Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

“স্বপ্ন”

: | : ১৭/০৭/২০১৩

পদ্মা নদী।নদীর জল এখন স্বাভাবিক। নদীতে সারাদিন এখন অবাধ যাতায়াত ছোট বড় নৌকা,ট্রলার, লঞ্চ কিংবা জাহাজের।নদীর দুপাশে চর।চর গুলো এখন খুব সুন্দর।চর গুলো এখন নানা ধরনের ফসলে ভরপুর।দূর থেকে চর গুলোকে দেখলে মনে হয় টুকরো টুকরো সবুজের সমারোহ।আর চর গুলোতে এখানে ওখানে ঘরে উঠেছে মানুষের বসতি।তারাই ফলিয়েছে এই ফসল।তবে চরের জমি তাদের নিজস্ব জমি নয়।চরের দখলদারদের।যাদের অনেক ক্ষমতা।যারা চরের দখল নিতে মানুষের রক্তে চরের মাটি লাল করে দিতেও পিছপা হয়না।। এই জমি তাদের।।

এপার-ওপার যাত্রী ও মালামাল পারাপার,মাছ ধরা,কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন হল চরের মানুষ গুলোর জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস।কেউ কেউ আবার নদী পার হয়ে একটু দূরে গঞ্জের হাঁট-বাজারে নানা রকম পণ্যের অস্থায়ী দোকান দিয়ে বসে।যেদিন হাঁট বসে সেদিন যার যার জন্য নির্ধারিত জায়গায় কাপড় বা চট বিছিয়ে তার উপর তারা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে।কেউবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে কেউবা আবার শাঁক-সবজি বা মাছ-মাংস বা অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসপত্র।স্থায়ী দোকান দেয়ার সামর্থ্য বা ক্ষমতা এদের কারোরই নেই।থাকবে কিভাবে হাঁট থেকে যা লাভ হয় তার অর্ধেক দিতে হয় হাঁট করতিপক্ষকে।যাদের দয়ায় তারা এইখানে দোকান দিয়ে কিছু আয় করে নিজেদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে পারে।তাছাড়া বিভিন্ন খরচের কথা বলে বিভিন্ন সময় হাঁট করতিপক্ষের লোকজনের পালিত গুণ্ডারাও এইসব দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায়।দিতে না চাইলে মারধর করে।বেশি বাড়াবাড়ি করলে মেরেও ফেলতে পারে। তাই না দিয়েও উপায় থাকে না।প্রতিবাদের ভাষা তাদের জানা নেই।তাই চরের লোকজনের জীবন বড় কঠিন ও নির্মম।।

তেমনি একচরের বাসিন্দা রাশেদ মিয়া।সে কৃষিকাজ করে।চরের দখলদারদের কাছ থেকে বেশ চড়া মূল্যে লিজ নেয়া জমিতে চাষাবাদ করে তার জীবিকা।বিভিন্ন ধরনের শাঁক-সবজি ফলিয়েছে সে।স্ত্রী ও দুইছেলে,দুইমেয়ে নিয়ে তার সংসার।চরে লেখাপড়ার খুব একটা ব্যবস্থা নেই।আর যে দু একটি এনজিও বাচ্চাদের বিনা খরচে লেখাপড়া শিখায় সেখানে গেলে বাচ্চাদের বাবামায়ের ক্ষতি। পড়ালেখায় সময় না দিয়ে শাঁক তুলে,বড়শি দিয়ে বা ছোট জাল ফেলে মাছ ধরে পিতামাতার অভাবের সংসারে এই সব বাচ্চারা বিশাল বড় মাছ ভূমিকা রাখতে পারে।তাই পরালেখা এখানে বিলাসিতা। তাই রাশেদ মিয়ার ছেলেমেয়েদের ও লেখা পড়া হয়না চরের আর দশটা ছেলেমেয়ের মত।তাদের দিন কাটে কৃষিকাজ করে,মাছ ধরে আর শাঁক তুলে।।

এবারের ফলন দেখে রাশেদ মিয়া খুব খুশি।শেষ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলে সে অনেক টাকা বিক্রি করতে পারবে এবার শাঁক-সবজি।সে ঠিক করে যদি ভাল টাকা পায় শাঁক-সবজি বিক্রি করে তাহলে সে তার ঘরের চাল ঠিক করবে। অল্প বৃষ্টিতে ঘরের চাল চুইয়ে জল পড়ে ঘরের ভিতর।কিছুদিন আগে তার স্ত্রী বায়না করেছিল একটা নতুন কাপড়ের।তার স্ত্রীর কাপড় গুলো সব পুরনো-মলিন,ছেড়াফাড়া। স্বামীর কাছে তো সে একটা নতুন কাপড়ের বায়না ধরতেই পারে।তাছাড়া ছেলে মেয়ে গুলোকেও অনেক দিন ধরে সে কোন নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারেনি।পারেনি অনেক দিন ধরে পুরন করতে তাদের কোন বায়না।তাই সে নিয়ত করল ভাল টাকা বিক্রি করতে পারলে এবার সে তাদের চাওয়া পাওয়া যতটুকু সম্ভব পুরন করবে।সে স্বপ্ন পুরনের জন্য দিন গুনতে থাকে।আর মনে মনে কল্পনা করতে থাকে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের হাসিমাখা মুখ।।

দিন যেতে থাকে।আস্তে আস্তে শাঁক সবজি বেচার সময় হয়ে যায়।এবার শুধু রাশেদ মিয়ার না সবার ফলনই ভাল হয়েছে।সবার মনেই কিছু স্বপ্ন কিছু আশা যে ফলস বা শাঁক-সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে কি করবে?এই রকম যখন পুরো চরের অবস্থা তখন চরের দখলদাররা ও তাদের লোকজনরা চরে আসে।তারা চরের ফলন দেখে খুব খুশি হয়।আরও ভাল ফলনের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করে।তারা বলে এই প্রতিটি ক্ষেতের অর্ধেক ফসল বা শাঁক সবজি তাদের দিতে হবে।সাথে সাথে কৃষকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।তারা জানতে চায় তাদের ফলানো কষ্টের ফসলের অর্ধেক কেন দিবে তারা।এই জমি গুলোতে কাজ করেছে তারা।ফসল ফলিয়েছে তারা।যত খরচ লেগেছে সব তাদের।তারা কেন অর্ধেক ভাগ দিবে।দখলদাররা বলে এই চর দখলে রাখতে ও চরের মানুষ ও ফসলের নিরাপত্তা দিতে অনেক টাকা খরচ হয়।সরকারি লোকজন ও স্থানীয় মন্ত্রি-এমপিদের ও অনেক টাকা দিতে হয়।টাকা কি তারা নিজের পকেট থেকে দিবে নাকি?সেই টাকার বন্দোবস্ত এই চরের লোকজনকেই করতে হবে।।

চর উত্তাল হয়ে ওঠে দখলদারদের কথা শুনে।তারা দখলদারদের লোকজনের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে চায়।দখলদারদের লোকজন ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে।মারতে থাকে  যাকে সামনে পায় তাকে।মুহূর্তেই প্রতিবাদী জনতা শান্ত হয়ে যায়।তারা জানে এটা সতর্কবাণী।এর পর গুলি চলবে তাদের উপর।তারা মেনে নেয় দখলদারদের অন্যায়-অবিচার।কি করবে এরা?দখলদারদের কাছে যে এরা জিম্মি।প্রতিবাদ করে কেউ রেহাই পায়না এদের কাছ থেকে।তাছাড়া প্রতিবাদ করে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রাণটা তারা হারাতে পারবেনা।।

রাশেদ মিয়াও শান্ত হয়ে যায় সবার মত। সে হাঁটতে থাকে তার ঘরের দিকে।তার পা দুটো যেন ঠিক চলছেনা।তবুও হাঁটছে সে।তার মনের অজান্তে তার দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে জল।সেই জলে মুছে যাচ্ছে তার সব স্বপ্ন।মুছে যাচ্ছে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের হাসিমাখা মুখ……

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top