স্মৃতির পাতা থেকে ( পর্ব——৪৪/২ )
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1347বার পড়া হয়েছে।
সুমনার কতই বা বয়স । বয়স অনুসারে মেয়েটির উপর মানসিক, পারিবারিক ও আর্থিক সব দিক থেকে চাপ পরেছে । এ টুকু বয়সে এত গুলো চাপ সামাল দিয়ে টিকে থাকা যে কোন মানুষের পক্ষেই কষ্টকর । সব চেয়ে বড় সমস্যা তার বাবা মা । মেয়েদের বিয়ে হলে তারা পরের ঘরে ছলে যায় । সেখানে সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশ , নতুন লোকজন । সবার চাল চলন , স্বভাব চরিত্র, আচার আচরন, খুশী অখুশীর বিষয় সব কিছু বুঝে নিয়ে একজন মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর ঘর করতে শুরু করে । অবশ্য পৃথিবীর সব দেশেই এ রকম সমস্যা আছে তা নয় । তবে আমাদের ভারত বর্ষের প্রায় সব দেশেই এমন ব্যবস্থা চালু আছে । কাজেই এ সময় যে কোন মেয়ের জন্য সব চেয়ে সাহায্যকারী ব্যক্তি হলো তার বাবা ,মা । বাবা মার সর্ব প্রকার সাহায্য ছাড়া যে কোন মেয়ের পক্ষেই ঐ সময় পরিকল্পিত জীবন গড়ে তোলা খুবই কষ্টকর । এ কথাটা শিক্ষিতা মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযো্জ্য। কারন শিক্ষিতা মেয়েরা হয়তো পুথিগত বিদ্যা অর্জন করে থাকে । কিন্তু সাংসারিক জীবন সম্পর্কেতাদের জ্ঞান থাকে একেবারেই শূন্যের কোঠায় । কাজেই নতুন সংসারে কিভাবে চলতে হবে কার সাথে কি আচরণ করতে হবে, এ সকল বিষয়ে এক মাত্র যথাযথ শিক্ষা শুরু হয় মা, বাবার কাছ থেকে । সুমনার ক্ষেত্রে সেই বাবা মা-ই তার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে । দ্বিতীয় যা দেখা দিয়েছে তা হলো আর্থিক সমস্যা । সুমনা বিয়ের পর থেকেই আর্থিক সমস্যায় ভোগছে । স্বামীর উপার্জন কম । কাজেই সংসারের টানাটানি সব সময় লেগেই আছে । আমার ধারণা ভাল বাসার পরে বিয়ের সময় সুমনার স্বামী এবং তার পক্ষ্যের লক জন মনে মনে ধরে নিয়েছিল মেয়ের বাবা সরকারী চাকরী করে । নিশ্চয়ই অনেক টাকার মালিক । মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো রাগ মিটে যাবে । তখন তারা মেয়ের খোঁজ খবর রাখবে । কাজেই ছেলের সংসার চালাতে তেমন কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । বরং ছেলের বাবা মা হয়তো বড় ঘরে ছেলের বিয়ে দিয়ে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতই কল্পনা করেছিলেন । কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উলটো । ফলে সুমনা কারো দিক থেকেই কোন প্রকার সাহায্য না পেয়ে চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখেছে । এ সময় সুমনাকে সংঙ্গ দেওয়া, পরামর্শ দেওয়া ও ভড়সা দেওয়া একান্ত দরকার । আর আমি মূলত সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি ।
জেড়িনা ম্যাডামকে রিং করেছিলাম । তার বাসার ঠিকানা নিয়েছি । তার বাসায় বিয়ের কার্ড দিতে যেতে হবে । যদিও তিনি মানা করেছেন এবং বলেছেন তিনি আসবেন । তথাপী আমার নিজের প্রয়োজনেই একবার যাওয়া দরকার । তার বাসা চেনা এবং ছেলে দুটির সাথে পরিচিত হওয়া জরুরী । ছেলেদের সাথে কথা বলতে পারলে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ তথ্য জানা যাবে । যদিও পারিপার্শিক আবহাওয়া থেকে কিছুটা শুনেছি । তথাপী কিছু কিছু বিষয়ে এখনো আমি অনুমান নির্ভর আছি । মনে রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার যে, জেড়িনা ম্যাডাম শুধু একজন শিক্ষিতা মহিলাই নন একজন উচ্চ শিক্ষিতা মহিলাও বটে । কাজেই অনুমানের উপর ভর করে পথ চলতে থাকলে হোচট খাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী । আর এজন্যই এ প্রস্তুতির দরকার আছে, দরকার আছে আরো অনেক কিছুরই । জেড়িনা ম্যাডামের স্বামীর সাথে পরিচিত হওয়া দরকার । যদিও এই মূহূর্তে সেটা আমার পক্ষ্যে সম্ভব নয় । মিশন থেকে দেশে ফিরে এসে সে রকম পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছে । অনেক চিন্তা ভাবনা করে জেড়িনা ম্যাডামের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । আমাকে দেখেই বললেন—–
‘ কি ব্যাপার, আপনি এসেছেন কেন ?’
‘ কেন ? আপনার বাসায় আসতে নেই বুঝি ? ‘
‘ আরে না । আমি সে অর্থে বলিনি । বলেছি এই জন্য যে, আপনি নিশ্চয়ি মেয়ের বিয়ের কার্ড দিতে এসেছেন ? ডাকা শহরে কার্ড বিতরণ করার কষ্ট আমি জানি । তাই নিষেধ করেছিলাম । আমি এমনিতেও যেতাম । ,
‘ যেতেন সে ভরসা আমার ছিল । আপনাকে, আপনার ছেলেদেরকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না । ‘
‘ গাছের সাথে আবার আগাছা জরাচ্ছেন কেন ? শুধু গাছ দেখেকি মন ভরে না ? ‘
‘ তা ভরে । তবে গাছের সাথে পরগাছা জড়ানো থাকলে গাছের সৌন্দর্য আরো বহু গুনে বৃদ্ধি পায় । ‘
‘ বেশ , তাহলে পরগাছাই দেখুন । এটা ছোট পরগাছা , নাম শুভ । তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে । বড়টা পড়তে গেছে । নাম অনিরুদ্ধ । আমি শুভকে ডেকে কাছে বসালাম । নানা কথা জিজ্ঞেস করলাম । ছেলেটা ভদ্রতা বুঝে বেশ । পরিচয় করিয়ে দিলেই ছালাম দিল । ম্যাডাম বললেন–
‘ আপনি পরগাছাকে গায়ে জড়ানোর চেষ্টা করুন । আমি একটু ভিতর থেকে আসছি । ম্যাডাম ভিতরে চলে গেলেন । আমি শুভকে জিজ্ঞেস করলাম—–
‘ তুমি কেমন আছ শুভ ?’
‘ ভাল আছি । ‘ শুভ জবাব দেয় । আমি বলি—-
‘ আম্মু না থাকলে খারাপ লাগে না ? ‘
‘ হ্যা তাতো লাগেই । আম্মু বাসায় থাকলে বেশী ভাল হতো । ‘
‘ তা আব্বুর সাথে তোমার দেখা হয় না ? ‘
‘ না । ‘
‘ কেন, তোমার ভাইয়ার সাথে তো দেখা হয় । তোমাকে ভাইয়া নিয়ে যায় না ? ‘
‘ না , নিয়ে যায় না ।’
‘ তোমার আব্বু তোমাকে দেখতে বাসায় আসে না ? ‘
‘ আম্মু মানা করেছে তো । তাই আসে না । দু একটা কথা বলতে বলতেই শুভ মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে গেল এবং সে বুঝে নিল যে, এতক্ষন যে কথা গুলো বলছিলাম সে কথা গুলো তার মায়ের সামনে বলবো না । ফলে তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিল যে, সে আমাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে । ইতো মধ্যে ম্যাডাম ফিরে এলেন এবং শুভকে বললেন—–
শুভ যাও , ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বেড় করে খেয়ে খেয়ে পড়তে বস । সাম্নেইতো তোমার ফাইনাল পরীক্ষা । ‘ শুভ উঠেই বললো—-
‘ আংকেল আসি । ‘ আমি বললাম—-
‘ এস, কিন্তু , যাওয়ার সময় তোমার মুখ না দেখে তো আমি যাব না । ডাক্লে আবার এস কিন্তু । শুভ অনেক দিনের পরিচিতের মতো বললো—–
‘ আমাকে না বলে যাবেন না কিন্তু । ‘
‘ না বলে যাব মানে ? তোমাকে একটু জড়িয়ে না ধরে আমি কিভাবে যাই বলোতো ?
‘ আপনি কি যাদু জানেন নাকি ? ‘ ম্যাডাম বললেন—–আমি বললাম—
হঠাৎ এ প্রশ্ন মাথায় আসলো কেন ?
‘ না , বললাম এই জন্য যে, আমার এই ছেলেটা কারো সাথেই মিসতে চায় না । কিন্তু ১০ মিনিটেই দেখি নাপনার ভক্ত হয়ে গেছে । ‘
১,৩৩১ বার পড়া হয়েছে
দারুন হয়েছে পর্বটি
এখানে জেরিনা সুমনা দুজনেই আছে দেখছি
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য । শুধু জেড়িনা , সুমনাই চোখে পরে, আমি পরি না । শুভ কামনা ।