Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

পকেটমার অথবা ঘুষ নেবার গল্প

: | : ২২/০৭/২০১৩

জহির সাহেব একটা সরকারি চাকরি করেন। আর সামনে ফাইলের স্তুপ । মোটামুটি পাহাড় বলা যেতে পারে। এর কোনটা বহুদিন ধরে পরে আছে । তবে তাতে তার কিছু যায় আসে না। টাকা ছাড়া কিছুতেই এইসব ছাড়া যাবে না।

জহির সাহেব অফিসের চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছেন। শরীর একেবারে ছেড়ে। মুখে পান দিয়েছেন । অবশ্য সারা দিনে এই কর্ম অসংখ্যবার করতে হয়। তার একটা বাহারি পান রাখার কৌটা আছে। সেখানে কয়েক রকমের ঘরে মশলা পাতি রাখা। যদিও এখন কাজের সময় , আর অফিসে চাপ ও আছে তার পরেও তিনি এইভাবে বসে আছেন । এরকম কাজ ফাঁকি আজকাল তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । তার সহকর্মী কেউ আর এটা কিছু মনে করেন না । জহির সাহেবের দুটা চার তলা বাড়ি রয়েছে । গ্রামের বাড়ীতে একটা আর একটা উত্তরায় । একটা গাড়ি।  তিনি অবশ্য অফিসে গাড়িতে আসেন না । কারণ যদি অফিসে গাড়ি চড়ে আসেন তবে সহকর্মীদের অনেকেই অনেক কথা বলবে । সে কথা তো আর তিনি থামাতে পারবেন না। এমনিতেই অফিসের সবাই তার সম্পর্কে নানা কথা বলে । তার নাকি সাইডের জোর অনেক বেশি । এজন্যই ঘুষ খেয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া সত্তেও কেউ তার টিকিটি ছুঁতে পারেনি । অফিসের সবাই তাকে মোটামুটি ভয় করে । এমন কি যে বস কয়দিন আগে বদলি হয়ে গেলো তিনিও তাকে ঘাঁটাতেন না । কারণ ঐ একটাই খুঁটির জোর। অবশ্য এই খুঁটির কাছেও মাঝে মাঝে অনেক উপহার পাঠাতে হয় আর তার দাম নেহায়েত কম না। তাছাড়া নতুন একটা বেবসা ধরেছেন । সেখানেও প্রচুর ইনভেস্ত করতে হচ্ছে । ফলে ঘুষ ছাড়া আর উপায় কি!

তার চোখ দুটো বন্ধ। পা দুটো নাচাচ্ছেন । এটা হতে পারে খুব চিন্তায় আছেন আবার আনন্দের কিছু ঘটেছে । সম্ভবত চিন্তায় আছেন। বড় ধরনের চিন্তা। করেন। সামনে কয়েকটা ফাইল  খোলা। তার পাশের টেবিলে কাজ করে সোহেল। অল্প বয়সী। এই ছেলেটার কাছ থেকে তিনি

চাকরি বাবদ তিন লাখ নিয়েছিলেন। নগদ পুরোটাই । সেজন্য তার কোন আফসোস নাই। এই বাজারে চাকরি পেতে গেলে এটা তো খুব সামান্য টাকা! তিনি অবশ্য মাঝে মাঝে সোহেলকে শুনিয়ে বলেন’ আজকাল কি আর সততার যুগ রে ভাই? এখন হলো দখলের যুগ। যে যত পারে গুছিয়ে নেয় । আপনি যুবক মানুষ। এই বয়সে কতরকম সাধ আহ্লাদ থাকে। কতো জায়গায় যাবেন । তা না করে ফাইলে মুখ গুঁজে সারাদিন কাজ করে যান। লাইফটা একেবারে হেল করে ফেললেন রে ভাই। “ সোহেল সব বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলে না। ভয় । চাকরি হারানোর ভয়। এদের আজকাল অনেক ক্ষমতা । অনেক উঁচু মহলে এদের ওঠাবসা।

মাস খানেক ধরে জহির সাহেব বেশ অসুবিধায় আছেন। অফিসে নতুন বড়সাহেব এসেছেন । ঘুষ নেওয়া প্রায় বন্ধ। তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। একেবারে চেপে ধরেছেন। সোহেল অবশ্য খুশী । এরকম একজনকেই তিনি চাইছিলেন। বলতে গেলে জহির সাহেব এখন চিপার মধ্য পরে গেছে।  এজন্য অবশ্য সকাল বিকাল বড়সাহেবকে গালমন্দ দেন । মনে মনে।

এবার তিনি একটু নড়ে চড়ে বসলেন।

গলা একটু উঁচু করে সোহেলকে বললেন ” ঐ পার্টি কখন আসবে?”

কোন পার্টির কথা বলছেন? ”

ঐ যে যার ছেলেটা এখানে চাকরির জন্য ঘুরছে”

সোহেলের মনটা একটু খারাপ হলো । একটা গরীব ছেলে তার কাছ থেকে টাকা নিতে হবে কেন? জহির সাহেব তার সোহেলের মতই তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিতে চেয়েছেন । এবার আরও বেশি ।  সোহেল তার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করেছিলো । কিন্তু  তিনি খেঁকিয়ে উঠেছিলেন ।

” ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির , যা  করি চুপচাপ দেখে যাও । পছন্দ না হলে চোখ বুজে থাকো । মুখ খোলার চেষ্টা করে লাভ নাই। আমি হইলাম সেই জিনিস।”

এরপর সোহেল আর কিছু বলেনি।মনে মনে শুধু বলেছে “শালার ঘুষখোর”।

ছেলেটির আজ টাকা আনার কথা ।  বাইরে কোনো এক জায়গা ঠিক করা হয়েছে। অফিস তো আর নিরাপদ না। সারাক্ষণ ফেউ লেগে আছে। আবার বেশি জানাজানি হলে ভাগ দিতে হবে। দুপুরের দিকে জহির সাহেবের কাছে একটা ফোন এলো। ওনার মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেলো । পিক করে পানের রস টেবিলের নিচে ফেললেন । যদিও পাশে কৌটা রাখা আছে।  উনি বাইরে চলে গেলেন। ঘণ্টা খানেক বাদে উনি ফিরে এলেন। মনটা বেশ খুশি খুশি । গুন গুন করে গান গাচ্ছেন । বাংলা না হিন্দি গান।   চোখ ঘুরিয়ে একবার সবাইকে দেখে নিলেন । তার উল্টো দিকের টেবিল থেকে শুধু একজন বললেন “ দুপুরে কি বিরিয়ানি খেলেন?”

জহির সাহেব কোন উত্তর না করে আবার পা নাচানোর ভঙ্গি করলেন। তবে এবার খুশী হয়ে । তার চোখ দুটো চকচক করছে। মনে মনে ঠিক করে ফেললেন আজ কি কি মার্কেট করবেন। ঠিক কোন মার্কেট থেকে কেনাকাটা করবেন।

অফিস থেকে তিনি সোজা  একটা বাসে উঠলেন।   টাকা গুলোর কিছু হাতব্যাগে আর কিছু পকেটে । কিছু মার্কেট করে বাকি টাকা কাল ব্যাংকে রাখবেন।

একটা বড় শপিং মলের সামনে তিনি বাস থেকে নামলেন ।  মার্কেটে ঢুঁকে প্যান্টের পকেটে হাত দিলেন। হাত দিয়ে তিনি চমকে উঠলেন। পকেটটা কাটা। নিচ দিকে ঝুলছে। এরপর তিনি তার হাতব্যাগের চেইন খুললেন । এ কি! নিচে ফাঁকা । জহির সাহেবের মুখ শক্ত হয়ে গেলো । মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো “শালার পকেটমার”।

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top