মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ চেতনা
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1057বার পড়া হয়েছে।
পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশের কবিতাঙ্গনে এক ঝাঁক তরুণ কবির আবির্ভাব ঘটে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ডে মানুষ পেয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার অবারিত প্লাটফর্ম। আর এই সুযোগে এক ঝাঁক তরুণ কবিদের ছোঁয়ায় বাংলা কবিতায় ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। সময়ের উত্তাপ বাংলার কবিদের কবিতায় এনেছে একটি উচ্চকিত শ্লোগান। আর এই শ্লোগানের সঙ্গে মিশে গেছে স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার ঘরে ঘরে প্রত্যাশার একটি নাম ছিলো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমদের হলো সেই বর্ণনা কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় মঞ্জুরীত হয়েছে এভাবে-“স্বাধীনতার জনক শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চারণে,শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্র নাথের মত দ্বীপ্ত পায়ে হেঁটে কবি জনতার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন,তারপর বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলেন-‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়েছে। স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতায় ঐতিহ্যধারা কতটুকু নির্মিত হয়েছে তা নির্ণয় করতে হলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে করতে হবে। তবে স্বাধীনতাকে মধ্যম পুরুষে সম্বোধিত করে কবিতা লেখার যে দ্বারা শামসুর রাহমান সৃষ্টি করেছেন তা সবচেয়ে আলোড়িত করে। স্বাধীনতা উপর প্রথম কবিতা রচনা করেনও তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ‘সন্ত্রাসবাদী বুলেটবিদ্ধ দিন-রাত্রি’ রচনা করেন। তবে তাঁর কবিতার মধ্যে সবচেয়ে নাড়া দেয় ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি- “স্বাধীনতা তুমি-/রোদেলা দুপুরে মধ্য পুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার/স্বাধীনতা তুমি/উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির আচঁল/স্বাধীনতা তুমি/বোনের হাতে নম্র পাতায় মেহেদী রঙ।” স্বাধীনতা শব্দটিকে আমাদের কবিরা সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়েই শুধু নয়, যুদ্ধোত্তর সময়েও আমাদের সমস্ত নবীন-প্রবীণ কবিদেরকে স্বাধীনতা শব্দটি বেশী আলোড়িত করেছে। এ শব্দটি ধারণ করে লিখেছে অসংখ্য কবিতা। দীর্ঘ সংগ্রাম ও তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ষোল ডিসেম্বর বাংলায় স্বাধীনতা রক্তিম সূর্য উদিত হলো, অর্জিত হলো স্বাধীনতা। পূর্ণ জন্ম হলো যেন বাঙালী জাতির। শহীদদের উদ্দেশ্য করে জাতিসত্তা ও দরিয়া নগরের কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর ‘বাঙালির জন্মতিথি’ কবিতায় বলেন- ‘তোমাদের হাড় গুলো বাংলার অবিনাশী ঝড় বাঙালীর জন্মতিথি, রক্তে লেখা ষোল ডিসেম্বর।’ (বাঙালির জন্মতিথি) শহীদের হাড়গুলো বাংলার হৃৎপিন্ড অবিনাশী ঝড়, আর রক্তের লেখা ষোলই ডিসেম্বর বাঙালির জন্মতিথি এ যেন বাঙালির প্রদীপ্ত অহংকার। যে অহংকার শুধু রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা সম্ভব। প্রাণের বিনিময়েও আনা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির মুক্তি বা স্বাধীনতার ইতিহাস মূলত রক্তক্ষয়ের ইতিহাস। অর্জিত স্বাধীনতা তাই যুদ্ধোত্তর কবিতার একটি অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে কবিতা কর্মীদের চৈতন্যে। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবিসত্তার অধিকারী মুহম্মদ নূরুল হুদা ষাট দশকের দ্বিতীয় প্রজন্মের কবি। স্বাধীনতা উত্তর সমাজ রাজনৈতিক সঙ্কট, উত্তেজনা ও অবক্ষয়ের পটভূমিতে মুহম্মদ নুরুল হুদা শিল্পীমন জীবনের স্বতন্ত্রীকতায় জাগ্রত হওয়ার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ। জীবনের তাৎক্ষনিক চঞ্চলতার মধ্যে সমাজমনস্ক কবিকে কখনো কখনো স্লোগান ধর্মী হয়ে উঠতে দেখা যায়। এই প্রবাহের মধ্য দিয়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বাবার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। একাত্তুরের মুক্তিযুুেদ্ধ যখন পাক-হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর সব কিছু কেড়ে নিচ্ছিল, ঠিক তেমনি মুহুর্তে আপামর জন-সাধারণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী তথা শিকারী কুকুরকে তাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মুহম্মদ নুরুল হুদা নিজেরই কন্ঠে ঘোষণা করেন- ‘ছিঁড়ে ফেলবো, খুঁড়ে ফেলবো, ফেঁড়ে ফেলবো ফেঁড়ে শিকারী কুকুর কেউ না আসুক তেড়ে ছিঁড়ে ফেলবো, খুলে ফেলবো, গিলে ফেলবো শিকারী কুকুর কেউ না আসুক তেড়ে (দ্রবিড়ার প্রতি উত্তর-তিরিশে, হাজার কবিতা, ফেব্র“’২০০০) মুক্তিযুদ্ধোত্তর ষাটের দশকের বিক্ষুব্দ গণজোয়ার এবং পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাক সরকারের নির্যাতনের স্টীম রোলার কবিকে দারুনভাবে আহত করে। জাতীয় জীবনের সমস্যা সঙ্কটে, আন্দোলনে ঝলসে উঠে তার কলম। মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সংঘাত ও রক্তক্ষরণে,জাতির প্রত্যাশিত অস্তিত্ববাদী জীবনজিজ্ঞাসায় কবি উপস্থাপন করেন- “জলের ডাকাত এসে কেড়ে নেয় অসহায় যুবতীর লাশ সভ্যতার সাজঘরে নির্মম উলঙ্গ নদী প্রতিশোধে জলদস্যু হয়। (উলঙ্গ নদী/শোণিতে সমুদ্রপাত) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শুধু নগর-বন্দর আক্রমিত হয়নি,গ্রাম্যএলাকাও আক্রমণ হয়েছে, অত্যাচারের স্টীমরোলার তাদের সহ্য করতে হয়েছে।পুরো বাংলার পাশাপাশি কবির নিজ এলাকা কক্সবাজারও আক্রমণের শিকার হয়েছেন.নির্যাতিত ও শহীদ হয়েছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধে বাব মুখোমুখি ছিলেন,তার চেয়ে জঘন্য এক দুশমনের বলা নেউ কওয়া নেই একদিন এক পাল খাকি পাকি এসে তছনছ করে গেল সাগরপােেড়র এই গাঁও ধরে নিয়ে গেল ইলিয়াস কাকাসহ এ পাড়ার লেখাপড়া জানা কিছু লোক তারপর পালপাড়া গিয়ে ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে গোপালের যুবতী মেয়েকে তুলে নিল জিপে( বাবা ফিরে আসে/ স্মৃতিপুত্র) তামাটে জাতির কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা মানুষের প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মিথ ব্যবহার করে আশার বাণীর জানান দেন। স্বাধীনতার অর্থকে গভীর বি¯তৃত, অর্থবহ ও সর্বগ্রাহী করতে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে উচ্চারণ করেন- স্বাধীনতা? -সে তো হোমারের লেখা স্বজাতির শ্রমকাব্য শ্রমিক, বণিক মালিক জনতা মিলনের মহাকাব্য স্বাধীনতা নয় পতাকার নামে বাতাসে উড়ানো মন্ত্র স্বাধীনতা নয় বুর্জোয়া বিলাসী সমাজতন্ত্র (স্বাধীনতা/যিসাস মুজিব)। এই কবিতার মাধ্যমে কবি স্বাধীনতাকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক বলে মনে করেন। কবি স্বাধীনতাকে শ্রমিক, বণিক, মালিক জনতার সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসাবে চিত্রিত করেছেন। মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় ইতিহাস চেতনায় পুরো বাংলার ইতিহাস স্বরুপ বিশ্লেষণ প্রকটিত। আজকের বাংলাদেশে কত যে অপশাসন, কত নেতার বিদ্রোহ, কত যে রক্ত ঝরেছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। সাম্যের এই দেশে মিলন মেলায় বারবার আক্রমণ। বেনিয়া দখল প্রভূ, নবাব সিরাজের রক্তে রঞ্জিত হল বাংলার মাটি। সেই থেকেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলো। সেই অস্তে যাওয়া সূর্যকে উদয়ের পথে নিয়ে আসার জন্য দামাল ছেলেরা সিপাহী বিদ্রোহ, দিব্য, কৈবর্ত্য, তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম আর শত শহীদের আত্মত্যাগে বাংলা সামনে এসে দাঁড়ায়, প্রায় ২০০ বছরের অপশাসন। তার পর সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, ঊনসত্তর, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের বিজয়- এভাবে আসতে আসতে কবির কবিতায় ধরা পড়ে- “এলো সাতচল্লিশ, তারপর ভাষাযুদ্ধ তারপর স্বাধীকার, তারপর একাত্তর কারা আবার তছনছ করে দিতে চায় মহামানবের শান্তি থেকে এ বাংলার ঘর? বিতাড়িত বেনিয়া প্রভূর পরে নব্য দখলকার ইয়াহিয়া, আয়ুবের প্রেতাত্মা বাঙালির গণরায়কে পাল্টে দিতে শুরু করলো নির্বিচারে গণহত্যা; গর্জে উঠলো বঙ্গোপসাগর, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, শাপলা, দোয়েল আর বাংলার লোকশ্র“ত শান্তিধাম গর্জে উঠলেন জাতির জনক, ইতিহাসের মহা নায়ক, মুজিব যার নামঃ ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শুরু হল শেষ যুদ্ধ, ছড়িয়ে পড়লো বাংলার নগর-বন্দর, হাট-গ্রাম প্রান্তরম বিচ্ছু মুক্তিসেনা, তিরিশ লক্ষ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের আত্মদানের বিনিময় ছিনিয়ে নিল লাল সবুজের পতাকাঃ জয় বাংলা, বাংলার জয় (বিজয়ী বাঙালি, আমার সাহস নেই টোকা মেরে সুন্দরকে উড়িয়ে দেবার) মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় সমকাল সমাজ বাস্তবতা ও মুক্তিযুদ্ধোতর আবর্ত পরিবেশের চিত্র প্রবাহিত। পরাধীন সমাজের জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হারানোর বেদনার ধারা প্রবাহিত । জীবন-দৃষ্টির তীক্ষèতায় নির্বাচনের স্বাধীনতা ভোগ করেন কবি। যেমনটি উপভোগ করেছিলেন নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাখ্যানকারী কবি জঁ পাল সার্ত্রে। তিনি স্বাধীনতার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন,সেখানে ‘নির্বাচনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। নির্বাচনের আগে মানুষ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হলে স্বাভাবিকভাবে তাঁর স্বাধীনতা খর্ব হয়। সার্ত্রের মতে, স্বাধীন মানুষ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করলেও নিজে নিয়ন্ত্রিত হয় না । তিনি মনে করেন-মানুষ হয় সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। সে এক সঙ্গে দু’রকম হতে পারেনো।’(নীরু কুমার চাকমা: ‘অস্তিত্ববাদ: কয়েকটি দিক’,জুন ১৯৭৯,ঢা.বি পত্রিকা) জঁ পল সার্ত্রের বক্তব্যের অনুসারী হয়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামষ্টিক বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রামের কথা তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন- “ওরা প্রতিটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের মতো মিছিলটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, বলছে বন্ধুগণ, থামুন, ন্যায্য মূল্যে সিংহাসন বরাদ্দ হবে/আপনারা কেনাকাটা করুন। কে কার কথা শোনে। রাজাও তাঁর রাজকীয় বাহিনী নিয়ে মিছিলে যোগ দিলো, পাল্টা শ্লোগান তুললো, ‘গ্রহ না মর্ত্য-মর্ত্য, মর্ত্য’ জনতার নিঃশব্দ মিছিল উঠলো ফুঁসে, ‘ধর ধর শালাকে ধরতো।” (অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী/১০) একাত্তরের ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতের কথা আমরা সবাই জানি। সেদিন পাক হানাদার বাহিনী পুর্ব পাকিস্তানের সাথে বেইমানী করে রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর। নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর চালায় নগ্ন হামলা। এই হামলায় পুরো বাংলা বিধ্বস্ত। পুরো দেশ তখন মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়। ২৫ মার্চের সেই ভয়াল অবস্থার কথা বর্ণনা করে মুহম্মদ নুরুল হুদা অত্যন্ত সচেতন ভাবে উপযুক্ত শব্দ দিয়ে তুলে ধরেন- তেড়ে আসে মুক্তপক্ষ ইস্পাত-ঈগল শেষ রাতে জেগে উঠে বিস্ফোরণে, বৈশ্বিক আগুনে আর লোহিতাভ বঙ্গমার ঠোঁটে ছিন্নভিন্ন হয় হর্ম্যরাজি, অতিকায়, ধানব মানব (ব্লীভৎস ১৯৭১/শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি) ‘১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙ্গালী যে স্বাধীন ভূ-খন্ড সৃষ্টি করে, কবি তার কাবিতিক ঐতিহ্যসূত্র সন্ধান ও নির্মাণ করা জরুরী। কেননা বাঙ্গালীকে বর্তমানের এলোমেলো সাংস্কৃতিক ব্যাখা বাখানের হযবরল দশা থেকে নয়, বরং তার পুরাকালীন শেকড় অন্বেষা থেকেই প্রকৃত অবয়বে সনাক্ত করা সম্ভব।’(হাফিজ রশিদ খান.মুহম্মদ নূরুল হুদার মূল পরিচয়,শিল্পসাহিত্য,দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ)। সেই জন্যই কবি চেয়েছেন দ্রাবিড় সভ্যতাকে খনন করতে এবং তার ভেতরের মণি-মুক্তা আহরণে সন্ধানী হয়। এখানে দ্রাবিড়া একটি বাঙ্গালী রমণীর প্রতীক বিভাসিত। স্বাধীন বাংলাদেশ আর দ্রাবিড়া কবির মানসভূমি সৃষ্টি করে যুগ্ম ভাববেণী। কিন্তু এ দ্রাবিড়াই শরীররূপে কবির চেতনায় জ্বালিয়ে তুলে দৃপ্ত মশাল। অগ্নিময়ী লেলিহান শিখার তেজে কবি নির্লিপ্ত থাকতে পারেন নি। কবির ভাষায়- বিশাল তিমির মতো একটি নতুন দ্বীপ আজ রাতে জাগবে সাগরে, ক্রমে ক্রমে বাড়বে ভূ-ভাগ শ্যামল বৃক্ষের সারি, পাখি ডাকা বন আর দৃপ্ত জনপদ বাড়বে ক্রমশ- তুমিও কিশোরী ছিলে, এখন যুবতী শব্দ শুনো শব্দ মিছিলের অনাদী মিছিল আজ যাবে সেই দ্বীপে স্বদেশ-স্বজনহীন এই সব অনাত্মীয় মানুষের ভীড়ে”। স্বদেশ চেতনায় সমুজ্জল কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা তাঁর কবিতার পংক্তিতে মুক্তিযোদ্ধার অসীম শৌর্য্যবীর্য ও সাহসের কথা ধ্বনিত হয়েছে। কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়ে আবার কখনো নিজেই শব্দ সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রাণের বিপুল প্রবাহ মুক্তির নেশায় সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে স্বাধীন মানচিত্র গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন- গরুঘোড়া আর হাঁস ও পাখিরা চলো, সকলেই মেহনত করি ধন্য তোমার আমার জীবন যদি স্বাধীনতা যুদ্ধে মরি (পশু জনতার স্বাধীনতার সংগীত/ কুসুমের কণা) বাঙ্গালীরা বীরের জাতি, যে কোন কিছুর বিনিময়ে ছিনিয়ে আনতে পারে অধিকার। যেমনটি এনেছিল মহান ভাষা আন্দোলনের ফসল হিসাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা। তদ্রুপ ওই আন্দোলনের প্রেরণায় আমাদের ফাল্গুনের রক্ত আজো প্রবাহিত হচ্ছে। এই মন্ত্রে দৃপ্ত প্রাণের শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র পাই জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায়- ‘না কোন পরাজয় নেই এই মাটি চিরদিনেই রয়েছে অজেয়; জন্ম হয় তবু তাদের ……………… তারাতো জানে না রক্তের পানিতে ঋগ্ধ ফাল্গুনের প্রতিটি কুসুমে জেগে আছে প্রতিবাদের ফণা (কুসুমের ফণা/জাতিসত্তার কবিতা)। তারা জানেনা এই বীর বাঙ্গালীর রক্তে জলের সমারোহ, একুশ, গণঅভ্যূত্থান। যে রক্তে ফল্গু ধারা প্রবাহিত হয়ে বাঙ্গালীরা পাক-ভারত যুদ্ধে মরণ-পরণ লড়াই করে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। পাকিস্তানীদের রক্তে প্রবাহিত হয়েছিল জলদস্যু হার্মাদের পাপের রক্ত। যার ফলে পাপ পাপীর কাছে পরাজিত হয়েছে। তার একটি বাস্তব চিত্র মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায়- হানাদার আততায়ী নিমজ্জিত জানে না যে এদেশ জলের তাদের বিষাক্ত অস্থি জমে আছে স্তরে স্তরে পলির আগুনে তোমার অপাপ রক্তে তার পাপ স্পর্শ আছে (শোভাযাত্র দ্রাবিড়ার প্রতি-১৪) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের জর্জরিত বাংলাদেশ। তাদের আক্রমন থেকে সে সময় কেউ রেহায় পায়নি। আক্রান্ত মানুষের আর্ত চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। বেদনার ভার সইতে পারেনি ভূমি, অনেকে স্বজন হারায়, অনেকে মা ডাক শুনতে পারে নি, ঘর-সংসার হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যায় বাংলার সাত কোটি নারী ও পুরুষ। ভুলুণ্ঠিত হয় মানবতা। পল্টন হয় রক্তাক্ত বঙ্গোপসাগরে। তারই একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে মুহম্মদ নুরুল হুদার অনেক কবিতায়- ‘উনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানের আর সত্তুরের মহাপ্লাবনের পর একদা বিকেল বেলা পল্টনের ভরা মাঠে নেমে এলো বঙ্গোপসাগর; স্বদেশ স্বজনহীন ভিটেমাটিহীন/বাংলার সাত কোটি নারী ও পুরুষ ডুবলো-ভাসলো হায় ঢাকার রাস্তায়; যেন অজ্ঞাত পাপের বোঝা ভারী হয়ে নেমেছে মাথায় আজ প্রত্যেকের;প্রায়শ্চিত্তহীন কেউ আর কোন দিন পাবো না উদ্ধার।’ (সমুদ্র ও পাহাড়ের সম্মিলন’/কুসুমের ফণা) মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় চির সবুজ বাংলার আর্তনাদ, স্বদেশ, সামাজিক উপপ্লবে ও সংঘাত, পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশ। এ স্বাধীন দেশ সাত কোটি পরিবারের অবস্থান বিষাক্ত সাপের কালো বিষতান্ত্রিক মন্ত্রের মতো ছুঁড়ে যেভাবে সামগ্রিক এলাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যায়। স্বজন-হারিয়ে শোক বিহ্বল হয়ে দুঃখের শিকার হয়ে সাত কোটি রশ্মি (মানুষ)র নদীর কুরে এসে ভিড় জমায়- কবির ভাষায়- ‘তুমিও ভুলেছো কবে বাস্তুভিটা,সংসারের সঠিক দ্রাঘিমা স্বজনহারানো শোক সময়ের মতো দীর্ঘ দু:খের মিনার। (শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি-৯) মুহম্মদ নুরুল হুদার স্বদেশ চেতনার সূত্র ধরেই কবিতা কখনো কখনো রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারিত হয়েছে। মানব জাগরণ ও মানবতার প্রকৃতির কবির সাথে একাত্ম হয়েই যায়। কবি মাটির সত্তাকে কখনো অস্বীকার করতে পারে না- নদীমাতৃক একটি ভূগোল ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম কখনো দু’পায়া আমি কখনো দু’পাখা এই ঘুরোঘুরি, এই উড়াউড়ি।’’ আত্মসত্তার সঙ্গে জাতিসত্তার গভীর সংযুক্তি বেশী। হুদার শিল্পী চৈতন্যের নিয়ন শক্তি। যে কারণে ঐতিহ্যের দৃঢ়তর উৎস অনুভবের ক্ষেত্রেও তিনি স্বদেশ ও স্বজনের বস্তুগত পটভূমি প্রকটিত- ‘সম্রাটের চোখে অশ্র“ সেই অশ্র“ নেমে আসে জনপদে শহরে নগরে ক্রমে ক্রমে রাজপথ খরস্রোতা নদী হয়ে যায় অশ্র“র বন্যায় ডোবে বিষন্ন ইথাকা (ইথাকা/শোভাযাত্র দ্রাবিড়ার প্রতি) কবিরা এমন এক আলপিন, যা তাদেরকে সব সময় স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। ষাটের বিরলপ্রজ কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় স্বদেশ একটি মুখ্য বিষয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার দুর্জয় চেতনাকে ধারণ করে। স্বাধীনতা কবির অনুভূতিতে প্রচন্ড চাপ ও সময়ের তাগাদায় আপ্লুত হয়ে বলেন- দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে-সেতো আমাদেরই চারপাশ আমরা যারা ভঙ্গুর। যারা উড়ে যাই বাতাসে পূণ্যের প্রবাহ হোক, পাপের উৎসমূলে তোমার কি ভয়? তুমিতো দাঁড়াতে পারো অনায়াসে খুলতে ধরতে পারো অবিনাশী করতলে (আলোকদূতের প্রতি/আমরা তামাটে জাতি) মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যুদ্ধ ফেরত তাদের কথাই বেশী শব্দ শিল্পের মাধ্যমে তুলে আনেন। কবি ৭১’র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্বজন হারায়, যাদের রক্তের হুলিখেলায় বেঁচে আছে বাংলার মানুষ ও কবি। তাই কবি হুদার কবিতায় চিত্রকল্প ও চিন্তা ও বোধের উৎপ্রেক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ করেন- ‘আমিতো রক্তের সাক্ষী, যে রক্তে ফুটে ওঠে দিনের কমল আমিতো রক্তের সাক্ষী যে রক্তে খুলে যায় হরিণ তোরন আমিতো রক্তের সাক্ষী, যে রক্তে ফিরে আসে হারানো স্বজন (শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি) এক শিকড় সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী পথে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার শৈল্পিক যাত্রা । এখানেই তার কবিতার প্রধান ধারার যাত্রা। এই যাত্রা যেমন স্বাপ্নিকতায়, তেমনি সময় ও ইতিহাসের হাত ধরে বিশেষ বিচিত্র পরিসীমা দর্শনে অভিলাষী। তাই হুদার কবিতার আকাংখা গন্ডিবদ্ধ ভূ-খন্ডের সংকীর্ণতা পেরিয়ে দূরভুবন যাত্রায় বিশ্বাসী। তাই কবি হুদা উচ্চারণ করেন- গাঙের পিপাসা নিয়ে বায়ান্নের যে যুব শোনিতে দ্রাবিড় বদ্বীপ জড়ো হয়ে গেল মানবিক নদী তাদের পলিতে দেখো, গড়ে উঠে অনার্য স্বদেশ অনন্ত ঝর্ণার মতো বুকে তার সবুজ মানুষ (আমরা তামাটে জাতি)। যে প্রাকৃত চেতনা থেকে বৌদ্ধ দোহার জন্ম সে প্রাকৃত চেতনাই আধূনিক রাষ্ট্র কাঠামোর ভাষা- ভাষার আন্দোলনকে সম্ভব করে তুলে। কিন্তু এই চেতনা অর্জন বাঙ্গালী রসনা কাঠামো স্বদেশকে কবি ‘অনার্য অসুখে’ ভুগতে দেখেছেন- ‘অসহ্য সুন্দর এই বাঙ্গালী রমনী লতানো তানিমা জুড়ে ফণা তোলে শ্যামাদী আগুন যে আগুনে পুঁড়ে যায় দ্রাবিড় ভূ-ভাগ গুচ্ছ গুচ্ছ ভষ্ম হয়ে ফুটে উঠে সবুজ প্রকৃতি হীরের দ্যূতির মতো জলে উঠে পৌষের ফণা তরল ব-দ্বীপ জুড়ে স্পীড দুঃখিত ধমনী কেবল দুঃখের মতো জেগে থাকে ভেড্ডিড পুরুষ পুরুষ দুঃখের নদী, পুরুষের বুকে শুধু অনার্য সুখ (অসহ্য সুন্দর এই বাঙ্গালী রমনী/যিসাস মুজিব) শেকড় সন্ধান করতে গিয়ে কবি পৌছেন সেই প্রান্তে, যে প্রান্তের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে। যেখানে কবি হুদা শুধু বর্তমানকে নয়, ভবিষ্যতকেও প্রত্যক্ষ করেন- ‘পৃষ্ঠদেশ তার সঙ্গীনের বাঁকা ক্ষত দেখে নিমিষেই খুলে গেছে সমুদ্রের পণে; সন্ত্রাসের কড়া হাতে অনিবার্য সেই পথে কারা যেন তুলছে দু’হাত যেন আমি যেনে গেছি পরিধি আমার যেন আমি সুনিশ্চিত ভেঙ্গে ফেলবো দুই দ্বাহু নীল কারাগার। এখানে একই সঙ্গে যষ্টির সঙ্গীর সাথে নিসর্গ নামে সেই শ্যামাঙ্গ রমনীকেও তুলে ধরেছেন। বাঙালীর জীবনে একাত্তুর একটি রক্তাক্ত ইতিহাস। এই ইতিহাসের পেছনে যারা ভূমিকা পালন করে এ বীর বাঙ্গালী জাতি। বীর মুক্তিসেনারা জীবন বাজি রেখে বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাদের আত্মত্যাগ ও উপকারের কথা কোনদিন ভুলার নয়। কবি নুরুল হুদা কবিতায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে উচ্চারণ করেন- লড়াই যখন শুরু হল, এলো মুক্তিসেনা শোধ হবেনা তাদের কাছে তোমার আমার দেনা লাঙ্গল কোদাল বর্শা বুলেট জীবন বাজি রেখে রাখলো দিবসরাতে (একাত্তরে ছড়া/হাজার কবিতা, পৃ-৭০৬)। কালো ভয়াল ২৫ শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া নয় মাস ব্যাপী রক্তময়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এলো স্বাধীনতার রক্তিম সুর্যোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী ডিসেম্বর। এই ডিসেম্বর তিরিশ লক্ষ শহীদের চূড়ান্ত আত্মদানের শিখা অনির্বাণের নাম। কবির ভাষায়- ২৫শে মার্চের হত্যাযজ্ঞ আর নয় মাসের রক্তময়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এলো অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, এলো বিজয়ের প্রহর ষোল ডিসেম্বর; বাঙালির মুক্তির নাম ডিসেম্বর, তার বিজয়ী অভিব্যক্তির নাম ডিসেম্বর; চূড়ান্ত আত্মদানের পর মুক্তিযোদ্ধার শিখা অনির্বাণের নাম ডিসম্বের;- মুক্তিযোদ্ধা বাঙালী জাতির অগ্নি ঘোষিত জন্মতিথির নাম ডিসেম্বর।’’ (বিজয়ী বাঙালি/আমার সাহস নেই টোকা মেরে সুন্দরকে উড়িয়ে দেবার)। তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা। বাঙালিরা আজো যেন সত্যিকারের স্বাধীনতা পায়নি। আগের মতো বর্গীরা এখন আসে না, তবুও কেন এই বাঙালি এত অরক্ষিত, এই নিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা খুবই ভারাক্রান্ত। তাই তাঁর কবিতায় উচ্চারিত হয়- এখানে আসেনা বর্গী মাঘের মধ্যরাতে রাজা আলী বর্দী নেই সিংহাসনে; তবুও বড় বেশী অরক্ষিত এই বাংলাদেশ হানাদার- স্বদেশী- বিদেশী কমবেশী এখন উধাও তন্ত্রমন্ত্র, রাজতন্ত্র জপমালা হাতে ছেড়ে গেছে সমতট, হরিকেল নিক্ষিপ্ত পাততাড়ি গুটিয়েছে সৈব সব বন্ধুকের নল তবু বড়বেশী অরক্ষিত এই বাংলাদেশ। (অরক্ষিত এই সময়) বাঙ্গালীরা স্বাধীন ভূখন্ড লাভের পর এই জাতির মধ্যে এক ধরণের বৈকল্য বিভ্রান্ত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই চিত্র সৃজনের যুক্তিতে দৃশ্যমান। হুদা তাঁর কবিতায় বাঙ্গালী জাতির পুরান ইতিহাস-ঐতিহ্য অন্বেষনের সূত্রে জাতির ব্যক্তিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বিপন্ন দশা, নিমকহারামী, স্বার্থপরতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কথা বলতে লেখনী ধারণ করতে পিছপা হননি- ‘রাজপথে ত্রিকাল দর্শক সে অন্ধ পুরোহিত যার রক্তে রাজপথ নদী বনে যায়’- এই শাতিতিক মন্ত্রতুল্য উচ্চাকাংখায় তিনি ‘প্রতীক মানুষ’। সমকাল জ্ঞান, ইতিহাস জ্ঞান ও জাতিসত্তার সমবায়ে কাব্য ভূগোলপ্রদীপ্ত কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা তাঁর কবিতায় স্বাধীনতাকে তুলে এনে স্বাধীনতার কাব্য ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন বলে মনে হয়। তাঁর স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ, কবি ওমর আলী, কবি শহীদ কাদরী, হাসান হাফিজুর রহমান, সিকান্দার আবু জাফরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর বাংলা কাব্য সাহিত্য যে নতুন বাঁক নেয়, এ ক্ষেত্রে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার ভূমিকা অগ্রগন্য। বাঙ্গালী জাতিসত্তার শেখড় সন্ধানে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা তাঁর কাব্যে, উপন্যাসে প্রতিফলিত।
১,১৩২ বার পড়া হয়েছে
মুক্তিযোদ্ধ আমাদের গর্ব।
আপনার লেখাটি বেশ ভালো লেগেছে। মুহম্মদ নূরুল হুদা উঁচুদরের কবি। তাঁকে নিয়ে খুব বেশী আলোচনা হয় না। আপনি এ কঠিন কাজটি সুন্দর করে করলেন। সে জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।