Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুই বন্ধু ও মেকাও পাখির ভালোবাসা

: | : ০৮/০৭/২০১৩

মামুন আর মোমেন খুব বন্ধু। এরা দু’জনই খুব ধনী। শহরে এদের বাড়ি-গাড়ি আছে। এরা খুবই সৌখিন।

মামুন বিদেশ থেকে বিরল জাতের একটা পুরুষ মেকাও পাখি এনে পুষছে। পাখিটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই দামি। পাখির খাওয়া-দাওয়ার আর আরামে থাকার সকল ব্যবস্থাই করে রেখেছে সে। পাখিটিও আছে বেশ।

মামুনকে তার পরিবার নিয়ে কয়েক মাসের জন্য বিদেশ যেতে হবে। তাই মূল্যবান মেকাও পাখিটি নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেল মামুন। একদিন তার বন্ধু মোমেন এলো তার বাসায়। মামুন তার বন্ধুকে বলল, ‘আমার মেকাও পাখিটা কিছুদিনের জন্য তোমার বাসায় নিয়ে রাখ। বিদেশ থেকে এসেই আমি পাখিটা নিয়ে নেবো।’ বন্ধু মোমেন খুব খুশি মনে রাজি হয় গেল। বলল সে, ‘কোনো চিন্তা করো না তুমি। তোমার পাখির কোনো অযতœ হবে না।’ কারণ সেও পাখিকে খুব ভালোবাসে। তার বাসাতেও আছে পাখি ও পাখির জন্য সুন্দর ব্যবস্থা। মোমেন মনের আনন্দে নিয়ে গেল পাখিটি। এত সুন্দর আর দামি মেকাও পাখিটি পেয়ে তার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়ে গেল।

মোমেন ইন্টারনেট ঘেটে দেখেছে, মেকাও পাখির জন্য কেমন জায়গার দরকার হয়, কী খেতে ভালোবাসে ইত্যাদি। এটা আমাজন বনের পাখি। তাই সে বাসার সামনের খোলা জায়গাতে আমাজন বনের মতো করে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিল পাখিটির জন্য। পাখিটি মনের আনন্দে বসবাস করতে লাগল।

কিন্তু পাখিটি যে একা! একা একা ভালো লাগছে না তার। এটা মোমেন খুব বুঝতে পারল। তাই সে বিদেশ থেকে আরেকটি মেয়ে মেকাও পাখি এনে এই পাখিটির সঙ্গে থাকতে দিল। এবার দুই পাখির মধ্যে অনেক খাতির হয়ে গেল। তারা মনের আনন্দে থাকতে লাগল।

মোমেন একদিন দেখল মেকাও পাখি ডিম পেড়েছে। তার আনন্দের আর সীমা নেই। সে অনেক যতœ করতে লাগল। একদিন ডিম ফুটে বেরিয়ে এলো দুটি বাচ্চা। বাসার সকলে এমন কি আতœীয়-স্বজনেরা হাসি হাসি মুখে দেখতে আসে মেকাও পাখির ছানা ও তাদের সুখের সংসার। আনন্দে মন ভরে যায় সবার।

বাচ্চা নিয়ে সারাদিন আনন্দে মেতে থাকে মেকাও মা আর বাবা। ছানা দুটিকে বুকে আগলে রাখে তারা।

এতদিনে মামুন দেশে ফিরে এসেছে। সে বন্ধু মোমেন-এর কাছে তার মেকাও পাখিটি ফেরত চাইল। এ কথা শুনে মোমেনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে নিজের সন্তানের মতো করে আদর আর যতœ দিয়ে পাখিকে লালন পালন করছে। তারা সুখের সংসার করছে। মোমেন এখন কীভাবে সংসার ভেঙ্গে পুরুষ মেকাওকে দিয়ে দিবে বন্ধু মামুনকে। তাই সে কোনোভাবেই দিতে চাইল না পাখিটাকে।

মামুন পাখিটা চেয়ে না পেয়ে খুব রাগ করল। এই নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে হয়ে গেল অনেক কথা কাটাকাটি। এ নিয়ে বন্ধুর সম্পর্ক যায় যায়! মামুন খুব জেদী। সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। অনেক দেন-দরবার করতে লাগল মামুন। মুরুব্বিরা বলল, ‘যার পাখি তাকে ফিরিয়ে দাও।’ তখন মোমেন মনের কষ্টে ধরতে গেল পুরুষ মেকাওকে। অল্প জায়গায় অনেক ছুটোছুটি করল পাখিটা বাঁচার জন্য। মেকাওয়ের প্রাণপ্রিয় ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী অসহায় ভাবে কান্নাকাটি আর ছটফট করতে লাগল। মনে হয় ছোট্ট বাচ্চা দুটি কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘তোমরা আমার আব্বুকে নিয়ে যেও না। আমরা আব্বুকে অনেক ভালোবাসি।’ তারপর স্ত্রী পাখিটাও যেন বলছে, ‘তোমরা আমার স্বামীকে নিও না। তাকে ছাড়া আমরা থাকতে পারব না। আমরা তাকে অনেক ভালোবাসি।’ কে শোনে কার কথা। মোমেন অনেক ছুটোছুটি করে পুরুষ পাখিটাকে ধরল। পাখিটা ভয়ে বেদম কাঁপতে লাগল। তারপর মোমেন চোখের জলে মেকাও পাখিটাকে দিয়ে দিল বন্ধু মামুনের হাতে।

পিতার জন্য মেকাও ছানা দুটি আর স্বামীর জন্য স্ত্রী মেকাও পাখি খাবার তুলল না মুখে। তারা উপোস করতে লাগল। তাদের মন খুব খারাপ হয়ে আছে। তারা শুকিয়ে যেতে লাগল। অন্যদিকে পুরুষ মেকাও পাখি মামুনের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া ছেড়ে দিয়ে খালি চোখের জল ফেলে আর ছটফট করে। তাদের গভীর ভালোবাসা আর ছটফটানি দেখে মোমেন খুব কষ্ট পেল। সে গেল বন্ধু মামুনের বাসায়। খুলে বলল পাখির কষ্টের কথা। প্রথমে পাখিটি ফেরৎ দিতে রাজি হলো না মামুন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল সে। হঠাৎ করে ভিজে গেলো দুই বন্ধুর চোখ। তাদের রাগ আর অভিমান বরফের মতো গলে পানি হয়ে গেল। তারা চিঁ চিঁ করে কেঁদে উঠল এবং একজন আরেক জনকে জড়িয়ে ধরল। এক বন্ধুর চোখের পানি আরেক বন্ধুর পিঠ গড়িয়ে পড়ল। মামুন কোনো কথা না বলে তার বন্ধু মোমেনের হাতে পুরুষ মেকাও পাখিটা দিয়ে দিল। মেকাও পাখি ফিরে পেলো তার সুখের সংসার। বন্ধুও ফিরে পেলো বন্ধুকে। জয় হলো মেকাও পাখির ভালোবাসার।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top