফোন বেজে উঠলো অনেক জোরে।
বাবা কি হয়েছে ? ফোন এর অপর প্রান্ত থেকে রাজীব এর ব্যাকুল গলা শোনা গেল।
বাবা দুইদিনের মধ্যে বাংলাদেশ এ আস যদি রুবিনা আর আমাকে শেষ বারের মত দেখতে চাও বললেন বাবা কাতর গলায়।
আপনার কিছু হবেনা ইনশা আল্লাহ আমি এক্ষনি আমার এয়ারলাইন্স কে বলব ইমার্জেন্সি টিকিট দিতে। যদি আজকে রাতে কনফার্ম করতে পারি পরশু সাড়ে দশটায় ঢাকা ল্যান্ড করছি। একঘন্টার মধ্যে আপনাকে কনফার্ম জানাচ্ছি। আপনি এই কয়েক দিন আপনার অসুস্থতার কথা বলে যদি পারেন জোর করে আপনার কাছে ধরে রাখেন রুবিনাকে। আমি এসে সব ঠিক করে ফেলবো বাবা। রাজীব এর বাবা না থাকায় রুবিনার অনুরোধে তার বাবা কে সেও বাবা ডাকে। সুধু ডাকা ই না এনাকে সত্যিকার এর বাবার মত ই কেয়ার করে। কাছে থাকলে রুবিনাকে চটকনা মারত বাবাকে হয়রান করার জন্য।
ওই বদ বেটা কে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন না কেন? রাজীব বলল রাগত স্বরে।
ওত চলে গেছে বাবা কালকে সকাল এ। এখন এখানে নাই।
তাই নাকি ? সব ঠিক ঠাক আছে? চুরি টুরি করেনি তো ?
না না ঐসব কিছু না ক্রিমিনাল টাইপ এর না। তিনি নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠছেন নিজের উপর তার ও ছেলে আর তার ছেলে র জন্য মন খারাপ লাগছে বলে। সম্ভবত এরা রুবিনার আদরের ধন বলে তিনি চাইলে ও এই বস্তির বাবা ছেলে অগ্রাহ্য করতে পারছেন না। তাছাড়া রুবিনা কালকে থেকে মন খারাপ করে আছে। ওনার বড় আদরের মা হারা মেয়ে যাকে জীবনে কোনো কষ্ট কে স্পর্শ করতে দেয়নি আজকে মেয়ের মানসিক বেদনায় কিছু করতে পারছেন না। তার বুকের গভীর থেকে দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো।
হে আল্লাহ প্রভু আমার মেয়ের কষ্ট দুরে করে দাও বলে উঠলেন বাবা কাতর গলায়।
ঠিক দুই দিন পরে সকাল এগারো টায় রাজীব এসে পৌছলো তার এই টার্মস এর পরীক্ষা ক্যানসেল করে। রুবিনা বিমর্ষ হয়ে তখন বাগানে হাটছিল। অনেকদিন পরে রাজীব এর সাথে দেখা প্রায় ছয় বছর পরে। প্রথমে ছুটে রাজীব এর কাছে চলে এসেছে। রাজীব ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে। সে আস্তে করে রাজীব এর বাহুবন্ধন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে খুব নির্লিপ্ত ভাবে বলল
কেমন আছ রাজীব ? তোমার পরীক্ষা কি শেষ ? এই সময়ে চলে আসলে কেন?
রাজীব থমকে গেল রুবিনার অস্বাভাবিক শীতল ব্যবহার এ। সে ভেবেছিল অন্ততপক্ষে তাকে সামনা সামনি দেখার পর রুবিনার আগের আবেগ ফিরে আসবে।
রুবি আমার রুবি তুমি আমাকে দেখে খুশি হও নি ? আমি আমার সব ফেলে চলে আসছি রুবি। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে বড় পজিশন অফার করেছে আমার স্যার ।আমি পরীক্ষা না দিয়ে সেই অফার অগ্রাহ্য করে তোমার কাছে চলে এসেছি চিরদিনের জন্য। প্লিস এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিও না আমার থেকে। আমাকে মাপ করে দাও তোমাকে বাজে বাজে কথা বলেছি। আমি আমার জীবনে কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিবনা প্রমিস। হাপাতে হাপাতে এক নিশ্বাসে কথা গুলি বলে সে থামল।
কিন্তু রুবিনা কে দেখে মনে হচ্ছে না আদৌ রাজীব এর কথা শুনছে কিনা। সে কপাল টিপে দাড়িয়ে আছে।
রাজীব কিছু মনে করনা আমি একটু শুয়ে থাকব আমার ভীষণ মাথা ব্যথা হচ্ছে আমি তোমার কথায় মনোযোগ ও দিতে পারছিনা বলে আর দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার রুম এ এসে শুয়ে পড়ল।
বিকাল বেলা রুবিনা তার ছোট একটা ব্যাগ গুছিয়ে বাহিরের দিকে রওয়ানা করতে রাজীব আর বাবার সাথে গেট এ দেখা হলো। রাজীব রুবিনা র হাত ধরে ফেলল “কোথায় যাচ্ছ ? একি মনে তো হচ্ছে অনেক জ্বর তোমার।
প্লিস তুমি আমাকে এভাবে বারবার টাচ কর কেন?পারমিশন ছাড়া রুবিনা বলল বিরক্তির সুরে।
তোমাকে টাচ করতে পারমিশন লাগবে রুবি রাজীব এর মুখ অপমানে লাল হয়ে গেল।
এখন লাগবে আমি এখন আরেকজনের ওয়াইফ। বলল সে মৃদু গলায়। সরি রাজীব তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। আমি তোমার সাথে এখন আর আগের রিলেশন রাখতে পারবনা। আমাকে মাপ করে দাও প্লিস। রুবিনা বলল অনুনয়ের সুরে।
রুবিনা তাদের পাশ কাটিয়ে গেট থেকে বের হতে বাবা ও রাজীব তার পিছু নিল। চল গাড়ি তে তোমার তো জ্বর।
আমি তো যাব সামনের এই বস্তিতে। তোমাদের দামী বিদেশী গাড়ি ওখানে ঢুকবেনা রাজীব।
আচ্ছা চল একসঙ্গে যাব হাটতে হটতে রহিম এর বস্তিতে তো? বলে রুবিনা কে অনুসরণ করলো।
রহিম আর জামাল দুজনে ঘরের বাহিরে এসে দাড়ালো ঠিক তখন ই দেখা গেল রুবিনা কে।
এইরে রহিম মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো সফল হলনা রুবিনা সামনে চলে আসল বলল
কেমন আছ রহিম জামাল? রুবিনা ক্লান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো।
রুবিনা কে রহিম এর বুকের ভিতর টা ধড়াস ধড়াস শব্দ করতে লাগলো।এই কয়েক দিনরাত অপার ভালবাসার শেষ স্পর্শ টা কল্পনায় ঘুমে জাগরণে তাকে মারিতেছিল । রাতে ঘুম যখন ভেঙ্গে যায় এই বড় ঘরের বড় মনের মেয়ের ভালবাসার স্মৃতি তাকে আচ্ছন্নের মত করে রাখে। ইচ্ছে করে ছুটে যায় ওই পবিত্র অপূর্ব দেবী আপার কাছে।
হায় আপা কেন যে এরকম করলেন? আমার মত ভিখারী কে কেন এত আদর দিলেন। কিভাবে এই আদর এর দাগ আমি মুছি এখন?। আমার সেইহস নাই আপনাকে একইভাবে সে ভাবতে ভাবতে আবার সে কেদে ফেলল।
ভালো আছেন আপা ? জিজ্ঞাসা করলো সে। আমার মত অকৃতগ্গ রে মাপ করি দিয়েন আপা আপনারে বিদায় না জানাই চলে আসছি।
রহিম এর মনে হলো আপা অনেক শুকায়ছেন।
==========================================
রুবিনা রাজীব প্রায় একঘন্টা ধরে বসে আছে রহিম এর বাড়িতে। রহিম সেই ছয় টায় তাদের ভিতরে বসিয়ে কোথায় গিয়েছে এখনো ফিরে নি। এখন বাজে সাত টা।
বেটা মনে হয় পালিয়েছে বলল রাজীব বিরক্তির স্বরে উঠে সে অস্থির ভাবে পায়চারী করতে লাগলো।
রাজীব তুমি ফিরে যাও বাবা একা বাসায় বলল রুবিনা অনুরোধের সুরে।
আর তুমি কি করবে? হুন্কারের ভঙ্গিতে বলল সে এখানে বসে মশা মারবে ? এই দেখো সে হাত বাড়িয়ে দেখালো। সত্যি মশা র কামড়ে তার দুই হাত ফুলে উঠেছে। সে লাফিয়ে লাফিয়ে মশা মারতে সুরু করলো। রুবিনা অনেক দিন পরে খিল খিল করে হেসে ফেলল রাজীব কে লাফিয়ে মশা মারতে দেখে। দুজনের সম্পর্কে আবার আগের সেই সহজ ভাব ফিরে এলো। তার মনে পড়ল ছোটবেলার কথা। সে সব প্রাণী কে ভয় পেত। ভিমরুল মৌমাছি তেলাপোকা ইদুর বিড়াল সব কিছু র তার এই বন্ধু দুরে থাকার চেষ্টা করত। কিন্তু দেখা যেত কিছু না কিছু সব সময় তাকে সব সময় তাড়া করছে। আসলে তাকে যে তাড়া করত করত তা না সে এই পোকামাকড় দেখলে ছুটা সুরু করত। তার দৌড় দেখে হোক বা ভাইব্রাসন এর কারণে পোকারা তাকে ফলো করা সুরু করত। একবার এক ভিমরুল এসে তার নাকে বসেছে সে ভিম ভিম করতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত হয়েগেছিল।
এটা মনে আসতে রুবিনা আবার খিল খিল করে হেসে ফেলল।
হওয়াই ইউ লাফিং? হোয়াট সো ফানি ? রাজীব ও হাসতে থাকলো।
গুড গড ভুলে গিয়েছি আমার দেশের এইসব অস্বাস্থ্যকর পরজীবী গুলির কথা। এই মরা হতচ্ছাড়া দেশে থাকতে তো চাই। কিভাবে যে থাকব।
রাজীব রহিম আসতে আসতে একটু ঘুমিয়ে নেই বলল রুবিনা ক্লান্ত হয়ে।
তুমি ক্লান্ত রুবি আর আমি টানা ৩৬ ঘন্টা জার্নি করে আসছি এখন ও কিছু খাইনি শাওয়ার নেইনি। তোমার আমার জন্য কি সামান্য ফিলিংস ও নাই। এত চেঞ্জ হয়ে গেছ তুমি বস্তির খ্যাত এর জন্য।
একটু আগের সহজ ভাব টা চলে গেল আবার দুজনের মধ্যে থেকে।
রাজীব তুমি এখন চলে যাও বাসায়। আমি কথা দিছি কালকে সকাল এ বাসায় আসব।
আমি এই নর্দমার মধ্যে তোমাকে ফেলে যেতে পারিনা যদিও সে চিত্কার করে বলছে কিন্তু শেষের দিকে তার গলার স্বর হতাশায় ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ল। সে সদ্য ইউ এস র খুব পরিস্কার সিটি তে এসেছে ছয় বছর পরে। দেশটাকে ই মনে হছে গার্বেজ বিন সেখান এ বস্তি তো ভয়াবহ। তার মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে সে সেন্স লেস হয়ে যাবে।
রুবি তুমি মনে করনা আমি ছোট মনের। আমার সে উদারতা আছে তুমি কোনো ভালো ছেলে পছন্দ করলে ঠিক ই তার হাতে হাসতে হাসতে তোমাকে দিয়ে দিতাম যদি আমি বুঝি তুমি সুখী হবে কিন্তু এই ছেলে এই পরিবেশ। .প্লিস তোমার নিজেকে এত বাজে অবস্থায় নিও না বলল সে হাহাকার এর গলায়।
রহিম আর জামাল অনেকক্ষণ ধরে মতিঝিল এর সামনে শাড়ী কাপড় এর দোকানে ঘুরছে। আপার জন্য কাপড় কিনবে। তার কাছে আছে আপার দেওয়া একহাজার টাকার পাচটা নোট যেই টাকা প্রথম আসার পর আপা দিয়েছিল হাত খরচ হিসাবে। সে টাকা এখনো তার কাছে আছে। আপার টাকা দিয়ে প্রথমে আপার জন্য জিনিস কিনবে। ঘুরতে ঘুরতে তাদের সময় এর দিকে খেয়াল ছিলনা। পাশের মসজিদ থেকে আজান এর শব্দ শুনতে মনে হলো আপা রা তার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাড়াতাড়ি করে আপার জন্য সাদার মধ্যে ফুল দেওয়া কাপড় আর ভাইজান এর সাদা পাঞ্জাবি কিনলো। এত দাম ৩৮০০ টাকা খরচ হয়ে গেল। আর আছে ১২০০ টাকা। জামাল এর জন্য খেলনা কিনলো ১৫০ টাকার। সামনের নান রুটি ঘর থেকে কাবাব রুটি আর পানি চা কিনে তার ঘরে পৌছল তখন বাজে রাত আট টা।
রহিম ঘরে ঢুকে দেখল চাটাই এর একদিকে ফিরে আপা ঘুমিয়ে আরেকদিকে ঢেলান দিয়ে ভাইজান ঘুমাচ্ছে। দুজনে গভীর ঘুমে। তাকিয়ে দেখে ভাইজান এর মুখের চারিদিকে মশা ছেকে ধরেছে। কয়েল খুজলো অনেকক্ষণ ধরে। ছোট একটুকরা ভাঙ্গা কয়েল পেল সেটা জালিয়ে দিল।
আপা র কাছে আসতে দেখল ঘুমের মধ্যে উনি হাসতেছেন। এত সুন্দর এই আপা টা।আকাশের সুন্দর পরীরা ওনার কাছে কিছুনা। ঘুমের মধ্যে নড়ে উঠ তে ওনার ওড়না সরে গিয়ে বুকের একপাশ অনাবৃত হয়ে গেল। পায়জামা টা গোড়ালি থেকে একটু উপরে উঠে গেছে। তাকাবেনা তাকাবেনা ভাবলে তার চোখ পড়ে গেছে এই রমনীয় সৌন্্দর্যে। পুরুষের জন্য কঠিন এই আকর্ষণ থেকে চোখ সরিয়ে রাখা। সেই কষ্টের কাজ টি করলো সে। খুব সাবধানে আপার স্পর্শ বাঁচিয়ে ওনার গায়ে মায়ের যে শাড়ী টা ছিল তা দিয়ে ঢেকে দিল। খুব কষ্টে আবেগ সংবরণ করে উঠে দাড়ালো। খুব ইচ্ছে করছিল অন্তত এই মমতাময়ী মেয়ের মুখটা ভালোবেসে মুছে দেয়। তা করতে না পেরে দরজা খুলে বাহির এ এসে বসলো। তীব্র এক মানসিক আবেগ ও শারীরিক আবেগ বোধ করতে লাগলো তার প্রিয় আপার জন্য। ইচ্ছে করছে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তা করতে না পারার জন্য ভিতরে পুরুষালি আবেগ সহ কেদে উঠলো জোরে।
দয়াময় আল্লাহ আমার মন থেকে এসব দূর করি দাও আমার আপাকে সুখী করে দাও এই ভাইজান এর সাথে। তার চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝরতে লাগলো।
(পরবর্তীতে)
১,০৮৩ বার পড়া হয়েছে
দয়াময় আল্লাহ আমার মন থেকে এসব দূর করি দাও আমার আপাকে সুখী করে দাও এই ভাইজান এর সাথে। তার চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝরতে লাগলো।
——————————–
ভাল লাগল।
উপনাসটি দীর্ঘদিন যাবত্ পড়ছি ,অনেক বড় মনে হলো ।