দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-১৬)
॥ কিভাবে অপহৃত হয় কামাল ॥
একদিন স্কুল ছুটি শেষে বাড়ির দিকে আনমনে হেঁটে যাচ্ছিলো কামাল। একটি মাইক্রো দাঁড়িয়েছিল পথের পাশে। কামাল মাইক্রোটির দিকে এক নজর দেখে পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো। মাইক্রোতে বসা একজন লোক তাকে ইশারায় কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– তোমাদের বাসা কোথায়?
– কামাল জবাব দেয়, ঐ যে সামনের মোড়ের পরে ডান দিকে কিছু পথ এগিয়ে গেলেই , হাতের বাম পাশে আমাদের বাসা।
– লোকটি জিজ্ঞেস করে, ঐ দিকে কি কোনো মসজিদ আছে?
– হ্যাঁ, আমাদের বাসার একটু পরেই সসজিদ, জবাব দেয় কামাল।
– লোকটি তখন জিজ্ঞেস করে, তুমি কি ঐ দিক দিয়েই যাবে?
– কামাল বলে, হ্যাঁ ঐ দিক দিয়েই আমাদের বাড়িতে যাবো।
তখন লোকটি কামালকে বলে গাড়িতে ওঠতে। ওরা তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যাবে। কামালের গাড়িতে চড়ার সখ অবশ্যই ছিলো। কিন্তু অপরিচিত লোকের সাথে চড়তে সে ইতস্তত করছিলো। এমন সময় পিছন থেকে একটি আসবাবপত্র বোঝাই ঠেলাগাড়ির চালক মাইক্রোটিকে তাড়া করছিলো আগে বাড়ার জন্যে। সে লোকটিও তখন কামালকে তাড়া করে তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠতে। এমতাবস্থায় কামালও উঠে পড়ে মাইক্রোতে। ঐ লোকটি ছিলো গাড়ির মাঝের সিটে। পিছনের সিটেও আরেকজন লোক ছিলো। কামালকে ওরা পিছনের সিটে বসতে বলে। কামাল ভয়ে ভয়ে পিছনের সিটেই বসে। বসার পরই গাড়িটি চলতে শুরু করে। আর তখনই পাশের লোকটি কামালের নাকে মুখে একটি রুমাল চেপে ধরে। সাথে সাথে তার জ্ঞান লোপ পেতে থাকে। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে নিজেকে দেখতে পায় এ বাড়িতে শাহীনের পাশে শোয়া।
কামালের এ দুঃখময় কাহিনী শুনতে শুনতে শাহীনের দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি। চোখের পানি মুছে নিয়ে শাহীন øেহের দৃষ্টিতে তাকায় কামালের দিকে। দেখে কামালও দু’হাতে চোখের পানি মুছছে। তখন সে কামালকে শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর দু’জনই আবার ডুবে যায় চিন্তায়।
এক পর্যায়ে কামাল একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শাহীনকে প্রশ্ন করে,
– আমরা কি তাহলে মুক্তি পাবো না? কিভাবেই বা মুক্তি পাবো? কে আমাদেরকে মুক্ত করবে? আমাদের আত্মীয়-স্বজন বা সরকারের পুলিশ- টুলিশ কেউতো জানেই না, আমরা এখানে বন্দী হয়ে আছি। শাহীন তখন চিন্তা করছিলো, কিভাবে গেটের পাহাড়াদার কাল্লুর সাথে সম্পর্ক গড়া যায়। চিন্তার মাঝখানে কামালের প্রশ্ন শুনে কোনো রকম ভাবনা ছাড়াই শাহীন জবাব দেয়,
– আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করবেন।
– আল্লাহ কিভাবে মুক্ত করবেন? তা তো কোনো ভাবেই বুঝে আসে না? আবারও প্রশ্ন করে কামাল।
– যে আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ.) কে নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে অত রেখেছেন, যে আল্লাহ হযরত মুসাকে (আ.) ফেরাউনের ধাওয়ার মুখে নদীর মাঝখানে রাস্তা করে দিয়েছেন, তাঁর পে কিছুই অসম্ভব নয়। তিনি আমাদেরকেও মুক্ত করবেন।
– কামাল তখন গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, হারে শাহীন, আমরা কি নবী-রসূল না আল্লাহর অলী ; যার কারণে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত করবেন?
– জবাবে শাহীন বলে, আমরা নবী-রাসূল না হলেই কি! আল্লাহইতো আমাদের বানিয়েছেন। তাছাড়া আমরাতো তেমন কোনো অপরাধ বা পাপ করিনি বা সে বয়সও হয়নি। বিনা অপরাধে যারা আমাদের ওপর এ অবিচার করছে, আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই ভয়াবহ শাস্তি দিবেন এবং আমাদেরকে মুক্ত করবেন।