Today 28 May 2023
banner
নোটিশ
ব্লগিং করুন আর জিতে নিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটের রিটার্ন বিমান টিকেট! প্রত্যেক প্রদায়কই এটি জিতে নিতে পারেন। আরও আছে সম্মানী ও ক্রেস্ট!
banner

হিসুকামাল (রম্য গল্প)

লিখেছেন: বিএম বরকতউল্লাহ্ | তারিখ: ১৫/০৯/২০১৩

এই লেখাটি ইতিমধ্যে 1404বার পড়া হয়েছে।

কামাল ভাই গতবার পরীক্ষায় ফেল করে শিক্ষকদের বেত্রাঘাত, পরিবারের সদস্যদের গণপিটুনি আর সহপাঠীদের টিটকারী-তিরস্কারে অতিষ্ঠ হয়ে কানে ধরে শপথ করে বলেছিল, ‘সামনের বার দেখে দেব, পরীক্ষায় আমাকে ফেল করায় কীভাবে। বইয়ের পাতা থেকে প্রশ্ন আসলেই হলো; যদি আমার কলমের কালি বিট্র্যা না করে আর স্যারেরা যদি ঠিকমত কাগজ সাপ্লাই দিতে পারেন তাইলে আমাকে পরীক্ষায় ফেল করায় কে? বইয়ের আগা গোড়া খাড়া মুখস্ত করে ফেলব না!’
কামাল ভাইয়ের মধ্যে সত্যি কেমন জানি একটা বিরাট পরিবর্তন লক্ষ করা গেল।

কামাল ভাই দুলালপুর স্কুলে পড়ে; ক্লাশ এইট থেকে নাইন-এ উঠবে।
পরীক্ষা হয়ে গেছে।
আজ ফলাফল ঘোষণার দিন।
মাথায় তেল দিয়ে সিতা করে ইস্ত্রি করা জামা পরে মনের আনন্দে কাশে গিয়ে বসল কামাল। চানমিয়া স্যার রেজাল্ট সিট নিয়ে এলেন কাশে। কামাল ভাই অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে পরীক্ষার ফলের জন্য অধীর আগ্রহে বসে টগবগ করতে লাগল।

পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হলো। কামাল ভাইয়ের নাম-গন্ধ নেই। সে ভাবল, স্যার বোধ হয় তার রেজাল্ট নিয়ে রহস্য করছেন। কামাল ভাইয়ের আর তর সয় না। হুট করে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ’স্যার আমার রেজাল্টটা!‘

স্যার আঁৎকে উঠে বললেন, ’অ, তাই তো! আসল খবরটাই বাদ পড়ে গেল, আমাদের কামাল মিয়ার রেজাল্টের খবর। ’কামাল, তোর রেজাল্টটা কী হতে পারে একটু আন্দাজ করে বল তো, শুনি!’ কামাল উত্তেজিত হয়ে বলল, ’কী হতে পারে মানে! রুল নাম্বার থাকবে এক দুইয়ের মধ্যে!’ স্যার মাথা নেড়ে বললেন, ’অ তোর রুল নম্বর এক দুয়ের মধ্যে থাকবে, নাহ?’ কামাল প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসে মাথা ঝাকিয়ে বলল, ‘জ্বী স্যার।’

তার কথা আর মাথা ঝাকানি শেষ হতে না হতেই চানমিয়া স্যার বিছার মত লাফিয়ে উঠে কামাল ভাইয়ের কান প্যাঁচিয়ে ধরলেন। তারপর যে গতিতে কাশরুম থেকে টেনে নিয়ে গেলেন এতে তার পা মাটি স্পর্শ করেছিল কি না সন্দেহ। স্যার তাকে সোঝা হেড স্যারের কামরায় নিয়ে স্যারের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলেন। আমরা ভয়ে ভয়ে দূর থেকে ফুচকি দিয়ে আমাদের মুরুব্বীর এ ভয়াবহ বিপদ দেখার চেষ্টা করছি। দেখি, কামাল ভাইয়ের অবস্থা বড় খারাপ। বাঘের খপ্পরে পড়া অসহায় হরিণের মত অবস্থা তার।

হাফিজউদ্দিন স্যার গভীর মনযোগে কি একটা কাগজ পড়ছিলেন তখন। তিনি চানমিয়া স্যারের হাঁপানির শব্দ পেয়ে চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন, ’ব্যাপার কী চানমিয়া সাব?’ চানমিয়া স্যার রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ’স্যার, গাধাটা এবারও ফেল করেছে, খাঁড়া ফেল। তার মতো ছাত্রের কোনো দরকার নেই এই ইশকুলে। একটার জন্য দশটার বদনাম। এইবার নিয়ে তিনবার ফেল করেছে! তাকে এখনই টি সি দিয়ে বের করে দিতে হবে স্যার।’ এ কথা বলে কামাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে কটমট করতে লাগলেন চানমিয়া স্যার।

স্যারের মুখে এ কথা শোনামাত্র কামাল ভাইয়ের হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল, সাথে তালে-বেতালে বুক ধড়ফড়ানি। কামাল ভাইকে খুব অসহায়ের মত দেখাচেছ। জিহ্বাটা বের করে বারবার শুকনো ঠোঁট ভেজাবার চেষ্টা করছে কিন্তু তার জিহ্বাটাও শুকিয়ে ঠন্ঠনা।

হেড স্যার প্রচন্ড মেজাজি মানুষ। কখনো বেশি কথা বলেন না। স্যারের চাহনির মধ্যে বিরাট ভয় ও রহস্য লুকিয়ে থাকে। বেয়াদবি, পড়ায় অমনোযোগিতা ইত্যাদি কারণে যাকে একবার ধরেছেন তো তার দফা রফা করে ছেড়েছেন। হয় সে স্কুল ছেড়েছে, নয় সে মানুষ হয়েছে। স্যারের এসব ভয়ংকর ঘটনা কামাল ভাইয়ের মনে যখন বিদ্যুৎ বেগে যাওয়া-আসা করছিল, তখন হেড স্যার চোখের চশমাটা টেবিলে রেখে চেয়ারটা গড়গড় আওয়াজ করে সরিয়ে উঠে বললেন, ’টি সি তো পরের কথা, আগে ফেল করার হিসেবটা লই।’ কামাল ভাই তখন শুকনো মুখে ঘনঘন লা ইলাহা ইল্লা আন্তা… পড়তে লাগল। তারপর হড়ড়ৎ হড়-গড়ড়ৎ গড় শব্দ করে তার পেটটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল!

হেড স্যার গম্ভীর স্বরে বললেন, ’তিনটা বেত লন।’ চানমিয়া স্যার দ্রুত গতিতে পাশের ক ছুটে গিয়ে তিনটা বেত একত্র করে এনে হেড স্যারের হাতে দিলেন। ভয়ে শরীরটা প্রচণ্ড ঝাড়া দিয়ে কেমন জানি আবার ঠান্ডা হয়ে গেল কামাল ভাইয়ের।

হেড স্যার বেত নাচাতে নাচাতে কামাল ভাইয়ের সামনে এসে বললেন, ’বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কি রে কামাল, বল।’ কামাল ভাই থতমত খেয়ে ঘনঘন ঠোঁট নেড়ে তড়িঘড়ি জবাব দিল, শিব্বুর, না, না স্যার ’নসিন্দি, স্যার নসিন্দি স্যার।’ জবাবটা শুনে স্যার এক সেকেণ্ডও দেরি করলেন না, পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে বলেন, ’সোঝা হয়ে দাঁড়া।’ কামাল সোঝা হয়ে দাঁড়াল। মনে হলো এলোমেলো হাড়গোড় একত্র করে কোনোমতে খাড়া করল সে।

হেড স্যার মার শুরু করার আগে যাকে মারবেন তার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে নেন, এটা তাঁর রাগন্ত স্বভাব। স্যার রাগে কটমটিয়ে কামালের মাথা থেকে চোখ বুলাতে বুলাতে পায়ের পাতা পর্যন্ত গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। চোখ কপালে তুলে সবিস্ময়ে বললেন, ‘ঘটনা কি রে, কামাল! তোর চোখে এক ফোঁটা পানি নেই, অথচ প্যান্টের নিচ দিয়ে কলকলিয়ে পানি বেরোচেছ যে, ব্যাপারটা কি!’
‘হিসু করে দিছি স্যার‘ – এ কথা বলে নির্বোধ বালকের মত কামাল ভাই স্যারের চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মতো কাঁপতে লাগল।

স্যার আঁৎকে উঠে দু’হাত পিছিয়ে গিয়ে বললেন, ’এ্যা, হিসু করে দিছিস!’ কামাল কোনো জবাব না করে মাথা হেট করে চিঁ চিঁ করে কান্না জুড়ে দিল।
তার কথা আর কান্না শুনে হেড স্যার প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। তিনি ডান-বাও তাকিয়ে অস্থিরভাবে চিৎকার করে চান মিয়া স্যারকে বললেন, ‘বদমাশটা তো সর্বনাশ করে ফেলছে দেখছি। তাড়াতাড়ি ওকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যান। তার গায়ে আমি একটা ফুলের টোকাও দিতে পারব না। আমার অফিস সর্বনাশ করে ফেলেছে সে। দেখেন, ফোরের অবস্থাটা, দেখেন!’

চানমিয়া স্যার ছুটে এসে ধনুকের মত বাঁকা হয়ে সুক্ষ্মভাবে ফোরটা পর্যবেণ করেই ফট করে কামালের কান চেপে ধরে টেনে টুনে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলেন। যাবার সময় হিসুতে ভেজা প্যান্টের খেস-ফেস শব্দের সাথে আরো যে কয়টা অবাঞ্ছিত শব্দ হয়েছিল এতে হেড স্যারের কামরায় বসা অন্যান্য স্যারেরা অস্থির ভাবে ডানে বামে ওয়াক ওয়াক থুতু ফেলে নাকে মুখে পাঞ্জাবির কোণা গুঁজে ভোঁ, ভ্যা করে যা বলেছিলেন, এতে কামালের লাভ বই ক্ষতি হয়নি। সবাই একবাক্যে বললেন, ’বজ্জাতটাকে স্কুলের সীমানার বাইরে রেখে আসেন। বলে কিনা হিসু করে দিছি, আস্ত ফাজিল কোথাকার!’

চানমিয়া স্যার কামাল ভাইকে নিয়ে সাংঘাতিক বিপদে পড়ে গেলেন। এক হাতে কামাল ভাইয়ের কানে ধরে দ্রুতপায়ে তাকে নিয়ে স্কুলের সীমানার বাইরে গিয়ে একটা গাট্টা মেরে বললেন, ’তুই আজ বাঘের মুখ থেকে নিরাপদে ফিরে এলি। তুই এখন কই যাবি যা, আর কি করবি কর, আর জ্বালাইস নারে কামাল।’
কামাল চলে গেল, সে আর স্কুলের দিকে পা মাড়ায়নি।

একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ অমঙ্গল কল্পনা করে কামালের মা ও বাবা অস্থির হয়ে গেলেন। পরে তাদের নানা প্রতিশ্র“তি ও আবেদন-নিবেদনে হেড স্যার দয়া করে কামালকে টিসি না দিয়ে স্কুলে পড়ার আরেকটা চান্স দিলেন।
কামাল ভাই নতুন উদ্যমে সুবোধ বালকের মতো স্কুলে যায়-আসে, লেখাপড়া করে।
কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনাটা পাইপমুক্ত গ্যাসের মত চারিদিকে দ্রুত ছড়িয়ে গেল। ‘হিসুকামাল’ নামটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। কাশে ছোট বড় সবাই তাকে দেখে ‘হিসুকামাল’ বলে মুখ টিপে হাসে। কামাল এ সবই লক্ষ করে কিন্তু না দেখার ভান করে থাকে সে। দিনে দিনে তার মনের ভেতরে জমে ওঠে কষ্টের পাহাড়।

অবশেষে কামাল চিন্তা করে দেখল, এ ‘বিড়ম্বনা‘ এড়াতে হলে স্কুল বদল করা ছাড়া আর উপায় নেই তার। অনেক বলে কয়ে টিসি নিল সে। খোদার কি মর্জি, টিসিতেও তার নাম উঠেছে ‘হিসুকামাল।‘ এতদিন যা ছিল মানুষের মুখে মুখে, তা এখন কাগজে মুদ্রিত হয়ে স্থায়ী রূপ নিল। এ বিড়ম্বনা এড়াতে গিয়ে এখন যে সনদপত্রটা তার হাতে এসে উঠেছে এর বিড়ম্বনা তো আরো কঠিন, আরো যন্ত্রণাময়। উপায়হীন কামাল হঠাৎ হাতের টিসিটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিল সে। হেড স্যার কিছু বুঝে উঠার আগেই কামাল সোঝা স্যারের পায়ে পড়ে প্রতিজ্ঞা করে বলল, ’আমি স্কুলও ছাড়ব না, পরীক্ষায়ও ফেল করব না। আমাকে আরেকটা চান্স দিতে হবে স্যার।’

প্রচন্ড রাগী হেড স্যার সেদিন তার প্রতিজ্ঞা-প্রতিশ্রƒতিকে অবজ্ঞা ভরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারেন নি।
কামাল ভাই অবশ্য বহু চেষ্টা সাধনার বলে তার প্রতিশ্রুতি অরে অরে রা করে সবার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন।

১,৪৯৩ বার পড়া হয়েছে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
@ লেখালেখি করি সেই ছোটোবেলা থেকেই। বাবার কাছে হাতেখড়ি। বাবা লিখে আমাকে পড়াতেন। আর আমি লিখে বাবাকে দেখাতাম। তালে তালে তালাতালি! জাতীয় দৈনিকে, রেডিওতে আর্টিকেল, ফিচার, রম্য ও ছড়া লিখতাম একসময়। তারপর শিশুতোষ গল্পের প্রতি ঝুকে পড়ি। ছড়া লিখি মাঝে মধ্যে। @ প্রকাশিত গ্রন্থঃ ছয়টি। @ প্রাপ্ত পুরষ্কারঃ জাতিসংঘ (ইউনিনসেফ) কর্তৃক আয়োজিত দেশব্যাপী বড়োদের গ্রুপে গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে "মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১" লাভ করি। @ পেশাঃ চাকরি। @ পেশাগত কারণে ব্যস্ততার মধ্যেই কাটে সময়। এরই মধ্যে সময় করে লেখালেখি করার চেষ্টা করি। প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়াতে নিয়মিত লিখছি। লেখায় গতানুগতিক চিন্তা-চেতনার পরিবর্তে স্বকীয়তার ছাপ রাখার চেষ্টা করি। ব্লগে লিখে অনেক আনন্দ পাই। প্রিয় পাঠকদের মন্তব্য, পরামর্শ ও উপদেশ আমার লেখালেখির মতো সৃজনশীল কাজে শুধু অণুপ্রেরণাই যোগায় না; নিজেকে পরিশুদ্ধ ও লেখার উৎকর্ষ সাধনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
সর্বমোট পোস্ট: ২৮ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১৬৭ টি
নিবন্ধন করেছেন: ২০১৩-০৫-২৯ ১১:৫১:৫৪ মিনিটে
banner

৫ টি মন্তব্য

  1. শাহ্‌ আলম শেখ শান্ত মন্তব্যে বলেছেন:

    চমত্‍কার ! আদু ভাইয়ের থেকে কামালও কম নয় ।
    ভাল লাগল তবে কিছু বানান ভুল আছে ।

  2. এম, এ, কাশেম মন্তব্যে বলেছেন:

    ভাই কামাল ভাইয়ের সাথে আপনার মাখামাখি দেখে মনে হচ্ছে আপনি ও কামাল ভাইয়ের থেকে কম যান না ।

    ভাল লেগেছে………….

  3. আমির হোসেন মন্তব্যে বলেছেন:

    রম্যরচনা ভাল লাগল।

  4. আঃ হাকিম খান মন্তব্যে বলেছেন:

    বরকতউল্লাহ্ ভাই, আমি আপনার বেশকিছু শিশুতোষ লেখা পড়েছি। মনে হয় এই প্রথম কোন রম্য পড়লাম।

  5. দীপঙ্কর বেরা মন্তব্যে বলেছেন:

    এ রকম গল্প জীবন গড়ে
    ভাল লাগল

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করতে লগিন করুন.

go_top