Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

আমাদের ফেলুবাবু

: | : ২৯/০৭/২০১৩

অবশেষে আমাদের ফেলু বাবু পাশ করিয়া ফেলিল । তাও আবার শুধুমাত্র পাশ ! একেবারে মেডেল সহকারে। আজিকালকার যুগে পাশ করা আর এমন কি। কিন্তু ফেলু বাবু বলিয়া কথা ! এই ফেলু বলিতে কিন্তু আপনারা আবার সেই গোয়েন্দা ফেলুদা ধরিয়া বসবেন না । ইহার মাথা ঐ গোয়েন্দার ধার কাছ দিয়েও যায় না । বলা চলে কিছু প্রাণীর মাথার সাথে তুলনা করা চলে । ফেলুবাবু এহেন ফলাফল করাতে গ্রাম জুড়ে একটা হৈ চৈ পরে গেলো এবং আমরা যারা প্রথম শ্রেণীর ছাত্র বলিয়া এতদিন গণ্য হইতাম তাদের লোকজন কেমন একটা সন্দেহর চোখে দেখিতে লাগিল । এর অবশ্য কারণ আছে যেখানে ফেলুর মতো গবর গণেশ মেডেল পায় সেখানে আমরা কিনা সাধারন পাশ! মোটামুটি চারিদিকে ছি ছি পড়িয়া গেলো । ফেলুবাবুর গর্ভধারিণী গ্রামময় প্রচার করে বেড়াল যে তাহার সন্তানটিকে এতদিন পাড়ার মানুষে নষ্ট করিয়াছিল এবং তিনি অনেক তাবিজ কবচ সহকারে তাহার সুপুত্রকে এই বিষ দৃষ্টি হইতে মুক্ত করিয়াছেন । যার ফল হিসেবে এই ভালো ফলাফল । ফেলুর রেজাল্ট শুনে প্রথমে আমার , পরে গণেশের আর  কার্তিকের চোখ প্রথমে ছানাবড়া এবং পরে ওর মার্ক হাতে পেয়ে সবার চোখ কপালে উঠে গেলো । আর ফেলু দা? সে এমন ভাব করিয়া গ্রামে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল  যেন ইচ্ছা করিয়া আমাদের এতদিন ছাড়িয়া দিয়াছে । আসলে তাহার আই কিউ কোন নামকরা বিজ্ঞানীর কাছাকাছি । আপনারা হয়তো জানেন  না এ সেই ফেলুবাবু যে ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে প্রমোশন পাইবার জন্য বছর তিনেক জোর চেষ্টা চালাইয়াছে এবং আমরা তখন ক্লাস থ্রি । আমরা যখন ক্লাস ফোরে তখনো তিনি সেই সিক্স । এরপর আমরা প্রাইমারীর সর্বশেষ ধাপ ফাইভে উঠে গেলাম সেবারও ফেলুদা মন খারাপ করে সিক্সেই থেকে গেলো । এবং এই গ্রামের মানুষই তাহার নাম বদল করিয়া ফেলু রাখিয়া দিলো । অতএব নিয়ম মতো আমরা ফেলুবাবুর সহপাঠী হইয়া গেলাম । তাহাকে নিয়া মাঝে মাঝেই হাসাহাসি করিতাম তবে কোন দিন মুখ খুলিয়া কোনোদিন একটা শব্দ উচ্চারন করেন নাই ।

 

এহেন ভরাডুবির পর আমরা  আর স্থির হইয়া বসিতে পারিলাম না । আমি , গণেশ আর কার্ত্তিক ছুটিলাম তার বাড়ি । পৌঁছে দেখি ফেলুবাবু হাসি হাসি মুখ করিয়া বিছানার উপর বসিয়া আছেন । আমাদের সমাদরে বসাইলেন । আমাদের তখন তাহার গোপন রহস্য জানিবার দুর্নিবার আখাঙ্খা চাপিয়া বসিয়াছে । আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করলাম ফেলুদা তোমার ফলাফলের পেছনে কি এমন ইতিহাস আছে যে একেবারে আমাদের ছাড়িয়ে গেলে।  প্রথমে ফেলুদা একটু আমতা আমতা করলো কিন্তু আমাদের পিড়াপীড়িতে আর থাকিতে না পারিয়া রাজ্যর দেবদেবীর দোহাই দিয়া গোপন কথা বলিতে সম্মত হইলেন। তোদের মনে আছে পরীক্ষা শুরু হইবার দিন পনের আগে একদিন স্কুলে চোর চোর রব উঠেছিলো । আমরা বলিলাম মনে আছে । মনে হইলো পরীক্ষা শুরুর পনেরো দিন স্কুলে গিয়ে শোনে চোর ঢুকেছিল হেডমাস্টারমশাইয়ের রুমে । তবে কিছু খোয়া যায়নি । ফলে বিষয়টা কয়েকদিনেই চুপচাপ হয়ে যায় । সেদিন আমিই ঢুকেছিলাম । দারোয়ানকে কড়া নেশা খাইয়ে আমি প্রশ্নপত্র চুরি করেছিলাম । যার ফলে আমি মেডেল পেলাম আর তোরা । আর একটা প্রশ্ন ফেলু দা। ফেলুদা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন । চাবি কোথায় পেলেন । তোরা মনে করে দেখ এই চাবিও কয়েকদিন আগেই হারিয়েছিল । চুরির পরের দিন আবার সেটা ফেরত পাওয়া যায় হেড মাস্টারের টেবিলের তলায়। আমরা তখন ফেলুবাবুকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করিলাম না । তবে সাহসের প্রসংশা করা করিতে ভুলিলাম না ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top