Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত- অভাবনীয় সৌন্দর্যের হাতছানি !

: | : ১৩/০৬/২০১৩

sonakata

 

বঙ্গোপসাগরের নোনা পানির ঢেউ সাদা ফেনা তুলে আছড়ে পড়ছে তীরে। সকালের সূর্যরশ্মি ঢেউয়ের ফেনায় পড়ে ঝকমক করছে। পাখির দল উড়ে যাচ্ছে এদিক সেদিক। বড় বড় ট্রলার নিয়ে জেলেরা ছুটছে গভীর সাগরের দিকে। এমন মন ভোলানো অনেক দৃশ্য চোখে পড়বে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা সোনাকাটা বনে।

sonakata1

বরগুনার আমতলী উপজেলার তালতলী থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাট বাজার। বাজারের পাশেই গহিন বন। ছোট্ট একটি খাল মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে বনটিকে। ভূখণ্ডটি স্থানীয়দের কাছে ‘ফাতরার বন’ হিসেবে পরিচিত। তবে বন বিভাগের খাতায় এটি ‘টেংরাগিরি’ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। আয়তন ৯,৯৭৫.০৭ একর। নবগঠিত সোনাকাটা ইউনিয়নের অন্তর্গত এ দ্বীপটি এখন ‘সোনাকাটা বন’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

sonakata2

বনের পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন আর হরিণবাড়িয়া, উত্তরে বিশাল রাখাইন পল্লী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ বন থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটিই উপভোগ করা যায়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া এ বনে আছে নানা জাতের গাছপালা। আছে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির বিচরণ। ফাতরার বনে ইকোপার্ক তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ছোট একটি ডাকবাংলো। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে ট্রলারে সোনাকাটা যেতে মাত্র ৩০ মিনিট সময় লাগে।

sonakata3

সোনাকাটা বনের মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট খাল। ট্রলার নিয়ে এই খালে ভ্রমণ আর চরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা। সোনাকাটার আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি ভ্রমণ স্পট রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গইয়ামতলা ও আশারচর উল্লেখযোগ্য। সমুদ্র ভ্রমণ, গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর অবারিত সুযোগ রয়েছে সেখানে।

sonakata5

অসংখ্য বানর, শূকর, বনমোরগ, মদনটাক, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ, লাল কাঁকড়া, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি আর সাপের অবাধ বিচরণ রয়েছে সোনাকাটা বনে। সেখানে ছোট-বড় ১২টি কিল্লা ও সাতটি মিঠা পানির পুকুর রয়েছে।

 

সোনাকাটা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অভ্যন্তরে পর্যটকদের চলাচলের জন্য দুই কিলোমিটারের বেশি সিসি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হরিণ ও বাঘের বেষ্টনী এবং কুমির প্রজননকেন্দ্রসহ বন্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

 

পার্শ্ববর্তী দৃশ্যাবলী

আশার চর

asharchor

সোনাকাটার পাশেই আশার চরের অবস্থান। অসংখ্য মৎস্যজীবীর বসবাস এই চরে। আবার শীতের মৌসুমে পর্যটকরাও সেখানে যান। দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, গভীর অরণ্য, বিশাল শুঁটকিপল্লী রয়েছে আশার চরে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাওয়া মানুষ শুঁটকি উৎপাদনের জন্য চরটিতে ঘর বাঁধে। বছরে সাত থেকে আট মাস থাকে শুঁটকি উৎপাদনের ব্যস্ততা।

 

তালতলী রাখাইন পল্লী

rakhainpolli

আশার চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইনপল্লী। বঙ্গোপসাগরের তীরে এ পল্লীতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হতে পারে।

 

যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা হতে সড়ক ও নৌ উভয় পথেই বরগুনা যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন সকাল এবং রাতে উভয় সময় ছেড়ে যায়। দ্রুতি পরিবহন(০১১৯৬০৯৫০৩৩) সকাল সাড়ে ৮টায় এবং একই সময় রাতে বরগুনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, সাকুরা পরিবহন(০১১৯০৬৫৮৭৭২, ০১৭২৫০৬০০৩৩) গাবতলী থেকে সকাল এবং রাত পৌনে ৯টায় এবং সায়েদাবাদ বাসস্টান্ড থেকে সকাল ও রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায় এছাড়াও আবদুল্লাহ পরিবহনসহ(০১৭১০৬২৫৮০৯)বেশ কয়েকটি পরিবহন ঢাকা-বরগুনা রুটে চলাচল করে। আপনি চাইলে নদী পথেও বরগুনা যেতে পারেন। একদিন পর পর ‘এম ভি বন্ধন-৭’(০১৮২১১৬৫৮৭৫) নামে একটি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দর থেকে বরগুনা যায়। লঞ্চই আরামদায়ক বাহন।

 

বরগুনা হতে তালতলীর দুরত্ব মাত্র ১৭ কিমি. গাড়ী কিংবা নৌকা করে যাওয়া যায় তালতলী। অতপর পদব্রজে কিংবা নৌকায় করে সোনাকাটা বনে যেতে হয়।

 

কোথায় থাকবেন

আমতলী উপজেলায় ভাল মানের তেমন কোন হোটেল নেই। থাকতে হবে বরগুনা শহরে। বরগুনায় রাত্রিযাপন ব্যবস্থা খুবই ভাল। অনেকগুলি রেস্ট হাউস আছে এছাড়া আছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।

রেস্ট হাউস জেলা পরিষদ ডাকবাংলো(০৪৪৮-৬২৪১০)

খামারবাড়ী রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৪৬৯)

পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস(০৪৪৮-৬২৫৫১)

এ্যাগ্রো সার্ভিস সেন্টার(০৪৪৮-৬২৭২৮)

গণপূর্ত বিভাগ(০৪৪৮-৬২৫০৫)

রেস্ট হাউস এল.জি.ই.ডি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৪২)

সিইআরপি রেস্ট হাউস (০৪৪৮-৬২৫৫১)।

এছাড়া বরগুনায় আছে একাধিক আবাসিক হোটেল

হোটেল তাজবিন(০৪৪৮-৬২৫০৩)

বরগুনা রেস্ট হাউস(০১৭১৮৫৮৮৮৫৬)

হোটেল আলম(০৪৪৮-৬২২৩৪)

হোটেল বসুন্ধরা(০৭১২৬৪৫৩০০৭)

হোটেল মৌমিতা(০৪৪৮-৬২৮৪২)

হোটেল ফাল্গুনী (০৪৪৮-৬২৭৩৩)।

 

তবে সোনাকাটা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব মাত্র ৩০ মিনিটের। সুতরাং ইচ্ছে করলে কুয়াকাটাও থাকতে পারেন। কুয়াকাটা থাকাই সবচেয়ে উত্তম। তাতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটাও দেখা হয়ে যাবে

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top