Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রশিক্ষণ, ধৈর্য্য ও আত্মসংযমের মাধ্যম হচ্ছে রোযা

: | : ১১/০৭/২০১৩

c

রোযা শব্দটি ফারসী, আরবি ভাষায় বলা হয় সাওম। ইহা এক বচন, বহুবচন সিয়াম। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, পোড়ানো বা দহন করা। সোনা যেমন আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করা হয়, তেমনি রোযা মানুষকে তার পাপ প্রবণতাকে দহন করে ঈমানের পথে আনয়ন করে। আর তার পারিভাষিক অর্থ হলো, রোযার নিয়তে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন ও তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাবতীয় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ হতে বিরত থাকার নাম হল রোযা। হালাল রিযিক ও হালাল স্ত্রী রোযা অবস্থায় দিনের বেলায় হারাম হয়ে যায়। তবে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে শুধু শুধু বিরত থাকার নাম কিন্তু রোযা নয়। কেননা রসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোযাদার আছে যাদের রোযা ক্ষুৎপিপাসা থেকে বিরত থাকা ছাড়া আর কিছু নয়।’ বরং দেহ ও মনে সর্বদা আল্লাহর ভয়-ভীতির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালনের নামই হল রোযা।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোযা হল তৃতীয় স্তম্ভ। এই রোযা বর্ষপরিক্রমায় প্রতিবছর আমাদের সামনে এক মহান পয়গাম নিয়ে হাজির হয় প্রশিক্ষণ, ধৈর্য্য ও আত্মসংযমের মাস হিসেবে। লোভ-লালসায় পরিপূর্ণ, ভোগ-বিলাসে মত্ত, অর্থ-বৈভব ও ক্ষমতার দর্পে গর্বিত, পাপ-তাপ ক্লিষ্ট মানব জাতিকে সত্যিকারের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য মাহে রমযানের এই রোযার আয়োজন। কাম-ক্রোধ, কামনা-বাসনা ও পশু প্রবৃত্তির অবসান ঘটিয়ে ক্ষুদ্র মানব সত্ত্বা মহান প্রভুর সানিধ্য লাভের অপূর্ব সোপান হল রোযা। সুন্দর ও সুষম সমাজ গঠনে রোযার ভূমিকা অস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযাকে ফরয করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাকওয়া কি? তাকওয়া হলো মহান আল্লাহর ভয়ে সকল প্রকার অন্যায় অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থেকে তাঁরই নির্দেশিত পথে অবিচল চিত্তে চলার নামই হল তাকওয়া। বাইম মাছ যেমন কাদার মাঝে জীবন যাপন করে অথচ তার গায়ে কাদার সামান্যতম চিহ্নও পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনিভাবে মুসলমান পাপ পংকিলময় সমাজে বসবাস করবে, কিন্তু পাপ তাকে স্পর্শ করবে না। রোযার আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে, নবী করিম (সা:) এরশাদ করেছেন, ‘ঈমান ও এহতেসামের সহিত যে ব্যক্তি রোযা রাখবে তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’
রসুল (সা:) আরো বলেছেন, ‘যে লোক একটি দিন আল্লাহর পথে রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার মুখমন্ডলকে জাহান্নামের আগুন হতে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেকটি নেক আমলের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রোযা এর ব্যতিক্রম। কেননা ইহা একান্তভাবে আমারই জন্য। অতএব আমিই এর প্রতিদান দেব। রোযা পালনে আমার বান্দা আমারই সন্তোষ বিধানের জন্য স্বীয় ইচ্ছা বাসনা ও নিজের পানাহার পরিত্যাগ করে থাকে। রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ। একটি আনন্দ ইফতার করার সময় ও দ্বিতীয়টি তার মালিক আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়। আর নিশ্চয় জানিও রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধি হতেও অনেক উত্তম।’
জীবন গঠনে প্রশিক্ষণের মাস হচ্ছে রোযা। একজন সৈনিক যেমন প্রশিক্ষণ নিয়ে পরবর্তীতে নিজের জীবন ও দেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, অনুরূপভাবে একজন মুমীন ব্যক্তিও দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করে তাকওয়া অর্জন করে শয়তানের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ঈমান ও ইসলামকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হয়।
রোযার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ধৈর্য্য। কথায় আছে ধৈর্য্যই সফলতার চাবিকাটি। ধৈর্য্য মুমীনের উত্তম গুণ। একমাত্র রোযার মাধ্যমেই মানুষ ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে। ক্ষুৎপিপাসা এবং যৌনাকাক্সক্ষা যে কোন সময় জাগ্রত হতে পারে। কিন্তু রোযা সে কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
হাদীস শরীফে আছে, ‘রোযা সবরের অর্ধেক এবং সবর বা ধৈর্য্য ঈমানের অর্ধেক।’
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবর কর এবং সবরের প্রতিযোগিতা কর।’ (সূরা আল ইমরান-২০০)
মানুষের মাঝে আছে জৈবিক চাহিদা ও পাশবিক শক্তি। এই জৈবিক চাহিদা একজন মানুষকে অন্যায়ের দিকে ঠেলে দেয়। আর এর জন্য সৃষ্টি হয় ঝগড়া বিবাদ। ফলে সমাজে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। রোযা এই জৈবিক চাহিদা ও পাশবিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি, শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় থাকে।
পরিবেশে বলা যায় রোযা মহান আল্লাহর এক অফুরন্ত নিয়ামত। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত রোযার এ মহান শিক্ষাকে উপলব্ধি করা। আর রোযার প্রতি সকলের যতœবান হওয়া অপরিহার্য।
[এই প্রবন্ধটি অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়নি।]

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top