স্মৃতির পাতা থেকে ( পর্ব——৩৬ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1600বার পড়া হয়েছে।
জাতিসংঘ মিশনে আসার আগে শুনেছি মিশনের সদস্যদের , যে দেশে মিশন সেই দেশের নাগরিক এবং সেই দেশের সরকার অত্যান্ত সম্মানের চোখে দেখে । মিশনে কর্মরতরা তাদের পরিচয় পত্র দেখালেই সব রকম সাহায্য করে থাকে । কিন্তু দারফোর মিশনে এসে দেখছি , এদেশের সরকার তথা সরকারী বাহিনী মিশনের লোকদের মোটের পর ভাল নজরে দেখে না । তাইতো কিছু দিন আগে সেনেগালের কমান্ডার বললেন–‘ দারফোর মিশন্টা হচ্ছে একটি ডংকী মিশন । ‘ এলাকার লোকদের ভাল মন্দের জন্য যেমন মিশন কর্মকর্তাদের তেমন কোন গড়জ নেই , দেশ বাসীরও আমাদের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ নেই । মূলত যে কোন বিষয়েই সমস্যার সমাধান করতে হলে সেই বিষয়ে সমাধানের জন্য উভয় পক্ষ্যেরই আগ্রহ থাকলে ভাল হয় । নিদেন পক্ষ্যে এক পক্ষ্যের তো অবশ্যই আগ্রহ থাকতে হবে । কিন্তু আমাদের দারফোর মিশন নিয়ে যেন কোন পুক্ষ্যেরই আগ্রহ নেই । সরকার পক্ষ্য বছরের পর বছর ধরে এদেশের নাগরীকদের উপর দমন নীতি চালিয়ে এসেছে । এখন জাতি সংঘের হস্তক্ষেপে সেই দমন নীতি বন্ধ হয়েছে । ফলে সরকার পক্ষ্য মিশনের প্রতি মোটেই সন্তোষ্ট নয় । আবার এ দেশের নাগরীকরা সরাসরি স্বাধীনতা চেয়েছিল । কিন্তু বর্তমান পদ্ধতিতে তাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আশা কয়েক জেনারেশন পার হয়ে যাবে । সে কারনে এই বিলম্বের জন্য তারা মিশনকেই দায়ী মনে করে । যার ফলে তারাও আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য তেমন উৎসাহী নয় । এ মিশনে যে সকল কর্মকর্তা কর্মরত আছেন তাদের তৎপরতাও কেমন যেন ঢিলে তালের , দায়সারা গোছের । প্রশাসনীক তৎপরতা প্রশংসনীয় নয় । কাজেই এই মিশন ডংকী মিশনে পরিনত হয়েছে । আমরা যারা দারফোর মিশনে কাজ করছি তারা কোন প্রকার উৎসাহ নিয়ে কাজ করছি বলে মনে হয় না । কাজ করছি যেন দিন পার করার জন্য । দিন শেষ হলেই হাফ ছেড়ে বাঁচি । দেশে ফিরে যেতে পারি । আমাদের বাংলাদেশের এফ পি ইউ এর সদস্য দের অবস্থা আরো খারাপ ।আমাদের সি, ও, সাহেব খুবই নির্ভর যোগ্য লোক । কিন্তু ডেপুটি কমান্ডার একেবারেই ব্যক্তিত্বহীন লোক ।তার চাল চলন কথা বার্তা আচার আচরন মোটেই একজন সিনিয়র অফিসার সুলভ নয় । আমাদের পুলিশ বিভাগ তার সম্পর্কে কি ভাবছেন তা জানি না । তবে তার মত লোক উর্ধতন পদে বসানো হলে সে ডিপার্টমেন্টের সর্বনাস হওয়ার আর কিছু বাকী থাকবে না । আমাদের সি, ও, সাহেব তার সম্পর্কে কি ভাবছেন তা জানি না । তবে তিনি মাসের প্রায় সব মিটিং এ-ই এডিশনাল এস, পি সাহেব কে পাঠান । আর এতেই ক্ষতিটা হয় আরো বেশী । তিনি যেটা ভাল জানেন সেটা হলো তোষন নীতি । তার তো ষনের পর্যায় এতই নীচ পর্যন্ত পৌঁছেছে যে তিনি প্রয়োজনে না অপ্রয়োজনেও কারো পায়ে ধরতে দ্বিধাবোধ করে না ।ফলে মিশনের অন্যান্য অফিসারদের নিকট আমাদের অবস্থান এমন পর্যায়ে নেমে এসেছে যে, অন্যেরা আমাদের এখন মানুষ মনে করতেও দ্বিধাবোধ করে । তাদের ভাবটা এরকম , আমাদের ডেপুটি কমান্ডারের অবস্থা যেরকম তাতে অন্যকে পাত্তা দেওয়ার কোন প্রয়োজনই নেই । কন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনে যখন তখন যেমন ইচ্ছে তেমন আদেশ দিয়ে যাচ্ছে । সব চেয়ে সর্বনাশ হয়েছে সি,ও,সাহেবের ছুটি কালীন সময়টিতে । তখন ডিপুটি ছিলেন দ্বায়িত্বে । এমনিতেই তিনি ৩০% ভাগ পাগল, তখন দ্বায়িত্বে থেকে ৫০%পাগলে পরিনত হয়েছিলেন । যার ফলে কোন কর্মকর্তা ঐ সময় আমাদের ক্যাম্পে আসলে ডিপুটি কমান্ডার যে আচরন শুরু করতেন , তা যথার্থই হাসির উদ্রেক করতো । আমাদের দেশের পীর সাহেবদের তাদের সাগরেদরা যে ভাবে পায়ের নীচে বসে থেকে সেবা দিয়ে থাকে , তিনিও অনেকটা তাই করেছেন । ফলে তোষন যেহেতু সকলেই পছন্দ করেন , সেহেতু তারা পোষা বিড়ালের মতো চোখ বন্ধ করে তোষন উপভোগ করেছেন ঠিকই, সেই সাথে তার আচরণ দেখে মিট মিট করে হেসেছেন ও । আমাদের দেশে একটি অসুন্দর বাক্য প্রচলিত আছে । এক গ্রামে একজন খারাপ চরিত্রের মহিলা বাস করতো । সে সব সময় একটি গামছা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো । কেহ যদি তাকে জিজ্ঞেস করতো
‘ কি ব্যাপার তুমি সব সময় গামছা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াও কেন ? সে বলতো—
‘আমার তো আবার না করার অভ্যাস নেই , কাজেই কখন গামছা বিছানোর দরকার পরে কে জানে । তাই গামছা হাতে নিয়েই ঘুরে বেড়াই । ‘আমাদের এডিশনাল এস,পি, সাহেবের অবস্থা হয়েছে সেই রকম । তিনি আবার কাউকে না বলতে পারেন না । তার কোন কোন কাজ যে সুধু মাত্র এই ব্যাটালিয়নের নয় , সারা বাংলাদেশের পুলিশের মান ক্ষুন্ন হয়তা তিনি বুঝার চেষ্টাই করেন না । তাকে এ বিষয়ে বললে তিনি তা মান্তেই রাজি নন । কাজেই আমার ধারনা মতে মিশনের জন্য উর্ধবতন কর্মকর্তা নির্বাচনে আরো যত্নবান হওয়া উচিৎ । কারন আমরা সুধু মিশনে কাজ করার নির্দিষ্ট সময়টা শেষ করে কিছু বৈদেশিক মূদ্রা নিয়ে দেশে ফিরে গেলেই আমাদের দ্বায়িত্ব শেষ হয়ে গেল , আমার কিন্তু তা মনে হয় না । বিদেশের মাটিতে আমরাই আমাদের দেশের প্রতিনিধি । আমাদের মাধ্যমেই বিদেশীরা অনুমান করে নিবে আমাদের জাতির মান । আমাদের আচরণের মাধ্যমেই ফিরে পাব আমরা আমাদের জাতীয় মূল্যায়ন । নীচের পদের লোক যারা সুধু মাত্র ডিউটি করে সময় কাটায় তাদের নিয়ে কোন সমস্যা নেই । আমাদের কিছু কিছু অফিসাররা মনে করে থাকেন নীচের পদের লোকেরা ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে না পারায় বিদেশীদের নিকট আমাদের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে । কিন্তু আমার তেমনটা মনে হয় না । মনে হয় এ ধারনাটা সঠিক নয় ।নীচের পদের লোকদের ইংরেজী ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকাতে কোন অসুবিধা নেই । কারন ইংরেজী আমাদের মাতৃভাষা নয় । এখানে দেপুটি কমান্ডারকে প্রায়ই বলতে শুনি , যারা ডিউটি করতে যান তারা ইংরেজী জানেনা বলে ডিউটি করতে অসুবিধা হচ্ছে মর্মে বিদেশীরা অভিযোগ করছে । আমার ধারণা এ অভিযোগ তুলে দিপুটি কমান্ডার তার দ্বায়ীত্বে পাশ কাটিয়ে যান এবং নীচের পদের লোকদের একটু চাপের মুখে রাখেন । যে মিটিং-এ এই কথা তোলা হয়েছে ওনার উচিৎ ছিল সেই মিটিংয়েই অত্যান্ত শক্ত অবস্থান নিয়ে এর প্রতিবাদ করা যে, আমাদের মাতৃভাষা ইংরেজী নয় ।কাজেই আমাদের লোকেরা ইংরেজী বলতে পারবে না । কিন্তু তিনি সে কথা বলতে সাহসই পাননি । বরং ইংরেজী না জানার জন্য মিটিংয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছেন ।
১,৫৯৫ বার পড়া হয়েছে
পড়ে বেশ ভালো লাগলো
নাইস লিখনী
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য । শুভ কামনা । ভাল থাকুন ।
ভাল লাগল
একটু স্পেস দিয়ে লিখলে পড়ে আরো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম
সুন্দর মন্তব্য । মনে রাখব । কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ । শুভ কামনা ।
যথারীতি ভাল লাগা নিয়ে গেলাম।
ধন্যবাদ।
আপনার ভাল লেগেছে শুনে খুশী হলাম । শুভ কামনা । ভাল থাকুন সতত ।
//যে মিটিং-এ এই কথা তোলা হয়েছে ওনার উচিৎ ছিল সেই মিটিংয়েই অত্যান্ত শক্ত অবস্থান নিয়ে এর প্রতিবাদ করা যে, আমাদের মাতৃভাষা ইংরেজী নয় ।কাজেই আমাদের লোকেরা ইংরেজী বলতে পারবে না । কিন্তু তিনি সে কথা বলতে সাহসই পাননি । বরং ইংরেজী না জানার জন্য মিটিংয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছেন ।//
আমাদের মাতৃভাষার প্রতি দৈন্যদশার চিত্রটাই যেন খুঁজে পেলাম চরণগুলোতে । ভালো লাগলো এ পর্বও । শুভেচ্ছা জানবেন ।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য । শুভ কামনা ।