দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-১৫)
॥ গ্রাম ছেড়ে শহরে ॥
সানিয়া একদিন আবদূল করিমকে বলেন শহরে গিয়ে দেখতে, একটা চাকরি-টাকরি ঠিক করতে পারেন কি না। আবদুল করিমও মনে মনে এমন চিন্তাই করছিলেন। সানিয়ার মনোভাবও এমন দেখে, পরদিনই তিনি ইঞ্জিনের নৌকায় চড়ে নরসিংদী শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। নৌকায় সহ-যাত্রী হিসেবে পেয়ে যান পূর্ব পরিচিত নরসিংদীর একজন চাররিজীবীকে। তাঁর সাথে পরামর্শ করেন আবদুল করিম। তিনি আবদুল করিমকে একটি টেক্সটাইল মিলের ঠিকানা দিয়ে সেখানে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন। ঠিকানা মতো গিয়ে আলাপ করার পর আবদুল করিমের চাকরি হয়ে যায় সে টেক্সটাইল মিলে। বাড়িতে ফিরে সানিয়ার সাথে পরামর্শ করে, আবদুল করিম চলে আসেন নরসিংদী। এক বছর কঠোর পরিশ্রমের পর দেখেন খেয়ে-পরে কিছু টাকা তাঁদের সঞ্চয় হয়েছে। ওদিকে সানিয়াও বাড়িতে হাঁস-মুরগী লালন-পালন করে কিছু টাকা জমা করেন। কঠোর পরিশ্রমী আবদুল করিমের পরের বছরই বেতন কিছুটা বেড়ে যায়। এতে কাজের প্রতি তাঁর উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। তৃতীয় বছরে তাঁর বেতন আরো বাড়ে। তিন বছরে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় করেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে। সে টাকায় শহরতলীতে দু’কাঠা জায়গা কিনে ফেলেন। এরপর খালেক মাতবরের বাড়ি থেকে তাঁদের ঘরটি ভেঙ্গে নিয়ে এসে তোলেন সে জায়গায়। তাঁরা সবাই চলে আসেন নরসিংদীতে। কামালকে ভর্তি করে দেন শহরতলীর একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে, পঞ্চম শ্রেণীতে।
গ্রাম থেকে শহরে নিজেদের বাড়িতে আসতে পেড়ে এবং শহরের পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি হতে পেরে কামালের খুব আনন্দ হয়। তার আগের স্কুলের তুলনায় এ স্কুল যেমনি বড় এবং ছাত্র-ছাত্রী বেশি ; তেমনি লেখাপড়ার মানও কিছুটা ভালো। অজপাড়া গাঁয়ের স্কুল থেকে আসা কামাল প্রথম পরীায় কাসে প্রথম হতে না পারলেও ফলাফল ভালোই করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীায় এখানেও সে প্রথম স্থান অধিকার করে। এতে এ স্কুলের ছাত্র-শিকদের কাছেও সে ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। কিন্তু সৎ মায়ের অবজ্ঞা-অনাদরে তার মানসিক অশান্তি থেকেই যায়। ওদের বাড়ির আশে-পাশের আরো কয়েকটি ছেলে-মেয়ে ওর সাথে পড়তো। ওদের বাসায়ও সে যায়। কিন্তু সে তার মায়ের ভয়ে পারে না ওদের কাউকে নিজের বাসায় আনতে। এ জন্যে তার মনে দুঃখবোধ জন্ম নেয়। এ ছাড়া ওদের বাসায় গিয়ে ওদের মায়েদের আদর-সোহাগ দেখেও তার দুঃখ আরো বাড়তে থাকে। একাকী সময়ে সে এসব নিয়ে ভাবতে থাকে। ঐ বছরেরই শেষের দিকে একদিন স্কুল থেকে বাড়িতে আসার সময় এমনি ভাবনার মাঝে অপহরণকারীদের শিকার হয় কামাল।