Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-৬)

: | : ১৫/০৭/২০১৩

॥ বন্দীশালায় স্মৃতিচারণ ॥

এক রাতে বন্দীশালার বিছানায় শুয়েছিলো শাহীন। ওর সাথী কামাল দিব্যি ঘুমিয়ে গেলেও, তার কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। মন তার চলে যায় বাড়িতে। সে শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো মা-বাবা, ভাই-বোনদের কথা। সহপাঠী এবং খেলার সাথীদের কথা। বোন ফারহানার কথা মনে হতেই তার স্মৃতিতে ভেসে উঠে একটি চিত্তাকর্ষক ঘটনা। এক দিন তার বাবা কলেজের কি কাজে ঢাকা গিয়েছিলেন। ভাই ফাহিমও ছিলো ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে। সন্ধার পর, পড়ার টেবিলে বোন ফারহানার সাথে কি নিয়ে মনোমালিন্য হয় তার। এক পর্যায়ে সে অভিমান করে, কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায় ঘর থেকে। ওর মা কিচেন রুমে কি যেনো রান্না করছিলেন। ফারহানা ডেকে বললো, মা, Ñ মা, দেখো শাহীন রাগ করে কোথায় চলে যাচ্ছে! অমনি তার মা-বোন ঘর থেকে বের হন, তাকে আটকাতে। আর তখনই তার দূরন্ত মনে জাগে এক নাটকীয় দুষ্টুমীর খেয়াল। সে গেট খোলার আওয়াজ করে ঠিকই ; কিন্তু গেটের বাইরে না গিয়ে, দ্রুত পেছনে ফিরে এসে ঘরের এক পাশে অন্ধারে লুকিয়ে থাকে। মা-বোন গেটের বাইরে  গেলেই, সে আবার দ্রুত ঘরে ঢুকে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। ওদিকে বাড়ির বাইরে কোথাও ওকে দেখতে না পেয়ে, ওরা দু’জন ফিরে আসেন ঘরে। এরপর ঘরে এবং গেটে তালা লাগিয়ে খুঁজতে যান আশে-পাশের বাড়িতে। গেটে তালা লাগানোর আওয়াজ শেষ হওয়া মাত্র, শাহীন খাটের নিচ থেকে বের হয়ে, কিচেন রুমে যায়। ঝটপট সে একটি প্লেটে ভাত-তরকারি নিয়ে আবার চলে যায় খাটের নিচে। ওর মা-বোন আশেপাশের সব বাসা-বাড়িতে ওকে খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে, ঘণ্টাখানেক পর ঘরে ফিরে আসেন হতাশ মনে। এরপর মা-বোন এশার নামায পড়েন। নামাযের সময় আবার ওকে দেখে ফেলে কি না ; এ ভয়ে সে খাটের নিচে একেবারে কোণায় গিয়ে জড়োসরো হয়ে বসে থাকে। সে সুযোগে কয়েকটি মশা তাকে বেশ করে কামড়ে দেয়। মা-বোনকে একটু মজা দেখাবার খেয়ালে সবই নীরবে সহ্য করে সে। নামায শেষে মা ফারহানা আপুকে বলেন,

তুমি খেয়ে এসে শুয়ে পড়ো।

ফারহানা আপু জিজ্ঞেস করেন, মা, তুমি খাবে না?

মা বলেন, শাহীনতো আসবে ঠিকই। আসলে পরে আমি ওর সাথে খাবো। তোমার ততোক্ষণ জেগে থাকার প্রয়োজন নেই। খেয়ে শুয়ে

পড়ো।

ফারহানা আপু তখন বলেন, আমিও তাহলে শাহীন আসলেই খাবো।

“ঝগড়া বাঁধিয়ে ছোট ভাইকে ঘর ছাড়া করে, এখন আবার না খেয়ে রাত জাগবে”! একটু রাগত স্বরে এতটুকু বলার পরই মা আবার স্বর

পরির্তন করে বলেন, এসো, খেয়ে শুয়ে পড়ো। বলতে বলতে মা কিচেন রুমে যান ফারহানা আপুকে খাবার দেয়ার জন্যে। কিন্তু ভাতের

হাঁড়ির ঢাকনা খুলেই তিনি একেবারে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যান! অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন, ভাতের হাঁড়ির দিকে। মার হাবভাব দেখে

ফারহানা আপুও ঘাবড়ে যান। জিজ্ঞেস করেন,

কি হয়েছে মা ! ভাতের হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে আবার অমন করে কী দেখছো তুমি?

মা বলেন, একী কাণ্ড! ভাত নিলো কে? আমিতো এইমাত্র ভাত রান্না করে রেখে গেলাম। এখন ভাতের এ অবস্থা কেনো?

ফারহানা আপুও হাঁড়ি দেখে বলেন, ঠিকইতো! এইমাত্র কে যেনো ভাত নিয়ে গেছে। কিন্তু কে নেবে এভাবে ভাত? আমরাতো ঘর এবং গেটে

তালা লাগিয়েই বাইরে গিয়েছি। এর মধ্যে তালাবদ্ধ ঘর থেকে কে এভাবে খাবার নিতে পারে? এ নিশ্চয় ভূত-টুতের কাজ হবে।

মা বলেন, কিসের আবার ভূত-টুত! ভূতের বুঝি আর কাজ নেই। আমাদের তালাবদ্ধ ঘরের হাঁড়ি থেকে ভাত নিতে আসবে।

শাহীন তখন খাটের নিচ থেকে হাসতে হাসতে জবাব দেয়, ভূতেই নিয়েছে! ভূতেই নিয়েছে! এই যে খাটের নিচে ভূত।

ওর আওয়াজ শুনে ফারহানা আপু প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণেই দু’ ভাই-বোনের দমফাটানো হাসির আওয়াজে ভরে যায় ঘর।

এমনি স্মৃতিচারণের মাঝেই শাহীন শুনতে পায় বারান্দার গ্রিলের তালা খোলার আওয়াজ। এরপর কারা যেনো ফিসফিস করতে করতে বারান্দায় ঢুকছে। রুমের দরজাটা বাইর থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। ছিটকিনি খোলারও শব্দ হলো।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top