দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-১৮)
॥ শ্যামলীর দুর্বলতা ॥
পাঁচ/ছয় বছর হয়, কাল্লু এবং শ্যামলী এ বাড়িতে এসেছে। ওরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী। দশ বছর আগে ওদের বিবাহ হয়। বিয়ের আগে ওরা দু’জনই চোরাকারবারের সাথে জড়িত ছিলো। সীমান্ত এলাকা থেকে কাপড়-চিনিসহ অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা বিভিন্ন পণ্য কিনে এনে, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতো। এ পেশায়ই পরিচয় দু’জনার। একপর্যায়ে বিয়ে করে ওরা। বিয়ের পরও একই পেশায় লেগে থাকে। তখন দু’জনে খেয়ে পরে কিছু সঞ্চয়ও হতো তাদের। একবার বহু টাকার মালামালসহ শ্যামলী ধরা পড়ে বিডিআর-এর হাতে। স্বামী কাল্লু তখন দিনরাত নেশা করে সঞ্চিত টাকা-পয়সা সব শেষ করে ফেলে। সে সময় কাল্লুর সাথে পরিচয় হয় এই শিশু-কিশোর অপহরণ ও পাচারকারী দলের মানিক ও মোস্তাকের সাথে। এরাই তদবীর করে ছাড়িয়ে আনে শ্যামলীকে। এরপর এদের কথায় দু’জনই এসে উঠে এ বাড়িতে। শ্যামলী এবং কাল্লুকে বাড়িতে রেখে মানিক-মোস্তাক বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু-কিশোর অপহরণ করে নিয়ে আসে এখানে। এরপর অপহৃত শিশু-কিশোরদেরকে কিছুদিন এ বাড়িতে রেখে সুযোগ মতো পাচার করে দেয় দেশের বাইরে। কাল্লু এখানে গেটে পাহাড়া দেয় ; আর শ্যামলী রান্না-বান্না ও শিশু-কিশোরদের পরিচর্যাসহ পুরো বাড়ি দেখা-শোনা করে। ৫/৬ বছর যাবৎ এ বাড়িতে এভাবেই কেটে যাচ্ছে তাদের দিন-রাত। মানিক-মোস্তাক এদেরকে যেমনি বিশ্বাস করে ; তেমনি নির্ভরযোগ্যও মনে করে। আগে ওরা মাঝে-মধ্যে দিনে এক/দু’বার আসতো এ বাড়িতে। প্রায় প্রতি রাতেই এসে আড্ডা বসাতো। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এখন ওরা বাড়ির ভিতরে আসে না বা আসার প্রয়োজনও মনে করে না। প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে আসলেও গেটে কাল্লুর সাথে কথা বলে, জরুরি নির্দেশনা শুনিয়ে চলে যায়।
শ্যামলীর প্রতি নির্দেশ ছিল, শাহীনদের স্বাস্থ্য রার জন্যে যথাযথ পরিচর্যার। তা না হলে বিক্রির সময় ভালো দাম পাওয়া যাবে না। সেই সাথে অতি আদর বা প্রশ্রয় না দেয়ারও হুকুম ছিল। কিন্তু শাহীনের উদ্দেশ্যমূলক সন্তানসুলভ আচরণে শ্যামলী ভুলে যায় সব। দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে শ্যামলী তার নেশাখোর স্বামীর কাছ থেকে যেমনি পায়নি তেমন কোনো আদর-সোহাগ ; তেমনি দেখতে পায়নি কোনো সন্তানের মুখ। শুনতে পায়নি কোনো শিশু-কিশোরের মায়াবী কোনো ডাকও। এমতাবস্থায় শাহীনের এ অভাবনীয় আচরণে তার শূন্য মাতৃহৃদয় উথলে উঠে। যতোই দিন যাচ্ছে সে শাহীনকে সন্তানসম ভাবতে শুরু করে। শাহীনও তার এ দুর্বলতা আঁচ করকে পেরে দিন দিন আরও কাছে যেতে থাকে। ইতোমধ্যে সে ঘর ঝাট দেয়া এবং বিছানাপত্র গোছানোর নাম করে, জেনে নিয়েছে ঘরের ভিতরে কোথায় কি আছে। শাহীন ল্য করছে এ পর্যন্ত শ্যামলী তাকে কোনো রকম সন্দেহতো করছেই না ; উপরন্তু তার প্রতি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। এবারে সে ভাবে, ঘরের বাইরে বাড়িটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পুরো বাড়ির কোথায় কি আছে সে সম্পর্কে একটা ধারণা অর্জন করতে হবে তাকে। কিন্তু কোনো রকমেই শ্যামলী তাকে সন্দেহ করে, এমন আচরণ করা যাবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথেই এগুতে থাকে শাহীন।
চলবে . . .