“প্রতিশোধ”
প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা হয়ে গেল নীলার বাসার সামনের রাস্তায় অস্থির ভাবে হাঁটাহাঁটি করছে প্রান্ত।মাঝে মাঝে কোনাকোনি দূরে অবস্থিত চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে নিচ্ছে আর বাড়ির সামনে থাকা লাম্প পোস্টের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে বাড়ির জানালা গুলো দিয়ে বাড়ির ভেতর টা দেখার চেষ্টা করছে,কেউ কিছু তাকে বলতে চাইছে কিনা বা কোন সংকেত ইত্যাদি ইত্যাদি। না সেই রকম কিছুই হয়নি এই পাঁচ ছয় ঘণ্টায়। এর মধ্যে নীলাকে সে কম করে হলেও পঞ্চাশ বার ফোন দিয়েছে কি ব্যাপার সব ঠিক আছে কিনা জানতে।প্রতিবার নীলার উত্তর প্রায় একই।।
-সুযোগ পাচ্ছিনা,বা “এইতো আসছি”বা “বুজোই তো কাজটা সোজা না” ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু গত ঘণ্টা দুয়েক ধরে নীলা তার ফোন ধরছে না।কিছু তো একটা জানাবে বা বলবে।নাকি??আর এদিকে প্রান্তর অবস্থা খারাপ।ভালোবাসার জন্য মানুষ কি না করতে পারে?আর নয়ত কেউ কি একটা অপরিচিত এলাকায় এভাবে একা একা পাঁচ ছয় ঘণ্টা ধরে দাড়িয়ে থাকে তার প্রেমিকা কে বাসা থেকে নিয়ে পালাবার জন্য।। তবে সে এত দেরি করছে কেন এটা এখনও প্রান্ত বুজতে পারছে না।নীলা কি ধরা পরে গেছে বা কিছু হয়েছে?তাহলে তো তাকে একটা ফোন দিবে বা জানালা দিয়ে কোন সংকেত।।কিন্তু এই পাঁচ ছয় ঘণ্টায় নীলা একবার ও জানালার কাছে আসে নি।কিন্তু কেন??সে কিছুই বুজতে পারছে না।
নীলার সাথে তার পরিচয় ফেসবুকে।ফেসবুকে তাকে দেখেই ভাল লাগে প্রান্তর।এর পর অনেক কষ্টে নীলাকে পটায় প্রান্ত।প্রায় দু মাস সময় লেগেছে তার নীলাকে পটাতে।এর পর মোবাইলে কথা হত রেগুলার।দেখা ও হয়েছে দু দুজনের পাঁচ ছ বার।এখন তাদের রিলেশনের বয়স চার মাস।নীলাকে প্রান্ত এত ভালবেসেছে যে প্রান্ত বার বার চাচ্ছিল তাকে তার মার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।কিন্তু নীলা রাজি হচ্ছিল না।এমনকি প্রান্তকে নীলা তার বাসা টা ও চেনায় নি।বলে যে কেউ দেখলে সমস্যা হবে তাই ওকে নিয়ে বাসার আশে পাশে যাওয়া যাবে না চেনানো তো দূরে থাক।যাই হোক,ভালই যাচ্ছিল সব কিছু।কিন্তু হটাত একদিন নীলা জানাল তার বিয়ের কথা চলছে।সে বাসায় প্রান্তর ব্যাপার টা বলতে পারবে না।যা করার প্রান্তকেই করতে হবে।এদিকে প্রান্ত নীলাকে ছাড়া বাচবেনা।তাছাড়া সে তার মাকে মেনেজ করতে পারবে।তাই নীলাকে নিয়ে বাসা থেকে পালানোর প্লান করে সে।একবার বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক করতে পারবে এই ভেবে।।কিন্তু নীলার কোন খবর নেই।এদিকে রাত এখন প্রায় এক টা।
প্রান্তর দিকে নীলার বাসার আশে পাশের দোকানদার গুলো কেমন যেন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে এখন।প্রান্তর ও কেমন যেন ভয় ভয় করছে।হটাত নীলার ফোন।প্রান্ত বলল,
-কি ব্যাপার নীলা ফোন ধরনা কেন?কিছু তো বলবা এতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি।একবার তো জানালার কাছে ও আসতে পারতা,নাকি?
নীলা বলল,
-হায়রে আমার প্রেমিক সাহেব,আপনে কি এখনও আপনার শশুর বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছেন?তারা কি আপনাকে ভেতরে নিয়ে যেয়ে আপ্যায়ন করেনি?
প্রান্ত বলল ,
-মানে?
নীলা বলল,
-মানে কিছুই না,তুমি আমাকে ফেসবুকে দুমাস যে জ্বালানটাই না জ্বালিয়েছ তার একটা সুন্দর প্রতিশোধ নিলাম।ফেসবুকে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই শুধু প্রেম করতে মন চায় না?আশা করি ভাল শিক্ষা হয়েছে তোমার।আর চার মাসের প্রেম মনে কর দু মাসের সধনার ফলাফল যা দুমাস বেশি পেলে।
এইবলে নীলা ফোন টা কেটে দিল।এর পর প্রান্ত ফোন করলে নাম্বার টা বন্ধ পায়।নাম্বার টা আর খোলা পায় না।বাড়ি এসে ফেসবুকে লগিন করল নীলাকে কিছু বলার জন্য কিন্তু দেখল ওকে ব্লক করে নীলা তার আইডিটা ডিএক্টিভ করে রেখেছে।।
প্রান্তর বুক জুড়ে তখন কষ্ট আর হতাশা।সে মনে মনে ভাবতে লাগল মেয়েরা সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য বুজে না।তারা সব ছেলেকেই এক পাল্লায় মাপে।তাই নীলা ও প্রান্তকে বুজতে পারেনি।নীলার কাছে ও প্রান্ত ছিল আর দশটা ছেলের মতই প্রতারক।যারা সুন্দরী মেয়েদের পিছন পিছন ই শুধু ঘুরে।যাদের কাছে প্রেম ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই না।।