Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সবুজ ডায়েরি

: | : ২০/০৬/২০১৩

এক.
শেষ বিকেল। সূর্যটা পাটে যেতে চলেছে। চারিদিকে তার রক্তিমা আভা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃতির রাজ্যে চলছে সাময়িক পরিবর্তনের প্রস্তুতি।
শহর অঞ্চলে একটা বিরাট শূন্যতা আছে। কখন সূর্য ওঠে, আর কখন নামে সন্ধ্যা, তা এই ইট-পাথরের প্রাচুর্যে উপলব্ধি করা নিদারুণ কষ্টসাধ্য। কিন্তু গ্রামে বিষয়টা বেশ স্পষ্ট। অবশ্য এটা না গ্রাম না শহর বলে র।ে বিপ্লব খান ওরফে বিপু ভাইয়া যেখানটাতে বসেছিল, সেটা একটা পুকুর পাড়। পুকুরের পাড়ে বড় একটা বকুল গাছ। গাছটার নিচে বসে আছে বিপ্লব। ওকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।
প্রায় অস্তমিত সূর্যটা বড় একটা গামলা সদৃশ জ্বলন্ত পিণ্ডের মত দেখাচ্ছিল। পুকুরের ওপারে বাঁশঝাড়ের মাথায় যেন ঝুলে আছে ওটা। যেন কোন এক নিয়ন্ত্রক একটা সূতায় সূর্যটাকে বেঁধে বসে আছেন। তিনি আস্তে আস্তে ঢিল দেবেন তাঁর সূতায়, আর সূর্যটা একটু একটু করে নিচে নামতে থাকবে। এসব দেখে মনে প্রফুল্লতা আসে। স্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধায় মস্তক নুয়ে পড়ে।
পানিতে এই অস্তমিত সূর্যের কাঁপা কাঁপা ছায়া পড়েছে। বিপ্লব সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে। ওর এতটুকু হৃদয়ের মাঝেও কাঁপা কাঁপা ঢেউ তুলছে এক অব্যক্ত বেদনা। খচ্খচ্ করে বিঁধছে সমস্ত øায়ুরজ্জুতে। কি এক যন্ত্রণায় গুড়িয়ে যাচ্ছে হৃদয়টা।
‘বিপু, অ্যাই বিপু?’
বিপ্লব প্রথমে কিছুই শুনতে পেল না। কিন্তু পরণেই চমকে উঠল। ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে বলে উঠল, ‘কে- ক্কে?’ দেখল, ওর প্রিয় বন্ধু শাওন ওর ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে। ‘ও, তুমি? কখন এলে?’
‘এসেছি তো সেই কখন।’
‘আমাকে ডাকনি কেন?’
শাওন ওর পাশে বসল। ‘ডেকেছি দোস্ত, চারবার ডেকেছি। তুমি তো…….’
‘স্যরি।’
‘হু! তুমি তো স্যরি বলেই খালাস। কি ভাবছিলে অমন গভীরভাবে।’
‘অ্যাঁ, ও। কি ভাবছিলাম!’ বিপ্লব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
নীরবে কাটল কয়েকটা মুহূর্ত।
এক ঝাঁক বক উড়ে গেল পুকুরের পানিতে তাদের কাঁপা কাঁপা ছায়া ফেলে।
বিপ্লব জিজ্ঞেস করল, ‘আজ কত তারিখ বলতো?’
‘আজ? ৭ই জুন।’
‘হ্যাঁ, আজ ৭ই জুন।’
‘তাতে কি হয়েছে?’
‘তোমরা খুব সহজে ভুলে গেছ শাওন। কিন্তু আমি যে ভুলতে পারিনি! ভুলতে পারব না!’
‘বিপু, কি এমন বিষয় যে আমরা ভুলে গেছি অথচ তুমি ভুলতে পারনি? ভুলতে পারবে না?’
বিপ্লব মুখ তুলে ভাল করে তাকাল শাওনের মুখের দিকে। কিছু যেন খুঁজল সেখানে। অতঃপর বলল, ‘রফিক ভাই…..’
শাওন এবার বিপ্লবকে কথা শেষ করতে দিল না। বলল, ‘ওহ্ বিপু!’ জড়িয়ে ধরল বিপ্লবকে।
কাঁদল দু’জনে। হাউমাউ করে কাঁদল। অস্তগামী সূর্যটা যেন এক মুহূর্তে থমকে দাঁড়াল। বাতাস যেন একটু ফুঁপিয়ে উঠল। সমস্ত প্রকৃতিই যেন ওদের বেদনার অংশীদার হল।
এভাবে কাটল বেশ কিছুণ।
অবশেষে কথা বলল শাওন। বলল, ‘কাল স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে রফিক ভাইদের গ্রামে যাব। রফিক ভায়ের কবর জিয়ারত করে আসব।’
হাতের তালুতে চোখ মুছল বিপ্লব। বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ দোস্ত।’
শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
‘কি হল?’ বিপ্লব সেটা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করল।
‘না কিছু না। ভাবছি, দেখতে দেখতে কেমন একটা বছর পেরিয়ে গেল!’
‘হ্যাঁ!’
কিছুণ কেউ কোন কথা বলল না। বিপ্লব ভাবছিল তার অতীতের কথা। কি সর্বনাশা পথে চলছিল ও। ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। রফিক ভাই ওকে সে পথ থেকে ফিরানোর জন্য অকান্ত পরিশ্রম করেছেন দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। অথচ সেই রফিক ভাইকে ও সব সময় অপমান করেছে। বিভিন্নভাবে পর্যুদস্ত করেছে। কিন্তু তার পরেও ওর একটা দুর্বলতা ছিল রফিক ভায়ের ওপর। রফিক ভায়ের আচার-আচরণ তথা ব্যবহারে অবাক হত ও। মানুষ এত সুন্দর হতে পারে! ওর মনে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকে। শেষ পর্যন্ত রফিক ভায়েরই জয় হল। কিন্তু তখন সব শেষ। কলেজে কি এক মারামারিতে তিনি প্রাণ দিলেন। সেদিন ওর চোখের কোণে রফিক ভায়ের এক ফোঁটা রক্ত চিকচিক করে উঠেছিল। ও শপথ নিয়েছিল রফিক ভায়ের রেখে যাওয়া কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে। ইতিমধ্যে অনেকেই ও ওই ধ্বংসের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
শাওনের মনেও এই রকম অনেক দৃশ্য ভাসছিল।
হঠাৎ এই সময় মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান ভেসে এল।
নীরবে আযান শুনে তার উত্তর দিল ওরা। শাওন উঠতে উঠতে বলল, ‘তোমাকে একটু সংবাদ দেয়ার জন্য এসেছিলাম। ঠিক আছে, কাল কোটচাঁদপুর যাওয়ার পথে বলব সব।’
মসজিদের দিকে রওনা দিল ওরা।
(এরপর আগামীকাল)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top