৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ( আমরা কতটুকু প্রস্তুত?)
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঠিত হয় UNEP এর উদ্যোগে এবং সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিকরণের উদ্দেশে প্রত্যেক বৎসরের ৫ জুন তারিখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। সে হিসেবে আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব এই প্রাণীজগতের সবাইকে অবশ্যম্ভাবী ভাবে ভোগ করতে হবে । এমনকি সভ্যতার বিনাশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না । এই বিপর্যয়ের প্রথম কারণ তো আমরাই । আসুন দেখে নেই পরিবেশ বিপর্যয়ে পৃথিবীতে ঠিক কি প্রভাব পরবে ।
মেরু অঞ্চলে পুরোটাই বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত । এখন তাপমাত্রা বেড়ে যাবার ফলে সেখানকার বরফ গলার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তুষারাবৃত অঞ্চলের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মানে হলো বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাবে। এতে সেগুলো বাস্তুহিন হয়ে যাবে এবং সেই সাথে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশের মত সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোর এক তৃতীয়াংশ জলের নিচে তলিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি উৎপাদন আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০ ভাগ কমে যাবে। ফলে প্রচণ্ড খাদ্য সংকট দেখা দেবে । এর পরে যা ঘটতে পারে তা হলো আর একটি দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে এবং এটাই খুব স্বাভাবিক । অর্থাৎ পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো প্রধানত ক্ষতি করবে মানুষের।
বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে । অসময়ে ঝড়, বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস এবং বন্যা দেখা দিচ্ছে । ফলে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের । কারণ অবশ্য আমরাই । আমাদের বিপদ আমরা নিজেরাই ডেকে আনছি । গাছ লাগানোর চেয়ে কাটার প্রবণতা বেশি । যার ফলে দেশ মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আর শুধু আমাদের দেশ কেন বরং পুরো এশিয়াতেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ।
বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে । বেড়ে যাচ্ছে প্রাণীর জীবনধারণের পক্ষে সেসব পদার্থ হুমকি সেসব । আমাদের রাজধানী ঢাকার বাতাসে আজ সীসা । যা মানব শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি। এছাড়া এসিড বৃষ্টি হচ্ছে । আমাদের দেশেই বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭ ভাগ যেখানে দরকার ২৫ ভাগ । প্রায় ২৮ টি জেলাতে সরকারী বনভূমি নেই ।
ইট ভাটার ধোয়া , নদী ভরাট করে স্থাপনা তৈরি অথবা নদীর গতিপথ বদলে মেরে ফেলা ( অবশ্য অনেকে নাও বুঝতে পারেন নদীকে আবার মেরে ফেলে কিভাবে!), পুকুর , খাল সব ভরাট করে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে উঠছে , আর সেই সাথে চলছে গাছ কাটা । ভয়ংকর সময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সামনে । সিডর , আইলা , সুনামি , নার্গিস আর সব শেষে মহাসেন এসব পরিবেশ বিপর্যয়ের লক্ষণ নয় কি? প্রথম স্বীকার হচ্ছে উপকূলবর্তী মানুষগুলো । অথচ সেখানে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা হলে ক্ষয়ক্ষতি আরও কম হতো বলে অনেকের ধারণা । তাই বলি আসুন কোন জায়গা বিরানভূমিতে পরিণত না করে গাছ লাগিয়ে সবুজ করি । এই সবুজ বেষ্টনী পারে আমাদের বাঁচাতে । ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকান , অনেক বড় বড় বিখ্যাত নগরীর ধ্বংসের পেছনে আছে কোন দুর্যোগ এবং সেটা প্রকিতির শোধ ।
পরিবেশ বিষাক্ত করার পেছনে অবশ্য উন্নত দেশগুলোর ভূমিকাই প্রধান । কিন্তু হুমকির মুখে এই আমরা । এমনকি সবচাইতে বেশি হুমকিতে রয়েছি আমরা । কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ না কমালে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ । কিয়োটো প্রোটোকল হলেও তার ফল আমরা কতটুকও ভোগ করছি ।
ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে গ্রিন হাউস ইফেক্টের দ্বারা । এই স্তরে ছিদ্র হবার কারণে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি সরাসরি চলে আসছে পৃথিবীতে । ফলে ক্যান্সার সহ অন্যসব মারাত্মক চর্ম রোগ দেহে বাসা বাঁধছে ।
মোদ্দা কথা আমরা চাই একটি সবুজ পৃথিবী । যেখানে নিঃশ্বাসে বিষ নেই । কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই কবিতার লাইনের মতো বললে ‘ এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাবো নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ।‘