একটি প্রেমের অপ্রেমের কবিতা
মেয়ে প্রেমে পড়েছে বলে
মা রাগ, বাবা বেজায় অখুশি;
মেয়ে ভীত পায়ে দাঁড়ায় গিয়ে জানালার পাশে
কখন সে এসে দাঁড়ায় বাড়ির পাশে হাস্নাহেনার তলায়।
অথবা ক্লাশরুম হতে অদূরে যেখানে আছে বৃদ্ধ করই গাছটি
সেখানে ছুটে যায় মন দেখে সে তাকিয়ে গাছের বাজপাখির বাসায়।
বাবা মাকে বলে এভাবে আর কতদিন মান ইজ্জত তো গেল!
মা বলে পাখি আর উড়বে কয়দিন, দুইদিন বাদেই
পুরবো খাঁচায় বারান্দায় টানানো ময়নাটির মত!
তা দেখ যেন পাখি আবার যায় না পালিয়ে?
বাবা ভয়ে ভয়ে বলে আশ্বাসের আশায়।
সে আমার মেয়েকে আমি চিনিনা!
সে তেমন করবেনা কোনদিন।
মেয়ে ভয়ে থাকে। মাঝে মাঝে তার
কোন কোন বান্ধবী এসে জানায় মা নাকি
তার মাকে বলেছে তার কোন এক সমন্ধের কথা।
কিন্তু মেয়েকে কিছু বলে না কেউ। সবে উড়তে শেখা
পাখির ছানার মত উড়ে সে ভীত হয়ে কিন্তু চঞ্চল গতিতে,
কখনও বা সবে পাহাড় হতে উৎপন্ন হওয়া ঝর্ণার মত ছূটে সে
ঝর্ণার মত তারও জানা নেই কোথায় শেষ হবে ছুটে চলার পথ।
বাবা চিন্তিত কিভাবে বলা যায় মেয়েকে সে কথা! মা বলে,
সে আর চিন্তার কি, সে আমি বলব নে কোন এক দিন।
মেয়ে যখন জানতে পারে আর কটা দিন বাদেই বিয়ে,
সে ছুটে যায় তার কাছে বলে, কি করব এবার?
চলো চলে যাই দূরে, বহুদূরে; যেখানে
আর কেউ আসবেনা বাঁধা দিতে,
যেখানে চৈত্রের দুপুরে উরন্ত চড়ই
এসে বসবে উঠানে, বর্ষার ভেজা কাক,
অথবা পাশের ডোবায় শরতে থাকবে ফুটন্ত পদ্ম।
আর যখন বারান্দায় এসে বসবে পায়রার ঝাঁক তখন
তোমার খুশি দেখে নাচবে প্রজাপ্রতির ছায়া। মেয়ে বলে উঠে
সেকি কি সম্ভব তুমি আমি চলে যাব দূর-বহুদূরে; যেখানে আসবে
উত্তরের তুফান বাঁশঝার কাঁপিয়ে, দূরে যাওয়া পাখি বাড়ি ফিরবে
পাখার শব্দ করে! সেখানে কি রাতের শিশির ঘাসের উপর
রেখে যাবে বিদায়ের অশ্রু! আর সে অশ্রু বিন্দু মুক্তা
হয়ে দেখা দেবে বলে সূর্যের আলোয়, ভোরের
দোয়েল ঘুরে ঘুরে বেড়াবে যেখানে!
দিন যায়, হয়ে যায়
চলে যাবার পুরো আয়োজন;
স্বপ্নে বিভোর হয় মেয়ে, চলে যাবে
তার সাথে হাতে হাত রেখে প্রজাপতির মেলায়।
বাবা বলে বলছো তো মেয়েকে? মা হাসে বলব তো,
না বলে তো বিয়ে হবে না। যেভাবে পারো রাজি করিও
না হলে থাকবেনা আর মান ইজ্জত। মা আসে মেয়ের ঘরে বলে,
দুখিনি বাবা মা তোর, যখন গর্জে উঠেছিল বৈশাখী ঝর বিকট শব্দে
চারদিক ভয়ানক অবস্থা। তুইও চিৎকার করে উঠলি, মার বুকে এসে
থামল কান্না। অথবা ভয়ংকর কালা জ্বরে তোর মরার মত অবস্থা,
তোর বাবার সেকি তোকে হারানোর ভয়, বার বার কেঁদে উঠত
তোকে বুকে নিয়ে। আর এখন তোকে চলে যেতে হবে বলে
আমার বেরেছে তোর বাবার হার্ট এটাকের ভয়।
তুই কিছু করে বসিছ না মা। যাতে তুই
হয়তো ভাল থাকবি তোর বাবা
মরবে ইলিশ মাছের মত।
না, মা চিন্তা কর না কোন;
এমন কিছু করব না আমি যাতে
ব্যাথা পাবে বাবা। রক্তের বন্ধন কি
ছোট করা যায় অন্য কোন কিছু দিয়ে!
তাই কিভাবে ব্যাথা দেব আমি তোমাদের?
শেষে মা বিদায় নেয় হাসি মুখে, ব্যাথায় ডুবে থাকে
মেয়ে। না, সে পারবে না এভাবে কষ্ট দিতে পিতা মাতাকে
সে কল্পনায় সাজানো বাসর থাক চিরকাল স্বপ্নের মত ক্ষনিকের।
দিন যায়, আকস্মাৎ জলোচ্ছাসে সমুদ্রে গঠিত হয় নতুন দ্বীপ।
আর ভেঙ্গে যায় পুরোনো সব কিছু। চলে দিন সেভাবে,
যেভাবে নতুন দ্বীপে শুরু হয় নতুন জীবন।
আর যেমনি নতুন দ্বীপে চলে ঝরের
আঘাত, ঝর বয় প্রতিনিয়ত।
তার পরও যায় দিন।
ধীরে ধীরে চারদিক মানিয়ে
নেয় জীবন নতুন তৈরি বাস্তুতন্ত্রে।
একদিন মেয়ে যখন তাকিয়ে আছে দুরের
রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া তারের দিকে দেখল,
জোড়া ঘুঘু বসে আছে আকাশের দিকে চেয়ে, যেন তারা
তন্ময় দেখছে মেঘের রুপ অথবা মেঘলা বেলা পাড় করছে তারা
যেন প্রিয় স্মৃতি হয়ে থাকে তা। এমন সময় দেখল কারা যেন
চলে যাচ্ছে হাতে হাত রেখে, তার মনে হল এ সে যার
রচিত স্বপ্ন বাসর আজ শুন্য আকাশে শুধু ভাসে,
যার সাথে দূরে চলে যাওয়ার কথপকথন
বাতাসে বতাসে ধবনিত হয়
ব্যাথার কোন গান হয়ে।
সে কথা, সেই হাসি আজ
অন্য কোনখানে, অন্য কারো সাথে;
চলে যায় তারা হাতে হাত রেখে দূর হতে দূরে,
মেয়ে তাকায় শুন্যে, দেখে জোড়া ঘুঘুও উড়ে চলেছে।
শুধু তার দাঁড়িয়ে থাকা, শুধু তার দূর হতে দেখা।
আসে কাল বৈশাখীর ঝর, এসে বদ্ধ ঘরে
বসে থাকে সে একা একা।
রাত আসে, অন্ধকারে জ্বলে না
দ্বীপশিখা কোন। অগ্নিগিরির লাভার মত
ব্যাথাভরা অনল বহে হৃদয়ে তার;
শান্ত শীতল ঝর্ণা কবে
বহিবে আবার?
আর কতকাল রবে
মিথ্যে ভালবাসা জড়িয়ে
বাঁচা। আর কতকাল মিথ্যে
সম্পর্কের মায়াজালে পাড় করে দেয়া
পুরোটা জীবন ধুকবে চিতার আগুনে জ্বলা
স্বতী লক্ষীর মত। ভাবে মেয়ে এভাবে
বাঁচার মুল্য কোথায় হীন মানবতার
বন্ধনে বাঁচিয়ে রাখা দেহটারে
মেরে আমার হৃদয়।
তাই আমার শাড়ির
আচল সবচেয়ে প্রিয় হোক।
মৃত্যু এসে নিয়ে যাক
সব কষ্ট সুখ।
০৪.০৬.১৩, ঢাকা।