শশুর বাড়ির পিঠা
আমার বরাবর ই পিঠা পায়েস বিশেষ করে মিস্টান্ন খাবার খুব পছন্দ। কেউ মিষ্টির দাওয়াত দিলে মনে হয় শশুর বাড়ির দাওয়াত পাইছি।
মিষ্টান্ন আমার এতটাই প্রিয় !
এস,এস,সি পরিক্ষা দিয়ে ঢাকায় আসি , একটা কাজ পেয়ে গেলাম চিঠি বিলির কাজ ;রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। বাড়ি গেলেই পিঠা । মা ও বানাত, মাকে আমি ই সাহায্য কতাম। চাল ভাঙা কাজটি আমি করতাম। কাজটি মহিলাদের হলেও পিঠার লোভে ও কাজ টি আমি খুব ভাল করেই শিখে নিয়ে ছিলাম। ভাই বোন সবাই ছোট ছোট , ওরাও খুব পছন্দ করত।
আমি মা পিঠা বানাতাম , সবাই মিলে খেতাম।
দিন পার হল আমি এইচ, এস, সি দিলাম, বোনরা ও বড় হল, এখন ওরাই বানায় , মোবাইলের যুগ ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার আগেই আমি মাকে পিঠার রিকুইজেশন দিতাম, মাও তাই করত।
বাড়িতে যাওয়া মানে আমার আট দশ পদ পিঠা খাওয়া। খুব ভাল যাচ্ছে আমার দিন।
বোনদের বিয়ে দিতে লাগলাম, প্রথম বোন ,দিতীয় বোন , আমার পিঠা খাওয়াতেও কিছুটা ভাটা পড়ল। একে বারে যে বন্দ হল তা না, কিছুটা কম।
বিয়ে করলাম, মনে মনে এবার পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যাবে। শশুর বাড়ির পিঠা মানে তো —————!
আমি খুব উদ্দীপনা নিয়ে যথা সময় শশুর বাড়ি হাজির পিঠা খাওয়ার লোভে। দিন গেল রাত গেল পিঠার দেখা নাই মেলে। যখনি বউ কিবা শালিকা বা শশুড়ি ডাক দেয় তখনই মনে হয় এই বুঝি পিঠা খাইতে ডাকল।
এক বেলা খুব আদর করে শাশুড়ি ডাকল , মনে মনে খুব আস্থাত হলাম পিঠাই এবার খাওয়াবে , আমি লুঙ্গি খানা একটু আগালা করে পড়লাম; বেশি খেতে হবে এই ভেবে, গিয়ে শুনি শাশুড়ি বলল –
“বাবা, তুমি নারকেল গাছে উঠতে পার ? ”
আমি বললাম ” না ”
শালিকা ” দুলা ভাই , তাহলে আপনি কি পারেন? ”
” এ বিষয়ে এক টা পারি, এক টা পারি না ”
” তা আবার কেমন?”
“আমি ঘরের গাছে উঠতে পারি, আর কেউ নারকেল কেটে নারকেলের পানি নিয়ে সাদলে না বলতে পারি না। ”
শাশুড়ি আমাকে নিরাশ করে বলল “বাবা যাও। ”
আমি যথা সময় বাড়ি ফিরে এলাম, ভাবলাম শশুর বাড়ির নেয়া ব্যাগ টা মনে হয় হালকা ছিল, তাই হয় তো তারা ভেবে দেখেছে পিঠা বানানোতে পোষাবেনা, তাই হয়ত বানায় নি।
এ বার আমার ২য় মিশন ।
শশুর বাড়ি রওয়ানা হলাম, যাওয়ার পথে ভাল মন্দ যা কিছু নিলাম। সাথে বড় করার জন্য মুড়ি আর ভাড়ি করার জন্য তরমুজ নিলাম, সব মিলিয়ে পাচ টি ব্যাগ ।
শশুর বাড়ি ঢুকলাম, শাশুড়ি সামনে ব্যাগ গুলো রাখলাম, মনে মনে বললাম -এবার পিঠা না খাওয়ায় কই যাবে!
এখন ঘুমের ভিতর ও দেখি, শাশুড়ি পিঠা খেতে ডাকে। জেগে দেখি নাই। ভাত তেমন একটা খাই না। কখন পিঠা নিয়ে আসবে , পেট ভরা থাকলে ত খেতে পারবনা, সেই চিন্তায়।
নাহ ! কোন লক্ষন নাই।
এবার উপ মিশন ।
মাকে দেখতাম, কোন দিন সকালে ভাত খেতে না পারলে বা ভাত না থাকলে পিঠা বানাত।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ নিয়ে খাবারের কক্ষ হয়ে বাইরে নামছি, ব্রাশ দিয়ে ভাতের পাতিলে একটা নাড়া দিলাম।
শাশুড়ি পাশের কক্ষ থেকে বলল, কিসের শব্দ?
আমি বললাম , “আম্মা ভাতের ভেতর বড় বড় দুই টা ইদুর পড়েছে। ”
“আহা, ভাত আর খাওয়া যাবেনা !”
ভাবলাম,এবার !
মনপুলোকিত ! মনের সুখে খেতে বসলাম।
এবার আমি আশাহত হলাম।
যথা সময় পিঠা খাওয়া মিশন ব্যথ,
বাড়িতে ফিরে এলাম ।
মাকে বলে কয়ে পিঠা বানানো কাজে রাজি করালাম। বাড়িতে মা একা থাকার কারনে বউকে চাল বানার কাজে মাকে সাহায্য করতে হয়।
পিঠা হল।
খুব আমুদে খাচ্ছি। মনে মনে বলছি, দেখ, শাশুড়ি পিঠা কেমনে খাচ্ছি।
খেলাম ।
সমস্যা হল অন্য যায়গায়, যখন শুতে গেলাম ,বউ হাত দেখাল, পা দেখাল, কাধ দেখাল, পিঠা বানাতে তার কত দকল গেছে!
আমার চোখে বৃষ্টি হল!
তখন বুঝলাম আগের দিন নাই , এখন পিঠাতে অনেক কষ্ট। চাল অনেক শক্ত হয়ে গেছে সাথে মিঠাও ।
আমার পিঠা খাওয়ার সাধ মিটল চির তরে।
ম্যাচ বাসা , ফকিরাপুল।
১৯/০৭/২০১৩
মো: ওবায়দুল ইসলাম
সুখালয়, নিমহাওলা,
ঝালকাঠি – ৮৪১০।
মোবাইল: ০১৭২১৩৩৩৫৯৯
E – mail : obayedtanubd@gmail.com