Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-১১)

: | : ১৯/০৭/২০১৩

॥ কামালদের পরিবার ॥

শাহীনের মুখে স্বপ্নের কাহিনী শোনার পর কয়েক রাত পর্যন্ত তার ঘুমের সাথী কামালও আর আগের মতো ঘুমায় না। মৃত্যু-ভয়ে দীর্ঘ রাত পর্যন্তবিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ গড়াগড়ি করে। এমনি এক রাতে শাহীন লক্ষ্য করে কামাল তার বিপরীত দিকে কাত হয়ে শুয়ে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদার পর এপাশ-ওপাশ গড়াগড়ি যাচ্ছে আর দুঃখভারাক্রান্ত চেহারায় কিছুক্ষণ পর পর লম্বা নিঃশ্বাস ফেলছে। শাহীন আগেই জিজ্ঞেস করে জেনেছে কামালের জন্মের দ্বিতীয় বছরই তার মা মারা যান এবং এরপর ঐ বছরই তাদের বাড়িও নদীভাঙ্গনের শিকার হয়। মা-হারা এ ছেলেটিকে শাহীন প্রথম দিনই তার মনের মধ্যে বন্ধুত্বের স্থান দিয়েছিলো। তার প্রতি  সে দরদও অনুভব করে সর্বদাই। কামালকে কাঁদতে এবং লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে শাহীন ভাবছে কামালের হয়তো মা-বাবার কথা মনে পড়েছে। এমতাবস্থায় শাহীনের কৌতূহল জাগে কামালের পুরো অতীত শোনার। তাই সে কামালকে বলে তার অতীত কাহিনী শোনাতে। কামাল তখন স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে নিজের দেখা এবং বাবার কাছে শোনা তার দুঃখের দীর্ঘ কাহিনী শোনায় শাহীনকে।

কামালের জন্ম নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার শেষ প্রান্তে দুর্গম চর এলাকায়। ওখানে মেঘনা নদীর পাড়ে ছিলো ওদের সাজানো ছোট্ট বাড়ি। বাড়ির পাশে কিছু ফসলের জমিও ছিলো তাদের। তার বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সুঠামদেহী পরিশ্রমী কৃষক। একজোড়া হালের বলদ ছিলো তাঁর। এ দিয়ে নিজের জমিসহ অন্যদেরও কিছু জমি চাষ করতেন তিনি। এছাড়া বর্ষাকালে মাছ ধরে বিক্রি করেও বেশ রোজগার করতেন। কামালের মা তাছলিমা বেগম ছিলেন স্বামী-সংসারের প্রতি নিবেদিত-প্রাণ গৃহিনী। তাঁদের বিয়ের দ্বিতীয় বছরেই কামালের জন্ম। কামালের জন্মের পর তাছলিমা বেগম আরো বেশি মনোযোগী হয়ে সুন্দর করে সাজাতে থাকেন সংসার। ঘরের আশেপাশে শাক-সবজির চাষাবাদ করে এবং হাঁস-মুরগী লালন-পালন করে জমাতে থাকেন টাকা। কিন্তু আবদুল করিম ভালো রোজগার করলেও সঞ্চয়ী ছিলেন না। দু’হাতে রোজগার করে, দু’হাতেই খরচ করে ফেলতেন। তবে স্ত্রী তাছলিমার সঞ্চয়ের বিষয়টি তিনি ঠিকই লক্ষ্য করতেন ; আর মনে মনে হাসতেন।

এক দিন বিকেলে আব্দুল করিম মাঠ থেকে গরু দু’টি দেখে এসে ঘরে ঢুকেন। ঢুকেই দেখেন, তাছলিমা তার শিশু-পুত্র কামালকে কোলে নিয়ে বসে অনেকগুলো টাকা গুণতেছেন। আবদুল করিম টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে খুশি মনে প্রশ্ন করেন,
কিগো, ব্যাংকের হিসাব মিলাইতেছো না কি?
“হ, ব্যাংক অইতো ; এইডা অইলো আমরার কামাল মিয়ার ব্যাংক” বলেই তাছলিমা হাসতে হাসতে শিশু কামালের হাতে দেন টাকাগুলো।
শিশু কামাল মায়ের কোলে শোয়া অবস্থায়ই তার কঁচি হাত দু’টি বাড়িয়ে দেয়, টাকাগুলো ধরার জন্যে। কিন্তু হাত কাঁপতে কাঁপতে এদিক-
সেদিক সরে যায়। ধরতে পারে না টাকা। আবদুল করিম এ দৃশ্য দেখে বলেন,
¬ কই, ধরতে তো পারে না।
তাছলিমা জবাব দেন, সময় অইলেই পারবো।

ঐ রাতে বিছানায় শুয়ে তাছলিমা তাঁর স্বামীকে বলেন, আপনেতো আমার কয়ডা টেয়া-পয়সা জমানি দেইখা কন, “আমি ব্যাংক বানাইয়া লাইছি।” পোলাডার লেহাপড়ার চিন্তা কইরা অই টেহা কয়ডা জমাইতাছি। লেহাপড়া না শিহাইলে তো আমনেরার মতো দিন-রাইত জান মাইরা খাডুন লাগবো। আর লেহাপড়া শিহাইতে অইলে তো শহরে দিওন লাগবো। শহরে দিলে অনেক টেহা-পয়সা লাগবো। হেবলা কই পাইবেন টেহা-পয়সা? এই কথাগুলো বলেই তাছলিমা পাশে ঘুমন্ত শিশু কামালের কপালে একটি চুমু খায়। এমনিভাবেই চলছিলো মেঘনা পাড়ের পল্লী গাঁয়ের পাখি-ডাকা সবুজ-শ্যামল পরিবেশে ওদের সুখের সংসার।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top