Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

জীবন চক্র (তৃতীয় পর্ব)

: | : ০২/০৭/২০১৩

শরৎ -এ
স্কুলের পাশে ছোট খাল । তার পাশে অনন্য সুন্দর এক কাশবন। কাশফুলে ছেয়ে আছে খালের পাড় । নিচে সবুজ কাশ উপরে ধব সাদা কাশফুল। কাশবনের পাশে মীর’দের জমি। সেই জমিতে ধানের চারা লাগাচ্ছে আজিজ। গুনগুন করে গান গাচ্ছে আর মনের আনন্দে ধানের চারা রোপন করে যাচ্ছে। সাথে অন্যান্য দিনমজুররা বেশ মজা পাচ্ছে। আজিজ সাথে থাকলে তাদের কাজে বেশ সুবিধা। আজিজ নিজের কাজ করে তাদের কাজে ও হাত লাগায় সাধ্যমত। আজিজ বিড়ি সিগারেট খায়না তাই মালিকের দেওয়া বিড়ি তাদের ভাগেই যায়। এর প্রতিদান হিসাবে নাস্তা খাবার সময় আজিজকে একটি রুটি বেশী খেতে দেয়। আজিজ খেতে চায় না কিন্তু তারা জোর করে খাওয়ায়।
মীর’দের অনেক জমি । এই গ্রামে তারা অনেক বড় গৃহস্ত। বেশ জমি আছে। মীর বাড়ির ছেলেরা সব দেশের বাইরে থাকে । তাদের গোমস্তা নিরঞ্জন সবকিছু দেখাশুনা করে। নিরঞ্জন লোক ভাল এবং সৎ । সে কারনে মীর পরিবার তাকে বিশ্বাস করে। প্রতিবছর যা ধান চাউল হয় সব হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়ে আসে শহরে গিয়ে। বিনিময়ে নিরঞ্জন আছে বেশ বহাল তবিয়তে। কাজ শেষ করে নিরঞ্জন থেকে টাকা নিয়ে গঞ্জে যায় আজিজ । ঘরে তার মা ,বোন,বাবা এবং ভাবী তাদের জন্য সওদা পাতি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। গ্রামের রাস্তায় সন্ধ্যা নামলে যেন ভুত নামে । ঘর থেকে তেমন কেউ বাইরে বেরুয় না। সেই সন্ধ্যা রাতে বাড়ি ফেরার সময় ভয় ভয় লাগে আজিজের। দেখতে যতই জোয়ান পুরুষ হোক না কেন ভেতরে ভেতরে সে একটা আস্ত ভীতু । সেদিন রাতে গঞ্জ থেকে ফিরছে একা একা । কাশবন থেকে শেয়ালের হুয়াক্কা হুয়া ডাক ভেসে আসছে। এই শিয়ালের ডাক শুনলে তার এমনিতেই ভয় লাগে ।
সে সময় কে যেন তার শরীরের পাশ ঘেঁষে পেরিয়ে যায়। প্রশ্ন করলে উত্তর ও দেয়না। আজিজ মনে মনে ভয় পায়। পেছন থেকে শুধায়-
কে যায়?
আগুন্তক কোন কথা না বলে দ্রুত হাটে। আজিজের শঙ্কা হয়। চোর ডাকাত নয়তো।সে আবার শুধায় কে ওখানে, কে যায়।
আগুন্তক নিরুত্তর। তবে হাটার গতি বাড়ায়। আমবাশ্যার রাতে আধারে কিছু ঠাহর করা যাচ্ছে না। সাহস করে আজিজ জোরে হাটে । উদ্দেশ্য আগুন্তক কে ধরা। অবশেষে সফল হয়। যেই হাত ধরে অমনি ছেড়ে দেয়। কারন আগুন্তক পুরুষ নয় মহিলা।
কে তুমি
জয়নাব
কোন জয়নাব , এত রাতে কোথায় যাও।
গঞ্জে গেছিলাম। ফিরতে রাত হয়েগেছে। খেয়া মাঝি ছিলনা । বাবা অসুস্থ ,ঘরে খাওন নাই।
ও আচ্ছা। তুমি রহম চাচার মেয়ে না । তোমার ভাই কোথায়?
সেতো বাড়ি নাই।
চল তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেই।
না লোকে দেখলে কি কইব। আপনি যান। আমার কোন অসুবিধা অইব না।
আরে তুমি আমারে চেন নাই। আমি আজিজ , তোমাদের পাশের পাড়ার। আমি তোমার বাবারে ভালোমত চিনি। ভয়ের কিছু নাই।
এরপর দুজন নির্ভয়ে পথ চলতে থাকে । নিজদের মধ্যে অনেক কথা হয় দুজনের। দুজনে বেশ কষ্টে আছে সেটা বুঝে দুজনেই। দেখতে দেখতে জয়নবের বাড়ি এসে যায়। জয়নব বাবার ভয়ে আজিজ কে ঘরে আসতে বলার সাহস পায় না। আজিজ এতক্ষণের পথচলার কথা ভাবতে ভাবতে নিজ বাড়ির দিকে যেতে থাকে আপন মনে। তবে আজিজের মনে এখন আর শেয়ালের ডাকের ভয় নাই। অন্ধকারে সে দিব্যি সাহসের সাথে চলছে অবলীলায়।

চলবে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top