আমার শততম পোস্ট ও কিছু কথা
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা ও সম্পাদক সাহেব আপনারা কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন। অনেকে হয়তো ঈদের ছুটি কাটিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসছেন আবার অনেকে হয়তো এখনও ফিরেন নি। আমার পক্ষ হইতে আপনাদের সবাইকে ঈদ মোবারক ও ঈদের শুভেচ্ছা রইল। যারা এখনও কর্মস্থলে ফিরেননি তাদের জন্য শুভকামনা রইল যাতে সহিসালামতে কর্মস্থলে ফিরতে পারেন। আপনারা হয়তো অনেকেই লক্ষ্য করে দেখবেন আমি দীর্ঘ দুই মাস ৯দিন যাবত এ ব্লগে অবস্থান করছি। ইতোমধ্যে আমি একশতটি পোস্ট চলন্তিকাকে উপহার দিতে পেরেছি। এটা আমার গর্বের কোন বিষয় নয়। গর্ব করার থাকলে চলন্তিকার থাকতে পারে যে এত অল্প সময়ে একজনের কাছ থেকে একশতটি পোস্ট অর্জন করার জন্য। আর আমার ১০০ টি পোস্টে সর্বমোট ১১৪৯টি মন্তব্য হয়েছে। এই অর্জন অন্য কারো আছে কি না আমার জানা নেই।
অনেকে হয়তো আমাকে বলতে পারেন যে, ‘একশতটি পোস্টের চেয়ে মানসম্মত একটি পোস্ট অনেক ভাল।’ হ্যাঁ এই কথা আমিও বলি। কিন্তু কেন এত দ্রুত সময়ে একশতটি পোস্ট করলাম সে বিশ্লেষনে গেলে আমাকে বিস্তারিত বলতে হয়। আমি ইতোমধ্যে আট/দশটি ব্লগে লেখালেখি করে আসছি কিন্তু কোথাও এত দ্রুত সময়ে এতগুলো পোস্ট দেইনি। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কেন চলন্তিকায় দিলাম? অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন যে আমি পুরষ্কারের আশায় এতগুলো পোস্ট দিয়েছি। এটা আপনাদের নিজস্ব ভাবনা হতে পারে আমার নয়। পুরষ্কার পাওয়া না পাওয়া আমার কোন মুখ্য বিষয় নয়। চলন্তিকাকে আমি ভালোবেসেছি। চলন্তিকার শুরুতেই আমি এ ব্লগে আবস্থান করছি। বর্তমানে আছি। ভবিষ্যতে থাকার ইচ্ছাও আছে। জানি না কতদিন থাকতে পারব।
অনেকে আমার নামে অভিযোগও করেছে আমি চিরায়ত গল্প/কৌতুক/ধাঁধা লিখি পয়েন্ট পাওয়ার জন্য। এই জন্য সম্পাদক সাহেব কৌতুক/ধাঁধার পয়েন্ট বাতিল করেছেন। সেই থেকে আমি আর চিরায়ত গল্প/কৌতুক/ধাঁধা পোস্ট দেয়া বাদ দিয়েছি। কারণ আমি জানি এই তিনটা বিভাগে লেখলে এখানে লেখকের কোন কৃতিত্ব নেই। এগুলো লেখকের কোন নিজস্ব সৃষ্টিও না। কিন্তু কেন এগুলো লিখছিলাম তার ব্যাখ্যা পরে দিচ্ছি। একশটি পোস্ট দিতে গিয়ে হয়তো দুয়েকটি পোস্ট খারাপ হতে পারে তা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। কিন্তু তাই বলে কি আমার সব লেখায় মানসম্মত নয়! অনেকে আমার লেখার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকে আমার উপন্যাসকে নিন্মমানের উপন্যাসের সাথে তুলনা করেছেন। মানের প্রশ্ন আসাতেই সম্পাদক বরাবর অনেকে লেখা সম্পাদনা করে প্রকাশ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। আমিও তাদের সাথে একমত পোষন করেছিলাম। সম্পাদক সাহেব তাদের ইচ্ছাকে অংশিক স্বাগত জানিয়ে কাদের লেখার সম্পাদনার প্রয়োজন নেই তাদের একটি তালিকাও দিয়েছিলেন আমাকে। আমি এখানে তাদের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ফেরেশতা বানাতে পারছিনা। কারণ আমি বিশ্বাস করি মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল মানুষের হবে। এটাই স্বাভাবিক। কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ূন আহমেদসহ আরো অনেক নামি-দামী লেখকরাও হলফ করে বলতে পারেননি যে তাদের লেখায় ভুল নেই। তাদের লেখার সম্পাদনার প্রয়োজন হয়নি। যাদের লেখা সম্পাদনের দরকার পড়ে না তাদের তালিকায় আমার নাম না থাকায় ধরে নিয়েছি আমার লেখা সম্পাদনার প্রয়োজন আছে। এতে আমি অত্যন্ত খুশী হয়েছি। কারণ আমিও চাই আমার লেখার সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হোক। কারণ একশতটি লেখার চাইতে মানসম্মত নির্ভুল একটি লেখা প্রকাশ হোক এটাই আমি চাই। কিন্তু সম্পাদনা কেন মুষ্টিমেয় কয়েক জনের হবে? সম্পাদক সাহেব কি করে ধরে নিলেন যে তাদের সবগুলো লেখায় মানসম্মত হবে? এটা কি একতরফা নীতি নয়? নীতিমালা সবার জন্য এক হওয়া উচিত নয় কি?
আমি মনে করি একটি মানসম্মত ব্লগ তৈরি করতে হলে অবশ্যই লেখা সম্পাদনার প্রয়োজন আছে। লেখক যত বড় মাপেরই হোক না কেন তাঁর লেখায় যে ভুল হবে না তা কেউ বলতে পারবে না। তাই কারো প্রতি বিদ্বেষ বা কারো প্রতি ব্যক্তিগত ভালোবাসা দেখানোর সুযোগ এখানে নেই। এতে করে দিন দিন ব্লগের মান বৃদ্ধির পরিবর্তে অবনতি হবে। এটি একটি নবীন ব্লগ। এখানে যারা লিখছেন তারাও নবীন। তাদের ভুলভ্রান্তি হবে সংশোধন করে দেয়ার দায়িত্ব সম্পাদকের। এখানে কোন প্রবীণ লেখককে আমরা দেখছিনা। অনেকের কাছে মনে হতে পারে ব্লগে যারা লিখেন তারা সবাই বড় মাপের সাহিত্যিক তা একটা ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই না। এখানে সবাই সবার কাছ থেকে শিখতে আসছে।
ইতোমধ্যে এ ব্লগে অনেকে পয়েণ্ট পদ্ধতি বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছেন। কিন্তু সম্পাদক সাহেব তাদের সেই সুপারিশ গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক সমালোচনা হয়েছে। অনেকে পয়েন্ট পদ্ধতির বিরোধীতা করে চলন্তিকাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে আমি লক্ষ্য করে দেখলাম আংশিক পয়েণ্ট পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। কোন কোন বিভাগে পয়েন্ট বাতিল করা হয়েছে তা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও একতরফা নীতি লক্ষ্য করলাম। পয়েণ্ট যদি বাতিলই হবে, তাহলে আংশিক হবে কেন?
ইতোমধ্যে পয়েন্ট পদ্ধতির সংশোধনও করা হয়েছে। বিশেষ করে মন্তব্যের ক্ষেত্রে পয়েন্ট সমান করা হয়েছে। পোস্টের ক্ষেত্রে পয়েণ্ট কমানো হয়েছে। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ নবীন লেখকদের কথা চিন্তা করে পয়েণ্ট পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও পয়েন্ট সংশোধনের ব্যাপারে আমার কোন কথা নেই। কিন্তু ইতোমধ্যে লক্ষ করে দেখছি অনেক সময় মন্তব্য করলে কোন পয়েন্টই পাওয়া যায় না। কারণ কি জানি না।
পুরষ্কারের টাকা নিয়ে শুরুতেই আমি দ্বিমত পোষণ করেছি। আমার সাথে অনেকেই একমত পোষন করেছে। আমি শুরু থেকেই বলে আসছিলাম টাকার পরিবর্তে অন্য কিছু উপহার দেয়ার জন্য কিন্তু সম্পাদক সাহেব এই সিদ্ধান্তে এখনও অনড় আছেন। এই পুরষ্কারের টাকা নিয়েও এখন জটিলতা লক্ষ্য করছি। ইতোমধ্যে জুলাই মাসে আমি পুরষ্কারের জন্য বিবেচিত হয় কিন্তু আমার মোবাইলে এখনও ঐ পুরষ্কারের টাকা পৌঁছেনি। এ নিয়ে সম্পাদক সাহেবকে ই-মেইল করে বিস্তারিত জানিয়েছি। এ ব্যাপারে সম্পাদক সাহেবের কাছ থেকে কোন সমাধান পাইনি। অনেকে দেশের বাইরে থেকে লিখছেন। তারা মোবাইলে পুরষ্কারের টাকা নিতেও রাজি হচ্ছেন না। এর সমাধান সম্পাদক সাহেব কিভাবে দিবেন জানি না।
আমি আরো লক্ষ্য করে দেখছি নীতিমালার চার এর ক. ধারাতে স্পষ্ট উল্রেখ আছে- ‘চলন্তিকা ব্লগে যে কোন অরাজনৈতিক লেখা প্রকাশ করা যাবে।’ তার মানে এখানে কোন রাজনৈতিক লেখা প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সম্পাদক সাহেব নীতিমালার বাইরে গিয়ে একটি লেখায় মন্তব্য করে বলেছেন, ‘৭১ কিংবা এর পূর্ব রাজনৈতিক ঘটনা এই কঠোর নিতিমালার আওতামুক্ত।’ কিন্তু এই কথাটা কিন্তু নীতিমালায় লেখা নেয়। এটা কেমন নীতি? রাজনীতি মানেই রাজনীতি। এটা ৭১ এর পূর্বে বা পরে বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক লেখা নিষিদ্ধ হলে সম্পূর্ণ লেখা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত?
এখন আসুন কেন আমি একশত পোস্ট দিলাম তার ব্যাখ্যায়:
গত ০৮/০৭/২০১৩ তারিখে মাননীয় সম্পাদক সাহেব সম্পাদকীয় কলামে ‘লেখক বন্ধুরা লক্ষ্য করুন’ শিরোনামে নিম্নের কথাগুলো লিখেছিলেন-
প্রিয় লেখক বন্ধুরা
আপনারা জানেন যে আমাদের সাথে একটি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার হয়েছে যেদিন চলন্তিকা নিম্নের শর্ত পূরণ করতে পারবে সেদিন থেকে তারা আমাদের মাসিক ভিত্তিতে ৮০ পৃষ্ঠার পেপারব্যাক নিউজপ্রিন্টে ছাপা ম্যাগাজিনের খরচ বহন করবে। আর সেটা চলন্তিকার যে সব লেখক আগের মাসে ৫০০ পয়েন্ট অথবা ১০০ এর অধিক মন্তব্য করবেন, তাদের ঠিকানাতে ফ্রি পাঠানো হবে।
শর্ত ১ / লেখকের সংখ্যা ৩০০০ এর অধিক হতে হবে।
শর্ত ২ / ২০,০০০ এর অধিক লেখা চলন্তিকাতে প্রকাশিত হতে হবে।
শর্ত ৩ / ৭৫,০০০ এর অধিক মন্তব্য থাকতে হবে।
শর্ত ৪ / Alexa ranking এ বাংলাদেশে ১০০০ এর ভিতরে থাকতে হবে।
শর্ত ৫ / উপরের সবগুলো মার্চ’ ১৫ এর ভিতরে অর্জন করতে হবে – ২২ মাসে।
সম্পাদক সাহেবের উপরোক্ত কথাগুলো আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। আমি গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলাম আমার একটি লেখা যদি চলন্তিকার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সাহায্য করে তাতে আমারতো কোন ক্ষতি হবে না। আমার একটা মন্তব্য যদি চলন্তিকার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সাহায্য করে তাতেও আমার কোন ক্ষতি হবে না। আমার একটি লেখা মানে অনেকগুলো মন্তব্য। তাই চেষ্টা করেছি প্রতিদিন একটি পোস্ট ও প্রতিদিন প্রকাশিত সবগুলো পোস্টে অনন্ত একটি করে মন্তব্য ও আমার পোস্টের মন্তব্যগুলোর প্রতি উত্তর দিতে। আর এই মন্তব্যই হতে পারে চলন্তিকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সহায়ক। এই অনুপ্রেরণা থেকে এত মন্তব্য এত পোস্টের প্রয়োজন বোধ করেছিলাম। এখানে পুরষ্কার পাওয়া কোন উদ্দেশ্য নয়। এই জন্য আমি লেখক সংখ্যা বাড়ানোর একটি উদ্যোগও নিয়েছিলাম। অনেকে সাড়া দিয়েছেন আবার অনেকে আমার উদ্যোগকে ডেস্টনির সাথে তুলনা করেছেন। এখন যদি সম্পাদক ও পাঠক-পাঠিকারা চান যে লক্ষ্যমাত্রার পিছনে দৌঁড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই তাহলে পোস্ট ও মন্তব্যের সংখ্যা কমিয়ে দেব। এতে আমার কোন ক্ষতি হবে না। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা লক্ষ্য করে দেখুন এখানে কিন্তু সম্পাদক সাহেব আমাদেরকে পোস্ট, মন্তব্য, লেখক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন আবার অন্য জায়গায় কিছু কিছু পোস্টকে নিরুৎসাহিত করছেন। আশা করি আপনারা আমাকে বুঝতে পারছেন।
অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্লগ ছেড়ে চলে গেছেন, আবার অনেকে ফিরেও আসছেন। কিন্তু আমি এ ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন ঘোষণা দিবনা। কারণ আমি মনে করি ব্লগ একটি স্বাধীন মাধ্যম। এখানে আসার জন্য যেমন কেউ কাউকে দাওয়াত দেইনি তেমন যাওয়ার জন্য কেউ কাউকে নিষেধ করবে না। তাহলে কেন আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়বে? আমি আছি, থাকব যতদিন সম্পাদক ও পাঠক-পাঠিকারা চায়।
পরিশেষে সম্পাদক সাহেবের নিকট আমার শেষ মিনতি রইল নীতিমালা, পয়েণ্ট পদ্ধতি, পুরষ্কার ও প্রকাশনার বিষয়গুলো সংশোধন করে এমন একটি নীতিমালা তৈরি করুন যেখানে কোন নীতিমালা প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। আর আমার পাঠক-পাঠিকাদের বলবো আপনারা আমার সবগুলো লেখা পড়বেন। ভুলত্রুটি আমাকে ধরিয়ে দিবেন এতে আমি খুশী হব এবং নিজেকে সংশোধন করে নিব।