বেওয়ারিশ লাশ
আমার নাম নাজমা বেগম, গার্মেন্টসে কাজ করি
গাইবান্ধার ছোট্ট গ্রামের কাঁঠাল তলে আমার বাড়ি
পেটের দায়ে ঢাকায় আইছি
এহন ঢাকাতেই বাস করি ।
আমার দুই ছেলেমেয়ে, ওদের বাপ গেছে ছাইড়া
আমার বাপ বুড়া মানুষ সেও গেছে মইরা,
আমার মা একলা মানুষ ভাত জোটে না তার
তার উপরে আমরা তিনজন কী করার আছে মার ?
পেটের খিধায় ছেলে কান্দে মেয়ে কান্দে
চাপা কষ্টে কান্দে আমার মায়
মাইনষের বাড়ি ভাড়া ভেনে
চাইর পেটের ভাত যোগানো দায় ।
দেশের মায়া ছাইড়া দিয়া আইলাম আমি ঢাকা
গার্মেন্টসে কাজ করি মাস শেষে টাকা
ছেলেমেয়ে বাড়ি থাকে
বুকটা করে খাঁ খাঁ ।
ছেলেমেয়ে মানুষ হবে
এই আশায় দিনরাত কাজ কইরা যাই
হঠাৎ কর্মস্থল চিতাঘাঁটি
আমার সাথে আশাও পুইড়া ছাই ।
ঐযে আমার ছেলে কান্দে মেয়ে কান্দে
ওমা, কারে খোঁজো তুমি ?
এই যে দেখো
নিশ্চিন্তপুরের ইশকুল মাঠে শুইয়া আছি আমি ।
মুসলমানের সন্তান হইয়াও
চিতাঁয় পুইড়া হইলাম ছাই
আমি গর্মেন্টস শ্রমিক
তাই বলে কি আমার কোনো ধর্ম নাই ?
ধর্ম হইল বড়লোকের গোলার ধান
খোদাও ওদের জায়গীর
তাইতো যেমন খুশি তেমন লেখে
গরীবের তকদীর ।
আগুনে শরীর পুড়ছে
কপাল পুড়ছে
পুইড়া গেছে নাম
তাইতো বেওয়ারিশ লাশ হইয়া দাফন হইলাম ।
(সাভারের তাজরিন ফ্যাশনে আগুন লাগার দ্বিতীয় দিন এই কবিতাটি লেখে ছিলাম, পরে এটা বাংলাদেশের একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত হয়ে ছিল)