অনেক কথা
* সত্য খুব তিক্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে সত্য প্রকাশ করা যায় না। এবং যেখানে সত্য প্রকাশ করলে মৃত্যুর আশঙ্কা সেখানে সত্য গোপন করা ভাল। তবে সত্যের কাছে নত হওয়া মিথ্যার জয় নয়। তবু মনে করি, অলীককে ত্যাগ করে বাস্তবতাকে যে ধারণ করতে পারে সে-ই সার্থক। তাই আমার অনেক কথা বলার আগে একটি কথা সত্য বলে ব্যক্ত করব : ন্যায় হোক বা অন্যায়, সত্য হোক বা মিথ্যা যেখানে যা দেখেছি পেয়েছি জেনেছি শোনেছি এবং কল্পনা করেছি সবকিছু অনেক কথায় ধারণ করার প্রয়াসটুকু করেছি। তাতে আমাকে নিতে হয়েছে কোথাও বিদ্রূপের আশ্রয়, কোথাও কটাক্ষের, কোথাও কল্পনার, কোথাও দর্শনের, কোথাও শ্রবণের, কোথাও অভিজ্ঞতার এবং কোথাও বাস্তবতার। তবে আশা করি, মিথ্যাকে কোথাও তেমন একটা প্রশ্রয় দিই নি এবং সবকিছুতে সত্য ও সততাকে প্রধান্য দিয়ে উদ্দিষ্ট-অভীষ্টে পৌঁছার চেষ্টা করছি। কোথাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় নি একথাও বলা যাবে না। সেজন্যে হয়তো লাঞ্ছনার অবধি নেই। হয়তো মহাত্মার কাছে মোক্ষণ আছে–কিন্তু–হয়তো নিয়তির কাছে নেই। অদৃষ্টের লিখন কোথায় নিয়ে দাঁড়ায় জানি না।
* ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার একটা প্রবল আগ্রহ ছিল, তেমন বই ফাড়ার আগ্রহও কম ছিল না। একটু বড় হলে স্কুল পালানোর আগ্রহটা দ্বিগুণ হল তবে বই ফাড়া সমাপ্ত হয়ে পড়ার আগ্রহটা বাড়ল। দুর্ভাগ্য আমার, অভাব-অনটনে পড়ে একসময় মাতৃভূমি থেকে নয়, মাতৃভাষা থেকেও বিতাড়িত হতে হয়। এবং ধীরে ধীরে সবকিছু ভুলে বিভূঁই-শ্রীঘরকেই আপন করে নিতে হয়। পরের ভাষা আয়ত্ত করতে করতে নিজের ভাষা চাপা পড়ে গেল অনেকটা। ক্রমে বিস্মরণ হতে লাগল নিজের বুলি। প্রিয়ার চিঠিতে ‘স্মৃতি’র বিস্মৃতে ‘সিরিতি’ লেখাও শুরু করে দিলাম নিঃসন্দে। দীর্ঘদিনপর ফিরলাম বাড়ি : প্রিয়া দেখি আড়িপণে অভিমানী–স্মৃতির এলবাম খুলে বলল, একি পাগলামি দেখি? আমি দুহাত চেপে বললাম, হায় হায় আর বলো না লক্ষ্মীটি, দোষ আর টাকা দুটো যে লুকাতে হয়, আবার চর্চা হবে ঢের। অতঃপর শুরু করলাম কথা, আস্তে আস্তে জমা হল হৃদয়সিন্দুকে অনেক কথা।
চলবে…