দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব ১)
॥ বন্দী কারাগারে ॥
আমাদেরকে ওরা কি জন্য আনলো এইখানে? কেনোইবা বন্দী কইরা রাখলো? কিছুইতো বুঝা যাচ্ছে না।
কি জানি। সারা দিন যেইভাবে তালাবদ্ধ ঘরের মধ্যে আটকাইয়া রাখছে আর ওদের যা হাব-ভাব তাতে তো লক্ষণ খুব ভালো মনে হয় না।
কোনো কাম-কাইজও করায় না। বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ায়। আবার জেলখানার মতো বন্দী কইরাও রাখে। হেগর মতলবডা যে কি তাতো
বুঝা যাচ্ছে না।
জেলখানাই তো। সরকারের জেলখানার চেয়েও মারাত্মক এই জেলখানা। সরকারের জেলখানায় কেউ বন্দী হলে তার আত্মীয়-স্বজনরা
জানতে পারে। খরাব-খবর নিতে পারে। মুক্ত করার চেষ্টা-তদবির করতে পারে। কিন্তু এই জেলখানারতো কেউ খবরও জানে না। এখান
থেকে ওরা আমাদেরকে মুক্তি না দিলে কেউ কিছু করতেও পারবে না।
এমনি কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আরো তেরো জন অপহৃত কিশোরসহ চট্টগ্রামের এক অন্ধকার বাড়িতে বন্দী অবস্থায় কেটে যাচ্ছে শাহীনের প্রায় তিনটি মাস।
যে বয়সে কিশোররা মা-বাবা, ভাই-বোনদের আদর-েহে ডুবে থাকে। সময় কাটায় সাধারণত লেখা-পড়া, খেলা-ধুলা আর মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটাছুটি করে, ঠিক সেই সময়ে ওরা আপন জনদের সব বন্ধন থেকে চ্ছিন্ন হয়ে, মানবরূপী অমানুষদের হাতে বন্দী জীবন অতিবাহিত করছে। এ এখানে প্রতিটি মুহূর্তই কাটছে আশা-নিরাশার দোলাচলে। ওরা জানে না, কাদের হাতে ওরা বন্দী। কেনো ওদেরকে বন্দী করা হয়েছে। ওদের এ বন্দী জীবন কতো দিন, কতো মাস বা কতো বছরের। অথবা কী পরিণতি দাঁড়াবে এ বন্দী জীবনের। কোনো দিন কি এ বন্দীশালা থেকে মুক্তি পেয়ে ওরা নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে মুক্ত বাতাসে? মিলিত হতে পারবে কি মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে? না কি অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটবে সব আশা-নিরাশার?
মানুষ রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধ করে। রাষ্ট্রের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করে জেলে বন্দী করে। নির্ধারিত মেয়াদের সাজা শেষে আবার একদিন সে মুক্তি লাভ করে। খুনের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্য মৃত্যুদণ্ডও হয়। শাহীন তেমন কোনো অপরাধ করেনি। দণ্ডযোগ্য অপরাধের বয়সও তার হয়নি। তাকে রাষ্ট্রীয় পুলিশ গ্রেফতার করেনি বা আদালত কর্তৃক সে সাজাপ্রাপ্তও হয়নি। তবুও সে বন্দী। কারা তাকে বন্দী করেছে? কেনো বন্দী করেছে? এসব কিছুই প্রথমে সে বুঝতে পারেনি।