জনসংখ্যা সমস্যা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ সংকট(আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস)
জনসংখ্যা এখন আমাদের সব সমস্যার মধ্য অন্যতম । একজন মানুষের মাথায় যদি তার সক্ষমতার অনেক বেশি ভার দেয়া হয় তাহলে সেই মানুষটি যেমন বহন করতে পারবে না তেমনি ভাবে আমাদের দেশের অবস্থাও টালমাটাল মানুষের মতো । আমাদের সপ্নের রাজধানী ঢাকা অনেক আগেই মেগাসিটির খেতাব পেয়েছে। ২০১২ সালের UNFPA রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭২০ কোটি। কিন্তু ১৯৯৯ সালেও পৃথিবীর জনসংখ্যা ৬০০ কোটি ছিল । তাহলে এই মাত্র ১২ বছর পার হতে না হতেই জনসংখ্যা ১০০ কোটি বেড়ে গেলো । তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ্য যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার কিন্তু মূলত এশিয়ায় এবং আফ্রিকাতেই বেশি । মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বেশি লোক এই মহাদেশে বাস করে । এবং পৃথিবীর সর্বাধিক লোক ধারণকারী দেশের মধ্য চীন এবং ভারত উল্লেখযোগ্য । কিন্তু আমাদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে । প্রতি বছর আমাদের সাথে নতুন মানুষ যোগ হচ্ছে প্রায় ২০ লক্ষ জন।
জনসংখ্যার ফলে আমাদের যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তার একটি হল আবাসন সমস্যা । যেহেতু লোকসংখ্যা বাড়ছে তাই তাদের থাকার জন্য মাথার উপর ঘর দরকার । আর এই কাজে ব্যাবহার হচ্চে উর্বর কৃষি জমি । ফলে একদিকে যেমন চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে অন্যদিকে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে । যার কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য খাদ্য আমদানির প্রয়োজন পরছে । মানুষ তার মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে । এবং দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। সাধারন জনগণের জীবনযাত্রার মান ক্রমেই নিন্মগামি হচ্ছে । গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে এবং সেখানে চাষ করা হচ্ছে । ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে । তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এবং প্রথম ক্ষতিগ্রস্থ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামটাই রয়েছে । যার মূল্য শুধু আমাদেরই দিতে হবে ।বাংলাদেশ পৃথিবীর ৯০ তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে এটি অষ্টম।
১৬৫০ সালে এ দেশের জনসংখা ছিল ১ কোটি । ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখা ছিল ২.২ কোটি। ১৯০১ সালে ২.৮৯ কোটি, ১৯৬১ সালে ৫.০৮ কোটি , ১৯৭৪ সালে ৭.১৪ কোটি , ১৯৮১ সালে ৮.৭ কোটি , ১৯৯১ সালে ১০.৯৯ কোটি , ২০০১ সালে ১২.৪৩ কোটি। এখানে দেখা যায় ১৮৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্য জনসংখ্যা তিনগুন বেড়ে যায় । ১৯৭৪ থেকে ২০০১ এই চার দশকে জনসংখ্যা দিগুণ বৃদ্ধি পা। এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৯৭৪ সালে ২.৪৮ , ১৯৮১ সালে ২.৩৫ , ১৯৯১ সালে ২.১৭, ২০০১ সালে ১.৩৭ এবং অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ অনুযায়ী আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি ৩৬ লাখ , জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭% , ঘনত্ব ১০১৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে ।
আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৭% যা মোটেও সন্তোষজনক নয় । কেননা এই হারেও যদি বাড়তে থাকে তাহলেও ভবিষ্যতে এক বিশাল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে যার ফলাফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির বেশ কয়েকটি কারণ অবশ্য রয়েছে এই উপমহাদেশের প্রেক্ষিতে। যেমন – দারিদ্রতা ও অশিক্ষিতের হার , নারী শিক্ষার অভাব, সামাজিক কুসংস্কার , ধর্মীয় গোঁড়ামি এছাড়া আরও কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ ।
তবে এখন অনেক সময়ই এটা আলোচনায় আসে যে জনসংখ্যা বোঝা না সম্পদ । আমার মতে দুটোই হতে পারে । যদি দেশের জনগণকে এবং তার মেধাকে সঠিক উপায়ে ব্যাবহার করা যায় সেক্ষেত্রে জনগণকে বোঝা না বলে বরং সম্পদ বলা চলে । যেমন চীন ইতিমদ্ধই তার প্রমাণ রেখেছে। তাদের বিশাল জনগোষ্ঠী থাকা সত্তেও আজ তারা পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্র সমূহের মধ্য অন্যতম । অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধিতে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে । এছাড়া যদি আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা ভাবি তাহলে দেখা যাবে বিগত কয়েক বছরে ভারত ইরসনিও সাফল্য অর্জন করেছে যদিও তাদের জনসংখ্যা বিশ্বর অন্যতম বৃহৎ । তারা তথ্য প্রযুক্তি খাতে তাদের জনসম্পদের সঠিক ব্যাবহার করতে পেরেছে এবং যার ফলে যে কোন দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম । এ কারনেই বলি আমাদের এই বিপুল জনগণকে প্রথমে সম্পদে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে। আর জনগণকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই শিক্ষার হার বাড়াতে হবে এবং সবচাইতে ভালো হয় যদি কারিগরি শিক্ষার দিকে ঝুঁকতে হবে । কারণ সারা পৃথিবীতেই এখন কারিগরি শিক্ষার দাম বাড়ছে। এছাড়াও আমাদের জনসম্পদ ইতিমদ্ধই বাইরের দেশে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে যা আমাদের জন্য আশার কথা।
সর্বতোভাবে মাঠ পর্যায় পরিবার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে ।