দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-২)
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত প্রায়-অন্ধকার বাড়িতে বন্দী থেকে, দিন-মাস পুরোপুরি হিসেব রাখা কঠিন। তারপরও যতটুকুন মনে পড়ে- প্রায় তিন মাস আগের এক শীতের সকালের ঘটনা। সেদিন ফজরের নামাযের আগে বিছানা ছেড়ে উঠেনি শাহীন। মসজিদে যায়নি নামায পড়তে। তার বাবা নামাযের আগে একবার তাকে ডেকে গেছেন, বিছানা ছেড়ে ওঠে নামাযে যেতে। তারপর নামায শেষে ফিরে এসেও তাকে বিছানায় শোয়া দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং ভর্ৎসনা করেন। এতে তার অভিমানী কিশোর মন বিগড়ে যায়। সে ঘুম থেকে ওঠে বাথরুম ও ওযু সেরে, মসজিদের দিকে যায়। কিন্তু অভিমান করে মসজিদে ঢুকে না। চলে যায়, পাশের ছোট্ট হাঁড়িধোয়া নদির পাড় ঘেষে একেবারে পুরাণপাড়া রেল-ব্রিজের কাছে। ব্রিজের গোড়ায় রেললাইন সমতল থেকে বেশ উঁচু। সে ভাবছিলো উপরে রেললাইনে উঠবে। ব্রিজের গোড়ায় কিছুক্ষণ বসে মনটা ফ্রেশ করবে। ঠিক তখনই পশ্চিম দিক থেকে শুনতে পায় রেলগাড়ির আওয়াজ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি আন্তনগর রেলগাড়ি আসে। গাড়িটি গতি কমাতে কমাতে ব্রিজের কাছে এসে এক পর্যায়ে থেমে যায়। শাহীন নিচের সমতলে দাঁড়িয়ে আনমনে তাকিয়ে দেখছিলো গাড়িটি। বিরাট লম্বা গাড়ি-
অনেকগুলো বগি। তার কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগে, এখানে কেনো থামলো গাড়িটি? এটাতো কোনো রেলস্টেশন নয়। এমন সময় একজন লোক গাড়ি থেকে নেমে তার দিকে এগিয়ে আসে। এটাকে একটা বাড়তি ঝামেলা মনে করে সে বিরক্ত বোধ করছিলো এই ভেবে যে, হয়তো লোকটি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে। সে এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজছিলো অন্য কাওকে দেখা যায় কিনা ; যার দিকে লোকটিকে ইশারা করে দিয়ে সে ঝামেলা মুক্ত হবে। কিন্তু না, শীতের কুয়াশাঘেরা সকালে কাছাকাছি কাউকে সে দেখতে পায়নি। ওদিকে লোকটি শাহীনের কাছে এসে চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে সহসা তার নাকে-মুখে কি যেনো চেপে ধরে। সাথে সাথে তার জ্ঞান লোপ পেতে থাকে। এরপর কতোক্ষণ সে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল, তা অনুমান করতে পারছে না।
জ্ঞান ফিরে পাবার পর শাহীন নিজেকে দেখতে পায় অজ্ঞাত স্থানের এ অচেনা বাড়িতে। ভয়ে তার শরীর কেঁপে উঠে। দরজা বন্ধ যে কক্ষে তাকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল তার এক কোণে মুখোমুখী বসা দু’জন লোক। ওরা তরল জাতীয় কি যেন পান করছে। আর ঢুলতে ঢুলতে কিসব প্রলাপ বকছে। একজনের চোখ-মুখ সে দেখতে পাচ্ছে। অন্ধকারে লোকটির বড় বড় চোখ দু’টি জ্বলন্ত লাল বাতির মতো দেখা যাচ্ছে। সে তার গ্লাসটি অপর জনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলছে, “আমাকে আরো মাল দাও! আমিইতো ধোরটা আনলাম। তোমরাতো খালি হাতেই আইলা।” অপরজন বলে- “হ, ভাগ্যের জোরে গাড়িটা ওখানে থামলো, আর ছেলেটারেও একা পেয়ে গেলা। নইলেতো তুমিও খালিই আসতেছিলা। তবুও তোমাকে আরেকটু দিলাম” বলে তার গ্লাসে কি যেনো ঢেলে দেয়। শাহীন বুঝতে পারে এরা গুণ্ডা-
চলবে…