Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রাণের প্রিয়তমা(শেষ র্পব)

: | : ২৫/০৬/২০১৩

(পূর্বে প্রকাশের পর)
আজ সাকিব তার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে আসবে। কাপড়-ছোপড় গুছিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে। আর ভাবছে- দাদা কি এখনও বেঁচে আছে? চাচা কি আমাকে ও সোনিয়াকে মেনে নিবে? অনেক ভাবনা তার মাথায় উঁই পোকার মত কুট কুট করে কামরাচ্ছে।
সোনিয়া সাজতাছে।
সাকিব বলল, তোমার সাজা শেষ হয়েছে?
সোনিয়া ভাল করে মুখটা আয়নাতে দেখে নিল। পরে ঘুরে বলল, চল।
রুমটা তালা দিয়ে বাসার আশে পাশের সবার কাছে বলে রওয়ানা হলো গ্রামের উদ্দেশ্যে। সোনিয়া কোন দিন গ্রামে আসেনি। আজ তার প্রথম; তাও আবার প্রিয়তম স্বামীর সাথে নিজ শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। সবুজ সমারোহে বেষ্টিত সোনার বাংলার সোনার গ্রামের অনৈসর্গিক দৃশ্যাবলী বড়ই নয়ানাভিরাম ও চিত্তাকর্ষক। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন দেখে সোনিয়া মুগ্ধ হয়ে গেল।
বাবুল মাঠে গরু ছেড়ে দিয়ে কয়েকজন রাখাল ছেলে মেয়ের সাথে ডাংগুলি খেলছে। এদিক দিয়ে মাঠের আঁকা বাকা পথ হেঁটে সাকিব তার স্ত্রীকে নিয়ে আসছে।
দূর থেকে বাবুল সাকিবকে চিনতে পেরে বলল, আরে সাকিব ভাইয়া না? এই বলে দু’পা সামনে বাড়াল। রক্তের টান আছে বিধায় এত বছর পর দেখেও বাবুল তাকে চিনতে ভুল করেনি। কিন্তু সাকিব বাবুলকে পুরাপুরি চিনতে পারে নাই। সাকিব সামনে আসতেই বাবুল সাবিককে ভাই বলে ঝাপটে ধরল। এবার সাকিব বাবুলকে চিনতে পেল।
বাবুল বলল, আপনি এত দিন কৈ ছিলেন? আপনার জন্যে মা কাঁদতে কাঁদতে চোখে ঘা হয়ে গেছে। চুল পেকে গেছে। আমি আর আপনাকে যেতে দিব না। এই বলে বাবুল কাঁদতে লাগল।
মনের অজান্তে সাকিবের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল খসে পড়ল। সোনিয়া চেয়ে চেয়ে দেখছে। রুমাল দিয়ে সাকিব চোখ মুছে বলল, আম্মা কেমনরে?
বেশি ভাল না। বাইত গেলে দেখতে পারবেন।
তোর আব্বা কী বাড়িতে?
না। বাজারে গেছে।
বাবুল এতক্ষণ পাশের মহিলাটিকে দেখে ভাবছিল- হয়তো অন্য কেউ কিন্তু এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, ভাইয়া এইডা কেডা?
তোর ভাবি।
ভাবির কথা শুনে সোনিয়াকে ঝাপটে ধরে বাবুল বলল, ও বুঝেছি আপনিই আমার ভাইয়ারে আটকাইয়া রাখছেন?
সোনিয়া বাবুলের মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহের বুলিতে বলল, না ভাই আর আমরা তোমাদেরকে ছেড়ে যাব না।
ঠিক আছে চলেন বাড়িতে যাই। পরে কথা কইব।
বাবুলের সাথে আসা অন্যান্য ছেলে মেয়েরা তাদের এ সব দৃশ্য দেখছে। বাবুল তাদের সবাইকে বলল, তোরা যা আমি বাড়িতে যাচ্ছি। বলেই বাবুল আগে আগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল।
আছিয়া বেগম রান্না ঘরে পাক করছেন। বাবুল দৌঁড়ে পাক ঘরে এসে বলল, মা সাকিব ভাইয়া আসছে।
আছিয়া বেগম আশ্চার্য হয়ে বলল, কি কইলি! সাকিব আসছে!
হ মা। সত্যি কইছি।
কই আমার সাকিব? বলেই দৌঁড়ে ঘরে আসলেন।
সাকিব ঘরে এসে মা বলে ডাক দিতেই আছিয়া বেগম তার সামনে চলে আসলেন। সাকিবকে দেখে আছিয়া বেগমের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। বাবারে বলে চীৎকার দিয়ে তার গলা জড়িয়ে বললেন, এত দিন কোথায় ছিলি? তুই এত নিষ্ঠুর হলি কি করে? চাচার সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে গেলি। আমাকে একটি চিঠিও দিলি না। আমি কি অপরাধ করেছিলাম। একাটি বারের জন্যে দেখতেও আসলি না। আজ কেন দেখতে আসলি?
সাকিব কাঠের পুতুলের মত ঠিক দাঁড়িয়ে মায়ের কষ্টের কথাগুলি শুনে মার হাত ধরে বলল, মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আছিয়া শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বলল, আমি না হয় তোকে ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু তোর দাদা! যে দাদা তোকে কুলে পিঠে করে মানুষ করলো। সেই দাদা আজ নেই। হায়রে নাদান তাকে এক মুঠো মাটি দেয়ার ভাগ্যও জুটেনি তোর কপালে।
সাকিব দাদার মৃত্যুর কথা শুনে মায়ের বুকে মাথা রেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলল, একি বলছ মা! সত্যিই দাদা নেই!
হ্যাঁ।
কবে মারা গেল?
ঈদের দিন।
সোনিয়া আতঁকে উঠলো। তার চোখ থেকে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। স্বামী শাশুড়ির দুঃখে নিজেও দুঃখিত।
আছিয়া বেগম বললেন, দাদাকে তো মাটি দিতে পারছনি, এবার, তোর মাকে মাটি দিয়ে যেখানে খুশী চলে যাইস। তারপর সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ও কে? ওকেতো চিনলাম না।
সাকিব আসামীর মত দাঁড়িয়ে নম্র স্বরে বলল, মা এ হচ্ছে তোমার পুত্রবধূ।
পুত্রবধূ! তুই আমাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারলি? এই জন্যেই কি তোকে দশ মাস দশ দিন পেঠে ধারণ করেছিলাম।
সোনিয়া শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, না আম্মা ওর কোন দোষ নেই। ও চেয়েছিল আপনাদেরকে জানিয়ে বিয়ে করতে কিন্তু আমি বাঁধা দিয়েছি।
কেন তুমি তাকে বাঁধা দিলে?
সে বিরাট কাহিনী। সে কথা পড়ে বলব। এ জন্য আম্মা আমরা দু’জনই ক্ষমা প্রার্থী।
সাকিব বলল, এখন তুমি তোমার বউমাকে বরণ করে নাও। আশা করি মান অভিমান সব মুছে ফেলবে আজ।
সন্তান যতই অপরাধ করেনা কেন মায়ের কাছে সন্তান ক্ষমার যোগ্য। এতদিন সাকিবের প্রতি তার যে ক্ষোভ ছিল তা এক নিমিসেই শেষ হয়ে গেল লাল টুকটুকে সুন্দরী, রূপসী বউ দেখে। এত সুন্দরী রূপসী বউ দেখে সত্যি আজ আছিয়া বেগম আনন্দিত। আজ তাঁর মনে আর কোন দুঃখ নেই। তাঁর চোখে মুখে ফুটে আছে আনন্দের আভা। হাসির রেখা টেনে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বউমাকে ডাকলেন। এস মা। এস। আমার বুকে এস।
একথা বলতেই সোনিয়া এসে আছিয়া বেগমের পা ধরে সালাম করল।
আছিয়া বেগম সোনিয়াকে হাত ধরে টেনে তুলে বললেন, দেখ মা আমরা মুসলমান। মুসলমানের রীতিতে পা ধরে সালাম করতে নেই। হাত ধরে সালাম করবে। একথা বলে সোনিয়াকে বুকে টেনে নিলেন। তারপর বললেন, তোমার নাম কী?
সোনিয়া।
তুমি আমাদের গরিবের সংসারে মানিয়ে নিতে পারবে তো?
শাশুড়ির বুক থেকে সরে গিয়ে বলল, কেন পারবো না আম্মা?
তুমিতো শহরের মেয়ে।
তাতে কি হয়েছে। আমি অবশ্যই আপনাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারব। যদি আমাকে মেয়ের মত স্নেহ করেন।
মেয়ের মত ক্যান? তুমিতো আমার মেয়েই। আমার কোন মেয়ে নেই। এখন থেকে তুমিই আমার মেয়ে।
ঠিক আছে আম্মা।
দেখ মা আমার ছেলেটা কিন্তু জেদি। ওকে তুমি ভাল করে শাসন করবে।
তা বলেতে হবে না।
মায়ের কথা শুনে সাকিব মুচকি হাসল। আর মনে মনে মাকে ধন্যবাদ দিল বউকে সহজে মেনে নেয়ার জন্যে।
এদিকে বাবুল পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শুনলো। পরে ভাবীর হাত ধরে বলল, ভাবী আপনাকে আর যেতে দিব না।
সাকিব বাড়িতে আসছে জেনে বাড়ির আশে পাশের সমস্ত মহিলারা আসল তাকে দেখতে। তাছাড়া আবার শহর থেকে সুন্দরী বউ নিয়ে আসছে। এই জন্যে আরো মানুষ বেশি হল। যেমনি ভাবে কোন লোক যদি চার পাঁচ বছর বিদেশ করে দেশে আসে ঠিক তেননি আজ মানুষে ভরপুর তাদের বাড়ি।
বিকেল বেলা রহিছ বাড়িতে আসল। উঠানে এসে ডাকলেন, কইগো বাবুলের মা।
স্বামীর আগমন সংবাদ শুনেই স্ত্রী আছিয়া বেগম বলল, আপনে আসছেন, দেখে যান কে আছসে।
এই অবেলা আবার কে আসছে? বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন রহিছ মিয়া। সাকিব ও সোনিয়াকে দেখে যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। মুখটা ফিরিয়ে নিলেন। মুহূর্তের মধ্যে তার হৃদয়াকাশে যেন কালো মেঘ জমে গেল। অভিমানে তাঁর গা শিউরে উঠল। সাকিব এগিয়ে এসে বলল, চাচা কেমন আছেন।
রহিছ মিয়া সাকিবের এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললেন, তুই! তুই কেন আসছিস এ বাড়িতে। এ মুহূর্তে এ বাড়ি থেকে চলে যা।
চাচার কথা শুনে সাকিব থমকে দাঁড়াল।
রহিছ মিয়া আছিয়া বেগমের দিকে মুখ করে বলল, ওকে বল্ চলে যেতে। আমি ওর মুখ দেখতে চাই না। ও অমার কেউ নয়। আমার ভাতিজা চার বছর আগেই মারা গেছে।
আছিয়া বেগম স্বামীর হাত ধরে মিনতি মাখা কন্ঠে বলল, ওগো আপনি নিষ্ঠুর হয়েন না। সন্তান শত অপরাধ করলেও আমাদের কাছে ক্ষমার যোগ্য। আপনি মহান পিতার দায়িত্ব নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।
সোনিয়াকে দেখিয়ে রহিছ মিয়া বললেন, এই মেয়েটি কে?
ও আমাদের সাকিবের বউ।
যার নিজেরই বাড়িতে জায়গা নেই, সে কিনা আবার বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। ও আমার ইজ্জত ধুলোয় মিশে দিয়েছে। আমাদের বংশতো কোন ছেলে প্রেম করে বিয়ে করেনি।
ছেলে যখন ভুল করে ফেলেছে এখন কি করার।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ওকে মানুষ করেছিলাম এটা তার কাছ থেকে পাওয়ার জন্যে। তার রাগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই তুমি ওকে বল তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে।
সাকিব ও সোনিয়া নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
আছিয়া বেগম বলল, আপনি কি মায়ের বেদন বুঝবেন? আপনিতো ওকে জন্ম দেননি। ওকে আমি দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করছি। আমি বুঝি সন্তানের বেদনা। তাই কিনা আপনি পাষাণের মত তাড়িয়ে দিচেছন।
রহিছ মিয়া কর্কশ গলায় বললেন, এই তুমি আর তার সর্ম্পকে একটি কথাও বলবে না তাহলে…।
হঠাৎ রহিছ মিয়ার কথা থেমে গেল।
এতক্ষণে সাকিব মুখ খুলল, চাচা আপনি ভাবছেন এ বাড়ি আপনার একা। এখানে কি আমার থাকার অধিকার নেই?
হ্যাঁ আছে। তোর সম্পদ তোকে ভাগ করে দিচ্ছি। সম্পদ নিয়ে তোর যেখানে খুশী সেখানে চলে যা।
চাচার সাথে সাকিবকে তর্ক করতে দেখে আছিয়া বেগম সাকিবের গালে একটা থাপ্পর মেরে বললেন, তোর কত বড় সাহস। পিতৃতুল্য চাচার মুখে মুখে তর্ক করছিস। কে দিয়েছে তোকে কথা বলার অধিকার। যেই চাচা তোকে ছেলের স্নেহ দিয়ে কোলে পিঠে মানুষ করেছে, বাড়িতে আমাকে রেখে মা ডাকার অধিকার দিয়েছে। যার জন্যে তুই আমাকে পেলে, সেই চাচার সাথে তর্ক করছিস? ভুলে কি গেছস এ সমস্ত কথা।
মায়ের কথায় সাকিব তার ভুল বুঝতে পেরে মায়ের হাত ধরে বলল, মা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমাকে নয় তোর চাচার হাত ধরে ক্ষমা চা গিয়ে।
এদিকে সোনিয়া চাচার হাত ধরে বলল, চাচা আপনি সাকিবকে ক্ষমা করে দেন। আমাদেরকে দূরে ঠেলে দিবেন না।
রহিছ মিয়া বললেন, তুমি কে? তোমাকেতো চিনি না। তুমি যাও।
সাকিবও এসে চাচার হাত ধরল। চাচা যতক্ষণ না আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করবেন ততক্ষণ আপনার হাত ছাড়ছি না।
এদিকে রহিছ মিয়ার মনটা নরম হতে লাগল। ক্রমে ক্রমে তার রাগ কমতে লাগল। তারপর তিনি সোনিয়াকে ধরে বুকে টেনে নিলেন। আর সাকিবকে আছিয়া বেগম বুকে টেনে নিলেন। তারা দু’জন দু’জনের বুক থেকে পৃথক হয়ে গেল। এবার চাচা সাকিবকেও সোনিয়াকে উদ্দেশ্যে বললেন, আমি তোমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু কথা দাও আর কখনো আমাদেরকে ছেড়ে যাবে না।
সোনিয়া বলল, হ্যাঁ চাচা কথা দিলাম আপনাদেরকে ছেড়ে যাব না। তবে আপনাদেরকে ঢাকায় নিয়ে যাব। আর কৃষিকাজ করতে হবে না।
রহিছ মিয়া বললেন, তা কি হয় মা।
সাকিব বলল, চাচা আমার চাকরী হয়েছে। আমি আর আপনাদেরকে কষ্ট দিব না।
আছিয়া বেগম বলল, সত্যি তোর চাকরি হয়েছে?
হ্যাঁ মা।
তাহলে খোদা আমার ডাক কবুল করেছে।
সাকিব সোনিয়া দু’দিন গ্রামে থাকার পর তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসল।

সমাপ্ত
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-২)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৩)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৪)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৫)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৬)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৭)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৮)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-৯)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১০)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১১)পড়ুন।
প্রাণের প্রিয়তমা(পর্ব-১২)পড়ুন।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top