দুঃসাহসী শাহীন (পর্ব-২২)
॥ শেষ রাতের শেষ আড্ডা ॥
ভয় ও আনন্দের টানাপোড়নে, চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে দিনটা কোনোরকম কেটে গেলেও ; রাতটা যেনো শাহীনের আর সহ্য হচ্ছে না। ঘুম তার চোখ থেকে যেনো চির বিদায় নিয়েছে। সকাল হবার আগেই একটা কিছু করতে হবে। কোনোরকম ঝামেলা হতে পারে সন্দেহ করে, তার পরিকল্পনার কথা সাথী কামালকেও সে আগে জানায়নি। এখন কামালকে সব কিছু বলে, অপারেশনের একটা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে হবে। কিন্তু সে পাশ ফিরে দেখে, গাধা কামালটা দিব্যি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কামালকে সে জাগাবে, এমন সময় গ্রিলের তালা খোলার শব্দ হয়। এবার সে নিজেও নাক ডেকে ঘুমের অভিনয় শুরু করে। হঠাৎ তার ভয় এসে যায়, ক্লোরোফরমের বোতলটা যদি ওরা দেখে ফেলে তখন কী উপায় হবে! প্রচণ্ড হৃদকম্পন শুরু হয় তার। ভয়ে মুখ-গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। দুরু দুরু বুকে আল্লাহকে স্মরণ করে বিছানায় পড়ে থাকে মরার মতো।
এবারও কাল্লুসহ তিনজন লোক ঢুকে রুমের ভিতর। ফূর্তিতে পানাহার করে। পানাহার সেরে ডেকে আনে শ্যামলীকেও। শ্যামলীকে লক্ষ্য করে একজন বলে,
– অই শ্যামলী, শোন। সবকিছু একেবারে ঠিকঠাক। সকাল ঠিক আটটায় মাইক্রো আসবে। তার আগেই এদের গোসল এবং খাবার শেষ করে
প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
– জবাবে শ্যামলী বলে, আমিও রেডি। এখন থেকেই সব কিছু গোছানিত্ লাইগ্যা যাইতাছি। রাত শেষ হওয়ার আগেই সবকিছু একেবারে রেডি
কইরা ফালামু। তোমরা এখন তোমাগো কামে যাও।
– হাসির ঝড় তুলে একজন বলে, এইতো শ্যামলী! এবার – তুমি একটা ব-খ-শি-শ পাবে। একটা সোনার হার দেয়া হবে তোমাকে। বলেই
সে পাশের জনের পিঠে একটা থাপ্পর মেরে প্রশ্ন করে, কি বলো মোস্তাক? এইবার অনেক দিন যাবৎ পোলাগুলিরে শ্যামলী লালন-পালন
করল। একটা বখশিশ দেওয়া দরকার না? কাল্লুটাতো তাকে কিছুই দিতে পারলো না।
– ঠিক আছে, তুমি ঠিকই বলেছ মানিক ভাই, জবাব দেয় পাশের সে লোকটি। এরপর মানিক চলে যাবার কথা বলতেই কাল্লু বলে,
– শ্যামলীই শুধু কষ্ট করেছে! আমি করিনাই কিছুই? আমার বখশিশটাতো বললে না কেউ।
– মানিক বলে, আরে কাল্লু , তোমার বিবির পাওয়াইতো তোমার পাওয়া। তোমার বিবি সোনার হার পরে তোমার সামনে আসবে। নাচবে,
গাইবে। এরপর তোমরা দু’জনে মজা করবে, ফূর্তি করবে – হাহ্ – হাহ্ – হা! আর কী চাও! বলেই সে কাল্লুর রানে সজোরে একটা
থাপ্পর মেরে উঠে পড়ে।