তিনি অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন । ইদানিং আলো তার অসহ্য লাগে । চোখে আলো গেলে চোখ কটমট করে এবং চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে । বিষয়টা নিয়ে তিনি ডাক্তারের সাথে দেখা করেছেন । ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ওষুধও খাচ্ছেন নিয়মিত । তবে সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না । তার ধারনা সমস্যা আরো বাড়ছে । তার চোখ থেকে এখন পানি পড়ছে । দেখে মনে হতে পারে তিনি কাঁদছেন ।
তিনি বসেছেন বারান্দায় পাতা রকিং চেয়ারে । চেয়ারের হাতলের ওপর একটা নীল রংয়ের টাওয়েল রাখা । তিনি টাওয়েলটা হাতে নিয়ে চোখ মুছলেন ।
আলো অসহ্যবোধ হওয়ায় তিনি খানিকটা লজ্জিত এবং বিষন্ন বোধ করছেন । মানুষ অন্ধকারের চেয়ে আলো পছন্দ করে বেশি । প্রাচীন কালে আদি মানবেরা রাতের অন্ধকারে আগুন জ্বালিয়ে আগুনকে ঘিড়ে বসে থাকতো । মানুষ বিপদে পড়লে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করে । আলো তাদের মনে খানিকটা হলেও আশার সঞ্ঝার করতে পারে । আর আলো কি না তার অসহ্য লাগছে !
অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিনি ঘোড়ের মধ্যে চলে গেলেন । তিনি দেখতে পেলেন একটি কুয়াশাঘেড়া বিরানভূমি থেকে কি যেন ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে । গাঢ় কুয়াশা সত্বেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে একটি শিশু হামাগুড়ি দিতে দিতে সামনে আসছে । হঠাত্ কুয়াশা বিলীন হয়ে গেল । কুয়াশার পরিবর্তে ঠাই নিল অপরূপ জোছনা । রূপালী জোছনা গায়ে মাখতে মাখতে শিশুটি আসছে । শিশুটি অবিকল বাবুর মত করছে । কিছুক্ষণ হামাগুড়ি দিয়ে সোজা হয়ে বসে থাকে । তারপর চারপাশ দেখে আবার হামাগুড়ি দেয় । শিশুটি দেখতেও বাবুর মত । তিনি এবার কাঁপতে লাগলেন । তার হাত পা সবই কাঁপছে ।
শিশুটি বসে আছে । তার দিকে তাকিয়েসে খুব মধুর ভঙ্গিতে হাসি দিল । যেমন হাসি কেবল শিশুরা তাদের বাবার দিকে তাকিয়ে হেসে থাকে । এবার তিনি আঁতকে উঠলেন । শিশুটির হাসিও বাবুর হাসির মত । তিনি ছটফট করছেন । শিশুটি তার একেবারে কাছে এসে পড়লো । এইতো সে বসে তারদিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে । যেন কোলে উঠতে চাচ্ছে ।
তিনি বিকট এক চিত্কার দিয়ে উঠলেন ।
রাহেলা বেগম রাহা ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসলেন । তিনি শফিক সাহেবের গায়ে হাত রেখে বললেন ,
‘এই তোমার কি হয়েছে ?তুমি এমন করছো কেন ?’
শফিক সাহেব কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যালকরে তাকিয়ে থেকে বললেন ,
‘কিছু হয়নি ।এক গ্লাস পানি দিতে পারবে রাহা ?’
-তুমি উঠে বস ।আমি পানি দিচ্ছি ।
রাহেলা বেগম রাহা টেবিলের ওপর রাখা ল্যাম্পটা জ্বাললেন । তারপর এক গ্লাস পানি এনে শফিক সাহেবের কাছে গেলেন । শফিক সাহেব যন্ত্রের মত হাতে গ্লাসটা নিলেন । পানিতে এক চুমুক দিয়ে গ্লাসটা রেখে দিলেন । তার হাত পা এখনও কাঁপছে ।
-এই তুমি কি দুঃস্বপ্ন দেখেছো ? ভয় করছে ?
-কই না তো ।
-তাহলে এরকম করছো কেন ?
-আর করবো না । রাহা এক কাজ করতো । ল্যাম্পটা নিভিয়ে দাও । চোখে আলো লাগছে ।
রাহেলা বেগম রাহা হাত বাড়িয়ে ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিলেন । তারপর শফিক সাহেবকে বললেন ,
‘এদিকে আসো তো । তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই ।’
শফিক সাহেব বাধ্য ছেলের মত কাছে এগিয়ে গেলেন ।
রাহেলা বেগম রাহা তার মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । তিনি চোখ বন্ধ করলেন । এবং প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লেন । ঘুমের মধ্যেও তিনি তার মাথায় হাতের পরশ টের পেলেন । তিনি আরো গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়লেন । হঠাত্ তিনি শিউরে উঠলেন ।ওই তো অন্ধকারের দিখে মুখ করে থাকা লোকটাকে দেখা যাচ্ছে ।. . . . . .