Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-১৯)

: | : ০২/০৮/২০১৩

॥ পরিকল্পিত মুক্তির পথে ॥

একদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর শাহীন বিছানায় শুয়ে মুক্তির কৌশল নিয়ে ভাবছিলো আর গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। একসময় দরজার দিকে ল্য করে অনুভব করে, বেশ বেলা হয়ে গেছে। কিন্তু শ্যামলীর কোনো সাড়া-শব্দ নেই। কিছুণ পরই গ্রিলের তালা খোলার আওয়াজ শুনতে পায়। ছিটকিনি খুলে রুমে প্রবেশ করে শ্যামলী। শ্যামলীকে রুমে ঢুকতে দেখেই, দ্রুত বিছানা থেকে উঠে তার কাছে আসে শাহীন। দরজার বাইরে একনজর দেখে নিয়ে শাহীন বলে,
– খালা, তুমি বেশ দেরী করে ফেলেছো আজ। অনেক বেলা হয়ে গেছে। আকাশে মেঘ জমেছে। আমাদের ুধাও পেয়েছে। যাও নাস্তার
ব্যবস্থা করো গিয়ে। ঘর পরিষ্কার করতে হবে না তোমার। একাজ আমরাই করতে পারি। শ্যামলী  তেমন কোনো কথা না বলে, আনমনে
তাকিয়ে থাকে শাহীনের দিকে। শাহীন ভাবনায় পড়ে যায়, তাহলে শ্যামলী কি ওকে সন্দেহ করছে? সে কি ধরা খেয়ে যাবে? তার সব
পরিকল্পনা কি তাহলে ভেস্তে যাবে? এরই মাঝে শ্যামলী কথা বলে,
– আমার শরীরটা রাতে ভালো যায়নিরে শাহীন। সারা রাত একটুও ঘুম হয়নি। এখনো ভালো না। আজ তোদের নাস্তা দিতেও দেরী হবে।
– শাহীন তখন দরদের স্বরে বলে, তাহলে তুমি যাও খালা। আরাম করো গিয়ে। ঘর আমিই ঝাট দিয়ে দিচ্ছি। নাস্তা দেরী হয় হোক। তোমার
জান মেরে আমরা খেতে চাই না। শ্যামলী শাহীনের দিকে মায়াবী দৃষ্টি দিয়ে শান্ত-শুবোধ মেয়ের মতো বের হয়ে যায় রুম থেকে।

শ্যামলী বের হয়ে যাবার পর শাহীন দ্রুত ঘর পরিষ্কার করে আর ভাবে, শ্যামলী তার কথামতো ঘর থেকে বের হয়ে গেলেও, আরাম করতে যাবে না নিশ্চয়। সে হয়তো রান্নাঘরেই যাবে। এই সুযোগে সেও অসুস্থ শ্যামলীকে দেখার বা তার কাজে সহযোগিতার বাহানা দিয়ে রান্নাঘরে যাবে। পুরো বাড়ির অবস্থাটা জানার এই সুযোগ। কিন্তু বারান্দার গ্রিলের তালার কথা মনে হতেই তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। তখনি সে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে, গ্রিলের তালার সাথে চাবি ঝুলছে। তালা লাগিয়ে যায়নি শ্যামলী। ওদিকে রান্নাঘর থেকে শ্যামলীর কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শাহীনের। আনন্দে নাচতে নাচতে সে দ্রুত ঘর ঝাট দেয়। এরপর চাবির ছড়াটা হাতে নিয়ে দুরু দুরু বুকে এগিয়ে যায় রান্নাঘরের দিকে।
– শাহীন রান্না ঘরে ঢুকেই শ্যামলীর দিকে চাবির ছড়া এগিয়ে দিতে দিতে বলে, একি খালা! তুমি আরাম করতে যাওনি? এই লও তোমার
চাবি।
– শ্যামলীও বিষ্ময়ের সাথে বলে, তুই আবার আইলি কেমনে? হায়রে কপাল ! তালাডাও বুঝি না লাগাইয়া আইয়া পড়ছি।
– শাহীন খুশির ভাব প্রকাশ করে জবাব দেয়, হ, তালাটা খোলা থাকোনেইতো আমি তোমার কাছে আসতে পারলাম।

জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবশ্যার লগ্ন। অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় এমনিতেই শ্যামলীর শরীর ভালো যায় না। বাতের ব্যথায় কাতর হয়ে যায়। এরউপর আগের দিন সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে ভিজার কারণে শ্যামলীর প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লেগে যায়। সেই সাথে মারাত্মক কাশিও পেয়ে বসে তাকে। তাই সে রাতে থালা-বাটি না ধুয়েই শুয়ে পড়েছিল। তারপরও সারারাত তার ঘুম হয় না। সকালে বেশ বেলা হলে ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু ঘুম না হওয়ায় শরীর তার খারাপই থেকে যায়। তারপরও অন্য কোনো কাজের লোক না থাকায়, বাধ্য হয়েই সে রান্না করতে বসেছে। ওদিকে আকশটাও মেঘলা অন্ধকার। বৃষ্টি আসে আসে ভাব। এমতাবস্থায় সে ভাবছিল, থালাবাটিগুলো পরিষ্কার করবে কিভাবে। এমনি ভাবনার মাঝেই শাহীন এসে উপস্থিত হয় রান্নাঘরে। তারপরও সে শাহীনকে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে যাবে, এমন সময় শুরু হয় বৃষ্টি। দেখতে দেখতে মুষলধারায় বৃষ্টি পড়তে থাকে। সেই সাথে প্রবল বাতাসও বইতে থাকে। হঠাৎ বাতাসে বৃষ্টির একটা ঠাণ্ডা ঝাপটা এসে কাঁপিয়ে দেয় শ্যামলীকে। সাথে সাথে ওর শুরু হয় প্রচণ্ড কাশি। বুকে হাত দিয়ে শ্যামলী প্রায় এক মিনিট পর্যন্ত কেশে, শাহীনকে প্রশ্ন করে,
– তুই আবার বৃষ্টির মাঝে কেনো আইয়া আটকা পড়লি?
– কেনো আবার, তোমার কাজে সাহায্য করতাম আইছি। তুমি অসুখ লইয়া খাইটা মরবা ; আর আমরা ঘরে শুধু শুইয়া শুইয়া খামু – তাই না?
এতটুকু বলার পরই সে আবার বলে, অহন অডার কর কি করতে অইবো।
– থালাবাটি ধুইতি পারবি? শ্যামলী তাকে প্রশ্ন করে।
– পারমু না কেন? একশোবার পারমু। আমি কি জজ-ব্যারিস্টারের পোলা না কি? বাড়িতে মার সাথে কতো কাম করছি (শ্যামলীকে ধোকা দিয়ে
বোকা বানানোর জন্যে শেষের বাক্যটি সে বানিয়েই বলে)। শ্যামলী তখন রান্নাঘরের এক কোণের হাউজের দিকে ইশারা করে বলে,
– তাইলে এইখানে বইয়্যা থালা-বাটিগুলি ধুইয়া দে।
শাহীন খুশি মনে আস্তে আস্তে থালা-বাটি পরিষ্কার করে আর ভাবে, এখন তার জন্যে পুরো বাড়ির পরিবেশ জানার পথ হয়ে গেলো। এ সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।

শাহীনের থালাবাটি ধোয়া শেষ হতে হতে শ্যামলীর রান্না হয়ে যায়। বৃষ্টিও প্রায় থেমে যায়। তখন সে দরদের স্বরে শ্যামলীকে বলে, “খালা, তুমি কিন্তু আবার বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাইবা না। আমিই সবার নাস্তা নিয়া যামু।” শ্যামলী ওর কথায় রাজি হয়ে, ওর কাছেই সবার নাস্তা এবং গ্রিলের চাবিও দিয়ে দেয়। নাস্তা করার পর সে-ই থালাবাটি এবং চাবি শ্যামলীকে পৌঁছে দিয়ে আসে। রান্নাঘর থেকে আসা-যাওয়ার সময় শাহীন সোজাসুজি না হেঁটে, একটু ঘুরাঘুরি করে পুরো আঙিনায়। সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকায় চারদিকে। চারদিকের দেয়াল, গেট এবং গেটের পাহাড়াদার কাল্লুকে সে ভালো করে দেখে নেয়।

এমনি কৌশলে ধীরে ধীরে শাহীন নিজেকে শ্যামলীর কাছে একান্ত বিশ্বস্ত এবং অনুগত হিসেবে প্রমাণ করতে সম হয়। সেই সাথে বাড়িটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পুরো বাড়ির পরিবেশই সে জেনে নেয়। কিন্তু বাড়িটির অস্বাভাবিক উঁচু দেয়াল দেখে তার মন অনেকটা দমে যায়। হিসেব করে দেখে, সে তো দূরে ; কোনো বয়স্ক লম্বা লোকও এ দেয়াল টপকাতে পারবে না। গেটের উপরে ওঠারও কোনো সুযোগ নেই। ভারী দু’টি লোহার ঢাসা দিয়ে আটকানো মজবুত লোহার গেট। ঢাসা দু’টিতে দু’টি বড় বড় তালা। সে হিসেব করে, তালা খোলা থাকলেও তার একার শক্তিতে সম্ভব নয় ভারী ঢাসা দু’টি খোলা। অবশ্য ওরা চৌদ্দ জন আছে। আর কাল্লুটা যে দৈত্য মার্কা! যেমনি পাহাড়ের মতো উঁচু ; তেমনি  হেইয়্যা মোটা। ভীষণ কালো চেহারার কাল্লুর বড় বড় লাল দু’টি চোখ, এবং দুদিকে পাকানো লম্বা মোচের দিকে একবার নজর দেয়ার পরই সে ঘাবড়ে যায়। সে ভাবে, ওরা চৌদ্দ জন মিলেও এ দৈত্যটাকে কাবু করা কঠিন। আবার ভাবে, চৌদ্দজন থাকলেই কি। সবাইকে তো সব কথা বলাও নিরাপদ না। একপর্যায়ে তার ভাবনায় আসে অজ্ঞান করার কথা। ওদেরকেও অজ্ঞান করেই এখানে আনা হয়েছে। ভাবে, সেও যদি পারতো কাল্লুকে অজ্ঞান করতে। কিন্তু কী দিয়ে সে অজ্ঞান করবে? হঠাৎ তার মনে পড়ে পত্রিকার ফিচারে পড়া কোরোফরমের কথা। সব শেষে সে হিসেব করে, যদি এই জিনিস পাওয়া যেতো, তাহলে কাল্লুকে অজ্ঞান করে সহজে গেট খুলে বেরিয়ে যেতে পারতো।

চলবে . . .

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top