কাকে কয়েদখানার ভয় দেখাও ?
কাকে কয়েদখানার ভয়
দেখাও?
লিখতে পারাটা দোষ না।
বলতে পারাটাও দোষ না।
আবার কোনো কিছু
পড়তে পারা, পড়াটাও
দোষ না। এসবের জন্য
স্বাধীনতা আছে।
রাষ্ট্রকর্তৃকপ্
রদত্ত বহুমূল্যের
‘বাকস্বাধীনতা’।
আমরা ব্যাকুল
হয়ে সেই
বাকস্বাধীনতার
তত্ত্ব তালাশ করি।
আমাদের মহান
সংবিধান
বাকস্বাধীনতা বলতে
সংবিধানের কোন কোন
ধারায়
কতো কতো অনুচ্ছেদে
কথা বলা হয়েছে-
তা জানা আমাদের
একান্ত দরকার।
আমাদের
জানা প্রয়োজন,
সত্যকথা লিখলে ঠিক
কোন ধারার আওতায়
আমাদের
বাকস্বাধীনতা খর্ব
হয়। কারণ,
অধুনাসময়ে আমাদেরক
ভয়ের
মর্গে ঢুকিয়ে কফিন
করে রাখা হয়েছে।
যেকোনো সময় শুরু
হবে জল্লাদের
ব্যবচ্ছেদ।
চারদিকে মমির
মতো মানুষের
সারি সারি মুখ, সেই
মুখে অশ্রাব্য সব
বলিরেখা আঁকা।
চকচকে ইস্পাতের
বেড়ি, মুখ খুললেই
বারুদের
গন্ধে আটকে আসে গলা
কথা বললেই থ্রি নট
থ্রি রাইফেলের
কুৎসিত ঝংকার,
রক্তের নেশায় ঢেউ
উঠে বুটজুতোর
তালভাঙ্গা প্যারেডে।
তাই আমাদের সংবিধান
জানা প্রয়োজন।
নয়তো একদিন
আমাকেও
দেখা যাবে টিভি পর্দায়,
দৈনিকের শেষপাতায়।
র্যাবের ফটোসেশনের
রঙিন ছবিসহ।
নিচে লেখা থাকবে-
‘আপত্তিকর
লেখালেখির
কারণে একজন
গ্রেফতার’।
সামনে থাকবে ‘আপত্ত
বস্তুবিশেষ,
আপত্তিকর দলিল
দস্তাবেজ,
আপত্তিকর
আরো যা যা আছে পুলিশ
গোডাউনে সংরক্ষিত।
এমনই হয় শুনেছি।
পুলিশের
গোচরে সবিনয়
নিবেদন, আমার
থাকবার ছোট কামরায়
‘আপত্তিকর’ তেমন
বই-টই নেই খুব একটা।
তবে চারখানা কুরআন
মাজীদ আছে।
‘আপত্তি’
দিয়ে ঠাসাগ্রন্থ! এ
এমনই এক গ্রন্থ, যার
প্রতি পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়
তোলা যায় আপত্তি।
কেননা, এই
গ্রন্থে পিতার
সম্পত্তিতে ছেলে এবং
অংশ দেয়ার
কথা বলা হয়নি। এ
গ্রন্থে দুর্নীতি করলে
শেয়ারকেলেঙ্কারি র
হোতাদের হাত
কেটে দেবার নির্দেশ
আছে। এ গ্রন্থে কিছু
কিছু
আলেমকে বলা হয়েছে দ
চেরাকাঠ।
কোনো কোনো শহিদকে
আস্ফালন।
কোনো কোনো নেতাকে
আলামত। নিয়ে যান এই
আপত্তিকর সবগ্রন্থ।
বাজেয়াপ্ত করুন
নারীর প্রতি অবিচার
করা এই গ্রন্থ।
মানুষের ভালোমানুষির
মুখোশ
খুলে দিয়ে তাদের
অপমানিত
করে যে গ্রন্থ,
পাঠনিষিদ্ধ করুন সেই
গ্রন্থের।
ছবি তুলে টিভি-
পত্রিকায়
এবং পোস্টার-ব্যানার
সেঁটে দিন
দেয়ালে দেয়ালে। আর
বাংলাদেশের
প্রতিটি ঘরে ঘরে জারি
রাষ্ট্রীয় ফরমানÑ
যে ঘরেই এ
আপত্তিকর গ্রন্থ
পাওয়া যাবে সেই-ই
‘আন্ডার এ্যারেস্ট’।
সেই তো ভালো হয়
তাদের জন্য। নারীর
সমঅধিকার দেয়ার
নীতিতে আপত্তি তোল
কোনো দলিলই
থাকবে না আর
বাংলাদেশে। সমগ্র
বাংলাদেশ
হয়ে যাবে কুরআনহীন
বাংলাদেশ। সমস্ত
মুসলমান
হয়ে যাবে পক্ষাঘাতগ্র
মুসলমান।
২.
এই ভয় নিয়েই আছি।
এমন ভয়ের মধ্যেই
বাঁচি। এই বেঁচে থাকার
মূল্য অনেক।
আঘাতে আঘাতে বেঁচে থ
প্রথম আঘাত
আসবে দাড়ি-টুপি,
বোরকা-হিজাব, শব্দ
ইসলামের ওপর। এরপর
হামলা হবে ধর্মবিবৃত
আইন ফতোয়ার ওপর।
বাড়তে থাকবে আঘাতে
প্রকোপ। তারপর বলবে,
কুরআনের এই আয়াত
মানি না- আঘাত হানো।
আঘাত আসবে। ওই
আয়াত সভ্যতার
সঙ্গে যায় না- আঘাত
হানো। আঘাত আসবে…।
একসময় দেখবে কিছুই
মেলে না।
পশ্চিমা সমঅধিকার
সমাজের সাথে তাল
মেলানো যাচ্ছে না কিছু
তখন ক্রুদ্ধ
হয়ে বলে ওঠবে, ‘এ
কেমন ধর্মগ্রন্থ,
কিসের কুরআন
যেখানে প্রকাশ্যসঙ্গম
অনুমতি দেয়া হয় না’?
খোদার কসম! সেই সময়
সমাগত।
এভাবেই আঘাত
আসছে।
ধীরে ধীরে আঘাতের
ব্যাপ্তি বাড়ছে,
ব্যাসার্ধ বাড়ছে।
আমরা আজান
শুনে কয়েক ওয়াক্ত
জামাত
সহকারে নামাজ আর
ইসলামি ব্যাংকের
শরিয়াহ
ডিপোজিটে টাকা রেখে
এইতো ইসলামি সমাজব্
খলিফা দ্বিতীয়
ওমরের শাসনে বাস
করছি! বেহায়া,
নির্লজ্জ,
মিথ্যাবাদী মহিলাদের
দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা
জিহাদে আফজাল
করলাম। ‘আফজালুল
জিহাদি কালিমাতু
হাক্কিন
ইনদা সুলতানিন
জায়ির’- ঘুরিয়ে দেন
হাদিসের সহজ
স্বীকারোক্তি।
‘ইনকিলাব’
কিংবা ‘নয়া দিগন্ত’
আট
টাকা দিয়ে কিনে পড়ে
করি, বড়
একটা ধর্মীয় কাজ
করে ফেললাম।
ইসলামপ্রচারের জন্য
আট
টাকা মুক্তহস্তে দান!
ইসলামের জন্য
আমাদের
প্রত্যাশা আর
প্রাপ্তির
সীমারেখা ওই
পর্যন্তই।
৩.
হেফাজতের
মিছিলে শিশুদের
ব্যবহার দেখে অনেক
পত্রিকা হামদর্দিতে ‘
করে উঠেছেÑ
‘মিছিলে কেনো শিশুদে
ব্যবহার’? এ প্রশ্ন
তো আমাদেরও।
মিছিলে শিশুরা কেনো
হলো? সাত বছরের
যে ছেলেটি কুরআন
মুখস্থ
করছে সে যদি জানতে
পঠিত কুরআনের
আয়াতগুলোকে মিথ্যাপ্
করছে কেউ,
তাহলে সে পথে নামলে
কোন যুক্তিতে? বয়স
হওয়ার পর
থেকে সে শুনে এসেছে এ
কুরআনের
প্রতিটি আয়াত,
প্রতিটি হরফ,
প্রতিটি যের-যবর-
পেশ-নোক তা সত্য।
তার সামনেই
যদি বলা হয়,
কুরআনের অমুক
আয়াতটি বাংলাদেশে এ
থেকে উল্টো করে পড়ত
তাহলে সে পথে নামবে ন
মুক্তিযুদ্ধে যারা কিশ
মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন
তারা এখন হিরো। কারণ
কিশোর হয়েও
তারা মুক্তিযুদ্ধের
কঠিন
সময়ে মাতৃভূমির জন্য
জীবনদানে পিছপা হনন
দেশের জন্য
ভালোবাসা থেকেই
তারা সম্মুখসমরে অবত
হয়েছিলেন। এ
কারণে তারা এখন
সবার সম্মানীয়। সেই
তাদের বয়সের
কোনো কিশোর
যদি তার একান্ত
ভালোবাসার,
বিশ্বাসের কুরআন
হাতে নিয়ে কুরআনের
আইনকে রক্ষার জন্য
যৎসামান্য
হরতালে অংশগ্রহণ
করে তাহলেই
তাকে ভিলেন
বানানো হয়। চল্লিশ
বছরে বাংলাদেশের
মানুষের বিবেচনাবোধ
এতোটা পরিবর্তন
হয়ে গেলো?
প্যালেস্টাইনের
শিশুরা প্রতিদিন
ইসরাইলি ট্যাঙ্কের
দিকে পাথর ছুড়ে মারে।
আমাদের
পত্রিকাগুলো সমব্যথী
সাহসের তারিফ
করে ছবি ছাপে।
কাশ্মিরের ছেলেদের
ছবিও আমরা দেখি।
তারাও নায়কই হয়।
কেবল বাংলাদেশের
ছেলেরা কুরআন
হাতে পথে নামলে আমাদ
মানবাধিকারের
চৌদ্দপুরুষ ‘হায় হায়’
করে ওঠে।
কুরআন
নিয়ে আরববিশ্বে হরহ
হয়। কুরআন
মুসলমানদের
একটি সিম্বল,
পরিচয়। শুধু আরব
বলি কেনো,
ইদানীং ইউরোপ-
আমেরিকার
মুসলমানরাও হিজাব
বা যেকোনো অধিকার
আদায়ের জন্য কুরআন
হাতে মিছিল করে।
আমাদের
পত্রিকাগুলোও ফলাও
করে সেসব ছাপে। আর
আমাদের দেশের
মুসলমানরা কুরআন
নিয়ে রাজপথে নামলে ত
কুরআন
অবমাননাকারী। এই
কুরআন আর আরবের
কুরআন কি ভিন্ন?
ভিন্ন
না হলে পত্রিকাগুলোর
দুইধরনের চারিত্রিক
মাধুর্য্য (!)
ধরা পড়ে কেনো?
কী করলে কুরআনের
অবমাননা হয় একজন
মাদরাসাশিক্ষার্ থীর
চেয়ে একজন নাস্তিক
কি বেশি জানে?
হজরত আলি ও
মুআবিয়ার
মধ্যে সংঘটিত
সিফফিনের
যুদ্ধে কুরআন বর্শায়
গেঁথে শান্তিপ্রস্তাব
কামনা করা হয়েছিলো।
যিনি বর্শায় কুরআন
গেঁথেছিলেন
তিনি রাসুলের একজন
সাহাবি। নাম সাদ
ইবনে আবি ওয়াক্কাস।
চিনতে পারছেন তাকে?
আশআরায়ে মুবাশশারা
একজন।
যারা পৃথিবী থেকেই
শুনেছিলেন
স্বর্গপ্রাপ্তির
খোশখবর।
ইচ্ছে হলে তাকে আখ্য
করুন কুরআন
অবমাননাকারী হিসেবে
এইসব দিয়ে আমাদের
ভয় দেখাও।
কলমবাজির
শয়তানি দিয়ে আমাদের
ভয় দেখাও। আইনের
ফোকড় দিয়ে আমাদের
সাপের পাঁচ
পা দেখাতে চাও।
রিমান্ডের চিৎকার
শুনিয়ে আমাদের
কলজে কাঁপাতে চাও।
একবার
ভেবেছো কাকে কয়েদে
ভয় দেখাও তোমরা?
সেই মুহাম্মদের
দাসকে? যে মুহাম্মদ
আবুতালিব
গিরিপথে টানা তিনবছ
নির্বাসনের
যাতনা সয়েছেন। ইমাম
আবু হানিফার
অনুসারীকে?
কয়েদখানায় যাকে বিষ
দিয়ে হত্যা করেছিলো
ইমাম আহমদের
অনুসারীকে? খলিফার
জল্লাদ অকথ্য
নির্যাতনে যাকে বেহুশ
করে ফেলেছিলো।
মুহাম্মদ বিন কাসিমের
বংশধরদের?
জেলখানাই
হয়েছিলো যে বীরের
শেষ জায়নামাজ।
আর কতো ইতিহাস
শুনতে চাও? শায়খুল
হিন্দ, শায়খুল ইসলাম,
ফরিদপুরী, আতহার
আলী; এ শতাব্দীর
শায়খুল হাদিস
আল্লামা আজিজুল
হক
কিংবা মুফতী ফজলুল
হক আমিনী। আমাদের
সমগ্র ইতিহাস
কালো হয়ে আছে কয়েদ
গরাদে। জেলখানার
কঠিন দেয়াল দিয়েই
রচিত হয়েছে আমাদের
পুনর্জন্মের কবরপাঠ।
শেকল আর
জিঞ্জিরের ঝংকার
দিয়েই
লেখা হয়েছে আমাদের
বিজয়ের জয়গান।
আমাদেরকে আর যাই
করো, কয়েদখানার ভয়
দেখিও না।
*দুই বছর আগের
লেখাটা কেনো যেনো কি
দায় শোধ
করতে দিলো না। দায়
শোধের
তাগিদে পুনঃপ্রকাশ।
সালাহউদ্দীন
জাহাঙ্গীর
মাসিক রহমত,
মে ২০১১