Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-২০)

: | : ০৩/০৮/২০১৩

॥ বিদেশে পাচারের সিদ্ধান্ত ॥

অপহরণকারীরা পাচারের সুযোগের অপেক্ষায়, শাহীন মুক্তির পরিকল্পনায় ; আর ওর সাথীরা মৃত্যর ভয়-ভাবনায় দীশেহারা অবস্থায় কাটিয়ে দেয় দিন-রাত। এমনি করেই পাঁচ মাস পেরিয়ে, ছয় মাস হতে চলে শাহীনের বন্দী জীবনের। ষষ্ঠ মাসের এক রাতে ঘুমের মাঝে শাহীন স্বপ্নে দেখে -“গুণ্ডা প্রকৃতির লোকগুলো এসে আড্ডা জমায় ওর রুমে। আড্ডা শেষে রুম থেকে যাবার সময় ভুলে ফেলে যায় কাচের একটি ছোট্ট  বোতল। ওরা বেরিয়ে যাবার পর শাহীনের দৃষ্টি পড়ে বোতলটির দিকে। বোতলটির দিকে তাকিয়ে সে ভাবছিলো, কিসের বোতল হতে পারে এটি? এমন সময় শোনে বাইরে একজন আরেক জনকে বলছে, ক্লোরোফরমের বোতলটা মনে হয় রেলগাড়ি থেকে নামার সময় পড়ে গেছে। জবাবে আরেকজন বলে, পইড়া গেলে আর কী করার আছে? চল এখন বাইরে অনেক কাজ আছে। বলেই ওরা চলে যায়। ওরা চলে গেছে বুঝতে পারার পর শাহীন বিছানা ছেড়ে উঠে লুকিয়ে ফেলে বোতলটি। এরপর রুমমেট কামালকে জাগিয়ে তোলে। দু’জনে মিলে কাল্লুকে অজ্ঞান করে বেরিয়ে যায় গেট খুলে। গেটের বাইরে গিয়েই দৌড়াতে থাকে ওরা দু’জন। কিছুদূর যাবার পরই টহল পুলিশের সামনে পড়ে যায় ওরা। ওদেরকে দৌড়াতে দেখে সন্দেহ করে টহল পুলিশ। গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় ওদের দু’জনকেই। থানায় ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাহীন সাহস করে পুলিশ অফিসারের কাছে সংক্ষেপে ঘটনা বলে। তার কথায় পুলিশ অফিসার প্রভাবিত হচ্ছে বুঝতে পেরে, তার অন্যান্য সাথীদেরকেও মুক্ত করার দাবি জানায়। তার বাবার কলেজের টেলিফোন নাম্বারটি বলে, টেলিফোনে তার বাবাকে খবর দেয়ারও আবেদন জানায় —।” এমন সময় বারান্দার গ্রিলের তালা খোলার আওয়াজে ভেঙ্গে যায় তার ঘুম। শুনতে পায় কারা যেনো কথা বলতে বলতে বারান্দায় ঢুকছে। সাথে সাথে সে আগের মতো নাক ডাকা শুরু করে। ওর সাথী কামাল আগেই নাক ডাকা শুরু করেছিলো।

দরজার ছিটকিনি খুলে দু’জন লোক রুমে ঢুকে। ওরা ঢুকেই শাহীন এবং কামালের নাক ডাকার আওয়াজ শুনে মেঝেতে বসে পড়ে। আগের মতোই খাওয়া-দাওয়া করে। নেশা করে। এরপর নেশার ঘোরে শুরু করে আলোচনা। দীর্ঘ বিরতীর পর ওদের আজকের বৈঠকের আলোচনার বিষয় হলো, সীমান্তের সবুজ সংকেত এবং শাহীনদের পাচার করে দেয়া। বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, পরের দিনই ওরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে এবং তার পরের দিন শাহীনদেরকে পাঠিয়ে দেবে সীমান্তের ওপারে। শাহীন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনছিল ওদের কথোপকথন। পাচারের কথা শোনা মাত্র তার দেহে শুরু হয় কম্পন। গোটা শরীর হিমশীতল হয়ে যায়। চোখে-মুখে ভেসে ওঠে সীমান্তের ওপারের ক্রেতাদের অপকর্মের নারকীয় দৃশ্যপট। মাথাটা চক্কর দিতে থাকে তার। একসময় রুমে ঢুকে শ্যামলী। শাহীন আবারও মনোযোগ দেয় ওদের প্রতি। শুনতে পায়, ওদের একজন রুমের এক কোণে রাখা সিন্দুকটির দিকে ইশারা করে শ্যামলীকে বলছে, “অই শ্যামলী, তুই আগামীকাল সকালে ঐ সিন্দুকটা খুইলা সব কাগজপত্র বাইর কইরা গুছাইয়া রাখবি। এই নে সিন্দুকের চাবি। এরপর এদেরকে ভালো খাবার রান্না করে খাওয়াবি। সকালেই বাজার কইরা পাঠাইয়া দিমু। গরুর মাংস থাকবো। আমাদের জন্যও ভুনা মাংস রাখবি। আমরা সন্ধায় আইসা খামু।” এরপর চলে যায় ওরা। ওরা চলে যাবার পর শাহীন মারাত্মক দুর্ভাবনায় অস্থীর হয়ে ছটফট করতে থাকে। মাঝে কালকের একটি দিন মাত্র। তারপরই এই জিন্দানখানা থেকে ওদেরকে পাঠিয়ে দেবে জল্লাদদের কশাইখানায়। কিন্তু কিছুইতো করতে পারলো না সে। কালকের দিনের মধ্যে আর কী-ই-বা করতে পারবে! গভীর রাত পর্যন্ত এমনি ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে শাহীন।

চলবে . . .

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top