কাট্টলী – বাংলাদেশের অন্যরকম এক সমুদ্র সৈকত!
বাংলাদেশে সমুদ্র সৈকত বললেই প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে উঠে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মুখ। কিন্তু এর বাহিরেও যে বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন আর নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত হল কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছুটা দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকতটির নাম কাট্টলী সমুদ্র সৈকত। পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের এই সমুদ্র সৈকতটি অনেকের কাছেই অজানা। চট্টগ্রামবাসী কেউ কেউ এর খবর জানলেও বাহিরের পর্যটকরা এর খবর খুব একটা জানেন না।
এই সৈকতটির আরেকটি নাম হল জেলেপাড়া সমুদ্র সৈকত। জায়গাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একদিকে সমুদ্র সৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ অন্য কোন সৈকতে খুজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহর থেকে টোল সড়ক ধরে সহজেই পৌঁছুতে পারেন জায়গাটিতে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়েও এ সৈকতে আসা যায়। এ জায়গাটির নাম সাগরিকা সমুদ্র সৈকত। যারা জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন তাদের জন্য এই সমুদ্র সৈকতটি একটি আদর্শ ভ্রমন স্পট।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মৃতুমন্দ বাতাস, সাম্পান নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা আর তাদের জীবনযাপন আপনাকে মুগ্ধ করবে। আর সন্ধ্যার সূর্যাস্ত আপনাকে মোহাবিষ্ট করবে। এমন নিরিবিলি সূর্যাস্ত হয়তো আপনি আর কোথাও দেখতে পারবেন না। সবকিছু মিলিয়ে এটি হতে পারে আপনার জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
বারুণী স্নান
কাট্টলী সমুদ্র সৈকত রানি রাসমণি বারুণী ঘাটে অসংখ্য পুণ্যার্থীর ঢল নামে। ওঁ সাধ্যাপতকহন্দ্রী সর্বদুঃখ বিনাশিনী, সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমগতি এ মন্ত্র পাঠ করে প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী নর-নারী রানি রাসমণি বারুণী স্নানঘাট এলাকায় পাপমুক্তির প্রত্যাশায় পুণ্যতোয়া বঙ্গোপসাগরে স্নান করে।
বারুণী স্নান ও মেলা পরিষদ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। নগরীর পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী, চৌধুরীহাট ইছামতি বাড়ি, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানের কলমপতি দক্ষিণ হিঙ্গলা কাশখালি, পটিয়ার শ্রীমাই, বাঁশখালীর খানখানাবাদ সাগরচরসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বারুনী স্নান ও মেলা উদযাপিত হয়ে থাকে।
যেভাবে যেতে হবে
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে যেতে পারেন চট্টগ্রাম শহরে। চট্টগ্রাম শহর হতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে পাহাড়তলী থানায়। ব্যাক্তিগত গাড়ী কিংবা সিএনজি বা মাইক্রোবাসে আসতে পারেন পাহাড়তলী। পাহাড়তলী হতে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামের পাশ ঘেসে আসতে হবে টোল সড়কে। টোল সড়কের পাশেই পেয়ে যাবেন কাট্টলী সৈকত। অথবা আপনি শহর হতে টোল সড়ক ধরেও আসতে পারেন কাট্টলী।
পাহাড়তলী কিছু হোটেল রেয়েছে। চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম শহরে থাকতে পারেন।
চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল আছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া হলো। শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় হোটেল আগ্রাবাদ (০৩১-৭১৩৩১১-৮), হোটেল পেনিনসুলা (০৩১-৬১৬৭২২, ৬১৯৮৫০) স্টেশন রোডে হোটেল এশিয়ান (০৩১-২৮৫০৩৪৬-৮, ৮০০-২০০০ টাকায় কক্ষ আছে) স্টেশন রোডে হোটেল সুপার (০৩১-৮৪১৪৫১-২, ৬০০-১৫০০ টাকায় কক্ষ আছে) খুলশী এলাকায় হোটেল লর্ডস (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪) পাঁচলাইশ এলাকায় রওশন বোর্ডিং (০৩১-৬৫১৪১৬) জুবিলী রোডে হোটেল টাওয়ার ইন (০৩১-৮৪২৬৯১-২) এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের প্রতিটি এলাকাতেই আছে বিভিন্ন মানের হোটেল।